কাইওএস চালিত ফোনের সুবিধা জানুন

কাইওএস বর্তমানে টেক দুনিয়ায় খুব পরিচিত একটি নাম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গুগল কাইওএসে বেশ ভালো পরিমাণ বিনিয়োগ করায় সবাই এটির দিকে বাড়তি দৃষ্টি দিচ্ছে। মূলত ফিচার ফোন বা বাটন ফোনের জন্য নতুন প্রজন্মের একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরির লক্ষেই যাত্রা শুরু হয় কাইওএস এর। কাইওএস সাপোর্ট করে এমন ফোনের সংখ্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। 

মোবাইল বা যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইসের প্রাণ হচ্ছে এর অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম যত ভালো হবে তত জটিল সব কাজ করা যাবে সেই ডিভাইসে। তবে জটিল কাজ করতে দরকার প্রসেসিং পাওয়ার। কিন্তু বাটন ফোন বা ফিচার ফোনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে এতে খুব স্বল্প পরিমাণ প্রসেসিং পাওয়ার থাকে। তাই এখানে খুব জটিল কোনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা সম্ভব নয়। আর তাই এই কম শক্তিশালী প্রসেসিং পাওয়ারেও কিছু স্মার্ট ফাংশনালিটি দিতে আধুনিক যুগের কাইওএস তৈরি করা হয়েছে। মূলত সকলের হাতেই স্মার্টফোনের ফিচারগুলো পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে এই অপারেটিং সিস্টেম।

আমাদের পোস্টে মূলত কাইওএস চালিত ফোনগুলোর বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আলোচনা থাকবে। এছাড়া কাইওএস ফোন কী কিংবা কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোনটি কাইওএস ফোন কিনা সে নিয়েও থাকছে বিস্তারিত।

কাইওএস কী?

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইফোনের আইওএস এর মতোই কাইওএস একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। তবে উক্ত দুটি ওএস এর সঙ্গে কাইওএসের পার্থক্য হল আগের দুটি স্মার্টফোনের জন্য তৈরি অপারেটিং সিস্টেম হলেও কাইওএস ফিচার ফোন বা বাটন ফোনগুলোর জন্য তৈরি একটি বেসিক অপারেটিং সিস্টেম। এটি পুরোপুরি স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম না হলেও বেশ কিছু স্মার্ট কাজ এই অপারেটিং সিস্টেম করতে পারে অল্প প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করেই। কাইওএস অন্যান্য মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম থেকে আরেকটি জায়গায় আলাদা। অন্য অপারেটিং সিস্টেম টাচস্ক্রিন ফোনের জন্য তৈরি হলেও এটি তৈরি করা হয়েছে বাটনযুক্ত ফোনের জন্য বিশেষভাবে। আপনি একে অনেকটাই পুরনো যুগের বাটন ফোন আর অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএসযুক্ত স্মার্টফোনের মাঝামাঝি জায়গার ফোন হিসেবে ধরে নিতে পারেন।

কাইওএসের যাত্রা শুরু মূলত ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে। ২০১১ সালে মজিলা ফোনের জন্য নতুন একটি ওয়েব-বেসড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে। এই অপারেটিং সিস্টেম খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি এবং ২০১৬ সালেই তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে মজিলার তৈরি সেই ভিত্তির উপরেই তৈরি হয়েছে কাইওএস। এই অপারেটিং সিস্টেমটিও ওয়েববেসড। ওয়েববেসড অপারেটিং সিস্টেমের সবথেকে বড় সুবিধা হল কম প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহার করেই এটি কাজ করতে পারে। ফলে স্বল্প ক্ষমতাযুক্ত ফোনে এই অপারেটিং সিস্টেম সেরা।

বর্তমান কাইওএসে গুগল বিনিয়োগ করেছে এবং প্রতিনিয়তই এই অপারেটিং সিস্টেমটি আরও উন্নত হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এই অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত বাটন ফোনও বাজারে আনছে নিয়মিত। যেমনঃ নোকিয়া, অ্যাল্কাটেল, এটিঅ্যান্ডটি, জিও, মাইক্রোম্যাক্স, টিসিএল ইত্যাদি। মূলত যারা পুরোপুরি ‘ডাম্বফোন’ ব্যবহার না করে স্বল্প মূল্যে অল্প কিছু স্মার্ট সুবিধাযুক্ত মোবাইল ফোন কিনতে চান তাদের কাছেই কাইওএস ফোন অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কাইওএস ফোনের সুবিধা

তাহলে প্রশ্ন থাকে কাইওএস ফোন কী? সোজা কথায় কাইওএস সাপোর্ট করে বা কাইওএস এ চলে এমন ফোনই কাইওএস ফোন। কাইওএস ফোন বাটন কিংবা ফ্লিপ ফোন হবে। আগের দিনের ফোনগুলোর মতো দেখতে হলেও এতে অনেকরকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে খুব সহজেই।

কাইওএস অপারেটিং সিস্টেম ৪জি, ভোল্টিই, জিপিএস, ওয়াইফাই ইত্যাদি অত্যাধুনিক সুবিধা সাপোর্ট করে। ফলে বাটন ফোনেও এসব সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব হয়। সাধারণ বাটন বা ফ্লিপ ফোনে আপনি এই সকল সুবিধা পাবেন না। কিন্তু কাইওএস যুক্ত ফোনে এই ফিচার সবগুলোই উপস্থিত থাকবে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার বা অ্যাপ ব্যবহার করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় কাইওএস ফোনে।

কাইওএস ফোনের আরেকটি বড় সুবিধা অ্যাপ সাপোর্ট। কাইওএস ফোনে অন্য স্মার্টফোনের মতোই ইন্সটল করা যায় অ্যাপ। অ্যাপ ইন্সটল করতে আলাদা অ্যাপ স্টোরও রয়েছে। যদিও এই ফোনে অ্যাপের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অ্যাপ অফিসিয়ালভাবেই পাওয়া যায় কাইওএসে। যেমনঃ ইউটিউব, গুগল, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, গুগল ম্যাপ্স, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউসি ব্রাউজার। অ্যাপগুলো মূলত আধুনিক এইচটিএমএল৫ ব্যবহার করে বানানো। এছাড়া বর্তমানে কাইস্টোরে ৫০০ এরও বেশি অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে। দিনে দিনে এই অ্যাপের সংখ্যা বাড়ছে। 👉 জাভা ফোন কি? জাভা ফোনের সুবিধা জানুন

অর্থাৎ কাইওএস ফোনে আপনি সহজেই দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন ওয়াইফাই কিংবা ৪জি মোবাইল ডাটার মাধ্যমে। আর একারণে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমান যুগের অত্যাবশ্যকীয় বেশ কিছু কাজও করে ফেলা যায়। যেমনঃ ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, ইমেইল পাঠানো, ভিডিও স্ট্রিম, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ইত্যাদি। এছাড়া ইউসি ব্রাউজারের মতো ব্রাউজিং অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে যে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করাও সম্ভব হয়।

জিপিএস থাকায় রাস্তায় পথ চিনতেও কাইওএস খুবই কাজের। গুগল ম্যাপ্স থাকায় জিপিএস ব্যবহার করে সহজেই নিজের অবস্থান নির্ণয় করে রাস্তা চেনা যায় এই ফোনে যে কোন স্মার্টফোনের মতো করেই। এছাড়া গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য সার্চ করা কিংবা ইউটিউবে ভিডিও দেখার মতো কাজগুলোও সম্ভব হয় বাটন ফোনের ছোট স্ক্রিনের মধ্যেই!

কাইওএস একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট। যে কেউ এখানে অ্যাপ ডেভেলপ করতে পারে। আর তাই স্টোরে নেই এমন অনেক কাজের অ্যাপও আপনি ইন্টারনেট থেকে পেয়ে যেতে পারেন। এসব থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই উৎসের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এর ফলে ফোনের ফাংশনালিটি অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আর তাই ছোট ছোট বিভিন্ন কাজের জন্য বাটন ফোনকেই ব্যবহার করা যায়। এটি আগে কখনও কল্পনাও করা যেত না। অর্থাৎ কাইওএস যত জনপ্রিয় হবে ততই অ্যাপের সংখ্যা বাড়তে থাকবে আর ফোন থেকে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

KaiOS phone benefits

👉 একই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর একাধিক ফোনে ব্যবহারের নিয়ম

কাইওএস কি আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প?

না, কখনই নয়। আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হিসেবে কাইওএসকে তৈরি করা হয় নি। কাইওএস ডিজাইন করা হয়েছে স্মার্টফোন নয় এমন ফোনের জন্য। অর্থাৎ কাইওএস কখনই স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে না। ফলে বাজারে অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএসের বিকল্প তৈরি হয়নি এখনও।

কাদের জন্য এই ফোন?

মূলত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা এখনও স্মার্টফোনের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন না দাম কিংবা এর ব্যবহারবিধি না জানার জন্য তাদেরকে লক্ষ্য করেই তৈরি কাইওএস ফোন। তবে এটি থেকে আরও অনেকেই লাভবান হতে পারেন। ব্যাকাপ বা সেকেন্ডারি ফোন হিসেবে কাইওএস ফোনের জুড়ি নেই। অল্প শক্তিতে চলে বলে কাইওএস ফোন দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকাপ দিতে পারে। কাজেই এই ফোনগুলো স্মার্টফোনের পাশাপাশি অনেকেরই পছন্দের।

কীভাবে পাবেন কাইওএস ফোন কিংবা জানবেন আপনার ফোন এটি সাপোর্ট করে কিনা?

কাইওএস ফোন সহজেই চেনা যায়। মূলত ফোনের ম্যানুয়াল বা অনলাইনে স্পেসিফিকেশন দেখেই কাইওএস ফোন কিনা তা জানা যায়। এছাড়া আপনার বাটন ফোন ৪জি, ওয়াইফাই, জিপিএসের মতো আধুনিক সুবিধা সাপোর্ট করলে সেটি কাইওএসে চলার সম্ভাবনা প্রবল।

এছাড়া আপনি নোকিয়া, জিওফোন, মাইক্রোম্যাক্স ইত্যাদি ব্র্যান্ডের কাইওএস সাপোর্টেড ফোন পেয়ে যাবেন বেশ কম মূল্যেই। ফোন কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কাইওএস অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখ রয়েছে কিনা।

অর্থাৎ কাইওএস ফোন হচ্ছে ফিচার ফোনের ভবিষ্যৎ। ফিচার ফোনেও স্মার্ট ফিচার নিয়ে আসার লক্ষ্যেই কাইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্ম। তাই এ ফোনগুলো ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে এবং বাটন ফোনে আরও অনেক সুবিধা দেবে বলে আশা করা যায়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *