জুম নাকি গুগল মিট? কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

বর্তমানে যতগুলো ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ রয়েছে, তার মধ্যে জুমগুগল মিট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। উভয় অ্যাপ প্রায় একই ধরনের ফিচার অফার করায় অনেকে দুইটি সার্ভিসের মধ্যে কোনটি নির্বাচন করবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকেন। গুগল মিট ও জুম সম্পর্কে আলাদা পোস্টে আমরা উভয় সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। দুইটি কনফারেন্সিং অ্যাপই অসাধারণ।

গুগল মিট ও জুম, উভয়ই অসংখ্য ভিডিও কনফারেন্সিং টুল, স্ক্রিন ও অ্যাপ শেয়ারিং, মিটিং রেকর্ডিং, মিটিং ট্রান্সক্রিপ্টস, চ্যাট, পার্টিসিপেন্ট স্পটলাইট, ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি ফিচার অফার করছে।

উভয় কনফারেন্সিং অ্যাপ এর ফ্রি প্ল্যানে কিছু লিমিটেশন থাকলেও পেইড প্ল্যান ব্যবহার করে এসব সার্ভিসের আল্টিমেট ব্যবহার সম্ভব। যেমনঃ ব্রেকআউট রুমস ও মিটিং রেকর্ডিং সম্ভব জুম এর যেকোনো প্ল্যানে, যেখানে শুধুমাত্র পেইড প্ল্যানেই এই ফিচার ব্যবহার করা যায় গুগল মিট এর ক্ষেত্রে। আবার পোল প্রদান করতে হলে উভয় অ্যাপেই প্রয়োজন পড়বে পেইড প্ল্যান এর।

গুগল মিট এ বিল্ট-ইন টুল রয়েছে লাইভ ক্লোসড ক্যাপশন এর জন্য, যেখানে জুম মিটিং এর ক্ষেত্রে থার্ড-পার্টি সেবা ব্যবহার করতে হবে। আবার গুগল মিট এর সকল প্ল্যানেই ইন্টেলিজেন্ট নয়েজ ক্যান্সেলেশন ফিচার রয়েছে, যেখানে জুম এর শুধুমাত্র ডেস্কটপ ভার্সনে এই ফিচারটি রয়েছে।

জুম অ্যাপে বিল্ট-ইন স্টাইল ও লাইটিং ফিল্টার ব্যবহার করা যায় সকল প্ল্যানে, যেখানে একই ফিচার ব্যবহার করতে গুগল মিটে ক্রোম এক্সটেনশন ইন্সটল করতে হয়। হোয়াইটবোর্ডস ও ওয়েটিং রুম জুম এর সকল প্ল্যানে রয়েছ, যেখানে গুগল মিট এর ক্ষেত্রে ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হয় একই ফিচার ব্যবহারে।

মিটিং রেকর্ডিং এর জন্য জুম এর চেয়ে অনেক বেশি ক্লাউড স্টোরেজ প্রদান করে গুগল মিট। গুগল মিট এর পেইড ইউজারগণ গুগল ড্রাইভে ৩০জিবি স্টোরেজ পাবেন। আবার ফ্রি গুগল একাউন্টের সাথেও ১৫জিবি স্টোরেজ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে জুম মিটিংয়ে কোনো ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ নেই। জুম প্রো ও বিজনেস প্ল্যানে প্রতি ইউজার ১জিবি করে স্টোরেজ পাবেন। তবে জুম এন্টারপ্রাইজ ক্লায়েন্টগণ আনলিমিটেড ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যাটাগরিভেদে গুগল মিট ও জুম এর মধ্যে মিল ও পার্থক্যসমূহ সম্পর্কে। এরপর আপনার জন্য কোনটি ভালো, সেটি আপনি নিজেই নির্বাচন করতে পারবেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

প্রাইসিং ও প্ল্যান

গুগল মিট ও জুম, উভয় সার্ভিস বিনামূল্যে ব্যবহার করার অপশন রয়েছে। এছাড়াও মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি এর ভিত্তিতে আলাদা প্ল্যান ও রয়েছে।

জুম এর ফ্রি প্ল্যান ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০০জন পার্টিসিপেন্ট নিয়ে ৪০মিনিট টাইম লিমিটের মিটিং সেটাপ করা যাবে। বেশিরভাগ মিটিং এর জন্য ফ্রি প্ল্যানের এই লিমিট কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনা। তবে জুম এর পেইড প্ল্যানসমূহ সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে।

জুম মিটিং এর ফিচারসমূহ নির্ভর করে হোস্টের উপর। জুম এর পেইড প্ল্যানসমূহের তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ

Zoom Meetings Paid Plans

জুম পেইড প্ল্যানসমূহে বিভিন্ন ধরনের এড-অন এর সুবিধা পাওয়া যায়। এসব এড-অন ব্যবহার করে মিটিংয়ে পার্টিসিপেন্ট সংখ্যা বাড়ানো, ক্লাউড রেকর্ডিং স্টোরেজ বাড়ানো, ইত্যাদি বাড়তি ফিচার ব্যবহার করা যাবে। 

অন্যদিকে গুগল মিট এর ক্ষেত্রে গুগল ওয়ার্কস্পেস (জি-স্যুট) এর প্ল্যান ব্যবহার করে আপগ্রেড করা যাবে। গুগল মিট এর ফ্রি প্ল্যান ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০০জন পার্টিসিপেন্ট নিয়ে ৬০মিনিট টাইম লিমিটেড মিটিং হোস্ট করা যাবে। গুগল ওয়ার্কস্পেস (জি স্যুট) এর পেইড প্ল্যানসমূহ নিম্নরুপঃ

Google Meet Paid Plans

পেইড প্ল্যানে পাওয়া যাবে বাড়তি স্টোরেজ স্পেস, এডভান্সড ডাটা সিকিউরিটি এর মত বাড়তি সুবিধা। এছাড়াও শিক্ষক ও স্কুলের জন্য আলাদা প্ল্যান রয়েছে যা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যেও প্রদান করা হয়।

দামের দিক দিয়ে তুলনা করতে গেলে গুগল মিট ও জুম প্রায় একই সুবিধা প্রদান করছে। উভয় কনফারেন্সিং অ্যাপ এর ফ্রি ভার্সন বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর জন্য যথেষ্ট ফিচার অফার করছে।

👉 গুগল মিট কী এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হয়

প্ল্যাটফর্ম

ভিডিও কনফারেন্সিং যেহেতু বর্তমানে শুধুমাত্র কম্পিউটার নয়, বরং সকল প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয়, তাই অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস এর মত মোবাইল প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহার করা যাবে গুগল মিট ও জুম। ক্রোমসহ যেকোনো মডার্ন ব্রাউজার ব্যবহার করেও ব্যবহার করা যাবে গুগল মিট, যার জন্য আলাদা কোনো প্লাগিন প্রয়োজন হবেনা। সরাসরি meet.google.com এ প্রবেশ করে গুগল মিট এ মিটিং হোস্ট করা যাবে। আবার মিটিং ইনভাইট লিংক ব্যবহার করে ব্রাউজার থেকেই গুগল মিট এর মিটিংয়ে জয়েন করা যাবে।

অন্যদিকে ব্রাউজার এর মাধ্যমে জুম মিটিং হোস্ট করার অপশন নেই। তবে ব্রাউজার ব্যবহার করে জুম মিটিংয়ে জয়েন করা যাবে। এছাড়াও গুগল ক্রোম ও মজিলা ফায়ারফক্স এর প্লাগিন ব্যবহার করে জুম মিটিং শিডিউল এর ফিচার রয়েছে।

👉 জুম অ্যাপ ব্যবহারের নিয়ম

লিমিট

গুগল মিট ও জুম, উভয় সার্ভিস বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে যেকোনো ফ্রিমিয়াম সার্ভিসের মত জুম ও গুগল মিট এর ফ্রি ভার্সনে কিছু লিমিটেশন রয়েছে। গুগল মিট এর ফ্রি ব্যবহারকারীগণ ৬০মিনিট টাইম লিমিটের মিটিং হোস্ট করতে পারেন, যেখানে ফ্রি জুম ইউজারগণ ৪০মিনিটের মিটিং হোস্ট করতে পারেন। উভয় অ্যাপের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০জন পার্টিসিপেন্ট নিয়ে মিটিং তৈরী করা যাবে।

সিকিউরিটি

সিকিউরিটির কথা আসলে গুগল মিট অনেক এগিয়ে থাকবে জুমের চেয়ে। গুগল এর টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ও IETF সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড এর কারণে এর নিরাপত্তা অন্য মাত্রায় অবস্থান করছে। এছাড়াও মিটিং চলাকালীন সময় একটি ইউনিক এনক্রিপশন কি ব্যবহার করে মিট, যা মিটিং এর প্রাইভেসি নিশ্চিত করে। 

অন্যদিকে AES ২৫৬-বিট GCM এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে জুম। তবুও জুমবম্বিং একটি মারাত্মক সমস্যাতে পরিণত হয়েছে, যেখানে হ্যাকাররা বিনা অনুমতিতে চলমান মিটিংয়ে প্রবেশ করে।

👉 ফেসবুক প্রোফাইল লক করার নিয়ম ও এর সুবিধা জানুন

ইন্টারফেস

একটি সিংগেল স্ক্রিনে ৪৯জন পর্যন্ত পার্টিসিপেন্ট নিয়ে গ্যালারি ভিউ দেখা যায় জুম মিটিংয়ে, যা বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে গুগল মিট প্রায় একই ধরণের ইন্টারফেস ব্যবহার করলেও টাইল লেআউটে একই স্ক্রিনে সর্বোচ্চ ১৬জন পার্টিসিপেন্টকে দেখা যায়। সম্প্রত্তি গুগল মিট এ লো-লাইট মোড যুক্ত করা হয়েছে যা আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ভিডিও এর লাইটিং কন্ডিশন এডজাস্ট করতে পারে। তবে এই ফিচারটি এখনো গুগল মিট এর মোবাইল অ্যাপে বিদ্যমান।

রেকর্ডিং ও স্ক্রিন শেয়ারিং

গুগল মিট ও জুম, উভয় অ্যাপ ব্যবহার করে পার্টিসিপেন্টদের সাথে স্ক্রিন শেয়ারের অপশন রয়েছে। গুগল মিট এর ক্ষেত্রে রিয়েল-টাইম ক্যাপশন সাপোর্ট রয়েছে, যা অসাধারণ একটি সংযোজন।

জুম ব্যবহার করে এমপি৪ (ভিডিও) ও এম৪এ (অডিও) ফরম্যাটে মিটিং রেকর্ড করা যাবে, যা ডিভাইসের স্টোরেজে সেভ করা যাবে। অন্যদিকে গুগল মিট এর ক্ষেত্রেও ক্লাউডে রেকর্ড করা যাবে মিটিং, তবে শুধুমাত্র পেইড ইউজারগণ এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।

জুম নাকি গুগল মিট? কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

একনজরে গুগল মিট ও জুম এর ফিচারসমূহ

ফিচারগুগল মিটজুম 
প্রাইসফ্রি + পেইডফ্রি + পেইড
পার্টিসিপেন্ট ক্যাপাসিটি৫০০ (পেইড)১,০০০ (পেইড)
মিটিং টাইম লিমিটফ্রি প্ল্যানে ৬০মিনিটপেইড প্ল্যানে ২৪ঘন্টাফ্রি প্ল্যানে ৪০মিনিটপেইড প্ল্যানে ৩০ঘন্টা
চ্যাট
ভাচুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড
স্ক্রিন, অ্যাপ ও ডকুমেন্ট শেয়ারিং
রেকর্ড মিটিংপেইড প্ল্যানেসকল প্ল্যানে
রেকর্ডিং স্টোরেজ১৫জিবি ফ্রি ড্রাইভ স্টোরেজপেইড প্ল্যানে ১জিবি

জুম নাকি গুগল মিট – আপনার কাছে কোনটি বেশি সুবিধাজনক মনে হয়? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *