যে কারণে গুগল পিক্সেল ২ এর ক্যামেরা সবার থেকে সেরা

সম্প্রতি গুগল প্রকাশ করেছে পিক্সেল ২ এবং পিক্সেল ২ এক্সএল এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন। যেখানে প্রায় সব ফোন নির্মাতা কোম্পানি তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মূল ক্যামেরায় ডুয়াল লেন্স ব্যবহার করছে, সেখানে গুগল তাদের পিক্সেল ২ সিরিজের ডিভাইসে সিঙ্গেল সেন্সরের প্রাইমারি ক্যামেরা দিয়েছে। কিন্তু এই একটিমাত্র লেন্স নিয়েই পিক্সেল ২ এর ব্যাক ক্যামেরার পারফরমেন্স প্রতিযোগী সকল স্মার্টফোন ক্যামেরার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অন্তত ক্যামেরা রিভিউ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ডিএক্সওমার্ক এটাই বলছে। সাইটটির পর্যবেক্ষণে ৯৮ শতাংশ মার্কস পেয়েছে পিক্সেল ২, যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা পেয়েছে ৯৪ পর্যন্ত। চলুন দেখি কেন পিক্সেল ২ ফোনের ক্যামেরা সবার থেকে ভাল।

এইচডিআর+

গত বছর গুগল তাদের প্রথম পিক্সেল সিরিজের ফোনের সাথে এইচডিআর+ ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তি প্রকাশ করে, যা অল্প আলোতেও অবিশ্বাস্য রকম ভাল ছবি দেয়। পিক্সেল ২ সিরিজে এইচডিআর+ আরও উন্নতরূপে এসেছে।

ফিউসড ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন

পিক্সেল ২ ফোনে রয়েছে গুগলের বিশেষ ‘ফিউসড ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন’ প্রযুক্তি যা ভিডিওকে ঝাঁকুনি ও সে সংক্রান্ত ফ্যাকাশে ভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য অপটিক্যাল ও ইমেজ ভিত্তিক স্ট্যাবিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর ফলে পিক্সেল ২ এর ভিডিও আরও ঝকঝকে এবং নিখুঁত হয়।

পোর্ট্রেট মুড

আইফোন ৮ প্লাস ও আইফোন ১০ এর পোর্ট্রেট মুডের কথা মনে আছে তো? ঐ যে ছবি তুলে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করার ফিচারটি? অ্যাপল বলেছিল, আইফোনের পেছনের দুটি ক্যামেরা লেন্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই পোর্ট্রেট মুড ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে থাকে যা তাদের ফ্রন্ট ক্যামেরায় কাজ করেনা। কিন্তু গুগল পিক্সেল ২ ফোনের ফ্রন্ট এবং ব্যাক উভয় ক্যামেরায়ই প্রোর্ট্রেট মুড ফিচার আছে। কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফি এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ফিচারটি কাজ করে।

দুই মডেলেই সমান দক্ষতার ক্যামেরা

পিক্সেল ২ এবং পিক্সেল ২ এক্সএল, উভয় মডেলেই সমান দক্ষতার ক্যামেরা দিচ্ছে গুগল। যেখানে আইফোন ৮ এবং ৮ প্লাস/১০ এর মধ্যে দামে পার্থক্যের কারণে ক্যামেরার দক্ষতায়ও হেরফের রয়েছে।

স্টোরেজ

গুগলের ডেটা সেন্টারে স্টোরেজের কোনো অভাব নেই। তাই এটি পিক্সেল ২ ফোনের সাথে আনলিমিটেড অনলাইন ফটো স্টোরেজ প্রদান করে, যা আর কোনো স্মার্টফোন নির্মাতা দেয় না। ২০২০ সাল পর্যন্ত আপনার পিক্সেল ২ থেকে অরিজিনাল ফটো ও ভিডিও ফাইল বিনামূল্যে আপলোড করা যাবে গুগল ফটোস সার্ভিসে। এরপর অন্যান্য গুগল ফটোস ব্যবহারকারীদের মতই ফ্রি প্ল্যানে আনলিমিটেড (রিসাইজড) ইমেজ আপলোড করা যাবে সেবাটিতে। অপরদিকে অ্যাপল মাত্র ৫জিবি ফ্রি আইক্লাউড অনলাইন স্টোরেজ দেয় তাদের আইফোনের সাথে। ছবি তোলা ও তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও গুগল এগিয়ে রয়েছে।

গুগল লেন্স

এটি হচ্ছে গুগল পিক্সেল ২ এর ক্যামেরা সার্চ ইঞ্জিনের একটি ফিচারের নাম। গুগল লেন্স ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি যেকোনো বস্তুর ছবি তুলে সে সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন। এটি মূলত অনলাইনে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট তথ্য জানায় ব্যবহারকারীকে। স্যামসাংয়ের বিক্সবি এসিস্ট্যান্টেও এরকম একটি ফিচার আছে যা বিক্সবি ভিশন নামে পরিচিত, যদিও গুগলের সার্চ এলগোরিদমের সাথে পেরে ওঠা অন্য কোনো সার্চ সেবার জন্য একটু কঠিনই বলা যায়।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি

এত কিছুর সাথে গুগল পিক্সেল ২ দিচ্ছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি সুবিধা, যার মাধ্যমে বাস্তব ছবি ও ভিডিওর সাথে ভার্চুয়াল বিষয়বস্তু যেমন স্টিকার, ছবি প্রভৃতি প্রাণবন্তভাবে জুড়ে দেয়া যাবে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮, অ্যাপল আইফোন ৮, ৮ প্লাস এবং আইফোন ১০ এও অগমেন্টেড রিয়েলিটি সুবিধা রয়েছে।

গুগল পিক্সেল ২ এর দাম ধরা হয়েছে ৬৫০ ডলার, এবং গুগল পিক্সেল ২ এক্সএল এর দাম ৮৫০ ডলার। ক্যামেরায় আইফোন ৮ প্লাস আপাতত সকল উপলভ্য আইফোন থেকে এগিয়ে। অপরদিকে, স্যামসাং নির্মিত সমসাময়িক সবচেয়ে ভাল ক্যামেরা ফোনের থেকে এগিয়ে আইফোন ৮ প্লাস। সবকিছু মিলিয়ে গুগল পিক্সেল ২ সিরিজের ক্যামেরাকেই এগিয়ে রাখছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তবে আইফোন ১০ বাজারে এলে এই র‍্যাংকিং আবারও নিরীক্ষা করা হবে। সে পর্যন্ত পিক্সেল ২ ফোনেরই সবচেয়ে সেরা ক্যামেরা আছে বলে ধরে নেয়া যায়। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *