ফিচার ফোন বলতে কী বোঝায়? এর সুবিধা কী?

ফিচার ফোন বলতে কী বোঝায়. এর সুবিধা-অসুবিধা, ইত্যাদি সম্পর্কে জানবেন এই পোস্টে।

ফিচার ফোন কি?

ফিচার ফোন, বাটন ফোন, বেসিক ফোন কিংবা ডাম্ব ফোন – এই টার্মগুলোর সাথে আমরা কমবেশিউ সবাই পরিচিত। নাম না জানলেও এই ফোন এর ব্যবহার কিন্তু সর্বত্র দেখা যায়।

ফিচার ফোন হলো এক ধরনের মোবাইল ফোন যাতে শুরুর দিকের মোবাইল ফোনের ফর্ম ফ্যাক্টর থাকে, বাটন ইনপুট সিস্টেম থাকে ও ছোট নন-টাচ ডিসপ্লে থাকে। বেশ সাধারণ অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা চলে এসব ফোন যাতে সাধারণ ফোন এক্টিভিটি, যেমনঃ কলিং, এসএমএস টেক্সটিং ও রেডিওর মত সুবিধা থাকে।

তবে বর্তমানে ফিচার ফোনেও স্মার্টফোন এর ফিচারগুলো দেখা যায়। ইন্টারনেট সুবিধার পাশাপাশি অনেক ফিচার ফোনে গেমস খেলারও ফিচার রয়েছে। অর্থাৎ নামে বেসিক বা ডাম্ব ফোন হলেও ফিচার ফোনগুলোও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়ে যাচ্ছে। তবে আপনি সব সময়ই বেসিক ফিচার ফোন বাজারে পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ আপনার হাতে সব রকমের অপশনই থাকবে যে আপনি স্মার্টফোন চাচ্ছেন নাকি বাটন ফোন, নাকি একদম বেসিক ফিচার ফোন।

ফিচার ফোন কি স্মার্টফোনের চেয়ে ভালো?

বেসিক ফিচার ফোনকে স্মার্টফোনের সুযোগ-সুবিধার সাথে তুলনা করা ঠিক হবেনা। তবে ফিচার ফোনের সুবিধা-অসুবিধাও উল্লেখযোগ্য বিষয়। চলুন আমরা জানার চেষ্টা করি কি কি ক্ষেত্রে ফিচার ফোন স্মার্টফোনের চেয়ে এগিয়ে আর কোন কোন বিষয়ে ফিচার ফোনের কমতি রয়েছে।

ফিচার ফোনের সুবিধা

প্রথমে ফিচার ফোনের সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। অনেকে স্মার্টফোন এর পাশাপাশি একটি ফিচার ফোনও ব্যবহার করে থাকেন, যার কারন এর সুবিধাসমূহের দিকে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।

অসাধারণ ব্যাটারি লাইফ

ফিচার ফোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর লং-লাস্টিং ব্যাটারি লাইফ। স্মার্টফোন এর ক্ষেত্রে যেখানে ব্যাটারি কত বড় বা চার্জিং স্পিড কেমন এসব নিয়ে ভাবতে হয়, সেখানে ফিচার ফোনের ব্যাটারি নিয়ে একবারের জন্যও ভাবতে হয়না। একবার ফুল চার্জ করলে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সাধারন ব্যবহারে চলে যায় অধিকাংশ ফিচার ফোন। 

যেহেতু ফিচার ফোনে অদরকারি কোনো ফিচারই থাকেনা, তাই এখানে শুধুমাত্র সাধারণ ফোন ব্যবহারের সুবিধাসমূহ পাওয়া যায় এবং ফোনের চার্জ কোনো কারণ ছাড়াই নষ্ট করার অপশন থাকেনা।

এসব কারণে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কম হলেও ফিচার ফোনের ব্যাটারি ব্যাকাপ অনেক বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানের ফিচার ফোনগুলোতে ব্লুটুথ,ওয়াইফাই, মাল্টিমিডিয়া, গেমিং, ইত্যাদি সুবিধা আসার কারণে আগের চেয়ে ব্যাটারি ব্যাকাপ অনেক কমে গেছে।

সাধারণ

ফিচার ফোনগুলো বেশ সাধারণ ও মিনিমাল হয়ে থাকে। এগুলো ব্যবহার করতে পারে যেকেউ, যা ব্যবহার করতে নতুন করে শিখতে হয়না বা কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়েনা। অর্থাৎ নামে বেসিক হওয়ায় পাশাপাশি এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্সও বেশ বেসিক।

উভয়ই স্মার্টফোন হওয়ার স্বত্বেও আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এন্ড্রয়েড এবং এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের আইফোন ব্যবহার করা দুঃস্বপ্নের মত। এই ধরনের কোনো সমস্য্যা ফিচার ফোনের ক্ষেত্রে নেই, যেকেউ ফিচার ফোন ব্যবহার করতে পারে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। 

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

nokia 3310

ডিসট্র্যাকশন কম

ফিচার ফোন সাধারণ হওয়ার কারণে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিসট্র্যাকটেড হওয়ার ঝামেলা থাকেনা। স্মার্টফোন এর এই যুগে এসে নোটিফিকেশন এর ডাকে সাড়া দিয়ে কাজের কথা ভুলে গিয়ে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করি আমরা, যা থেকে ফিচার ফোন মুক্তি দিতে পারে। যেহেতু ফিচার ফোনে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলোই আছে, তাই এটি ব্যবহারে সময় নষ্ট করার কোনো সুযোগই থাকেনা বলা চলে।

সাশ্রয়ী

ফিচার ফোন কিন্তু বেশ সুলভ মুল্যে পাওয়া যায়। স্মার্টফোনের চেয়ে অনেক অনেক কম দামে পাওয়া যায় ফিচার ফোনগুলো। একটি ভালো স্মার্টফোন কিনতে যেখানে অনেক অনেক টাকা খরচ করা বর্তমানে বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে সেখানে ফিচার ফোন বেশ অল্প দামেই পাওয়া যায় ও যেকেউ কিনতে পারেন।

👉 ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত বাটন ফোন

ফিচার ফোন এর অসুবিধা

ফিচার ফোনের অনেক গুণগান তো শুনলেন। এবার শুনে নেওয়া যাক ফিচার ফোনের কিছু অসুবিধা সম্পর্কে। তবে বলে রাখা ভালো আপনি যদি শুধুমাত্র ফিচার ফোন ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে এসব সমস্যা, সেকেন্ড ফোন হিসেবে একটি ফিচার ফোন বা স্মার্টফোন যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে এসব কোনো সমস্যাই নয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার অনুপস্থিতি

বেসিক ফিচার ফোনকে আপনার প্রাইমারি ফোন হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে সোশ্যাল মিডিয়ার অনুপস্থিতি। বেসিক ফোনে টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইউটিউব, ইত্যাদি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই যা ফিচার ফোন ব্যবহারের ডাউনসাইড।

তবে মজার ব্যাপার হলো সম্প্রতি বাটন ফোন অর্থাৎ ফিচার ফোনেও চলে এসেছে ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহারের সুবিধা। মূলত KaiOS বা কাইওএস এর কল্যাণে ফিচার ফোনগুলোতে এসব ফিচার ব্যবহার সম্ভব হয়েছে।

👉 কাইওএস চালিত কিছু বাটন ফোন, সস্তায় আধুনিক সুবিধা

ভালো ক্যামেরার অভাব

ফোন ক্যামেরা অনেক কাজে লাগে, স্মৃতি জমা রাখা থেকে কাজের প্রয়োজনে ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন অনুভব করি আমরা। এইক্ষেত্রে ফিচার ফোন ব্যবহারে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। বর্তমানে কোনো ফিচার ফোনেই কাজের ক্যামেরা নেই। যেহেতু দামে বেশ কম, তাই এসব ফোন থেকে ভালো ক্যামেরা আশা করাও বোকামি বটে। তবে হ্যা, ফিচার ফোনের কমতির মধ্যে এর ক্যামেরা একটি।

ছোট সাইজ

ফিচার ফোন সাইজে ছোট হওয়া এর সুবিধা অসুবিধা উভয়ের মধ্যেই পড়বে। ফিচার ফোন ছোট হওয়ায় বহন করা তো সহজ, তবে এর স্ক্রিন ও ছোট হওয়ায় অনেকের দেখতে কিংবা ব্যবহার করতে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে যারা স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন একই সাথে ব্যবহার করেন তাদের জন্য বেশ মুশকিল দুই সাইজের ডিসপ্লে ও কিবোর্ড ব্যবহারের অভ্যাস একইসাথে রপ্ত করা।

সফটওয়্যার আপডেট নেই

বেসিক ফোন বা ফিচার ফোনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সফটওয়্যার বা সফটওয়্যার আপডেট এর সুবিধা নেই। অর্থাৎ ফিচার ফোনের ফাংশনালিটি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু এই ফোনগুলো বেসিক তাই এই ধরনের কোনো ফিচার না থাকাই এর মূলমন্ত্র। 

ফিচার ফোন এর সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই বিদ্যমান।  বর্তমানে অনেকে একইসাথে স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন দুটিই ব্যবহার করে থাকেন। এইক্ষেত্রে স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন উভয়ের সুবিধার পাশাপাশি কমতিগুলোও পুরণ হয়ে যায়।

ফিচার ফোন সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত বাংলাটেক এর পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কমেন্ট সেকশনে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *