আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে চুরি যাওয়া ফোন!

নায়ক এমএ জলিল অনন্ত’র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (হোয়াট ইজ লাভ) সিনেমার কথা মনে আছে? সেই ছবিতে দেখা যায় নায়িকা মেঘলা যখন অনন্তকে ভুলে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করল তখন অনন্ত তার সীমাহীন কষ্টের কথা জানানোর জন্য নিজের বুক থেকে তরতাজা হৃদপিণ্ড বের করে এনে নায়িকার চোখের সামনে তুলে ধরেন ও এক পর্যায়ে বলেন “(তুমি যখন) আমারই দেওয়া বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিলে তখন ঠিক এইভাবে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আমার হৃদয়টা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়”।

সেই সিনেমায় নায়ক অনন্তর হৃদয় আপনজনের দূরত্ব ও অবহেলা সহ্য না করতে পেরে বোমা ফাটিয়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল। যদিও সেটা কোনো সায়েন্স ফিকশন ছিলনা, তবে ঐ একই কনসেপ্টের ওপর মোবাইল ফোনের জন্য নিজেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়ার মত প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্টফোনের মধ্যে বিশেষ এক ডিভাইস স্থাপন করলে স্মার্টফোনটি হারিয়ে গেলে কিংবা চুরি হয়ে গেলে দূর থেকে কমান্ড দিয়ে ফোনটি ধ্বংস করে দেয়া যাবে।

শুনতে রূপকথার মত মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি! সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই মোবাইল-আত্নঘাতী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম ঐ ছোট্ট ডিভাইসটি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ প্রভৃতি যন্ত্রে ব্যবহার করা যাবে। এর খরচ পড়বে ১৫ ডলার মাত্র।

এই প্রক্রিয়ায় স্মার্টফোনের প্রসেসর, মেমোরি চিপ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের চারপাশে আত্নঘাতী সেই ডিভাইসটি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। এর মূল অংশ পলিমারের তৈরি, যেটি তাপ পেলে আয়তনে সাত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মোবাইলে বা অন্য কোনো মেশিনে এভাবে পলিমারের ঐ ডিভাইস লাগানোর পর দূর থেকে আপনি যদি একে কমান্ড দেন, তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পলিমারের সাথে থাকা ইলেক্ট্রোড ৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ উৎপাদন করবে এবং পলিমারটি আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে তাপ ও চাপ দিয়ে ফোনের মেমোরি চিপ, প্রসেসর এসব গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট করে ফেলবে। এরপর ফোনটি আর কোনো কাজেই লাগবেনা। এর মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে যাবে।

দূর থেকে কীভাবে কমান্ড দেবেন? চোর যদি ফোন বন্ধ করে ফেলে?

সেই সমস্যার সমাধানও থাকার কথা এতে। ফোনের মধ্যে এমন একটি অ্যাপ ইনস্টল করা থাকবে যেটি হয়ত একে পাসওয়ার্ড ছাড়া বন্ধ করতে দেবেনা। এছাড়া জিপিএস সিস্টেম চালু রাখলে আপনি নির্দিষ্ট কোনো এলাকা ঠিক করে দিতে পারবেন, যার বাইরে গেলে ফোনে অটোম্যাটিক আগুন ধরে যাবে। ভয়ের কিছু নেই। এই আগুন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছবির মত বাইরে আসবেনা। শুধুমাত্র তাপ উৎপাদন করে পলিমারের সাহয্যে চাপ দিয়ে ফোনটি নষ্ট করে দেবে। আর ফোনে এরকম কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই দেয়া হবে যাতে এটি বিস্ফোরিত হয়ে অনন্ত’র হৃদয়ের মত ছিন্নবিচ্ছিন্ন না হয়।

এই ডিভাইসটি কারা কিনবেন?

আমি এখনও নিশ্চিত না, এই ধ্বংসাত্বক ডিভাইসটি সাধারণ মানুষজন কিনবেন কিনা। তবে যাদের ফোনে কিংবা ল্যাপটপে অনেক গোপনীয় ডেটা থাকে, তারা তো কিনতেই পারেন।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সিনেমায় মেঘলা ও অনন্ত শেষ পর্যন্ত আবারও মিলেমিশে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। দুজন দুজনকে কাছে টেনে নেয়।

তবে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন একবার নিজের ডেটা সহ যন্ত্রের মেমোরি কার্ড/চিপ ধ্বংস করলে কিন্তু সুপারম্যান এসেও তা আর উদ্ধার করতে পারবেনা। সিনেমা আর বাস্তবতার মধ্যে এই হচ্ছে ফারাক!

প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট। নতুন পোস্টের নোটিফিকেশন ইমেইলে পেতে এই লিংকে গিয়ে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,546 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

https://www.google.com/recaptcha/api.js?ver=1.23