রবি ৫জি সম্পর্কে যা আপনার জানা উচিত

রবি দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ৫জি সেবা চালু করেছে ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এই ঘোষণা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ রবি কর্পোরেট সদর দপ্তরে। অনেকেই জানতে চান রবি ৫জি আসলে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে, কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এর সুবিধা কী এবং খরচ কেমন হতে পারে, প্রভৃতি। আজকের এই পোস্টে আমরা রবির ৫জি সেবা নিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় সব তথ্য তুলে ধরব।

রবি ৫জি কোথায় পাওয়া যাচ্ছে?

বাংলাদেশে ৫জি যুগের সূচনা করতে রবি ইতিমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের নেটওয়ার্ক চালু করেছে। ঢাকার ফকিরাপুল (পল্টন এলাকা), শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ, এবং মগবাজার চৌরাস্তার মতো ব্যস্ত এলাকায় রবি ৫জি বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসকারী বা চলাচলকারী গ্রাহকরা চাইলে ৫জি সমর্থিত মোবাইল ফোন দিয়ে সরাসরি নতুন এই প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।

শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য বড় শহরেও রবি ৫জি কভারেজ চালু করেছে। চট্টগ্রামের খুলশি এলাকায় ইতিমধ্যেই গ্রাহকরা ৫জি ব্যবহার শুরু করেছেন। সিলেটেও সাগরদিঘীর পার অঞ্চলে এই সেবা চালু করা হয়েছে, যা স্থানীয় ব্যবহারকারীদের কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। এর ফলে রাজধানীর বাইরে থেকেও রবি গ্রাহকরা ৫জি-র গতি ও মান পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

রবি ধাপে ধাপে তাদের কভারেজ বাড়াচ্ছে। শুরুর পর্যায়ে নির্বাচিত কয়েকটি এলাকা বেছে নেওয়া হলেও, খুব শিগগিরই বিভাগীয় শহরের অন্যান্য অংশ এবং পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও ৫জি সেবা সম্প্রসারিত হবে। এভাবে দেশব্যাপী রবি গ্রাহকরা ধীরে ধীরে ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তি উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।

রবি ৫জি চালাতে কী কী দরকার?

রবি ৫জি ব্যবহার করতে হলে প্রথমেই আপনার একটি ৫জি সাপোর্টেড স্মার্টফোন থাকতে হবে। বর্তমানে বাজারে স্যামসাং, শাওমি, অপ্পো, ভিভো, আইফোনসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের নতুন মডেল ৫জি সমর্থন করে। আপনার ফোনে ৫জি চালু করতে হলে সেটিংসে নেটওয়ার্ক মোডে গিয়ে ৫জি/অটো অপশন অন করতে হবে।

5g image

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ভালো অভিজ্ঞতার জন্য রবি গ্রাহকদের একটি সক্রিয় ৪জি সিম দরকার হবে। আলাদা নতুন সিম নেওয়ার দরকার নেই। তবে নিশ্চিত হতে হবে যে সিমটি সর্বশেষ প্রযুক্তি সমর্থন করছে। এর পাশাপাশি ফোনের সফটওয়্যার এবং সিস্টেম আপডেট থাকা জরুরি। এই কয়েকটি শর্ত পূরণ হলেই আপনি রবির ৫জি ব্যবহার করতে পারবেন।

৫জি’র জন্য কি নতুন ডাটা প্যাক বা সিম দরকার হবে?

অনেকেই ভাবছেন ৫জি ব্যবহার করতে গেলে হয়তো নতুন সিম বা আলাদা ডাটা প্যাক কিনতে হবে। তবে রবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান ৪জি সিম দিয়েই ৫জি চালানো সম্ভব। অর্থাৎ, আপনার ফোরজি সিম থাকলেই নতুন সিম কিনতে হবে না।

ডাটা প্যাকের ক্ষেত্রেও এখনো কোনো আলাদা ৫জি প্যাকেজ চালু করা হয়নি। আপনি বর্তমানে যে ইন্টারনেট প্যাক ব্যবহার করছেন, সেটিতেই ৫জি উপভোগ করতে পারবেন। তবে ভবিষ্যতে যখন ৫জি পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত হবে, তখন বিশেষ ৫জি প্যাক বা স্পিড-অপ্টিমাইজড অফার আসতে পারে।

৫জি-র দাম বেশি হবে?

৫জি চালু হওয়ার পর থেকেই অনেকের মনে প্রশ্ন, ৫জি কি ৪জি-র চেয়ে বেশি খরচের হবে? বর্তমানে রবি সীমিত আকারে ৫জি চালাচ্ছে এবং গ্রাহকরা বিদ্যমান ডাটা প্যাক দিয়েই এই অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। তাই এখনই অতিরিক্ত খরচ নেই।

তবে ভবিষ্যতে যখন ৫জি পুরোপুরি চালু হবে, তখন খরচ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চ ব্যান্ডউইডথ এবং নতুন অবকাঠামো প্রয়োজন, যা অপারেটরদের জন্য ব্যয়বহুল। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রবি সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী প্যাকেজই আনবে বলে আশা করা যায়।

👉 ৫জি কি? ৫জি এর সুবিধা কি? জানুন

কভারেজ কত দ্রুত বাড়বে?

রবি ইতিমধ্যেই দেশের বড় বড় শহরে ৫জি চালু করেছে। এখন তাদের মূল লক্ষ্য হলো ধীরে ধীরে কভারেজ বাড়ানো। প্রথমে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে এটি প্রসারিত হবে। এর পর জেলা শহর, শিল্পাঞ্চল এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক এলাকায় কভারেজ দেওয়া হবে।

পুরো বাংলাদেশে ৫জি বিস্তৃত হতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ এর জন্য নতুন টাওয়ার, ফাইবার নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তবে সরকার এবং অপারেটররা একসঙ্গে কাজ করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের সর্বত্র ৫জি পৌঁছে যাবে। রবি এ দিক থেকে আগ্রসর ভূমিকা রাখছে, যাতে গ্রাহকরা দ্রুততম সময়ে সর্বত্র ৫জি সেবা পেতে পারেন।

৫জি ব্যবহারের সুবিধা এবং সতর্কতা

৫জি প্রযুক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারের ধারা পাল্টে দেবে। এর প্রধান সুবিধা হলো বিদ্যুৎগতির স্পিড এবং অতি কম ল্যাটেন্সি। ফলে ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সে হাই কোয়ালিটি ভিডিও স্ট্রিমিং, ক্লাউড গেমিং কিংবা অনলাইন মিটিং হবে একেবারে ঝামেলামুক্ত। গেম খেলতে গিয়ে ল্যাগের ঝামেলা থাকবে না, ফাইল ডাউনলোড হবে কয়েক সেকেন্ডে, আর হাই-ডেফিনিশন ভিডিও কল হবে আরও পরিষ্কার।

এছাড়া স্মার্ট সিটি, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কিংবা এআই-ভিত্তিক সেবার মতো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জন্য ৫জি অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে।

তবে কিছু সতর্কতাও রয়েছে। প্রথমত, ৫জি এখনো সর্বত্র উপলব্ধ নয়, তাই একই মানের অভিজ্ঞতা সবার জন্য নাও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বেশি স্পিড মানে ডেটা দ্রুত শেষ হতে পারে। তাই প্যাকেজ ব্যবহার সচেতনভাবে করতে হবে। আর সব ফোন এখনও ৫জি সমর্থন করে না, তাই নতুন ফোন কেনার আগে সেটি যাচাই করা উচিত।

👉 গ্রামীণফোন ৫জি সম্পর্কে যে তথ্য আপনার জানা দরকার

শেষ কথা

রবি ৫জি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এখনো এটি সীমিত পর্যায়ে থাকলেও আগামী দিনে এটি হবে সবার জন্য অপরিহার্য। দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড, উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন সম্ভাবনার জগতে প্রবেশ করাতে ৫জি বড় ভূমিকা রাখবে।

আপনার যদি ৫জি সাপোর্টেড ফোন এবং সক্রিয় রবি সিম থাকে, তবে নির্দিষ্ট এলাকায় থেকেই আপনি এখনই ৫জি অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। আর খুব শিগগিরই এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে, যা আমাদের ডিজিটাল জীবনযাত্রাকে আরও গতিশীল করে তুলবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,427 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *