ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঘন্টা ভেদে বিলিং নাকি প্রজেক্ট ভেদে বিলিং? কোনটি ভাল?

একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি যখন আপনার সেবা প্রদান করবেন তখন তার চার্জ আপনি কিভাবে নিবেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি কাজ ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে পেমেন্ট ঘন্টা ভেদে অথবা প্রজেক্ট ভেদে নেওয়া যায়। উভয় প্রকার পেমেন্টেরই কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পেমেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘন্টা ভেদে এবং প্রোজেক্ট ভেদের মধ্যে কোনটি নেওয়া লাভজনক সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

ঘন্টা ভেদে পেমেন্ট নেওয়ার সুবিধা 

স্বচ্ছতা

ঘন্টা ভেদে পেমেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা পাওয়া যায়। আপনি কোনো এক ক্লায়েন্টের কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করেছেন সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া গেলে বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসে। ক্লায়েন্ট কোনো কাজে কত টাকা ইনভেস্ট করছে সেটি আপনার কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। এছাড়া একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনিও যতটুকু এফোর্ট প্রদান করছেন সে অনুযায়ী পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। সাধারণত এসব কারনে ঘন্টা ভেদে পেমেন্ট ব্যবস্থাটি প্রজেক্ট ভেদে পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে অধিক জনপ্রিয়।

ন্যায্য পেমেন্ট

ঘন্টা ভেদে পেমেন্ট ব্যবস্থা আপনাকে আপনাকে আপনার সময় এবং দক্ষতার জন্য ন্যায্য পেমেন্ট প্রদান করে থাকে। আপনার কাজের সময় অধ্যবসায়ের সাথে ট্র‍্যাক করার মাধ্যমে আপনি কোনো কাজে আপনার বিনিয়োগ করা সময়ের জন্য ন্যায্য পেমেন্ট পাচ্ছেন কি না সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন।

তবে এক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বাজারে আপনার দেওয়া সেবার মান প্রতিফলিত করে এমন মূল্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরী। আপনি কত সময় ধরে কাজ করতেছেন এটার ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ না করে আপনার দক্ষতার মূল্য কত হবে সেটি বিবেচনায় এনে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

চলমান সেবা প্রদান

আপনি যদি ক্লায়েন্টের কোন কাজ শেষ করার পরেও তাকে অতিরিক্ত সহায়তা কিংবা পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকেন তাহলে ঘন্টা ভেদে পেমেন্ট ব্যবস্থা আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। আপনি চাইলে ক্লায়েন্টের যেকোনো প্রশ্ন সমাধান, নির্দেশিকা প্রদান বা সংশোধন করার জন্য ব্যয় করা সময়ের উপরে বিল নির্ধারণ করতে পারেন। ক্লায়েন্টের সাথে ক্রমাগত সহযোগিতা এবং যোগাযোগ জড়িত এমন কাজের জন্য ঘন্টা ভেদে কাজ ভালো সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রাথমিক প্রকল্প শেষ করার পরে ক্লায়েন্টের কাছে অতিরিক্ত সেবা বিক্রি করার জন্য আদর্শ হতে পারে।

ঘন্টা ভেদে কাজের অসুবিধা

আয়ের সীমাবদ্ধতা 

ঘন্টা ভেদে কোন ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এতে আপনার আয়ের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে যেতে পারে। আপনি যখন অনেক বেশি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন তখন আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করতে সময় অনেক কম লাগবে। যেহেতু আপনি ঘন্টা বেঁধে চুক্তি করবেন সেহেতু আপনার কাজে যদি কম সময় লাগে তাহলে আপনার সেই কাজের বিলও কম হবে। আপনি যদি আপনার দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ঘন্টা বেধে মূল্য ঠিক না করেন তাহলে আপনার উপার্জনের সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। 

ক্লায়েন্ট উদ্বেগ 

কিছু কিছু ক্লায়েন্ট আছে যারা খরচ বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে ঘন্টা ভেদে ফ্রিল্যান্সারের সাথে কাজ করতে দ্বিধাবোধ করতে পারে। তারা মনে করে থাকে যে তাদের কাজটি সম্পন্ন হতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় লাগবে যার ফলে সেই প্রজেক্টের ব্যয় বেড়ে যাবে। যে সকল ক্লায়েন্ট প্রজেক্টের একটি আগাম মূল্য জানতে চায় তাদের ক্ষেত্রে  ঘন্টা বেঁধে কাজ করা কষ্ট হয়ে যাবে।

সময় ট্র‍্যাক করার চ্যালেঞ্জ

ক্লায়েন্টকে সঠিকভাবে বিল পাঠানোর ক্ষেত্রে কত ঘন্টা কাজ করা হয়েছে সেটি ট্র্যাক করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা প্রতিটি মিনিটের ট্রাক রাখা অনেক সময় সময় সাপেক্ষ হতে পারে। এছাড়া কাজ করার সময় এই ব্যাপারে চিন্তা করলে কাজের উপর সেটি প্রভাব ফেলতে পারে। বিলযজ্ঞ সময় নিয়ে অসংগতি বা মতানৈক্য ক্লায়েন্টদের সাথে বিবাদের কারন হতে পারে। 

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

freelancer laptop

👉 ফাইভার থেকে টাকা ইনকাম করতে শুরুতেই এগুলো জানুন

প্রোজেক্ট ভেদে পেমেন্ট পদ্ধতির সুবিধা 

ক্লায়েন্টের জন্য অনুমানযোগ্যতা

একটি কাজ দেওয়ার পূর্বে ক্লায়েন্ট সেই কাজের সম্পূর্ণ খরচ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে। যার ফলে যে কোন ক্লাইন্ট তাদের বাজেটকে আরো কার্যকর ভাবে ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা করতে পারে। এছাড়াও অপ্রত্যাশিত অতিরিক্ত খরচের চিন্তা থেকেও তারা বেঁচে যায়। 

দক্ষতাকে উৎসাহিত করা

প্রজেক্ট ভেদে মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে আপনার কাছে কোন প্রজেক্ট এর জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য রয়েছে। এতে আপনার কত সময় প্রয়োজন হচ্ছে সেটি খুব একটা প্রভাব ফেলে না। এটি আপনাকে দক্ষতার সাথে কাজ করতে এবং গুণমানের সাথে আপোষ না করে আপনার প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে প্রদান করতে উৎসাহিত করে। যেহেতু আপনি কাজ প্রোজেক্ট ভেদে করছেন সেক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার দক্ষতা দিয়ে দ্রুত কাজ করতে পারেন তাহলে আপনি ঘন্টা ভেদে কাজ করার থেকে বেশি ইনকাম করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে গুণগত মান যেন কোনো ভাবেই হ্রাস না পায়।

ফলাফলের উপর ফোকাস করা

প্রোজেক্ট ভেদে পেমেন্ট ব্যবস্থায় আপনি কত ঘন্টা কাজ করছেন এর উপর ফোকাস না গিয়ে আপনার ফলাফলের উপরে ফোকাস পড়বে। আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে না শেষ করে অতিরিক্ত সময় নেন তাহলে ক্লায়েন্ট ঘন্টা ভেদে কাজে এটির উপর উদ্বেগ পোষণ করে। তবে প্রোজেক্ট ভেদে কাজ আপনাকে উচ্চ মানের কাজ এবং ক্লায়েন্টের প্রত্যাশা অতিক্রম করার দিকে মনোনিবেশ করে। 👉 ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় – গিগ র‍্যাংকিং থেকে রিভিউ সংক্রান্ত টিপস

বিলিং প্রক্রিয়া খুবই সহজ

প্রকল্প ভেদে বিলিং পদ্ধতিতে ক্লায়েন্টের কাছে বিল প্রদান করা অনেক সহজ। সময়ের ভিত্তিতে ট্রাকিং এবং সেই অনুযায়ী বিল করার পরিবর্তে এই পদ্ধতিতে আপনি একটি একক বিল তৈরি করে ক্লায়েন্টকে দিতে পারবেন। এর ফলে আপনার অতিরিক্ত সময় বেঁচে যাবে যেটি আপনারা অন্য কোনো প্রজেক্টের পিছে খরচ করে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

প্রোজেক্ট ভেদে বিলিং পদ্ধতির অসুবিধা

সুযোগের সৎব্যবহার

অনেক সময় ক্লায়েন্ট সুযোগের সৎব্যবহার করে প্রোজেক্টের প্রয়োজনে ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ ঘটায়। এটি বেশির ভাগ সময়ই আপনার চুক্তির বাইরে থাকে বিধায় আপনাকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয় ছাড়াই যদি প্রকল্পের পরিধি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায় তাহলে দেখা যায় যে আপনাকে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান না করেই আপনার কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেয়া হবে। এ কারনে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্কের শুরুতে প্রোজেক্টের একটি নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ এবং স্পষ্ট শর্তাবলি সেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মূল্য নির্ধারণে অনিশ্চায়তা

যদি কোনো প্রোজেক্ট জটিল এবং সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত না থাকে তাহলে তার মূল্য নির্ধারণ করা অনেক জটিল হয়ে যায়। একটি প্রোজেক্ট স্বল্প মূল্যে নির্ধারণ করা হলে যেমন আর্থিক সংকটের ঝুঁকি থাকে তেমনি অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট হারাতে হয়। এজন্য সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে আপনার দক্ষতা এবং অনুরূপ সেবার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কিভাবে কাজ করতে চান বা কোন পদ্ধতি আপনার জন্য পারফেক্ট হবে সেটি একান্তই আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিলিং পদ্ধতি নির্ধারণ করে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে আপনার জীবন জীবিকা খুব সহজেই নির্বাহ করতে পারবেন। ঘন্টা ভেদে এবং প্রোজেক্ট ভেদে বিলিং পদ্ধতি সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক আর্টিকেল এবং নানা ধরনের টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

1 Comment

  1. Zahid Hossin Reply

    In this subject, I am new person,I would learn more in this projects. Thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *