ওয়াইজ কি? Wise দিয়ে টাকা লেনদেন করার সুবিধা কি?

আন্তর্জাতিকভাবে মানি ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে অসংখ্য সার্ভিস থাকলেও ওয়াইজ (Wise) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়াইজ কি, ওয়াইজ এর সুবিধা-অসুবিধা ও ওয়াইজ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে দরকারি তথ্য।

ওয়াইজ কি – What is Wise?

ওয়াইজ (Wise) পূর্বে ট্রান্সফারওয়াইজ (TransferWise) নামে পরিচিত ছিলো। এটি একটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিস, যা অন্য দশটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মতোই কাজ করে, তবে এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে ওয়াইজ। আন্তর্জাতিক ভাবে টাকা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যম হলো ওয়াইজ।

খুব সহজে ওয়াইজ একাউন্ট তৈরী করে অর্থ লেনদেন করা যাবে। যেকোনো একটি কারেন্সি ও মোট অর্থের পরিমাণ সিলেক্ট করে কাঙ্খিত কারেন্সিতে অর্থ পাঠানো যাবে। আবার ট্রান্সফার ফি-ও দেখা যাবে অর্থ পাঠানোর আগে।

ওয়াইজ ব্যবহার করা বেশ নিরাপদ ও সহজ। এটি প্রচলিত ব্যাংকের মতো নয়। প্রতিযোগিতাপূর্ণ লো ট্রান্সফার রেট এর মাধ্যমে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ওয়াইজ।

ওয়াইজ ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যায় কি?

হ্যাঁ, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সুবিধা রয়েছে ওয়াইজ এর মাধ্যমে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ আদান-প্রদান এর ক্ষেত্রে ওয়াইজ বেশ জনপ্রিয় একটি সেবা। ব্যাংক ব্যবহার করে অর্থ আদান-প্রদান এর ক্ষেত্রে অধিক ফি দিতে হয়। এর চেয়ে ওয়াইজ এর মতো আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসসমূহ বেশ ভালো সুবিধা অফার করছে।

ওয়াইজ এর সুবিধা ও অসুবিধা

বিদেশ থেকে বন্ধু বা পরিবারকে পাঠাতে, অথবা আন্তর্জাতিক পারচেজ এর ক্ষেত্রে ওয়াইজ এর ব্যবহার বেশ সুবিধার। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়াইজ এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ সম্পর্কে।

সুবিধাসমূহ

ওয়াইজ এর ব্যাপক হারে ব্যবহারের অসংখ্য কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়াইজ এর সুবিধাসমূহ সম্পর্কে।

নিরাপত্তা

যেকোনো মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াইজ এর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত থাকা যায়। ওয়াইজ একটি লাইসেন্স করা ইলেক্ট্রনিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যা যুক্তরাজ্যে ফিনান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটি (এফসিএ) ও হার মেজেস্টি’স রেভিনিউ এন্ড কাস্টমস এর নিয়ম মেনে চলে। উভয় প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউশনাল-লেভেল সিকিউরিটি ও ২০৪৮-বিট কি যুক্ত ২৫৬-বিট এসএসএল ডাটা এনক্রিপশন ব্যবহার করে।

আবার কনজ্যুমার একাউন্ট ফান্ড আলাদা রাখা হয় কর্পোরেট একাউন্ট থেকে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের কোনো আর্থিক সমস্যা কিংবা দেউলিয়া হয়ে গেলে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এছাড়াও ওয়াইজ এর ট্রান্সফার প্রসেস সম্পর্কে ওয়াইজ অ্যাপ ও ইমেইল ব্যবহার করে আপডেট জানানো হয় যা ট্রান্সপারেন্সি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করে। ওয়াইজ একাউন্ট ছাড়াই ওয়াইজের মাধ্যমে পাঠানো অর্থ রিসিভ করা যাবে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

লো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট

যেকোনো কারেন্সির আসল বাজার দর এর কেনা-বেচার দাম সবসময় উঠানামা করতে থাকে। যদিওবা ব্যাংকসমূহ আসল রেট থেকে নিজস্ব প্রফিট করে থাকে। ওয়াইজ এর ক্ষেত্রে ভালো বিষয় হচ্ছে ওয়াইজ আসল রেট সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। ওয়াইজ সবসময় তাদের আসল রেট চার্টে প্রদর্শন করে। অর্থাৎ কারেন্সির দাম নিয়ে ওয়াইজ খুবই ট্রান্সপারেন্ট। 

ব্যাংক থেকে সাশ্রয়ী

অধিকাংশ চিরাচরিত ব্যাংক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও এক্সচেঞ্জ অফিসসমূহে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ও ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে ৫% পর্যন্ত হিডেন ফি দিতে হয়। এছাড়াও সেন্ডার ও রিসিভার, উভয়কেই বাড়তি ফি প্রদান করতে হয় ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে।

এইসব বিষয় বিবেচনায় ওয়াইজ ব্যবহার বেশ সাশ্রয়ী। এছাড়াও চার্জ ও ফি সম্পর্কে ওয়াইজ সরাসরি বলে দেওয়ার কারণে এর ব্যবহার বেশ সাশ্রয়ী। 👉 ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে এখানে ক্লিক করুন

বিস্তৃত কভারেজ

খুব কম প্ল্যাটফর্ম ওয়াইজ এর মত বৃহৎ হারে সেবা প্রদান করে। ৮০টির অধিক দেশে ৫০টির অধিক কারেন্সিতে সেন্ড মানি করা যাবে ওয়াইজ ব্যবহার করে। 

দ্রুত লেনদেন

ওয়াইজ সাধারণত ১-২ কার্যদিবসের মধ্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশের ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দেয়। মোবাইল ওয়ালেট যেমন বিকাশ একাউন্ট হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওয়াইজ থেকে বিকাশে টাকা চলে আসে। এছাড়া ওয়াইজ অ্যাপে আপনাকে দেখানো হবে যে কত সময় লাগবে আপনার লেনদেনটি সম্পন্ন হতে।

👉 ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য কী?

অসুবিধাসমূহ

তবে ওয়াইজ মানেই শুধু সুবিধা, তা কিন্তু নয়। ওয়াইজ ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ওয়াইজ এর অসুবিধাসমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

লিমিটেড সাপোর্ট

অফিস কার্যক্রম চলাকালীন দিনগুলোতে রেগুলার ওয়ার্ক আওয়ারে শুধুমাত্র ফোন ব্যবহার করে কাস্টমার সার্ভিস পাওয়া যায়। যদিওবা অধিকাংশ অর্থনৈতিক সেবার ক্ষেত্রেই এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড, তবে এই বিষয়টি জেনে রাখা ভালো।

সীমিত ডেবিট কার্ড

ওয়াইজের অন্যতম সেরা ফিচার হচ্ছে এর ডেবিট কার্ড। পেওনিয়ারের মতই ওয়াইজ একাউন্টের সাথেও ডেবিট কার্ড মাস্টারকার্ড পাওয়া যায়। তবে মাত্র কয়েকটি দেশের ব্যবহারকারীদের এই কার্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গ্রাহকদের এখনো ডেবিট কার্ড দেওয়া শুরু করেনি ওয়াইজ।

ওয়াইজ রেট ও ফি

ওয়াইজ কি? Wise দিয়ে টাকা লেনদেন করার সুবিধা কি?

ওয়াইজ ব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ পাঠানোর আগে ওয়াইজ এর কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কিভাবে কাজ করে সেটি বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। ট্রান্সফার এর জন্য রিয়েল এক্সচেঞ্জ রেট ব্যবহার করে ওয়াইজ, যা ব্যয়বহুল আর দশটা বাণিজ্যিক এক্সচেঞ্জ রেটের চেয়ে কম। ওয়াইজ ব্যবহার করে ১% থেকে ২.৫% চার্জ প্রযোজ্য হয়।

ওয়াইজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লুকানো ফি নেই। তবে এক্সচেঞ্জ রেট এর ক্ষেত্রে ফি সমূহ ঠিকই প্রযোজ্য হবে। যেখানে অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তাদের এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে কিছুই বলেনা, কিন্তু ওয়াইজ তাদের ফি নিয়ে সরাসরি ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেয়।

👉 ক্রেডিট কার্ড এর খরচ কমানোর উপায়

ওয়াইজ কাদের জন্য উপযোগী?

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের জন্য অথবা ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পেমেন্ট নিতে ওয়াইজ ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও বন্ধু বা পরিবারের কাছে বিদেশ থেকে প্রয়োজনে অর্থ আদান-প্রদান করতে ওয়াইজ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ওয়াইজ দিয়ে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনলে সরকারি ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা বোনাসও পাওয়া যায়।

ওয়াইজ একাউন্ট খুলব কীভাবে?

ওয়াইজ একাউন্ট খোলার নিয়ম বেশ সহজ। ওয়াইজ ওয়েবসাইট থেকে ওয়াইজ একাউন্ট খোলা যাবে। ওয়াইজ একাউন্ট খুলতেঃ

  • ওয়াইজ ওয়েবসাইট এই লিংকে প্রবেশ করুন
  • “Register” এ ক্লিক করুন
  • ইমেইল এড্রেস প্রদান করে “Next” এ ট্যাপ করুন
  • “Personal / Business Account” থেকে নিজের প্রয়োজনমত একাউন্ট সিলেক্ট করুন
  • যদি বিজনেস একাউন্ট খুলতে চান তাহলে বিজনেস ডকুমেন্ট দিতে হবে, তাই সাধারণত পার্সোনাল একাউন্ট খোলা সহজ
  • আপনি যে দেশে বাস করছেন, ঐ দেশ সিলেক্ট করুন
  • ফোন নাম্বার প্রদান করে এসএমএস এ আসা কোডের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন
  • এরপর ব্যাক্তিগত তথ্য প্রদান করে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন
  • ওয়াইজ আপনার পাসপোর্ট অথবা স্মার্ট এনআইডির স্ক্যান কপি চাইতে পারে ভেরিফিকেশনের জন্য
  • এরপর ভেরিফিকেশনের জন্য ওয়াইজ একাউন্টে ২০ ইউরো যোগ করতে হবে। আপনি অন্য কারো ওয়াইজ একাউন্ট থেকে এই ফান্ড চেয়ে নিতে পারেন, অথবা আন্তর্জাতিক কোনো ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। ২০ ইউরোর পরিবর্তে সমপরিমাণ ইউএস ডলারও যোগ করতে পারবেন। এই টাকা আপনি পরে আবার তুলতে পারবেন।

উল্লিখিত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ওয়াইজ একাউন্ট খুলে যাবে। এছাড়াও গুগল একাউন্ট, অ্যাপল আইডি বা ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করেও ওয়াইজ একাউন্ট তৈরী করা যাবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *