২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড দেয়ার মাধ্যমে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করে, যার মাধ্যমে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রিল্যান্সিং তরুণদের কাছে জনপ্রিয় পেশা হলেও এর আগে এধরনের কোন স্বীকৃতি ছিল না। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও ছিল অল্প। সরকারীভাবে এই উদ্যোগ নেবার পরে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। বাইরের দেশের সাথে ফ্রিল্যান্সারদের নিয়মিত লেনদেনের দরকার হয়। তাই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ডুয়াল কারেন্সিতে লেনদেন অত্যন্ত জরুরী।
কিন্তু দেশের বাইরে পেমেন্ট করতে সাধারণত সকলের ট্রাভেল কোটার সীমিত সীমার মধ্যে থেকে পেমেন্ট করতে হয়। তাছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে পাসপোর্ট দরকার হয় এন্ডোরসমেন্টের জন্য। তাই সকলের পক্ষে বাইরের দেশে লেনদেন সম্ভব হয় না।
সরকার ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেয়ার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় অনেক ব্যাংকেই এখন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ইউসিবি ব্যাংকও তার ব্যতিক্রম নয়। ইউসিবি ব্যাংকের স্বাধীন অ্যাকাউন্ট একটি ডুয়াল কারেন্সি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যা ফ্রিল্যান্সারদের ট্রাভেল কোটার বাইরে রেখেই ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনের সুবিধা দিতে পারে।
স্বাধীন অ্যাকাউন্ট কী?
স্বাধীন অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সারদের জন্য যা ফ্রিল্যান্সার পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে খোলা যায়। এটি একটি ডুয়াল কারেন্সি অ্যাকাউন্ট যেখানে ডলার এবং টাকা দুই ধরণের কারেন্সিতেই লেনদেন করা যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে কেউ আপনাকে এই অ্যাকাউন্টে ডলারের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে ৩৫% ডলারে জমা হবে এবং পেমেন্টের বাকি ৬৫% আপনার টাকা হিসেবে জমা হবে।
এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি বড় লেনদেন সহজে করতে পারবেন। পাসপোর্টের কোনো প্রয়োজন হবে না এই অ্যাকাউন্ট খুলতে। দরকার হবে সরকার থেকে দেয়া ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এই অ্যাকাউন্ট থেকে বাইরের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করতে পারবেন সহজে। অর্থাৎ বিদেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্ট বেশ সুবিধা দেবে সকল ফ্রিল্যান্সারকে। এটি ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যাট্রিক্স অ্যাকাউন্টের মতোই ডলারের জন্য একটি ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয় যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের সেবা রপ্তানিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এলসি খুলবার মতো করেই আপনি সংশ্লিষ্ট কোটা হতে লেনদেন করতে পারবেন।
কীভাবে খুলবেন স্বাধীন অ্যাকাউন্ট
ইউসিবি স্বাধীন অ্যাকাউন্ট হচ্ছে একটি ডুয়াল কারেন্সি অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ আপনার সাধারণ একটি সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। আপনার যদি পূর্বেই ইউসিবি ব্যাংকের কোন সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে তবে আপনাকে নতুন করে লোকাল কারেন্সির জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। শুধু ডলার কারেন্সির স্বাধীন ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট খুললেই চলবে। আর যদি না থাকে তবে আপনাকে একটি সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে এর সাথে। সাধারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যেসব কাগজ লাগে সেগুলোই দরকার হবে মূলত। তবে আপনার ফ্রিল্যান্সার পরিচয় প্রমাণ করবার জন্য কিছু বাড়তি জিনিসেরও প্রয়োজন হবে। অ্যাকাউন্ট খুলতে আপনার নিকটস্থ ইউসিবি ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে এই কাগজগুলো নিয়ে। যা যা সাথে নিতে হবেঃ
- গ্রাহকের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র (এনআইডি, পাসপোর্ট ইত্যাদি)
- বাংলাদেশ সরকার দ্বারা প্রদানকৃত বৈধ ফ্রিল্যান্সার আইডি
- পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি
- নমিনির ১ কপি ছবি
- নমিনির ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র
অর্থাৎ শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য বাড়তিভাবে প্রয়োজন হবে। ব্যাংকে এই কাগজপত্রগুলো নিয়ে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে স্বাধীন অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
👉 ঘরে বসে মোবাইলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার উপায়
স্বাধীন অ্যাকাউন্টের সুবিধা
স্বাধীন অ্যাকাউন্টের সবথেকে বড় সুবিধা এটি বিদেশে লেনদেন অনেক সহজ করে দেয় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। ফলে বাইরের দেশ থেকে পেমেন্ট বা বাইরের দেশের ওয়েবসাইটে অনলাইনে পেমেন্ট খুব সহজে করা যায় এই অ্যাকাউন্টের সাথে থাকা ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে। তাছাড়া বাইরে থেকে কোন পেমেন্ট পেলে তার ৩৫ শতাংশ আপনি ডলার কারেন্সিতেই রেখে দিতে পারবেন। বাকি ৬৫ শতাংশ আপনার লোকাল কারেন্সি অ্যাকাউন্টে যোগ হয়ে যাবে।
স্বাধীন অ্যাকাউন্টের সবথেকে বড় সুবিধা এখানে আপনাকে পাসপোর্ট এনডোরস করে অ্যাকাউন্ট করতে হয় না। ফলে আপনার পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক নয়। ট্র্যাভেল কোটার সীমিত সীমার মধ্যে থেকে লেনদেন করতে হয় না। আপনি লেনদেন করবেন সেবা রপ্তানিকারক কোটায়। ফলে আপনার সকল লেনদেন সে অনুযায়ী হিসাব করা হবে। ফলে অনেক বেশি লেনদেন করাও সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।
এই অ্যাকাউন্ট খুলতে কোন ধরণের ইনিশিয়াল ডিপোজিট করার প্রয়োজন নেই। অ্যাকাউন্ট খোলার পর ইউসিবি ব্যাংকের সকল সুবিধা যেমনঃ অ্যাপ, এটিএম, সিআরএম ব্যবহার সকল কিছুই করতে পারবেন। কার্ড ব্যবহার করে সরাসরি ডলার থেকে টাকায় কনভার্ট করে ভালো রেটে এটিএম থেকে টাকা তোলার সুবিধাও দেবে এই অ্যাকাউন্ট।
👉 মোবাইলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক ‘সুবিধা’ অ্যাপ
কী কী প্রয়োজনে ডলার ব্যবহার করতে পারবেন
যেহেতু স্বাধীন অ্যাকাউন্ট আপনার লেনদেনকে একজন রপ্তানিকারক হিসেবে তালিকাভুক্ত করবে তাই বাইরের দেশে পেমেন্ট করবার ক্ষেত্রে প্রয়োজন নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী। যেসব ক্ষেত্রে আপনি এই ডলার অ্যাকাউন্ট থেকে বাইরের দেশে অর্থ খরচ করতে পারবেনঃ
- বিদেশে ব্যবসায়িক সফর
- বিদেশে রপ্তানি মেলা ও সেমিনার ইত্যাদিতে অংশগ্রহন
- অনলাইনে সফটওয়্যার নিবন্ধন ফি প্রদান
- ডোমেইন বা হোস্টিং ফি প্রদান
- সার্ভার ফি প্রদান
- অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন ইত্যাদি
এগুলো ছাড়াও ভার্চুয়াল বিভিন্ন বৈধ জিনিস ক্রয় করতেও আপনাকে কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। কার্ড চালু হয়ে গেলে এই অ্যাকাউন্টে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে খুলে দেয়া হয়। তাই পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে না আপনাকে।
অর্থাৎ ইউসিবি ব্যাংকের এই স্বাধীন অ্যাকাউন্ট কিছু অসাধারন সুবিধা দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের যা দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য জরুরী হয়ে পড়েছিল। তাই দ্রুত ফ্রিল্যান্সার আইডি খুলে এই অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন। এতে করে বিদেশে পেমেন্ট করা বা নেয়ার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।