শাওমির তৈরী রেডমি, পোকো ও মি সিরিজের ফোনগুলোতে দেখা মিলে মি একাউন্ট এর। তবে এই Mi Account সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো ধারণাই নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক শাওমি মি একাউন্ট কী, মি ক্লাউড কী, মি একাউন্ট খোলার নিয়ম, Mi Account এর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে কি করবেন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।
মি একাউন্ট কি? – What is Mi Account?
মি একাউন্ট হলো শাওমি প্রদত্ত একটি সার্ভিস যা দ্বারা ব্যবহারকারীগণ শাওমির বিভিন্ন সার্ভিস ও প্রোডাক্টসমুহে সাইন-ইন করে ডিভাইসমুহের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারে। মি একাউন্টকে অনেকটা অ্যাপল এর আইফোন ও অন্যান্য ডিভাইসমুহে থাকা অ্যাপল একাউন্ট এর সাথে তুলনা করা চলে।
তবে শাওমি এর ফোনসমুহ ব্যবহারে মি একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক নয়। ব্যবহারকারী চাইলে এটি ব্যবহার করার বা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মি একাউন্ট মূলত ডিভাইসমুহের মধ্যে একই ডাটা সিন্ক (Sync) এর ধারা বজায় রাখার একটি মাধ্যম।
মি ক্লাউড
প্রতিটি মি একাউন্ট মি ক্লাউড এর সাথে সংযুক্ত থাকে, যেখানে প্রতিটি নতুন ব্যবহারকারী একাউন্টের সাথে ৫জিবি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ পেয়ে থাকে। এই ক্লাউড স্টোরেজে ছবি থেকে শুরু করে কন্টাক্ট নাম্বার, মেসেজ, এমনকি নোট পর্যন্ত সেভ করে রাখা যায়।
মি একাউন্টের সাথে ৫জিবি ফ্রি মি ক্লাউড স্টোরেজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। যেকোনো কাজেই ব্যবহারকারী এই ফ্রি স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারেন। আবার ব্যবহারকারী চাইলে তাদের প্রয়োজনে মি ক্লাউড স্টোরেজে বাড়তি স্পেসও কিনতে পারে।
আপনি যদি আপনার মি একাউন্টের মি ক্লাউড স্টোরেজ বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই মি ক্লাউড এ স্পেস কিনতে পারেন। ৫০জিবি স্পেস এর দাম পড়বে বাৎসরিক ১১ ইউরো করে। ২০০জিবি স্পেস নেওয়া যাবে বাৎসরিক ৩৫ ইউরোর বিনিময়ে। এছাড়াও ১টেরাবাইট (টিবি) স্টোরেজ নেওয়ার সুযোগও রয়েছে, যার জন্য গুণতে হবে প্রতিবছর ১০০ ইউরো।
মি একাউন্ট এর সুবিধাসমুহ
মোবাইল বা ব্রাউজার, যেকোনো ডিভাইস থেকেই মি একাউন্ট বা মি ক্লাউড খুব সহজেই অ্যাকসেস করা যায়। মি একাউন্ট খুলে নিম্নে বর্ণিত সুবিধাসমুহ পাওয়া যায়।
আপনি যদি আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি বদলাতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার ফোনবুকে থাকা কন্টাক্ট নাম্বারগুলো মি ক্লাউডে আপলোড করে রাখলে কোনো সমস্যা ছাড়াই পরবর্তীতে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও কল হিস্ট্রিও সেভ রাখার সুবিধা রয়েছে মি ক্লাউডের মাধ্যমে।
একইভাবে ফোনে আসা বিভিন্ন এসএমএস এর মধ্যে অনেক গুরত্বপূর্ণ মেসেজ ফোন হারিয়ে ফেললে কিংবা পরিবর্তন করলে হারিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে মি একাউন্ট এর মাধ্যমে ব্যাকাপ নিয়ে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
কন্টাক্ট ও মেসেজ এর পাশাপাশি আপনার গ্যালারিতে থাকা ছবি ও ভিডিও ও সেভ করে রাখা যাবে মি একাউন্ট এর মি ক্লাউডে। ফোন থেকে ডিলিট করে দিলেও মি একাউন্টে থাকা ছবি বা ভিডিও এর ব্যাকাপ পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মি একাউন্ট এর মি ক্লাউড স্টোরেজে অবশিষ্ট স্পেসের দিকেও নজর রাখা জরুরি।
আরো জানুনঃ আসল শাওমি ফোন চেনার উপায়
শাওমি এর নোটস অ্যাপ এর মাধ্যমে সেভ করা সমস্ত নোট ও রেকর্ডার অ্যাপ এর মাধ্যমে রেকর্ড করা ভয়েস নোটসমুহও সংরক্ষণ করা যাবে মি ক্লাউডে। এর মাধ্যমে যেকোনো ডিভাইসে আপনার নোটসমুহ সংরক্ষিত থাকবে।
মি একাউন্ট এর সবচেয়ে কাজের ফিচার বলতে হবে এর ফাইন্ড মাই ডিভাইস (Find My Device) ফিচারটি। আপনার ফোন যদি হারিয়ে যায় কিংবা খুঁজে না পান, সেক্ষেত্রে অন্য কোনো ডিভাইস থেকে মি একাউন্টে লগিন করলে জিপিএস এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার শাওমি মোবাইল খুঁজে বের করতে পারবেন। এটা অনেকটা অ্যাপল ও গুগলের ফাইন্ড মাই ডিভাইস ফিচারের মতই।
উল্লিখিত ফিচারসমুহের পাশাপাশি ক্যালেন্ডার ইভেন্টসমুহ সংরক্ষণ করা যায় মি একাউন্ট এর মি ক্লাউড ব্যবহার করে। এছাড়াও মি ব্রাউজারের হিস্ট্রি, বুকমার্ক ইত্যাদি সেভ করা যায়।
এসবের পাশাপাশি আপনার একাধিক ডিভাইসে মি একাউন্ট ব্যবহার করলে আপনার টাইপিং ডিকশানারিকে বুঝে নেয় মি ক্লাউড ও কিবোর্ড দিয়ে লিখার সময় সেই অনুযায়ী সাজেশনও প্রদান করতে পারে।
আপনার ফোনে যদি মি একাউন্ট লগিন করা থাকে, সেক্ষেত্রে প্রতিবার ফোন রিসেট করার পর উক্ত মি একাউন্টে সাইন ইন করতে হয়। এখন কেউ যদি আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার ফোন রিসেট করে কিংবা চুরি করে তা রিসেট করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে মি একাউন্ট এটি রুখে দেয়।
আরো জানুনঃ অনলাইনে ফাইল রাখার জন্য সেরা ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস কোনটি?
অর্থাৎ মি একাউন্ট এর মূল কাজ হলো মি ক্লাউডের মাধ্যমে আপনার ফাইলগুলোকে সংরক্ষণ করা। এছাড়াও মি একাউন্ট ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া ডিভাইস খুঁজে বের করা যাবে। এসবের পাশাপাশি মি ফোরামে অংশ নিতে কিংবা কোনো ব্যাপারে শাওমিকে রিপোর্ট করতেও মি একাউন্ট এর প্রয়োজন হয়। আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে শাওমি কেন এত জনপ্রিয়, তাহলে এই মি একাউন্টও সেজন্য কিছুটা ক্রেডিট পাবে।
মি একাউন্ট খোলার নিয়ম
Mi account এর সুবিধাসমুহ উপভোগ করতে হলে অবশ্যই আগে একটি মি একাউন্ট খুলতে হবে। এবার জেনে নিই চলুন কিভাবে শাওমি এর মি একাউন্ট খুলতে হয়।
মি একাউন্ট খুলতে যেকোনো ব্রাউজার থেকে মি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন। আপনি চাইলে আপনার ইমেইল আইডি বা ফোন নাম্বার, যেকোনো একটি ব্যবহার করে মি একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
মি একাউন্ট খোলার পেজে ফোন নাম্বার বা ইমেইল, আপনার দেশ ও জন্মতারিখ প্রদান করে “Create Mi Account” বাটন চাপুন। এরপর আপনার ইমেইল বা ফোনে আসা কনফার্মেশন কোড দিয়ে ক্যাপচা পূরণ করলেই খুলে যাবে আপনার মি একাউন্ট।
মি একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড রিকভার
মানুষ হিসেবে যেকোনো পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। মি একাউন্ট এর পাসওয়ার্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। বেশিরভাগ মানুষই তাদের মি একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড ভুলে যান। সেক্ষেত্রে খুব সহজেই মি একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড রিকভার ও রিসেট করা যাবে।
মি একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড রিসেট করতে প্রথমে কোনো ব্রাউজার থেকে মি একাউন্ট লগিন পেজে প্রবেশ করুন। এরপর “Forgot Password” লেখায় ক্লিক করুন।
এরপর আপনার মি একাউন্ট ফোন নাম্বার দিয়ে খুলে থাকলে উক্ত ফোন নাম্বার প্রদান করুন। ফোন নাম্বার প্রদানের ক্ষেত্রে কান্ট্রি কোড অবশ্যই নিশ্চিত করুন। আপনার মি একাউন্ট যদি ইমেইল দিয়ে খুলে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইমেইল প্রদান করুন।
এরপর ফোন নাম্বার প্রদান করলে ফোন নাম্বারে একটি ওটিপি কোড আসবে। ইমেইল আইডি প্রদান করলে ওটিপি কোড আসবে ইমেইলে। ওটিপি কোডটি সঠিকভাবে প্রদান করুন।
এরপর আপনার একাউন্ট রিসেট হয়ে যাবে ও আপনাকে মি একাউন্ট এর জন্য নতুন পাসওয়ার্ড প্রদান করতে বলা হবে। নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার মি একাউন্টের পাসওয়ার্ড সফলভাবে রিসেট সম্পন্ন করুন।
👉 শাওমি MIUI কি? মিইউআই এর সুবিধা কি?
Mi Account কি নিরাপদ?
এবার আসি মি একাউন্ট সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে। যেকোনো ক্লাউড স্টোরেজের ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবহারকারীর প্রধান চিন্তা থাকে৷ শাওমির মি একাউন্ট এর ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন।
শাওমি শুধুমাত্র আপনার ডাটাগুলো নিয়ে তাদের সার্ভারে জমা রাখে এবং আপনি সেগুলো দেখতে চাইলে তা আপনার নিকট তুলে ধরে। অর্থাৎ শাওমি যুক্তিযুক্ত কারণে আপনার কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
এছাড়াও ব্যবহারকারীর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স আরো ভালো করতে মি একাউন্ট এর মাধ্যমে শাওমি ফোনের বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করতে বিভিন্ন রিপোর্ট নিয়ে থাকে। তবে সব ব্যাপারে চিন্তা করাটা অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়, কেননা প্রতিটা ক্ষেত্রেই শাওমি দরকারে আপনার নিকট থেকে তথ্য গ্রহণ করছে।
যেমন ধরুন, আপনার কিবোর্ড অ্যাপ যদি আপনার মাইক্রোফোন এর পারমিশন নেয়, সেটি হতেই পারে। কেননা আপনি যদি ভয়েস টাইপিং করে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিবোর্ড অ্যাপের মাইক্রোফোন অ্যাকসেস করার প্রয়োজন পড়বেই।
শাওমির মি একাউন্টের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি অনেকটা একই। প্রতিটি শাওমি ইউজারের ডাটা চীন ও অন্যান্য সব দেশে শাওমির ডাটা সেন্টারে জমা থাকে। শাওমি তাদের প্রাইভেসি পলিসি পেজে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। মি একাউন্টকে নিরাপদ বলা যেতে পারে। তবে আপনি অবশ্যই নিজ দায়িত্বে এটি ব্যবহার করবেন। আপনার একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষা করা আপনারও দায়িত্ব।
মি একাউন্ট এর বিকল্প
আপনি যদি মি একাউন্ট ব্যবহার না করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনি মি একাউন্ট এর বিকল্প হিসেবে গুগল প্রদত্ত গুগল ক্লাউড সার্ভিসসমুহ, যেমনঃ গুগল ড্রাইভ, গুগল ফটোস, ইত্যাদি, ব্যবহার করতে পারবেন।
আরো জানুনঃ অনলাইনে ফ্রি ব্যাকআপ রাখুন আপনার সব ইমেজ এবং ভিডিও
এছাড়াও আপনি যদি শুধুই ফাইল সংরক্ষণ করতে চান, সেক্ষেত্রে মেগা, ওয়ানড্রাইভ, ইয়ানডেস্ক ড্রাইভ এর মতো বিভিন্ন ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।