শাওমি হেডফোন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সহ এশিয়ার স্মার্টফোন বাজারে শাওমির জনপ্রিয়তা প্রায় তুঙ্গে বলা চলে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে আকর্ষণীয় স্পেসিফিকেশন, ভাল ফিচার ও সুন্দর ডিজাইনের ডিভাইস দেয়ার কারণেই চীনের অ্যাপল বলে পরিচিত শাওমি এত দ্রুত গ্রাহকপ্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমি প্রথম শাওমি স্মার্টফোন কিনেছিলাম। রেডমি নোট ৩ এর মাধ্যমেই পিওর চীনা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহারে হাতেখড়ি। সাধারণত এসব মধ্যম বাজেটের মোবাইল ফোনের সাথে শাওমি কোনো হেডফোন দেয়না। চলতি পথে ফোন ব্যবহারের সুবিধার্থে এজন্য আলাদাভাবে হেডফোন সংগ্রহ করতে হবে। এর আগে আমার স্যামসাং গ্যালাক্সি গ্র্যান্ড ২ ফোনের সাথে পাওয়া একটি হেডফোন ছিল, যেটি শাওমির সাথে খুব একটা ম্যাচ করছিলনা। তাই শাওমির হেডফোন কিনেছিলাম।

হেডফোনটির নামটা একটু বড়। শাওমি এমআই আয়রন রিং ইন-ইয়ার হেডফোনস প্রো। একসাথে পুরো নাম ব্যবহার হয়না। ভেঙে ভেঙে পরিচিত করা হয়। গত বছরের আগস্টে হেডফোনটি কিনেছি। এটি ব্যবহার করে আমার কেমন লেগেছে এই পোস্টে তাই বলছি।

ডিভাইস ডিজাইন

এমআই আয়রন রিং ইয়ারফোনের দুটি কালার ভ্যারিয়েশন আছে। একটি কালো, অপরটি সাদার মধ্যে সোনালী। কালো ভ্যারিয়েশনে কিছুটা ধূসর রঙের ছটা আছে। গোল্ডেন-হোয়াইট ভ্যারিয়েশনে শুধুমাত্র ধাতব অংশগুলো সোনালী, আর বাকী অংশ সাদা বা অফ-হোয়াইট। আমি গোল্ডেন ভ্যারিয়েশন কিনেছি।

কানের মধ্যে চেপে রাখা হয় যে ইয়ারফোনগুলো (ইয়ারবাড) সেগুলো ব্যবহারে আপনি যদি অভ্যস্ত হন, তাহলে এই ডিজাইনটি আপনার জন্য একদম মানানসই হবে। হেডফোনটির সাথে অতিরিক্ত ছয়টি রাবারের ইয়ারবাড দেয়া হয়েছে। ইয়ারপিসদুটির ডিজাইন আমার ভাল লেগেছে।

এমআই আয়রন রিং ইয়ারফোনের মূল কানেক্টিং কেবলটির ওপর সূতোর তৈরি ইনসুলেটর বা কভার দেয়া হয়েছে। দুই কানের দুটি ইয়ারবাডের সাথে মূল তারের সংযোগস্থল থেকে যে আলাদা দুটি তার সংযুক্ত হয়েছে সেগুলোর কভার রাবারের। সূতোর কভার দেয়া অংশের আলাদা একটা আকর্ষন আছে বটে, তবে গঠনগত কারণে এই অংশ দ্রুত অপরিষ্কার হয়ে যায়। আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, একটা কাপড় দ্রুত ময়লা হয়, নাকি একটা প্লাস্টিক? ইলেকট্রনিক ডিভাইস বলে হেডফোনটি সাবান/ডিটার্জেন্ট দিয়ে ধোয়াও সম্ভব না। তাই সাদা রঙের এই ইয়ারফোনের অর্ধেক অংশ ধীরে ধীরে অপরিষ্কার হয়ে যাবে, আর উপরের রাবারের অংশ তখনও সাদাই থাকবে। এই দিকে শাওমির কিছুটা নজর দেয়া উচিত।

পুরো হেডফোনটির তার রাবারের হলে আমার জন্য সুবিধাজনক হত। সিনথেটিক/সূতোর কভারের মধ্যে একটা এলিগেন্স আছে ঠিকই, তবে এই ক্ষেত্রে সেটা ইউএক্স এর জন্য কিছুটা হানিকর।

আচ্ছা, এলিগেন্স আর ইউএক্স কী জিনিস? এলিগেন্স মানে হচ্ছে চমৎকারিত্ব বা সৌন্দর্য। আর ইউএক্স হল ‘ইউজার এক্সপেরিয়েন্স’, যা কোনো কিছুর ব্যাপারে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে বোঝায়।

 

টেকনিক্যাল ডিজাইন

এমআই আয়রন রিং প্রো ইয়ারফোনে ডান কানের জন্য যে ইয়ারবাডটি রয়েছে, সেই অংশের তারের সাথে মাইক্রোফোন ও কন্ট্রোলার বাটন দেয়া হয়েছে। মোবাইলের সাথে সংযুক্ত করে হেডফোনের তিনটি কন্ট্রোলার বাটনের ফাংশনালিটি কাস্টমাইজ করা যায়। ডিফল্টভাবে মাঝখানের বাটনটি মিউজিক প্লে/পজ করে থাকে। বাকী দুটি বাটন সাউন্ড ভলিওম কমানো/বাড়ানো কিংবা ট্র্যাক পরিবর্তনে ব্যবহার করা যায়। এই অংশের ধাতব কেসিং স্পর্শ করলে একটা ‘প্রো’ ভাব টের পাওয়া যায়।

আয়রন রিং ইয়ারফোনের প্রতিটি ইয়ারবাডে অতিরিক্ত দুটি সূক্ষ্ম ছিদ্র আছে যেগুলো ভাল মানের শব্দ উৎপাদনে সহায়ক। কানের সাথে ঠিকভাবে আটকে নিলে হেডফোনটির প্রকৃত পারফর্মেন্স উপভোগ করা যাবে। অন্যথায় শব্দের মান ভাল পাবেন না।

 

দাম অনুযায়ী তুলনামূলক পারফরমেন্স

এমআই ইন-ইয়ার প্রো হেডফোনের দাম বাংলাদেশে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকার মত। শাওমির ওয়েবসাইটে এর দাম ২৫.৯৯ ডলার উল্লেখ করা আছে।

এমআই আয়রন রিং প্রো হেডফোনের পারফর্মেন্স ভাল। একটানা অনেকক্ষণ ব্যবহার করলেও কানে বাঁধেনা। নয়েজ খুবই কম (সুবিধাজনক)। মিউজিকের মান অসাধারণ। আইফোনের ইয়ারফোনের সাথে এর সরাসরি তুলনা চলে। শাওমি ফোনের নিজস্ব ইক্যুইলাইজার সেট করে নিলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে আইফোনের হেডফোনের সাথে এমআই আয়রন রিংয়ের কিছু ব্যাসিক পার্থক্য আছে। রাবারের ইয়ারবাড কানের মধ্যে ঢোকানের পর আপনি বাইরের শব্দ খুবই কম শুনতে পাবেন। আর যদি ঢিলেঢালাভাবে এমআই ইয়ারবাড কানে দেন, তাহলে সাউন্ডের মান ভালো হবেনা।

একটা কথা না বললেই নয়, যারা মিউজিকের প্রতি সিরিয়াস, তাদের জন্য এমআই আয়রন রিং হেডফোনগুলো পারফেক্ট। অবশ্য এটি ভাল ব্যাচ প্রডিউস করলেও কিছু কিছু শার্প মিউজিক অনেকটা কমিয়ে দেয়, যা আইফোনের ইয়ারফোনের ক্ষেত্রে কম ঘটতে দেখেছি। তবে ইক্যুয়েলাইজার আরও ভালভাবে অ্যাডজাস্ট করলে হয়ত এটা ঠিক করা যায়।

আইফোনের প্লাস্টিকের তৈরি সলিড ইউয়ারপিসগুলো কানের মধ্যে টাইটভাবে লাগানোর কিছু নেই। এগুলো কানে দিয়ে বাইরের শব্দও তুলনামূলক ভাল শোনা যায়। একইসাথে মিউজিকের মানেও তেমন কোনো হেরফের হয়না।

এখন আপনি যদি বাইরের শব্দ না শুনতে চান, তাহলে শাওমির হেডফোন আপনার জন্য ভাল। আর যদি বাইরের শব্দও মোটামুটি শুনতে চান, সেই সাথে ইয়ারফোনের মিউজিক, তাহলে ২৯ ডলারে আইফোনের হেডফোন কিনতে পারেন। শাওমি হেডফোনের দাম অ্যাপলের হেডফোনের চেয়ে কম।

 

মাইক্রোফোন

শাওমির এই হেডফোনগুলোর সুনাম শুনেছি অনেক আগেই। কিন্তু তেমন একটা গান শোনা হয়না (tends to zero) বলে এটা কেনার আগ্রহ পাইনি। পথেঘাটে মোবাইলে কথা বলার প্রয়োজন হলে হেডফোন খুব কাজে দেয়। এছাড়া ফেসবুকে লাইভ ভিডিও করার সময় আলাদা মাইক্রোফোন থাকলে ভয়েস আরেকটু ক্লিয়ার হবে, এই ভেবে হেডফোন কেনা।

কিন্তু হেডফোনের ইয়ারপিস যতটা ভাল, মাইক্রোফোনের পারফর্মেন্স ততটা ভালনা। এর চেয়ে ফোনের বিল্ট-ইন মাইক্রোফোনে ভয়েস ভাল ক্যাপচার হয়, আমার অভিজ্ঞতা এটাই বলে। আমি আইফোনের অরিজিনাল ইয়ারফোনের হেডফোনেও একই ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। মাইক্রোফোনে রেকর্ড করা শব্দের মান খুব একটা ভাল না। তবে মোবাইলে কথা বলার কাজ চলে যায়।

 

উপসংহার

শাওমির দুটি স্মার্টফোন (রেডমি নোট থ্রি এবং রেডমি প্রো) ও একটি ইয়ারফোন ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই কোম্পানিটির ফ্যান হয়ে গেছি। এমআই আয়রন রিং ইন-ইয়ার প্রো হেডফোনকে আমি গান শোনার ক্ষেত্রে ১০ এ ৮.৮ রেটিং দেব। মাইক্রোফোন আরেকটু ভাল হলে এবং সিনথেটিক/সূতোর বুননের বদলে পুরো তারের অংশে রাবারের কভার থাকলে ১০ এ কমপক্ষে ৯.৫ রেটিং দিতাম। তবে ২৬ ডলারের হেডফোন থেকে এ যা পাচ্ছি তাও বেশ ভাল!

আপনি কোন হেডফোন ব্যবহার করেন? যেকোনো ধরনের হেডফোন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।

আরও পড়তে পারেনঃ

>> শাওমি স্মার্টফোন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

>> শাওমি রেডমি প্রো স্মার্টফোন রিভিউ

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *