ইলন মাস্কের নাম শুনে থাকলে টেসলা গাড়ির কথাও হয়ত শুনে থাকবেন। বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রিক কার এর বাজারে বাজিমাত করা এই কোম্পানি কেনোই বা এতো জনপ্রিয় – সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই পোস্টে। চলুন শুরু করি!
অসাধারণ ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং
ইলেকট্রিক কার’কে আগে ব্যক্তিগত ব্যবহারের অনুপযোগী ভাবা হলেও এই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে টেসলা। টেসলা মডেল এস এর আগে বাজারে আসা সকল ইলেকট্রিক মডেল দেখতে খুব একটা সুন্দর ছিলনা ও চার্জ হতে প্রচুর সময় প্রয়োজন হতো। এই সকল সমস্যাকে আমলে নিয়ে তৈরী হলো টেসলা মডেল এস যা সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ভেহিকল ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দিয়েছে।
বেশ আকর্ষণীয় ডিজাইনের হয়ে থাকে টেসলা কারগুলো, আবার চার্জ হতে তেমন একটা সময় নেয়না এসব কার। এছাড়া ড্রাইভারের নিরাপত্তাকে বেশ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে টেসলা। মোট কথা, ডিজাইন, পারফরম্যান্স ও চার্জিং, সকল ক্ষেত্রে এ প্লাস পেয়ে তবেই ক্রেতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে টেসলা।
নতুন এক বিপ্লব
একজন ড্রাইভার ইলেকট্রিক কারে সুইচ করার ক্ষেত্রে “রেঞ্জ”কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। গ্যাসোলিন চালিত গাড়ি ব্যবহারে অভ্যস্ত ড্রাইভারদের জন্য টেসলা’র ইলেকট্রিক কার এর চার্জ করার বিষয়টি কিছুটা সমস্যা মনে হতে পারে। তবে টেসলা এই সমস্যার সমাধান করেছে স্পেশাল ব্যাটারি প্যাক ও সুপারচার্জার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে।
বর্তমান সময়ে টেসলা’র ব্যাটারি প্যাক প্রতিযোগিতার সকল ব্যাটারি থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। টেসলা’র মডেলগুলোতে ৩৭০মাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ রয়েছে। ব্যাটারির পাশাপাশি সুপারচার্জার নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে টেসলা, যা টেসলা’র মালিকগণ ব্যবহার করতে পারবেন তাদের ইলেকট্রিক কার চার্জ করতে।
ভবিষ্যতের গাড়ি
টেসলা মানেই কার এর ভবিষ্যৎ – এই বিষয়টি সিইও ইলন মাস্কের পাশাপাশি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সকল টেসলা ব্যবহারকারী। অন্যসব ফিচার একপাশে রেখে টেসলা কার এর অটোপাইলট ফিচার এর কথা ভাবলেই বুঝা যায় যানবাহনের মার্কেটে কতটা এগিয়ে আছে টেসলা। কার এর জন্য নিয়মিত আপডেট, মডেল এক্স ফ্যালকন ডোরের সেন্সর, চার্জার লোকেশন, ইত্যাদি টেসলা সম্পর্কে চমকপ্রদ বিষয়ের মধ্যে অল্প কয়েকটি মাত্র।
টেসলা’র ফ্যান ও গবেষকদের মতে টেসলা কোনো সাধারণ কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নয়। কোম্পানির সিইও ইলন মাস্কের মতানুসারে টেসলা অনেকটা সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে অধিক মানানসই বলা চলে। টেসলা কোনো প্রোডাক্ট তৈরী করে, কাস্টমার ফিডব্যাক নেয় ও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে কার কে আরো উন্নত করে। সুতরাং টেসলা কে “কার অফ দ্যা ফিউচার” বললে ভুল হবেনা।
ইন্টারনেট
টেসলা’র জনপ্রিয়তার পেছনে ইন্টারনেট এর ভুমিকা স্বীকার না করলে মিথ্যা বলা হবে। টেসলা শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনা যায় যা অন্য সকল কার কোম্পানি থেকে টেসলা কে বেশ আলাদা কোম্পানিতে পরিণত করে। বিশ্বব্যাপী টেসলা স্টোর থাকলেও এগুলো ডিলারশিপ নয়, বরং ইনফরমেশন সেন্টার হিসেবে কাজ করে। এসব স্টোরে আপনি টেসলা কার সম্পর্কে জানতে পারবেন, কিন্তু কার কিনতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেসলা’র ওয়েবসাইট থেকেই অর্ডার করতে হবে।
আবার নিজের টেসলা কার নিজের মত করে কাস্টমাইজ করার সুযোগ প্রদান করেছে টেসলা যা টেসলা ফ্যানদের বেশ পছন্দের। আবার ডিলারের মধ্যস্থতা না থাকার কারণে সাশ্রয় হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা, উভয়েরই। ট্রেডিশনাল ডিলারশিপ এর মত পেপারওয়ার্ক এর ঝামেলা ও নেই এখানে। এছাড়া টেসলা স্টোরগুলোতে আপনাকে তাদের কার কিনতে কোনো ধরনের জোড়াজুড়ি করতে দেখবেন না, এসব স্টোর অনেকটা মিউজিয়াম এর মত কাজ করে যেখান থেকে টেসলা কার সম্পর্কে জানা যায়।
👉 স্টারলিংক – স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা যা আপনাকে অবাক করবে
মজার অভিজ্ঞতা
আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করুন না কেনো, টেসলা গাড়ি যে বোরিং নয় এই বিষয়টি সবাই স্বীকার করতে বাধ্য। ২০১৬ সালে ফাস্টেস্ট প্রোডাকশন কারের খেতাব পায় মডেল এস, যা মাত্র ২.৫ সেকেন্ডে ০ থেকে ৬০ মাইল প্রতি ঘন্টায় স্পিড তুলতে পারতো। এছাড়া সাশ্রয়ী দামের টেসলা মডেল ৩ ও মাত্র ৩.২ সেকেন্ডে একই স্পিডে চলতে পারে। আবার ইলেকট্রিক কার হওয়ার বদৌলতে তেমন একটা শব্দ করেনা টেসলা যা অনেকের কাছে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যজনক একটি বিষয়।
ইলন মাস্ক
টেসলা’র সফলতায় ইলন মাস্ক এর ভুমিকা নিয়ে যত আলোচনা করা হবে, তাতে আলোচনা ফুরাবেনা। মাস্ক অন্যসব কোম্পানির সিইওদের মত নন। মাস্কের নেতৃত্বে থাকা সকল কোম্পানির প্রতিটি বিষয়ে তার সম্মতি পাওয়ার পরেই উক্ত বিষয়ে কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালে মাস্কের প্রকাশিত Master Plan এ অত্যন্ত ভালোভাবে বর্ণিত ছিলো মাস্কের এই ইলেকট্রিক কার এর স্বপ্ন।
গতানুগতিক কারের বাইরে এসে দৈনন্দিন ব্যবহারের যানবাহন হিসেবে ইলেকট্রিক কার নির্বাচনে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন ইলন মাস্ক। টেসলা’র ক্ষেত্রে তার ব্রিলিয়ান্ট মার্কেটিং বেশ কাজে এসেছে। বর্তমানে তাকে আর টেসলা’র বিজ্ঞাপন করতেই হয়না, যার কৃতিত্ব বেশিরভাগ যাবে মাস্কের ঝুলিতে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
👉 ইলন মাস্ক সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য
ভবিষ্যতনির্ভর প্রযুক্তির বিষয়ে বর্তমানে ইলন মাস্ককে এক্সপার্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। স্পেসএক্স হোক কিংবা টেসলা, মাস্কের নেওয়া প্রায় সকল সিদ্ধান্ত বেশ ফিউচারপ্রুফ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আবার জ্বালানি-নির্ভর গতানুগতিক যানবাহনের চেয়ে ইলেকট্রিক কার, টেসলা যে কতটুকু কার্যকরী, তা সবার সামনে বেশ ভালোভাবে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে ইলন মাস্ক। অর্থাৎ শুধুমাত্র নিজের লাভে নয়, বরং পরিবেশের কল্যাণে অন্যদের উদ্ধুদ্ধ করার মাধ্যমে আইকনে পরিণত হয়েছে ইলন মাস্ক, যা তার কোম্পানির প্রচারে সাহায্য করেছে।
ইলন মাস্ক যেকোনো বিষয়ে সমস্যার স্বীকার হলে তিনি তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন ও সমাধানের অভাব থাকলে সে দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এবং নেতৃত্বাধীন অন্য আরেক কোম্পানি যেমন স্পেসএক্স এবং এর সেবা স্টারলিংক এ তার এই চিন্তাভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়। আর এখান থেকেই টেসলা ফোন নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা।
👉 মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার যুক্ত করবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক
ব্র্যান্ড লয়্যালটি
পরপর তিন বছর “Most Satisfied Customers” এর এর খেতাব জিতে নেয় টেসলা। Consumer Reports এর তথ্যমতে ৯৮% টেসলা ব্যবহারীগণ তাদের কার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য প্রদান করেছেন। এই বিষয় থেকে টেসলা’র ব্যবহারকারীদের ব্র্যান্ডের প্রতি লয়ালটি প্রমাণ পায়।
এই বিষয়টি আহামরি কিছু মনে না হলেও বাজারে এই ফ্যাক্টরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। Experian Study এর তথ্যমতে একজন ইলেকট্রিক কার এর ক্রেতাদের মধ্যে ৬২% আবারো ইলেকট্রিক কার নির্বাচন করেন তাদের পরবর্তী গাড়ি হিসেবে। এই সংখ্যা টেসলা’র কাস্টমারদের ক্ষেত্রে আরো বেশিঃ ৮০.৫% টেসলা ব্যবহারকারী তাদের পরবর্তী কার হিসেবে টেসলা কে পছন্দ করেছেন। অর্থাৎ টেসলা’র ক্রেতাগণ টেসলা কারের সেবা নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন যা উল্লেখিত তথ্যসমূহ থেকে বেশ স্পষ্ট বুঝা যায়।
👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।