আপনার কি এখনও হুয়াওয়ে ফোন কেনা উচিত?

হুয়াওয়ে ফোন আগের মত সদর্পে দেশের বাজারে না থাকলেও প্রযুক্তিপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে এই চীনা ব্র্যান্ডটি। এই টেক জায়ান্ট যেখানে এক সময় প্রযুক্তি বিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেখানে গ্লোবাল স্মার্টফোন মার্কেটে আজ যেন নতুন করে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

তবে মজার ব্যাপার হলো ২০২৩ সালেও প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ কামিয়েছে হুয়াওয়ে। তাদের ফোনগুলো এখনো অসাধারণ ক্যামেরা ও নজরকাড়া ডিজাইনে পরিপূর্ণ। কিন্তু তারপরেও এন্ড্রয়েড ভিত্তিক ওএস চালিত হলেও অফিসিয়ালি গুগল এর সার্ভিস না থাকায় ফোনগুলোর ভক্ত হওয়ার পরেও অনেকে দ্বিধায় পড়েন হুয়াওয়ের ফোন কেনা নিয়ে।

আমাদের পোস্টে আমরা হুয়াওয়ে ফোন কেনার সুবিধা-অসুবিধা জানার মাধ্যমে আপনার কি এখনও হুয়াওয়ে ফোন কেনা উচিত কিনা সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

হুয়াওয়ে ফোনের যত ভালো দিক!

হুয়াওয়ে ফোনগুলোর সুনাম না করলে ব্যাপারটা মোটেই সঠিক হবেনা! হুয়াওয়ে ফোনের ক্যামেরা স্মার্টফোন জগতে প্রায়সই নতুন মাত্রা যোগ করে। অসাধারণ ডিটেইলড ও ভাইব্র্যান্ট ছবির জন্য হুয়াওয়ে ফোনের ক্যামেরার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন প্রযুক্তি প্রেমীগণ। তাই ক্যামেরা প্রেমীদের জন্য হুয়াওয়ে ফোন কনসিডার করা স্বাভাবিক। হুয়াওয়ে ফোনগুলোর ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি নিয়েও কথা বলতে হয়। হুয়াওয়ে ফোনগুলোর আইকনিক ডিজাইনের সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত রয়েছেন। নজরকাড়া ডিজাইনের সাথে হুয়াওয়ের ফোনগুলোতে আরো পেয়ে যাবেন অসাধারণ বিল্ড কোয়ালিটি।

ওহ হ্যাঁ! আলাদা করে হুয়াওয়ে ফোনগুলোর কম্পিটিটিভ প্রাইসিং এর সাথে কাটিং-এজ প্রযুক্তির ইন্টিগ্রেশন এর বিষয়টিও যথেষ্ট বাহবা পাওয়ার যোগ্য। হুয়াওয়ে এর প্রযুক্তি “টপ-টিয়ার প্রযুক্তি মানেই ব্যাংক একান্ট ফাঁকা হবেই” এই ধ্যানধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।

হুয়াওয়ের ফোনগুলোর আরেক অসাধারণ সুবিধা হলো হুয়াওয়ে এর কাস্টম অপারেটিং সিস্টেম, হারমোনি ওএস। হারমোনি ওএস মূলত গুগল প্লে সার্ভিস ছাড়া কাজ করছে। বিশাল অ্যাপ লাইব্রেরির সাথে অসাধারণ মাল্টিডিভাইস ইন্ট্রিগ্রেশন নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমে বেশ সুন্দরভাবেই রপ্ত করে ফেলেছে হুয়াওয়ে।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

এইতো গেলো হুয়াওয়ে ফোনের গুণগান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে হুয়াওয়ে ফোন এতো ভালো হলে এই ফোন কেনার সমস্যাটা কোনদিকে?

কোম্পানি হিসেবে হুয়াওয়ে ও ফ্যান হিসেবে হুয়াওয়ের ফোনগুলো নিয়ে চীনের বাইরের ব্যবহারকারীদের দুঃখ একই জায়গায়, সেটা হলো – গুগল প্লে সার্ভিস এর অনুপস্থিতি। গুগল প্লে সার্ভিস না থাকায় হুয়াওয়ে ফোনগুলোতে আউট অফ দ্যা বক্স জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ম্যাপস, ইত্যাদি অ্যাপ পাওয়া যায় না। গুগলের কোনো সেবাই অফিসিয়ালভাবে হুয়াওয়ে ফোনে এখন আর দেয়া থাকেনা। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক দেশটির কোনো কোম্পানিকে হুয়াওয়ের সাথে বাণিজ্য চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে গুগল বর্তমানে হুয়াওয়েকে গুগল সার্ভিসসমূহের লাইসেন্স দিতে পারছেনা। এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় হুয়াওয়ে ছাড়া আরও বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে। এরপর হুয়াওয়ে ফ্রি এবং ওপেন সোর্স এন্ড্রয়েড প্রজেক্ট ভিত্তিক হারমোনি ওএস তৈরি করে।

এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো হুয়াওয়ে ফোনে বিল্ট ইন থাকছেনা গুগল প্লে স্টোর। যদিওবা গুগল প্লে স্টোর এর বিকল্প হিসেবে হুয়াওয়ে এর অ্যাপ গ্যালারি রয়েছে, তবুও এটি প্লে স্টোর এর মত অত সমৃদ্ধ নয়। দরকারি সকল অ্যাপ পেতে হুয়াওয়ের অ্যাপ গ্যালারিকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

Huawei mate 50 pro

👉 আপনার কি এখনও নকিয়া ফোন কেনা উচিত?

তাহলে কি হুয়াওয়ে ফোন কেনা উচিত নয়?

এখন প্রশ্ন হলো হুয়াওয়ে ফোনের উল্লেখিত সমস্যার কি কোনো সমাধান নেই? আছে, অবশ্যই আছে।

হুয়াওয়ে ফোনের মূল বেদনা হলো এতে গুগল প্লে সার্ভিস এর অনুপস্থিতি। মজার ব্যাপার হলো হারমোনি ওএস গুগল এর ওপেন সোর্স এন্ড্রয়েড এর উপর ভিত্তি করে তৈরী হওয়ায় এতে এন্ড্রয়েডের ফিচারগুলো সাইউলোড করা যায়।

অর্থাৎ আপনি যদি প্রযুক্তি বিষয়ে কিছুটা অভিজ্ঞ হন, তবে গুগল এর অ্যাপস অর্থাৎ জিঅ্যাপস এর সাহায্য নিয়ে হুয়াওয়ে ফোনেও ব্যবহার করতে পারবেন গুগল এর অ্যাপগুলো। সাধারণ যেকোনো অ্যাপের মত গুগল এর অ্যাপগুলোও সাইডলোড করা যেতে পারে হুয়াওয়ের ফোনগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত ডেভলপার এর চেষ্টায় হুয়াওয়ে এর ফোনেও গুগল এর সার্ভিস ও অ্যাপগুলো সাইডলোড করা যায়। আপনি যদি একটি  হুয়াওয়ে ফোন কেনার পর একটু কষ্ট করে গুগল এর সার্ভিস ও অ্যাপ ইন্সটল করে নেন, তবে অন্য যেকোনো এন্ড্রয়েড ফোনের মত প্রায় একই সুবিধাগুলো পেয়ে যাবেন হুয়াওয়ের ফোনেও।

বেশ অসাধারণ না ব্যাপারটি? অর্থাৎ হুয়াওয়ে ফোন নিলেই গুগল এর অ্যাপ ব্যবহার করা যাবেনা এই ধরনের ধারণা আপাতত ঠিক নয়। তাই একটু বাড়তি ঝামেলা গ্রহণে যদি আপনার আপত্তি না থাকে, তবে হুয়াওয়ে ফোন কিনতে কোনো সমস্যা নেই। তবে, ভবিষ্যতে হারমোনিওএস নেক্সট জেনারেশন এলে সেটি এন্ড্রয়েড ভিত্তিক হবেনা। ফলে তাতে আর এন্ড্রয়েড অ্যাপ চলবেনা। আপাতত হুয়াওয়ে ফোনে এন্ড্রয়েড অ্যাপ সাইডলোড করা গেলেও ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবেনা- এমনটিই শোনা যাচ্ছে

তো আপনি জেনে গেলেন হুয়াওয়ে ফোনের ইকোসিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।

👉 হুয়াওয়ে স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ কী?

আপনি কি হুয়াওয়ে এর ফোন কিনবেন বা কারো কি উচিত এই সময়ে হুয়াওয়ে এর ফোন কেনার? এই পোস্টে আমরা জানিয়েছি হুয়াওয়ে ফোন সম্পর্কে আমাদের মতামত। আপনিও চাইলে এই বিষয়ে আপনার মতামত বাংলাটেক এর পাঠকদের সাথে কমেন্ট সেকশনে শেয়ার করতে পারেন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *