কিছু অবাক করার মত ব্যাপার, যা শুধু চীনেই সম্ভব!

গত কয়েক দশক চীন তাদের অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি সাধনে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু দেশটির প্রবৃদ্ধি-নীতি এবং রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে সেখানে বেশ কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। জমিজমা-খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ, নিরাপত্তার চেয়ে গতির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ প্রভৃতি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে মাঝে মাঝে এমন কিছু অবাক করা ঘটনা ঘটে যা দেখলে আপনিও হয়ত বলে উঠবেন ‘এ শুধু চীনেই সম্ভব!’

চলুন সেরকমই কিছু মজার ও কোন কোন ক্ষেত্রে হতবাক করে দেয়া বিষয় জেনে নিই, যা চীনে সচরাচর ঘটছে কিংবা অতীতে ঘটেছে।

১- কর্মীদের আত্নহত্যা প্রতিরোধে জাল টাঙানো!

চীনের বিশ্বখ্যাত কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার ফক্সকন কোম্পানিটির কর্মীদের জানালা/ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্নহত্যা করা ঠেকাতে বহুতল ভবনের পাশে জাল টাঙিয়ে রেখেছিল। ফক্সকন তাদের কর্মচারীদের কম বেতনে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেয়ার ফলে অনেকেই ক্ষোভে আত্নহত্যা করেছিল বলে খবর পাওয়া গিয়েছে, যা প্রতিরোধ করতে এই ব্যবস্থা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞও নিয়োগ দিয়েছিল ফক্সকন।

২- জাতীয়ভাবে শূকরের মাংস মজুদকারী

যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শূকরের মাংস খাদক দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। দেশটি সরকারিভাবে শূকরের মাংসের মজুদ রাখে যা এর মূল্য বেড়ে গেলে বাজারে ছাড়া হয়, ফলে সবাই কম দামেই এটি ভোগ করতে পারে।

৩- চীন তাদের জনগণের জন্য ‘ট্যুরিজম আইন’ পাশ করেছে

চীনা পর্যটকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে দেশটির মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিচ্ছিল। আর তাই, চীন সরকার তাদের নাগরিকদের বিদেশে গিয়ে ‘ভদ্র আচরণ’ করতে বাধ্য করার জন্য আইন পাশ করেছে। এ বছরের শুরুর দিকে এক চীনা কিশোর মিশরের একটি মন্দিরে থাকা ৩৫০০ বছর পুরনো নিদর্শনে নিজের নাম লিখে দিয়ে এসেছে! এরকম আরও অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছে চীনারা। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বিরক্তিকর পর্যটকের রেকর্ড এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের! চীন এই তালিকায় চতুর্থ।

৪- কবর থেকে লাশ চুরি করে ‘ভূতের সাথে বিয়ে’ দেয়ার জন্য বিক্রি!

চীনে এখনও কোথাও কোথাও অবিবাহিত তরুণ ছেলেরা মারা গেলে তাদের সাথে অন্য কোন মৃত তরুণীর ‘ঘোস্ট ম্যারেজ’ আয়োজন করার রীতি প্রচলিত আছে। এজন্য কনে পরিবার বরপক্ষের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ছেলেটির সাথে মেয়েটিকে একসাথে কবর দেয়া হয়। কিন্তু কয়েকজন ব্যক্তি মেয়েপক্ষের সাথে কথা না বলেই তাদের কন্যাদের মৃতদেহ ঘোস্ট ম্যারেজের জন্য বিক্রি করে দেয়ার পরেই বাধে বিপত্তি। শেষ পর্যন্ত মৃতদেহ চুরির অপরাধে তাদের জেল খাটতে হয়।

৫- সুন্দর চেহারার জন্য শিশুদের বদলে ফেলা হয় চীনে!

বেইজিং অলিম্পিকে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়ে মিথ্যাচার করেছিল চীন। তখন অনুষ্ঠানে যে বাচ্চা মেয়েটির গান গাওয়ার কথা ছিল সে দেখতে ‘খুব একটা সুন্দর না হওয়ায়’ মিউজিক ডিরেক্টর সেই মেয়েটির গানের সাথে ঠোঁট মেলানোর জন্য আরেকটি মেয়েকে স্টেজে হাজির করেছিলেন। আসল শিল্পীকে সবার আড়ালেই রাখা হয়েছিল যা পরে প্রকাশ পায়!

৬- স্বজনদের সাগরে কবর দেয়ার জন্য আর্থিক অনুদান দেয় চীনের স্থানীয় সরকার!

চীনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে জমির মূল্য বেড়ে গেছে। তাই কোন কোন চীনা প্রদেশের স্থানীয় সরকার মৃতদের সাগরে সমাধিস্থ করার জন্য আর্থিক সাহায্য/অনুদান তথা উৎসাহ দিয়ে থাকে। এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ১২৯০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জানা গেছে।

৭- নকল অ্যাপল স্টোর পাওয়া যায়!

চীনে একাধিক অ্যাপল স্টোর পাওয়া গেছে যেগুলো আসলে নকল! কিন্তু স্টোরগুলোর সাজসজ্জা ও কর্মীদের দেখে এক মুহুর্তের জন্যও এগুলোকে ভুয়া মনে হবেনা। অবশ্য, এ ব্যাপারে চীনাদের ‘সুনাম’ কে বা না জানে! ছবিতে যে চীনা অ্যাপল স্টোরটি দেখছেন, এটিও ফেইক!

৮- অ্যাপার্টমেন্টের ওপর বাড়ী নির্মাণ করে চীনারা!

চীনে জমির দাম বেশি হওয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট মালিকরা বাড়তি লাভের আশায় তাদের বিল্ডিংয়ের উপর অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছিল যদিও সেগুলোর অনেকটাই পরে ভেঙে ফেলতে হয়।

৯- ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে ডিভোর্স নেয় জুটিরা!

চীন সরকার বাড়ি বিক্রি সঙ্ক্রান্ত আয়ের ওপর ২০% করারোপ করায় যাদের একাধিক বাড়ি আছে তারা বিবাহ-বিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছিল। দুজনে দুটি বাড়ি নিয়ে আলাদাভাবে বিক্রি করলে তাতে ট্যাক্স দিতে হতনা। এভাবে ডিভোর্সের পর আলাদা ভাবে বাড়ী বিক্রি করে সুবিধা নিয়েছে কিছু চীনা দম্পতি!

১০- ভাড়ায় জেল খাটে চীনারা!

জনশ্রুতি আছে যে, ধনী চীনা নাগরিকরা আইনী ঝামেলায় পড়লে তাদের মত চেহারা বিশিষ্ট অন্য লোক এনে অর্থের বিনিময়ে জেল খাটিয়ে নিয়েছে!

১১- ছেলের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যাকারী ভাড়া করেন পিতা!

এক চীনা পিতা তার ছেলের বিরুদ্ধে গুপ্তঘাতক নিয়োগ দিয়েছিলেন। ঐ ছেলেটির অনলাইন ভিডিওগেম হিরোকে হত্যা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কেননা, ছেলেটি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ শুধু ভিডিও গেম খেলত আর নতুন কোন জব খুজত না। এই পথ থেকে ফেরাতেই ঐ পথে হেঁটেছিলেন তার বেচারা বাবা।

১২- মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে নিয়ে টক শো!

চীনা টেলিভিশন চ্যানেল ‘হেনান টিভি’ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীদের নিয়ে ‘ইন্টারভিউজ বিফোর এক্সিকিউশন’ নামের টক শো দেখাতো। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঠিক আগে এসব শো ধারণ করা হত যাতে তাদের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা থাকত। বিবিসিতে এটি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশের পরে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *