এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান আসলে কতটা উপকারী?

মানব সভ্যতার ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞান ক্ষেত্রে অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি আবিষ্কারের নাম হচ্ছে সাবান (soap); দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে হসপিটালের অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত সাবানের জয়জয়কার। অতীত পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, যেসব সার্জন রোগীর অস্ত্রোপচারের আগে সাবান দিয়ে নিজের হাত ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে পরিষ্কার করে নিয়েছেন তাদের পেশেন্টের ইনফেকশন জনিত মৃত্যুহার কম।

আজকালকার যুগে ছোট-বড় সবাইই সাবানের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত। হোক সে মীনা কার্টুন কিংবা বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের বাণিজ্যিক ক্যাম্পেইন- মিডিয়ার কল্যাণে সাবান এখন একটি ‘জাদুর পাথর’, যা রোগজীবাণু ধ্বংস করে থাকে।

আর আমাদের এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন নাম দিয়ে সাবান প্রস্তুত করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ‘বিউটি সোপ’, ‘লন্ড্রি সোপ’ ছাড়াও ‘জীবাণু ধ্বংসের’ জন্য তৈরি হচ্ছে ‘এন্টিব্যাকটেরিয়াল’ বা ‘এন্টিসেপটিক’ সাবান। কিন্তু নজরকাড়া বিজ্ঞাপনের আড়ালে এসব এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান আসলে কতটা উপকারী?

সাবান হচ্ছে উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি অ্যাসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ। এটি পানির উপস্থিতিতে আমাদের ব্যবহার্য/ প্রয়োগকৃত স্থান থেকে তৈলাক্ত পদার্থ বিচ্ছিন্ন করে যা ময়লা, ধূলিকণা ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে থাকে। আমরা যেসব সাধারণ সাবান দিয়ে দৈনন্দিন কাজ চালাই, সেগুলোর মাধ্যমেই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আলাদাভাবারে এন্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারের কারণ কী? এগুলো বাড়তি কী কাজ করে?

এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানের একটি বহুল ব্যবহৃত উপাদান হচ্ছে ‘ট্রাইক্লোজেন’ অথবা ‘ট্রাইক্লোকার্বন’; ট্রাইক্লোজেন দিয়ে কাজ করাতে চাইলে, অর্থাৎ, ‘জীবাণু’ মারতে হলে একে প্রায় দুই মিনিট সময় দিতে হবে। এর মানে, আপনি ২ মিনিট ধরে হাতে-পায়ে সাবান মেখে অপেক্ষা করলে তবেই ট্রাইক্লোজেন আপনার ‘ব্যাকটেরিয়া’ মারতে পারবে। কিন্তু দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার সময় বা ধৈর্য্য কতজনের আছে?

আপনি হয়ত সুস্বাস্থ্যের জন্য দুই মিনিট সময় ব্যয় করতে রাজী হবেন। কিন্তু তাতে দীর্ঘমেয়াদে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া সময়ের সাথে সাথে প্রতিকূল পরিবেশের জন্য নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। অর্থাৎ, তারা আপনার এন্টিব্যাকটেরিয়াল সোপের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। প্রতিদিন ট্রাইক্লোজেন দিয়ে ‘আরও বেশি’ ব্যাকটেরিয়া মারার চেষ্টা করতে গিয়ে ‘অধিক শক্তিশালী’ ব্যাকটেরিয়ার খামার গড়ে তুলছেন না তো?

আমাদের দেহে অনেক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো আসলে উপকারী। তাই শুধু ব্যাকটেরিয়া মেরেই যদি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে সেই ধারণাটি সঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রকৃতপক্ষে, এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানগুলো যে কারণে ‘অকেজো’ সেই একই কারণে ‘নিরাপদ’; কেননা, মিনিট দুয়েক ধরে এটি লাগিয়ে আয়নায় চেহারা দেখা যেমন হয়ে ওঠেনা, তেমনই ব্যাকটেরিয়াগুলোও এজন্য ট্রাইক্লোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা। মোটকথা, বাজারের সাধারণ যেসব টয়লেট্রিজ সোপ পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করলেই আপনি জীবাণু থেকে রেহাই পেতে পারেন- এজন্য বাড়তি দাম দিয়ে এন্টিসেপটিক সোপ/সলিউশনের দরকার পড়েনা।

তবে হ্যাঁ, আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি কমে গিয়ে থাকে, কিংবা আপনার শরীরে যদি মারাত্নক কোনও ক্ষত থেকে থাকে তাহলে আপনার জন্য (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দরকারী হলেও হতে পারে। বাকীদের জন্য এটি একটি বাড়তি খরচের খাত, যার বিকল্প হিসেবে সচরাচর ব্যবহৃত সাবান দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়া যায়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *