আইফোন ১৫ নাকি স্যামসাং গ্যালাক্সি S23, কোনটি সেরা?

অ্যাপল তাদের নতুন সিরিজের স্মার্টফোন রিলিজ করেছে। ডাই হার্ড আইফোন ফ্যানদের কাছে যেকোনো নতুন মডেলের আইফোনের সাথে টপ লেভেলের এন্ড্রয়েড ডিভাইসের মধ্যে বেছে নেওয়া খুব কঠিন না হলেও সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী আইফোন ১৫ এর সাথে এন্ড্রয়েডের টপ লেভেলের যেকোনো ফোনের মধ্যে তুলনা করতে চাবে। 

অ্যাপল তাদের ১৫ সিরিজের ফোনগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই পরিবর্তন এনেছে সেটি হলো তারা ২০১২ সালে রিলিজ করা আইফোনের লাইটনিং পোর্টের পরিবর্তে ইউএসবি সি পোর্টে চলে এসেছে। যদিও আইফোনে ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড চার্জিং ব্যবহার করা হয়েছে তবে এন্ড্রয়েডের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য এর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা এবং অফার করা ফিচারগুলো বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। বর্তমান সময়ে এন্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর মধ্যে স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 সিরিজের ফোন অত্যন্ত জনপ্রিয়। 

স্যামসাং তাদের এস২৩ মডেলের ডিভাইসগুলোতে নতুন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে শক্তিশালী চার্জিং সহ ব্যাটারি পারফমেন্স বৃদ্ধি করেছে বিধায় ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে ডিভাইসটি। এতোসকল সুবিধার কারণে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে আইফোন ১৫ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 ফোনের মধ্যে যেকোনো একটি নির্বাচন করা খুবই কষ্টসাধ্য। আমাদের পোস্টে আমরা আইফোন ১৫ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 ফোনের মধ্যে ব্যবহার উপযোগীতার দিক দিয়ে কোনটি এগিয়ে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

ডিজাইন এবং ডিসপ্লে

আইফোন ১৫ সিরিজের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো ফোনটির চার্জিং পোর্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেগুলেশনের কারণে অ্যাপল কোম্পানি তাদের নতুন আইফোন ১৫ ফোনের চার্জিং পোর্টে পুরাতন লাইটনিং ক্যাবলের পরিবর্তে পুনরায় ইউএসবি সি পোর্ট ব্যবহার করা শুরু করেছে। যার ফলে একটি ক্যাবল দিয়েই বিভিন্ন ডিভাইস কানেক্ট করার সুবিধা চালু হয়েছে। কেননা কিছু সময় ধরে ম্যাকবুক এবং অন্যান্য আইপ্যাড ইউএসবি সি লেআউট ব্যবহার করছে। এরই সাথে আইফোন ১৫ এ ৬.১ ইঞ্চির ওলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছরের প্রো মডেলে থাকা ডাইনামিক আইল্যান্ড নামের পিল শেপের নচ এবছরের বেজ মোবাইলেই পাওয়া যাবে। এছাড়া বাকি সকল ডিজাইনিং প্রায় আগের মত করেই দেওয়া হয়েছে যেখানে পিছনের প্যানেলে ফ্রস্টেড গ্লাস এবং সাইডে এলুমিনিয়াম (প্রো মডেলে টাইটানিয়াম) ব্যবহার করা হয়েছে। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 ডিভাইসটিতে ৬.১ ইঞ্চির ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটিতে সুপেরিয়র ডাইনামিক এমোলেড 2X টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে যেটি স্ক্রল করার ক্ষেত্রে ১২০ হার্জ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেটের সুবিধা প্রদান করবে। স্যামসাং এর S সিরিজের ফোনগুলোর মধ্যে স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 ডিভাইসেই সর্বপ্রথম গোরিলা গ্লাস ভিকটাস ২ ব্যবহার করা হয়েছে৷ এটি ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীরা ফোন হাত থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাড়তি ভরসা পাবে। ব্যাকসাইডে ম্যাট গ্লাস লাগানো হয়েছে যেটি এই ফোনকে প্রিমিয়াম লুক প্রদান করে থাকে।

আইফোন ১৫ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 উভয় ডিভাইসেই IP68 ইনগ্রীজ প্রোটেকশন রেটিং ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে দুইটি ফোনই ময়লা এবং ধুলিকণা প্রতিরোধী এবং ১.৫ মিটার গভীর পানির মধ্যে অনায়েসেই ৩০ মিনিট অতিবাহিত করতে পারবে। স্টাইলের দিক দিয়ে উভয় ফোনই তাদের উচ্চতর মান বজায় রেখেছে। তবে আইফোন ১৫ এর তুলনায় স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 ডিভাইসে সামান্য উন্নতর ডিসপ্লে ব্যবহার করা হলেও আইফোন ১৫ এর ডিসপ্লেও কোনো অংশে কম না।

সফটওয়্যার 

অ্যাপল তাদের আইফোন ১৫ এর পাশাপাশি সম্প্রতি তাদের আইওএস ১৭ বাজারে নিয়ে এসেছে। যেটিতে অনেক দারুণ ফিচার সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন আপনি এখন কাউকে ফোন বা কল করলে তাদের স্ক্রিনে নিজের একটি ছবি সংবলিত প্রোফাইল শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া আপনি যেকোনো অডিও মেসেজকে ট্রান্সক্রিপট করে কনভার্ট করতে পারবেন যাতে করে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ গোপনীয়তার সাথে দেখা যায়। এরই সাথে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আপনার লোকেশন শেয়ার করা আরো অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এ এন্ড্রয়েড ১৩ এর পাশাপাশি স্যামসাং এর নিজস্ব ওয়ান ইউআই ৫.১ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটি এন্ড্রয়েড ১৪ তে আপডেট করার সুবিধা রয়েছে। স্যামসাং এর এন্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি এবং কন্ট্রোল প্রদান করে থাকে। এছাড়া ব্যবহারের মসৃণতা আনার ক্ষেত্রে এটি খুব ভালো ভাবেই আইফোনকে টক্কর দিতে পারবে। স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 তে DeX এর মতো প্রোডাক্টিভিটি ফিচার সাপোর্ট করে। যার ফলে আপনি যদি আপনার ফোনকে কম্পিউটার মনিটর বা টিভির সাথে কানেক্ট করেন তাহলে এটি কম্পিউটারের মতো কাজ করবে। যেখানে আপনার টাচস্ক্রিন একটি অস্থায়ী মাউস হিসেবে কাজ করবে এবং অ্যাপগুলো তাদের লেআউট কম্পিউটারের মতো করে ফেলবে।

পারফমেন্স 

পারফমেন্সের ক্ষেত্রে দুইটি ফোনই প্রায় সম পরিমান সেবা দিয়ে থাকে। বেশ কিছু ক্ষেত্রেই আইফোনের A16 বায়োনিক চিপ স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এর স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ এর বিরুদ্ধে পারফেক্ট প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করে। তবে গ্রাফিক্স টেস্টিং এর ক্ষেত্রে স্যামসাং আইফোনকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে সকল দিক বিবেচনা করলে পারফমেন্সের ক্ষেত্রে দুইটি ফোনই প্রায় সমান ভারসাম্য বজার রাখবে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

iPhone 15 vs galaxy s23

ক্যামেরা

অ্যাপলের নতুন আইফোন ১৫ মডেলে প্রধান ক্যামেরা হিসেবে ৪৮ মেগা পিক্সেলের সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। আইফোনের পুরাতন প্রো মডেলে এতো বেশি মেগা পিক্সেলের সেন্সর ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে বলা যায় বেজ মডেলের ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় একটি আপগ্রেড। প্রধান ক্যামেরার পাশাপাশি আইফোন ১৫ এ ১২ মেগা পিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সরের সাথে সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ১২ মেগা পিক্সেলের সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। 👉 আইফোন ১৫ প্রো ব্যবহারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ

স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এ প্রধান ক্যামেরা হিসেবে ৫০ মেগা পিক্সেলের পাশাপাশি ১২ মেগা পিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স এবং ১০ মেগা পিক্সেলের টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। সেলফি ক্যামেরা হিসেবেও ১২ মেগা পিক্সেলের সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে। ক্যামেরার দিক দিয়ে মূলত দূরের ছবি তোলার ক্ষেত্রে স্যামসাং আইফোনকে হারিয়ে দিবে। স্যামসাং অনেক দূরের ছবি খুব ভালো করে তুলতে পারলেও আইফোন এদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকবে। 

স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 দিয়ে 8K ভিডিও ২৪/৩০ এফপিএস এবং 4K ভিডিও ৩০/৬০ এফপিএসে শুট করা সম্ভব। তবে আইফোন ১৫ ব্যবহার করে আপনি 4K ভিডিও পর্যন্ত ২৪/৩০/৬০ এফপিএসে শুট করতে পারবেন। যদিও আপনি আইফোন ব্যবহার করে 8K তে ভিডিও করতে পারবেন না তবে 4K বা এইচডি ভিডিও এর রেজুলেশনের ক্ষেত্রে এটি স্যামসাংকে হারাতে সক্ষম। 

👉 স্যামসাং গ্যালাক্সি এ০৫ আসছে সুলভ মূল্যে ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা নিয়ে

ব্যাটারি লাইফ

ব্যাটারির ক্ষেত্রে খুব বেশি একটা পার্থক্য দেখা যায় না। যেখানে আইফোন ১৫ তে ৩৮৭৭ মিলি এম্পিয়ারের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এ ৩৯০০ মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। চার্জিং এর ক্ষেত্রে যদিও স্যামসাং আইফোনের থেকে বেশি সুবিধা প্রদান করে থাকে। আইফোন ১৫ তে ২০ ওয়াটের চার্জিং সুবিধা রয়েছে যেখানে স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 তে ২৫ ওয়াট চার্জিং সুবিধা পাওয়া যায়।

আপনি কোনটি বেছে নিবেন?

স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এবং আইফোন ১৫ দুইটি মডেলের ডিভাইসই দারুন সব ফিচার দিয়ে পরিপূর্ণ। কিছু নির্দিষ্ট ফিচারের ক্ষেত্রে আইফোন তার প্রতিযোগীকে হারালেও সর্ব সাকুল্যে স্যামসাংয়ের এই ডিভাইসটিও কোনো অংশে কম যাবে না। দিন শেষে এটি মূলত নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তার উপরে। আপনার কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটি ফোন নিয়ে নিতে পারেন।

আইফোন ১৫ এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 এর মধ্যে কোন ফোনটি আপনার জন্য বেশি গ্রহনযোগ্য সেটি সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়া নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রয়োজনীয় সকল টিপস এন্ড ট্রিকস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *