ইন্টারনেটের যুগে আমরা দ্রুতগতির সংযোগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কিন্তু এখনো অনেক অঞ্চল আছে যেখানে ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার অপটিকের সংযোগ পৌঁছায়নি। বিশেষ করে দুর্গম এলাকা, নদী বা পাহাড় পার হওয়া কঠিন। এই সমস্যার সমাধান আনতে Google এর মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট নিয়ে এসেছে এক অভিনব প্রযুক্তি – Taara (টারা)।
Taara কী?
Taara হল Google-এর X (moonshot factory) থেকে উদ্ভূত একটি প্রযুক্তি প্রকল্প, যা এখন একটি স্বাধীন কোম্পানি হিসেবে কাজ করছে। এর পূর্ণরূপ হলো “Project Taara”। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলো বা লাইট বিমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডেটা প্রেরণ করা হয়। সহজ ভাষায়, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা কেবল ছাড়াই ফাইবার গতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পারে।
কীভাবে কাজ করে টারা?
টারা Free Space Optical Communication (FSOC) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে ইনফ্রারেড লাইটের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ডেটা পাঠানো হয়। দুটো স্থানে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার ডিভাইস থাকে—যার নাম Lightbridge। এগুলো ট্র্যাফিক লাইটের মতো দেখতে, এবং এর মাধ্যমে ২০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ২০ Gbps গতিতে ডেটা পাঠানো যায়।
Taara-এর নতুন প্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছে silicon photonics chip, যার ফলে ডিভাইস এখন আরও ছোট, কার্যকর এবং সহজে স্থাপনযোগ্য। ২০১৭ সালে Taara প্রকল্প চালুর পর থেকে, গুগলের এই আলো-নির্ভর ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে এটি ডজনখানেক দেশের শতাধিক স্থানে সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
Taara কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে?
- যুক্তরাষ্ট্রে T-Mobile – বড় বড় ইভেন্টে ব্যাকহল (backhaul) পরিষেবা দিতে Taara ব্যবহার হচ্ছে, যেখানে সাধারণ মোবাইল নেটওয়ার্ক পর্যাপ্ত নয়।
- ভারতে Airtel – শহরের এমন এলাকায় যেখানে ফাইবার অপটিক কেবল বসানো সম্ভব নয়, সেখানে Taara-এর আলো-নির্ভর নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হচ্ছে।
- আফ্রিকায় Liquid Intelligent Technologies – সাতটি আফ্রিকান দেশে ৫০টিরও বেশি কমিউনিটিতে Taara সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে, যার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ এখন দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় – Taara প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহায়তা করতে।
Taara-এর মাধ্যমে ৭০০ টেরাবাইটের বেশি ডেটা একদিনে পাঠানো হয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সক্ষম।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
Taara-এর সুবিধা
১. ফাইবার গতির নেটওয়ার্ক, কোনো তার ছাড়াই
Taara এমন অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পারে, যেখানে ফাইবার কেবল বসানো সম্ভব নয় বা খুব খরচসাপেক্ষ।
২. দ্রুত স্থাপন
ফাইবার বসাতে মাসের পর মাস লেগে যায়, কিন্তু Taara ডিভাইস ঘন্টার মধ্যেই ইনস্টল করা যায়।
৩. কম খরচে উচ্চ কার্যকারিতা
প্রতি কিলোমিটার Taara প্রযুক্তির খরচ ফাইবারের তুলনায় অনেক কম। এটি উন্নয়নশীল দেশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. কোনো তরঙ্গের লাইসেন্স লাগে না
Taara আলো ব্যবহার করে, তাই এর জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। এতে সরকারি ফ্রিকোয়েন্সি অনুমোদনের সময় বেঁচে যায়।
৫. টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব
জমি খুঁড়ে কেবল বসানোর প্রয়োজন নেই। পরিবেশে এর প্রভাব কম, এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারও তুলনামূলকভাবে কম।
Taara বনাম Starlink
Taara ও Starlink—দুইটি আলাদা প্রযুক্তি হলেও দুটিই একই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে: বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া, বিশেষ করে যেখানে ফাইবার অপটিক কেবল পৌঁছানো কঠিন। স্টারলিংক হলো SpaceX-এর স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যেখানে হাজারো উপগ্রহ ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে, Taara ব্যবহার করে আলো বা লাইট বিম—যা মাটির ওপর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ডেটা পাঠাতে সক্ষম।
স্টারলিংক-এর বড় সুবিধা হলো এটি কোথাও থেকে, এমনকি পাহাড় বা সমুদ্রের মাঝেও, সংযোগ দিতে পারে। তবে এটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং স্যাটেলাইট নির্ভর হওয়ায় লেটেন্সি কিছুটা বেশি। অপরদিকে, Taara তুলনামূলকভাবে কম খরচে, দ্রুত স্থাপনযোগ্য এবং ফাইবারের মতোই কম লেটেন্সি যুক্ত পরিষেবা দিতে পারে—যদিও এতে “লাইন অফ সাইট” বাধা এবং আবহাওয়ার প্রভাব থাকতেই পারে।
👉 বাংলাদেশে চালু হলো স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা – দাম ও বিস্তারিত জানুন
এই দুটি প্রযুক্তি একে অপরকে প্রতিযোগিতা করার পাশাপাশি পরিপূরক হিসেবেও কাজ করতে পারে, বিশেষত যেখানে একটির সীমাবদ্ধতা অন্যটি পূরণ করতে পারে। তবে ভবিষ্যতে এই দুটি প্রযুক্তির মধ্যে কে এগিয়ে থাকবে, তা নির্ভর করবে তাদের পরিসর, ব্যয়, এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর।
Taara প্রযুক্তির বড় একটি সীমাবদ্ধতা হল—লাইন অফ সাইট (line-of-sight) প্রয়োজন। অর্থাৎ, দুটি ডিভাইসের মাঝে কোনো বাধা থাকা চলবে না। ঘন কুয়াশা, ভারী বৃষ্টি বা ধুলোও কখনো কখনো সিগন্যাল দুর্বল করতে পারে। তবে AI প্রযুক্তি দিয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং ও ব্যাকআপ সংযোগের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধানের পথে এগোচ্ছে Taara টিম।
গুগলের Taara প্রকল্প ইন্টারনেট প্রযুক্তির এক বৈপ্লবিক উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে—তাও তার ছাড়াই! উন্নয়নশীল দেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে এটি এক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আশা করা যায় গুগলের এই টারা প্রকল্প অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে আরও অনেক দেশে কার্যক্রম শুরু করবে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।