ফোনের ফ্লাইট মোড বা এয়ারপ্লেন মোড কি? এর উপকারিতা কি?

আপনি কি নিয়মিত প্লেনে ভ্রমণ করে থাকেন? আপনার উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়, তবে হয়ত প্লেন ওড়ার আগে মোবাইল ফোন বা হাতে থাকা যেকোনো ডিভাইসের এয়ারপ্লেন মোড অন করতে বলার নির্দেশনা শুনে থাকবেন।

এয়ারপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মোড এর দেখা মিলবে অধিকাংশ ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ডিভাইসের ড্রপডাউন মেন্যুতে। কিন্তু আসলে এই এয়ারপ্লেন মোড কি? আর প্লেন বা বিমান চড়ার সময় কেনো এই ফ্লাইট মোড বা এয়ারপ্লেন মুড ফিচারটি চালু করতে হয়? বিমান ছাড়া এই ফিচার এর অন্য কোনো ব্যবহার আছে কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নের উত্তর।

এয়ারপ্লেন মোড কি | ফ্লাইট মোড মানে কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা যেকোনো স্মার্ট ডিভাইসের সিম নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই বা ব্লুটুথ ব্লক হয়ে যায় এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে। অর্থাৎ এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে উক্ত ডিভাইসে কোনো কল করা যাবেনা ও আসবেনা, মেসেজ আসবেনা ও পাঠানো যাবেনা, ইন্টারনেট ও ব্যবহার করা যাবেনা। একে অনেকে ফ্লাইট মুড বা এরোপ্লেন মুড ও বলে থাকেন।

নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার জন্য যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি দরকার হয় তা ফ্লাইট মোডে অকার্যকর করে রাখা হয় এসব ডিভাইস থেকে। তাই ফোন বা যেকোনো ডিভাইসে নেটওয়ার্ক কাজ করেনা।

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসহ যেকোনো ধরনের অ্যাপ যা ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে সেগুলো ব্যবহার করা যাবেনা এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে। তবে এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে ফোন সম্পূর্ণরুপে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়না।

ফোনে থাকা মেসেজ দেখা যাবে, ফোনে থাকা ছবি ও ভিডিওসমূহ দেখা আবে ও ইন্টারনেট লাগেনা এমন গেম খেলা যাবে। এছাড়া ফোনে আগে থেকেই ডাউনলোড করে রাখা সিনেমা দেখা যাবে ও গান শোনা যাবে। 

প্লেনে কেনো এয়ারপ্লেন মুড ব্যবহার করা হয়?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফ্লাইটের সময় কেনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে হয়?

যেকোনো আধুনিক প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফট ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ও ন্যাভিগেশন সিস্টেমের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি ট্রান্সফারে কাজ করে এসব ডিভাইস, আর স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক এই যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম।

তবে বর্তমানে বেশিরভাগ এয়ারলাইনসমূহ তাদের প্যাসেঞ্জারদের ওয়াই-ফাইতে কানেক্টের সুযোগ করে দেয়, তবে এমন করতে আগে থেকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়। যে এয়ারলাইন প্যাসেঞ্জারদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ দেয়, তাদের নিরাপত্তা ও ঝুঁকি বহনের সম্পূর্ণ দায়ভার থাকে উক্ত এয়ারলাইনের উপর। এছাড়াও বিভিন্ন এভিয়েশন এজেন্সি কতৃক  প্রতিষ্ঠিত সেফটি রেগুলেশন ও মেনে চলা একান্ত প্রয়োজনীয়।

বর্তমানের এয়ারক্রাফটগুলোতে ওয়াইফাই ও ভয়েস কলিং ক্যাপাবিলিটি থাকে। তবে এই সুবিধা থাকার পরেও ফ্লাইট চলাকালীন পুরোটা সময়ে সকল ডিভাইস এয়ারপ্লেনে মোডে থাকা অনেক এয়ারলাইনে বাধ্যতামূলক। ফ্লাইট এটেনডেন্টদের কাজ হচ্ছে ফ্লাইটে কি ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে তা সম্পর্কে প্যাসেঞ্জারদের অবগত করা। কেবিন ও ফ্লাইট ক্রুসহ ফ্লাইটে থাকা সকল ব্যক্তির এসব নিয়ম নেমে চলতে হয়। আবার এসব নিয়ম না মানলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

অনেক ফোনে এয়ারপ্লেন মোড চালু করার পর ম্যানুয়ালি ওয়াইফাই চালু করা যায়। আবার আধুনিক অনেক প্লেনে ফোনের ফ্লাইট মোড চালু না থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। এই পোস্টে আমরা সাধারণ তথ্যটি তুলে ধরতে চেয়েছি।

এয়ারপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মুড এর অন্যান্য ব্যবহার

ফ্লাইটের সময় ডিভাইসের সিগন্যাল যাতে প্লেনের প্রয়োজনীয় সিগনালে ব্যাঘাত না ঘটায়, তাই এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করা হয় – আমরা ইতিমধ্যে সেটি বুঝে গিয়েছি। ফ্লাইটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এয়ারপ্লেন মোড চালু করার এই বিষয়টি মেনে চলা সকলের দায়িত্ব।

তবে ফ্লাইট চলাকালীন সময়ের পাশাপাশি এয়ারপ্লেন মোডের আরো অন্যান্য ব্যবহার রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে এয়ারপ্লেন মোড এর অন্যান্য ব্যবহারসমূহ সম্পর্কে।

ডিসট্রাকশন কমানো

আপনি যদি খুব সহজে ফোকাস হারিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে ভালোভাবে মনোযোগ প্রদান করতে এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকেনা, তাই ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম এর মতো অধিকাংশ অধিক ব্যবহারের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

👉 উড়োজাহাজ নিয়ে ১০টি অবিশ্বাস্য তথ্য

এছাড়াও ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ থাকায় ফোন নীরব থাকে, যার ফলে ফোকাস হারানোর সুযোগ নেই। ফ্লাইট মোড চালু করলে ইনকামিং ফোন কল ও মেসেজ আসেনা। এক্ষেত্রে কাজের মাঝে বিরতি নিয়ে কল ও মেসেজ চেক করতে পারেন।

এছাড়াও ঘুমানোর সময় রাতে নোটিফিকেশন, মেসেজ, কল ইত্যাদির সাউন্ডে জেগে উঠতে না চাইলে ব্যবহার করতে পারেন এয়ারপ্লেন মোড। তবে ফোনের এলার্ম ক্লক কিন্তু ঠিকভাবেই কাজ করে, যেটি একটি ভালো ব্যাপার।

ব্যাটারি লাইফ সেভ করা

কোনো জরুরি মূহুর্তে ফোনের ব্যাটারির চার্জ দীর্ঘ সময় ধরে বাচাঁতে চাইলে ফ্লাইট মোড ব্যবহার করতে পারেন। ফোনের এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস ও নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি বন্ধ থাকে। যার ফলে ফোনের ব্যাটারি লাইফ আরো বাড়বে।

👉 স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধির অজানা কিছু কৌশল

ফোন দ্রুত চার্জ করা

এয়ারপ্লেন মোড চালু করলে নেটওয়ার্ক ফিচারসমূহ বন্ধ থাকে, শুধুমত্র ফোনের বেসিক ফাংশনগুলো চালু থাকে। এর ফলে এয়ারপ্লেন মোড চালু থাকলে ফোনের ব্যাটারি অপেক্ষাকৃত দ্রুত চার্জ হয়। তাই দ্রুত ফোন চার্জ করতে এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করতে পারেন।

👉 ফোন দ্রুত চার্জ দেয়ার উপায়

বাচ্চাদের হাতে ফোন দেওয়ার ক্ষেত্রে

ফোনে যদি বাচ্চারা গেম খেলতে চায় বা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করতে চায়, তাদের হাতে ফোন দেওয়ার আগে অবশ্যই ফ্লাইট মোড চালু করুন। ভুলে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট ও ইন-অ্যাপ পারচেজগুলো ব্যবহার থেকে বাচ্চাদের রোধ করবে ফ্লাইট মোড। এছাড়াও ভুলে কাউকে কোনো মেসেজ পাঠানো বা ফটো ও ভিডিও পাঠানো থেকে বাঁচা যাবে।

👉 বিমানের ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার

আপনি কি ফোনে এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করেন? এয়ারপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মোড ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,571 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *