উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম পিসি বা ল্যাপটপের জন্য সবথেকে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। বর্তমানে বেশিরভাগ পিসিই উইন্ডোজ ১০ অথবা ১১ তে চলছে। উইন্ডোজের এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি ব্যবহার সহজ এবং সবরকমের সফটওয়্যার সহজেই পাওয়া যায় উইন্ডোজের জন্য। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নিয়মিত আপডেট রিলিজ করে থাকে মাইক্রোসফট যাতে পিসি ব্যবহার করতে গিয়ে আপনি কোন সমস্যায় না পড়েন। এসব আপডেটের মাধ্যমে মাইক্রোসফট বিভিন্ন বাগ ফিক্স করে থাকে এবং ফিচার যুক্ত করে থাকে। তাই আপডেট দেওয়া জরুরী ব্যাপার সকল উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর জন্যই।
তবে এতকিছুর পরেও উইন্ডোজে আপনি সাধারণ কিছু সমস্যায় পড়তে পারেন। এসব সমস্যার সমাধানও রয়েছে। প্রায় সবরকম সমস্যার সমাধান আপনি উইন্ডোজের নিজস্ব বিভিন্ন টুলস, সিস্টেম ইউটিলিটি আর ট্রাবলশুটার ব্যবহার করেই পেয়ে যাবেন। এছাড়া কমান্ড প্রম্পট, কন্ট্রোল প্যানেল, অ্যাডভান্সড রিবুট করার মতো বিভিন্ন বিষয় জানা থাকলে নিজেই সহজে এসব সমাধান করে ফেলতে পারবেন। এই পোস্টে আমরা উইন্ডোজের সাধারণ কিছু সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে জানবো।
কোন সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাজ না করা
কোন সফটওয়্যার চালাতে চালাতেই হঠাৎ পুরো উইন্ডো ফ্রিজ হয়ে যেতে পারে।
তখন কিছুই আর কাজ করবে না এবং সব প্রোগ্রামগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি উইন্ডোজের খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটি হয়ে থাকে আপনার পিসি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবার কারণে বা র্যাম সমস্যার কারণে। এসব ক্ষেত্রে যে কাজগুলো আপনি করতে পারেনঃ
- যে অ্যাপ্লিকেশন ফ্রিজ হয়ে গেছে তাকে ঠিক করতে প্রথমে টাস্ক ম্যানেজার খুলুন কীবোর্ডে Ctrl + Alt + Del কী একসঙ্গে চেপে ধরে বা Win + R চেপে রান কমান্ড ওপেন করে টাইপ করুন taskmgr
- যে প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন কাজ করছে না সেটির প্রসেসটি লিস্ট থেকে খুঁজে বের করে তার উপর রাইট ক্লিক করুন। এরপর ‘End task’ সিলেক্ট করে বন্ধ করে দিন সেটি। যদি আপনার কাজ সেভ হয়ে থাকে তবে পুরো পিসি রিস্টার্ট করুন।
এরপর আপনি চেক করে দেখতে পারেন আপনার পিসি অতিরিক্ত গরম হচ্ছে কিনা। পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা, ল্যাপটপের ব্যাটারি সমস্যা, এডাপ্টারের সমস্যা ইত্যাদি কারণে পিসি অতিরিক্ত গরম হতে পারে। এগুলোতে সমস্যা থাকলে দ্রুত তা পরিবর্তন করে ফেলাই ভালো। এছাড়া কুলিং ফ্যান নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। কুলিং ফ্যানে ময়লা জমেও আপনার পিসি গরম হতে পারে। আর র্যাম কম থাকলে আরও র্যাম যুক্ত করা জরুরী। বর্তমানে আধুনিক ল্যাপটপে সাধারণত ৮ জিবি র্যাম থাকে। এর কম র্যাম হলে বাড়তি র্যাম যোগ করে নিতে পারেন।
পিসির ধীরগতি
বিভিন্ন আপ্লিকেশন ফ্রিজ হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি ধরণের সমস্যা হচ্ছে পিসির ধীরগতি। উইন্ডোজ ব্যবহারের সময় ধীরগতির পিসি হলে যে কোন সাধারণ কাজ করতেও ভীষণ বিরক্তি লাগা স্বাভাবিক।
র্যাম বৃদ্ধি ছাড়াও নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে উইন্ডোজ ১১ বা ১০ পিসিকে আপনি দ্রুততর করতে পারেন। নিচের কাজগুলো করলে আশা করা যায় আপনার ধীরগতির পিসির কিছুটা হলেও উন্নতি হতে পারেঃ
- থার্ড পার্টি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার বন্ধ করতে পারেন। উইন্ডোজ ডিফেন্ডার নিয়মিত আপডেট রেখে আপনি সহজেই নিরাপদ থাকতে পারেন।
- ডিস্ক ক্লিনাপ উইন্ডোজের খুব কাজের একটি টুল। সার্চ বারে সার্চ করার মাধ্যমে এই টুল ওপেন করে আপনি উইন্ডোজের বিভিন্ন টেম্পোরারি ফাইল, লগ ফাইল, উইন্ডোজ আপডেট ফাইল, মেমরি ডাম্প ইত্যাদি বিভিন্ন অযাচিত ফাইল ডিলিট করে জায়গা খালি করতে পারেন। এতে আপনার পিসিও কিছুটা দ্রুত কাজ করতে পারবে।
- স্টার্টআপ অ্যাপগুলো ডিজাবল করে দিতে পারেন যেগুলো আপনার দরকার হয় না। Settings -> Apps -> Startup এই স্থানে গিয়ে আপনার যেগুলো লাগবে সেই অ্যাপের সার্ভিস বাদে অন্য সকল সার্ভিস অফ করে দিন। ইন্টেল গ্রাফিক্স কমান্ড সেন্টার, রিয়েলটেক অডিও ড্রাইভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রসেসগুলো রেখে দিতে পারেন।
- পিসি খুব ধীরগতির মনে হলে পুরো পিসি রিসেট করতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্লাউড ডাউনলোড অপশনটি ব্যবহার করলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাইক্রোসফটের সার্ভার হতে লেটেস্ট সিস্টেম ফাইল ডাউনলোড হবে এবং আপনার পিসিতে একদম ফ্রেশভাবে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল হয়ে যাবে। Settings -> System -> Recovery options এ গিয়ে Reset PC -তে ক্লিক করলে ক্লাউড ডাউনলোড অপশনটি পেয়ে যাবেন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
- মাঝেমধ্যে নিয়ম করে আপনার ব্রাউজারের ক্যাশ পরিষ্কার রাখা ভালো একটি অভ্যাস। এতে আপনার পিসিতে কিছুটা বুস্ট পেতে পারেন পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে। পুরান পিসিতে বেশি র্যাম ব্যবহার করে এমন অ্যাপ বা গেম আনইন্সটল করে দিতে পারেন।
👉 উইন্ডোজ ১১ অটো আপডেট বন্ধ করার নিয়ম
ব্লু স্ক্রিন এরর
উইন্ডোজের আরেকটি সাধারণ সমস্যা এটি। এই এরর হবার কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাগ চেক বা স্টপ কোড এরর নামেও একে ডাকা হয়। বিভিন্ন থার্ড পার্টি সফটওয়্যারে সমস্যা, হার্ডওয়্যার, মাইক্রোসফট কোড বা করাপ্টেড মেমরি ইত্যাদি সমস্যায় এই এরর দেখা যেতে পারে।
সব ব্লু স্ক্রিন এররের একটি নিজস্ব এরর কোড থাকে যা ব্লু স্ক্রিন আসবার সময় স্ক্রিনে দেখায়। এই কোডের মাধ্যমে আপনি সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে পারেন গুগলে সার্চ করে। এতে একবার রিস্টার্ট হয়ে পিসি সাধারণত ঠিক হয়ে যায়। তবে এই বার বার হলে সমাধান পেতে সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে উইন্ডোজের অ্যাডভান্সড স্টার্টআপ ফিচার ব্যবহার করা। Settings -> System -> Recovery -> Advanced Startup -> Restart এখান থেকে এই ফিচারে প্রবেশ করতে পারবেন। আনইন্সটল আপডেটস, সিস্টেম রিস্টোর, স্টার্টআপ রিপেয়ার, ফ্যাক্টরি ইমেজ রিস্টোর ইত্যাদি অনেকগুলো টুলের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।
রেজিস্ট্রি এরর
উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি ফাইল অনেক সময় করাপ্টেড হলে উইন্ডোজের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। এই সমস্যার সমাধান করতেঃ
- System Configuration অ্যাপ ওপেন করুন সার্চ বার হতে।
- Services অপশনে গিয়ে Hide all Microsoft services এ টিক দিন।
- লিস্ট থেকে থার্ড পার্টি সকল অ্যাপ ডিজাবল করে দিন। এবার পিসি রিস্টার্ট করলে পিসি ক্লিন বুট এনভায়রনমেন্টে চালু হতে চাইবে।
- যে সফটওয়্যারের রেজিস্ট্রি কী সমস্যা করছে রেজিস্ট্রি এডিটর থেকে সেটির কী ভ্যালু খুঁজে ট্রাবলশুট অনুযায়ী ঠিক করে দিতে পারেন।
- এছাড়াও সাধারণ উইন্ডোজ আপডেটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি সমস্যা একাই সমাধান হয়ে যেতে পারে।
অডিও কাজ না করা
অনেকসময় পিসি বা ল্যাপটপে অডিও না আসতে পারে। ফলে আপনি পিসি থেকে কোনধরনের শব্দ স্পিকারে শুনতে পাবেন না। এই সমস্যার সমাধান করতেঃ
- Control Panel -> Hardware and Sound -> Sound এখানে চলে যান।
- এখানে আপনার স্পিকার বা সাউন্ড আউটপুট ডিভাইসের তালিকা পাবেন যেখানে সবুজ টিকমার্ক থাকবে যে ডিভাইস হতে সাউন্ড বের হবে তার সঙ্গে।
- এছাড়া সাধারণ সাউন্ড সমস্যাগুলো উইন্ডোজ ট্রাবলশুটের মাধ্যমে একাই ফিক্স করতে পারে। এজন্য সার্চবক্স হতে সার্চ করুন “Find and fix problems with playing sound” লিখে এবং ট্রাবলশুটের মাধ্যমে চেষ্টা করুন সমস্যার সমাধানের।
- এই ট্রাবলশুটের পর সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। সাউন্ড ড্রাইভারের সমস্যা থাকলে আপনি অডিও সার্ভিস রিস্টার্ট করতে পারেন রান কমান্ড হিসেবে services.msc এটি টাইপ করে।
👉 উইন্ডোজ পিসিতে সাউন্ড আসছেনা? এভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন
উইন্ডোজে লগিন সমস্যা
সাধারণত পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে লগিন সমস্যার তৈরি হতে পারে। এজন্য পাসওয়ার্ড মনে রাখা জরুরী, দরকার হলে সেটা কোথাও টুকে রাখুন। এরপরও লগিন না করতে পারলে অনেক অ্যাকাউন্ট একসঙ্গে থাকায় লগিন সমস্যা হতে পারে। রান ওপেন করে netplwiz ওপেন করেন। এখান থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে পারবেন। অবশ্যই পিসি সবসময় সঠিক ভাবে উইন্ডোজের শাট ডাউন অপশন থেকে বন্ধ করুন যাতে ভবিষ্যতে লগিন সমস্যায় না পড়তে হয়।
বায়োস সমস্যা
বায়োসের সমস্যা থেকে পুরো পিসি পরিবর্তন করতে হতে পারে আপনাকে। তবে বেশিরভাগ সাধারণ সমস্যা হতে পারে যত্নের অভাবে। উইন্ডোজ রিবুট বা চালুর সময় আপনার পিসির জন্য নির্দিষ্ট বায়োস কী (F2, F6, F12, অথবা Esc) চেপে বায়োস মেনুতে প্রবেশ করতে পারবেন। মেনু থেকে Load defaults অপশন সিলেক্ট করে আপনার পিসির জন্য বায়োসের অফিসিয়াল সেটিং করে নিতে পারেন। এতে সাধারণ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে একবার রিস্টার্ট করবার পরে।
ইউএসবি পোর্ট কাজ না করা
পোর্টের কোন ক্ষতি না হয়ে থাকলে সফটওয়্যারগত কারণে ইউএসবি পোর্ট কাজ না করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি ডিভাইস ম্যানেজার ওপেন করার মাধ্যমে ইউএসবি পোর্ট তালিকা হতে খুঁজে বের করে Properties অপশন চেক করে নিতে পারেন। এখান থেকে ইউএসবি ড্রাইভার আনইন্সটল বা আপডেট করার মাধ্যমে আপনি এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।