স্পেস বা মহাশূন্য সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিবর্তন করেছে যে কোম্পানিটি সেটি হলো স্পেসএক্স। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট, যা পূর্বে কল্পনার চেয়ে কঠিন ছিলো তা এখন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে স্পেসএক্স এর জন্য। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে নিয়মিত অ্যাস্ট্রোনাট পাঠাচ্ছে স্পেসএক্স।
মঙ্গল গ্রহে বসবাসের বিষয়টি বাস্তবে রুপান্তর করা নিয়ে স্পেসএক্স এর পরিকল্পনার কথা আলাদাভবে উল্লেখ না করলেই নয়। এই পোস্টে জানতে পারবেনঃ
- স্পেসএক্স কি
- স্পেসএক্স এর মালিক কে
- স্পেসএক্স কোন দেশের কোম্পানি
- স্পেসএক্স এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- স্পেসএক্স ও নাসা এর সম্পর্ক
- স্পেসএক্স এর সেরা অর্জনসমূহ
স্পেসএক্স কি?
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত, স্পেসএক্স হলো ইলন মাস্ক এর সেরা উদ্যোগের মধ্যে একটি। মূলত অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন রুপ দিতে ও স্পেস ফ্লাইট আরো সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়াতে স্পেসএক্স এর হেডকোয়ার্টার অবস্থিত, যার বর্তমান কর্মী সংখ্যা ৬,০০০ এর অধিক। এছাড়া সম্প্রতি সাউথ টেক্সাসে নাসা’র কেনেডি স্পেস সেন্টার ও ফ্লোরিডাতে কেপ ক্যানেভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশনে নতুন লঞ্চ সেন্টার স্থাপন করেছে স্পেসএক্স, যেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটসমূহ ল্যান্ড করে।
এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়াতে ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেসেও প্রতিষ্ঠানটির একটি লঞ্চ সাইট রয়েছে।
অ্যারোস্পেস কোম্পানি স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হলেন ইলন মাস্ক। এর অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার ইলন মাস্ক। এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানি।
স্পেসএক্স একটি আমেরিকান কোম্পানি, যা ২০০২ সালে ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু ১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেট এর মাধ্যমে।
স্পেসএক্স এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্পেসএক্স এর বর্তমান চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থালন করা। এই পরিকল্পনা সফল করতে ইতিমধ্যে স্পেসে যাতায়ত খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠান। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরীতে অনেক গুরুত্ব প্রদান করে স্পেসএক্স।
ইলন মাস্ক এর মতে রকেটের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা মানুষকে মাল্টি-প্লেনেটারি প্রজাতিতে রুপান্তর করবে। ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কোনো অ্যাস্টরয়েড আঁছড়ে পড়লে কিংবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের তান্ডবে পৃথিবীর নাজুক অবস্থার সময় মানুষের নতুন বসতিতে যাতায়তের ক্ষেত্রে এই রিইউজেবল বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট এর প্রযুক্তি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। পরবর্তী ৪০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস হবে মঙ্গলগ্রহে, এমন আশা রাখেন ইলন মাস্ক।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
স্পেসএক্স কি নাসা’র সাথে কাজ করে?
হ্যাঁ, ইতিমধ্যে স্পেসএক্স ও নাসা একসাথে অনেক মিশন সম্পন্ন করেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নাসা’র ডাবল অ্যাস্টরয়েড রিডিরেকশন টেস্ট হিসেবে ফ্যালকন ৯ রকেট দ্বারা অ্যাস্টরয়েড স্ম্যাশ করতে ৬৯মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় নাসা ও স্পেসএক্স এর মধ্যে। এই টেস্ট ২০২২ সালে এসে সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়।
এসব সাইন্স প্রজেক্ট বাদ দিলেও যুক্তরাস্ট্রের ন্যাশনাল স্পেস এজেন্সি ও স্পেসএক্স প্রায় একযুগের অধিক সময় ধরে একইসাথে কাজ করে আসছে। ২০০৮সাল থেকে এখন পর্যন্ত নাসা কমার্সিয়াল রিসাপ্লাই সার্ভিসেস এর কাজ স্পেসএক্স এর হাতে। ২০১০সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হওয়া এই স্পেস ফ্লাইট এখনো চলমান রয়েছে।
এছাড়াও নাসা’র বিভিন্ন স্যাটেলাইট অরবিটে স্থাপন করা, মিলিটারি পে’লোড ডেলিভার করা, ইত্যাদি কাজে স্পেসএক্স এর সিংহভাগ লাভের অংশ আসে। ইতিমধ্যে নাসা’র হয়ে মোট ১০০টি লঞ্চ সম্পন্ন করেছে স্পেসএক্স, যার মধ্যে ২০১৮সালে রেকর্ডসংখ্যক ১৯টি লঞ্চ করা হয়েছিলো।
স্পেসএক্স এ বিনিয়োগকারী হিসেবে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র সরকারও রয়েছে। কোম্পানিটি শেয়ার মার্কেটে যায়নি কারণ পাবলিক কোম্পানি হলে এটি উদ্ভাবনের চেয়ে মুনাফার দিকে বেশি ফোকাস করতে পারে এই ভয়ে।
👉 টেসলা ফোন – যেমন হতে পারে ইলন মাস্কের কোম্পানির স্মার্টফোন
স্পেসএক্স এর সেরা অর্জনসমূহ
রকেট ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দিয়েছে স্পেসএক্স এর পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি। স্পেস যে শুধুমাত্র ফ্যান্টাসির স্থান নয়, বরং এতে ব্যাপক পরিমাণ কমার্সিয়াল সুযোগ রয়েছে তা স্পেসএক্স এর মাধ্যমে প্রমাণ করে দেন প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক।
স্পেসএক্স এর ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভি হলো অরবিটাল-ক্লাস রকেট, যা নিয়মিত অরবিটে স্যাটেলাইট ও কার্গো পৌছে দিয়ে থাকে। প্রতিটি ফ্যালকন ৯ এর মূল্য ৬২মিলিয়ন ডলার।
স্পেসএক্স এর অসাধারণ সাফল্যের পেছনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্স এর ড্রাগন ক্যাপসুল। রকেটের মতো এই ড্রাগন ক্যাপসুল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এই ক্যাপসুল ইতিমধ্যে অনেকবার অ্যাস্ট্রোনটদের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছে।
ছয় থেকে সাতজন অ্যাস্ট্রনট বহনে সক্ষম ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল হলো পুরোনো অ্যাপোলো ক্যাপসুল এর আলট্রামডার্ন সংস্করণ। ২০১৯সালে ফ্যালকন ৯ দ্বারা প্রথম ক্রু ড্রাগন ফ্লাইট টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কাজ সম্পন্ন করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে এই ক্যাপসুল।
👉 ইলন মাস্ক সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য
তবে এখনো আগের অ্যাপোলো ক্যাপসুলের মতো পানিতে ল্যান্ড করে ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল। ভবিষ্যতে ক্রু ড্রাগন এর উন্নত সংস্করণে হয়ত সরাসরি লঞ্চপ্যাডে ল্যান্ড করার সুবিধা দেখা যাবে।
স্পেসএক্স এর সবচেয়ে বড় লঞ্চ সিস্টেম ও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অপারেশনাল রকেট হলো ফ্যালকন হেভি। ২০১৮সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবারের মত টেস্ট করা হয় এটিকে। ২৫৫০টন ওজনের এই বিশাল রকেট মূলত তিনটি ফ্যালকন ৯ বুস্টার। দুইটি সাইড-বুস্টার লঞ্চের ১০মিনিটের মধ্যে লঞ্চপ্যাডে একইসাথে ল্যান্ড করে, যেখানে পরের রকেটটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অংশে ল্যান্ড করে।
স্পেসএক্স ও স্পেস ট্যুরিজম
স্পেসএক্স এর ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় এটিকে অন্যসব স্পেস এজেন্সির মত মনে হতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র সাধারণ নভোচারীদের স্পেসে পাঠিয়ে বসে নেই। স্পেস ট্যুরিজম যে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান একটি ব্যবসা, তা ভালো করেই জানেন ইলন মাস্ক। তারই লক্ষ্যে স্পেসএক্স ইতিমধ্যে স্পেসে প্রাইভেট ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে।
👉 এক ঘন্টার মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেবে ইলন মাস্কের রকেট!
অন্য দশটি ঘুরতে যাওয়ার স্থানের মত স্পেস ও যে একটি ট্যুরিজম এট্রাকশন হতে পারে সেই বিষয়ে আশাবাদী থেকে কাজ কাজ করে যাচ্ছে স্পেসএক্স।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।