ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করার নিয়ম (এবং জরুরি টিপস)

বর্তমান সময়ে কার্ড ভিত্তিক লেনদেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুতেই প্লাস্টিক মানি অর্থাৎ ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। অনলাইন শপিং, রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়া এমনকি এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রেও কার্ড একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠছে।

ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সাথে সাথে এর সুরক্ষার ব্যাপারেও মানুষের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়। ডেবিট কার্ডের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো পিন কোড ব্যবহার করা। পিন কোড এর পূর্ণ রুপ হলো পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। আজকের আর্টিকেলে আমরা ডেবিট কার্ডে পিন তৈরি করা সহ ডেবিট কার্ডের পিন তৈরির ক্ষেত্রে যেসকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

একটি ডেবিট কার্ড পিন হলো একটি সাংখ্যিক নাম্বার যা আপনি লেনদেন করার সময় আপনার পরিচয় শনাক্তকরণ এর জন্য ব্যবহার করা হয়। সেটি একটি পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে যার মাধ্যমে ব্যাংক একটা বিষয় নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র আপনি বা আপনার অনুমিত কেউ যেন আপনার একাউন্ট এক্সেস করতে পারে। আপনি যদি আপনার ডেবিট কার্ডের পিন নির্ধারণ করতে চান কিংবা পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে আমাদের আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে।

যখন ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করার ব্যাপার আসে তখন মূলত অনেক উপায়েই পিন তৈরি করা যায়। ব্যাংকের এটিএম, কাস্টমার কেয়ার কিংবা নেট ব্যাংকিং অথবা ফোন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ডেবিট কার্ডের পিন নাম্বার পরিবর্তন বা নতুন করে তৈরি করা যায়। এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো –

ATM মেশিনের মাধ্যমে 

নতুন ডেবিট কার্ডে পিন তৈরি করার জন্য অন্যতম উপায় হলো ATM বুথের মাধ্যমে করা। আপনার ব্যাংকের নিকটস্থ এটিএম বুথে গিয়ে যেকোনো সময় কাজটি করতে পারবেন। পিন সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন ইউনিক একটি পিন হয় যাতে করে নিরাপত্তা জনিত কোনো ঝুঁকি না থাকে। বলে রাখা ভাল, এটিএমের মাধ্যমে পিন সেট করার পদ্ধতি অনেক ব্যাংকে উপলভ্য না-ও হতে পারে। এছাড়া আলাদা আলাদা ব্যাংকে আলাদা আলাদা এটিএম মেশিন থাকায় সেগুলোর কর্মপদ্ধতিও আলাদা হবে। তবে মূলনীতি সবার জন্যই সমান। এটিএম মেশিনের মাধ্যমে পিন নাম্বার তৈরি করার সাধারণ নিয়ম গুলো হলো-

  • ব্যাংক কর্তৃক প্রদান করা সিল করা খামটি খুলে ৪ ডিজিটের পিন দেখে নিন।
  • এটিএম কার্ডের মধ্যে ডেবিট কার্ড প্রবেশ করান। 
  • তারপর আপনার ডেবিট কার্ড নাম্বার এবং ব্যাংক থেকে প্রদত্ত পিন প্রবেশ করুন।
  • এরপর আপনি নতুন পিন তৈরি করার প্রমট সামনে দেখতে পারবেন। 
  • এখানে আপনি আপনার নতুন পিন তৈরি করে ফেলুন।

যদিও বর্তমানে অন্যান্য উপায়গুলো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে।

নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে

যদি আপনি অনলাইনে ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করাকে প্রেফার করে থাকেন তাহলে আপনি আপনার ব্যাংকের নেট ব্যাংকিং পোর্টালের মাধ্যমে ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য নিম্ন লিখিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করুন-

  • ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং পোর্টালে লগ ইন করুন।
  • পোর্টালে ডেবিট কার্ড সেকশন ভিজিট করুন।
  • জেনারেট পিন অথবা ক্রিয়েট পিন অপশনটি নির্বাচন করুন।
  • সেখানে দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনার পছন্দমতো পিন তৈরি করে ফেলুন।

তবে অনলাইনে পিন তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার ডেবিট কার্ড ডিটেইলস এবং পারসোনাল ইনফরমেশন নিজের কাছে উপলব্ধ রেখে তারপর করা উচিত।

ফোন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে 

যদি আপনি এটিএম বা নেট ব্যাংকিং এ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করে থাকেন তাহলে আপনি ফোন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করতে পারেন। সেজন্য আপনাকে নিম্নোক্ত উপায় অবলম্বন করতে হবে-

  • ব্যাংক থেকে আপনাকে যেই হেল্পলাইন নাম্বার সরবরাহ করা হয়েছে সেই নাম্বারে কল করে ব্যাংকের রিপ্রেজেনটেটিভ এর সাথে কথা বলে আপনার ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করে নিতে হবে।
  • ফোন কলে রিপ্রেজেনটেটিভ যেসকল কাজ করতে বলবে সেগুলো অনুসরণ করে আপনি এই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

ফোন ব্যাংকিং বর্তমানে ডেবিট কার্ডের পিন কোড তৈরির সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত উপায়। তাই এর মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনার কার্ডের পিন কোড তৈরি করে নিতে পারেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

debit card pin best practices

👉 ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের CVV নাম্বার কি? সিভিভি নম্বরের ব্যবহার জানুন

পিন তৈরি করার ক্ষেত্রে যেসকল দিক খেয়াল রাখতে হবে

ডেবিট কার্ডের নিরাপত্তার জন্য একটি ভাল পিন সেট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। তবে ডেডিট কার্ড এর পিন তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যাতে করে এটি সুরক্ষিত থাকে। পিন তৈরি করার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা নিম্নে দেওয়া হল –

সহজে যাতে অনুমান করা না যায় 

পাসওয়ার্ড বা পিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি শক্ত পাসওয়ার্ড বা পিন ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন কেউ খুব সহজে অনুমান করতে না পারে। 

পারসোনাল ইনফরমেশন না দেওয়া 

আমরা অনেক সময় আমাদের পারসোনাল কিছু তথ্য পিন বা পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করি, যেমন আমাদের জন্ম তারিখ, জন্ম সাল, বিবাহ বার্ষিকী, ফোন নাম্বার কিংবা আমাদের এড্রেসের কিছু অংশ। তবে এ সকল তথ্য পাসওয়ার্ড বা পিন হিসেবে ব্যবহার করা মোটেই নিরাপদ নয়। এটি চাইলে খুব সহজেই অনুমান করে কার্ডের এক্সেস পাওয়া যাবে।

পরপর কিংবা পাশাপাশি সংখ্যা না ব্যবহার 

পর পর বা পাশাপাশি কোন সংখ্যা কার্ডের পিন নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করা মোটেই ঠিক না। যেমন: 1234, 4567, 2222, 3333, 0000 ইত্যাদি। এ সকল সংখ্যা খুব সহজেই অনুমানযোগ্য এবং কেউ যখন একাউন্টে এক্সেস নেয়ার চেষ্টা করবে তখন সর্বপ্রথম তারা এ সকল নাম্বার ব্যবহার করবে। 👉 এটিএম কার্ড কি? এর সুবিধা-অসুবিধা ও বিস্তারিত জানুন

কার্ডে পিন সংরক্ষন

আপনার ডেবিট কার্ডের গোপনীয় পিন নাম্বার কখনো কার্ডের উপরে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার নিজস্ব পিন নাম্বার নিজে মনে রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। তবে আপনি চাইলে সুরক্ষিত নোটবুকে কিংবা ক্লাউড এ সেভ করে রাখতে পারেন।

কার্ড হস্তান্তর করা যাবে না

আপনার ডেবিট কার্ড একান্তই আপনার নিজস্ব জিনিস। আপনার কার্ড পিন নাম্বার সহ অন্য কারো মাধ্যমে কেনাকাটা বা টাকা উত্তোলন করানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি করলে আপনি পরবর্তীতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। 

POS লেনদেনের সময় সাবধানতা

পিওএস লেনদেন করার সময় আপনার কার্ডের পিন নাম্বার আপনি নিজেই প্রদান করুন। কখনো ক্যাশিয়ার বা অন্য কারো নিকট আপনার পিন নাম্বার শেয়ার করবেন না। 👉 ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর ভুলে গেলে করণীয়

একাধিক কার্ডের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পিন নাম্বার

আপনার যদি একাধিক ব্যাংকের ডেবিট ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে প্রত্যেকটি কার্ডের জন্য আলাদা আলাদা পিন নাম্বার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে যদি কখনও অসাবধানতা বসত আপনার পিন অন্য কেউ জেনে যায় তাহলে আপনার সকল কার্ডের অর্থ ঝুকির মুখে পড়বে না। তবে ভিন্ন পিন নাম্বার মনে রাখায় যদি আপনার সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে অতি নিরাপত্তার স্বার্থে আপনার পিন নম্বর অতি সাবধানতার সাথে সংরক্ষণ করুন। 

কিছু দিন পর পর পিন পরিবর্তন

আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর সকল স্টেটমেন্ট নিয়মিত চেক করুন যাতে কোনো অনিয়ন্ত্রিত ট্রানজেকশন না হয়ে থাকে। এছাড়া কিছুদিন পর পর আপনার ডেবিট কার্ডের পিন নাম্বারটি পরিবর্তন করুন। এতে করে আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। 

একটি ডেবিট কার্ডের পিন তৈরি করা খুবই সহজ যা এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং কিংবা ফোন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। আপনার ডেবিট কার্ডকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা খুব জরুরি। কখনোই আপনার পিন কাউকে শেয়ার না করা, সবসময় একটি শক্তিশালী পিন ব্যবহার করা, ডেবিট কার্ড সাবধানে পরিচালনা করা ইত্যাদি আপনাকে প্রতারকদের হাত থেকে আপনার অর্থ রক্ষা করতে সহায়তা করবে। 👉 ব্র‍্যাক ব্যাংকে কার্ড ছাড়াই এটিএম থেকে টাকা তোলার উপায়

মনে রাখবেন, আপনার একাউন্টে অনিয়ন্ত্রিত কিংবা অননুমোদিত এক্সেস রোধ করার জন্য সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সর্বদা উত্তম। তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং সম্ভাব্য হুমকি থেকে আপনার ডেবিট কার্ডকে রক্ষা করুন। ডেবিট কার্ডের নিরাপত্তা সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। নিত্য নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক সকল প্রকার আপডেট এবং টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *