নতুন ফোন কেনা নিঃসন্দেহে সবার জীবনের আনন্দদায়ক একটি মুহুর্ত। নতুন ফোন কেনার পর করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে যা ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন এন্ড্রয়েড ফোন কেনার পর করণীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফোনের বক্স চেক করুন
ফোন কেনার পর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাথে প্রদত্ত বক্স আনবক্স করে চেক করুন। আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন ফোন কেনার পর আপনি অবশ্যই আনবক্স করবেন, তবুও আমরা এটি কেনো করতে বলছি। এর কারণ হলো বেশিরভাগ সময় ফোন আর চার্জার বক্স থেকে বের করে বাকি কনটেন্ট আর চেক ই করা হয়না।
বেশিরভাগ সময় ফোনের বক্সে একটি সিলিকন কভার দেওয়া থাকে। এছাড়া টেম্পারড গ্লাসও দেওয়া থাকে অনেক ফোনের বক্সে। ওয়ারেন্টি কার্ড, সিম ইজেকশন টুল, ইত্যাদির দেখা মিলে বর্তমান স্মার্টফোনের বক্সে। তাই নতুন ফোন কেনার পর বক্স চেক না করা অনেকটা বোকামির পর্যায়ে পড়ে।
ওয়ারেন্টি চেক করুন
অফিসিয়াল স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টি প্রদান করে। এমনকি আনঅফিসিয়াল ফোন কিনলেও যেকোনো ধরনের ওয়ারেন্টি বা সিকিউরিটি বুঝে নিতে ভুলবেন না। আপনার ফোনের বাড়তি আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে ওয়ারেন্টি, তাই ওয়ারেন্টিকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।
ফোন কেস ব্যবহার করুন
নতুন ফোন কেনার পর কমবেশি সবার লক্ষ্য থাকে উক্ত ফোনকে নিরাপদ রাখা ও দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারা। সাধারণ ব্যবহারে যেকোনো দিন ফোন হাত থেকে ভুলে পড়ে গিয়ে যাতে ফোনের কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই নতুন ফোনে কেস ব্যবহার করুন।
ফোনকে রক্ষা করতে ও ফোনের সৌন্দর্য বজায় রাখতে নতুন ফোন কেনার সময় একটি মজবুত ও সুন্দর দেখতে কেস কিনতে ভুলবেন না। এছাড়াও একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর ও লাগিয়ে নেওয়া উচিত, যাতে ফোন হাত থেকে পড়ে গেলেও স্ক্রিন সুরক্ষিত থাকে।
ফোনের কর্নার ও ব্যাক, ইত্যাদি স্পটসমূহ ভালোভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবে এমন ফোন কেস নির্বাচন করুন। একটি ভালো কেস আপনার ফোনকে স্ক্র্যাচ ও আঘাত থেকে বাঁচাবে। ফোন হাত থেকে পড়ে গেলেও গুরুতর আঘাত রুখবে ফোন কেস। এর সাথে ইউনিক কেস ব্যবহার করে ফোনকে অন্যদের ফোন থেকে আলাদা করা বেশ সহজ হয়।
নতুন ডিভাইস নিরাপদ করুন
ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ডাটা ও ফাইল এর সুরক্ষা সবাই নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষ করে ব্যক্তিগত চ্যাট যেকোনো কাউকে দেখার সুযোগ করে দিতে কেউই চায় না। তাই ফোনের সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে ফোন বায়োমেট্রিক বা সাধারণ যেকোনো লকস্ক্রিন মেথড ব্যবহার করা উচিত।
যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বেশ সহজে স্ক্রিন লক সেট করা যাবে। প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে স্ক্রিন লক হিসাবে। তবে ফেস আনলক বা ফিংগারপ্রিন্ট লক ব্যবহার করতে হলে প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড সেট করা আবশ্যক।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
সিস্টেম আপডেট করুন
বেশিরভাগ সময় নতুন ফোনে সিস্টেম আপডেট পেন্ডিং থাকে। তাই নতুন ফোন কেনার পর অ্যান্ড্রয়েড আপডেট প্রদান করুন। আপডেটের সাথে ফোনে নতুন ফিচার আসে ও সাথে কোনো বাগস (Bugs) থাকলে সেগুলো ফিক্স হয়ে যায়।
👉 অ্যান্ড্রয়েড আপডেট করার নিয়ম জেনে নিন
ব্লোটওয়ার রিমুভ করুন
বর্তমানে বেশিরভাগ ফোনে আগে থেকে অসংখ্য দরকারী ও অদরকারি অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে, এসব অ্যাপসমূহকে ব্লোটওয়্যার বলে। তাই ফোন কেনার পরে অবশ্যই ব্লোটওয়্যার অ্যাপসমূহ আনইন্সটল করে ফেলুন। ফোনের সেটিংস থেকে অ্যাপের তালিকার মেন্যু খুঁজে পাবেন। সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ বেশ সহজে নতুন স্মার্টফোন থেকে মুছে দিতে পারেন। ফোনের অ্যাপ ড্রয়ার খালি হওয়ার পাশাপাশি স্টোরেজও খালি হয় ব্লোটওয়্যার রিমুভ করলে। তবে কিছু কিছু অ্যাপ সম্পূর্ণরুপে ডিলিট করা যায় না, শুধুমাত্র ডিসেবল করা যায়।
গুগল একাউন্ট সেটাপ করুন
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অধিকাংশ ফিচার নির্ভর করে গুগল সার্ভিসের উপর। আর গুগল সার্ভিস ব্যবহারে প্রয়োজন গুগল একাউন্টের। তাই নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার পর গুগল একাউন্ট যুক্ত করা একান্ত জরুরি। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড এর কোর ফাংশনসমূহ ব্যবহারে গুগল একাউন্টে লগিন থাকা বাধ্যতামূলক।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন প্রথমবার চালু করার পর বা রিসেট করার পর ফোনের গুগল একাউন্টে লগিন করতে বলা হয়। আপনি যদি উক্ত ধাপে গুগল একাউন্টে লগিন স্কিপ করেন, তবে আপনার উচিত গুগল একাউন্টে লগিন করে ফেলা।
যেকোনো ফোনে গুগল একাউন্ট যুক্ত করা বেশ সহজ ও একাধিক উপায় রয়েছে। ফোনের সেটিংসে প্রবেশ করে Account সেকশন থেকে Add Account সিলেক্ট করে কয়েক ধাপে একদম সহজভাবে গুগল একাউন্টে লগিন করা যাবে।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস চালু করুন
নতুন ফোন হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। এমন অবস্থার কথা মাথায় রেখে অ্যান্ড্রয়েডে “ফাইন্ড মাই ডিভাইস” ফিচারটি রাখা হয়েছে। এই ফিচার চালু করে রাখলে হারিয়ে যাওয়া বা খুঁজে না পাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ফোনের লোকেশন জানা যাবে মূহুর্তের মধ্যে। ডিভাইসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার উচিত এই ফিচারটি ব্যবহার করা। ফাইন্ড মাই ডিভাইস সম্পর্কে ডেডিকেটেড পোস্টে ফিচারটির ব্যবহার ও ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
👉 ফাইন্ড মাই ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কনটাক্টস এড বা রিস্টোর করা
নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে দরকারী সব ফোন নাম্বার অর্থাৎ কনটাক্টস এড করা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গুগল একাউন্টে আগে থেকে যদি ফোন নাম্বারসমূহের ব্যাকাপ থাকে, তাহলে গুগল একাউন্টে লগিন করলে সকল ফোন নাম্বার নতুন ডিভাইসে সহজেই আনতে পারবেন। আর সিমে যদি নাম্বার সেভ থাকে, তাহলে নতুন ফোনে নাম্বারসমূহ চলে আসবে। এছাড়াও অন্য ফোন থেকে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে কনটাক্টস ট্রান্সফার করা যাবে।
ব্যাকাপ সেটাপ করুন
স্মার্টফোনে ব্যাকাপ নেওয়ার সুবিধাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখাই হয়না। তবে ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার নিয়মিত ব্যাকাপ। কনটাক্টস, ফোন লগ, এসএমএস, অ্যাপ ও অ্যাপের ডাটা যাতে ফোন রিসেটের সাথে বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কারণে মুছে না যায়, তাই স্মার্টফোন ব্যাকাপ নেওয়া একান্ত জরুরি। অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যাকাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন ডেডিকেটেড পোস্টে।
👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যাকাপ নেওয়ার নিয়ম জানুন
প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করা
আগের ডিভাইস ব্যাকাপ নিয়ে রাখলে ও ব্যাকাপ ডাটা রিস্টোর করলে পূর্বে ব্যবহার করা সকল অ্যাপ ইতিমধ্যে ফোনে চলে আসবে। তবে ব্যাকাপ না থাকলে সেক্ষেত্রে নতুন ফোনে ম্যানুয়ালি প্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ ইন্সটল করে নেওয়া উচিত। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ মুছে ফেলার পরামর্শ তো ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন।
👉 এন্ড্রয়েড ফোনে যে অ্যাপগুলো আপনার অবশ্যই দরকার
রিংটোন সেটাপ করুন
নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আগে থেকেই উক্ত ব্র্যান্ডের রিংটোন দেওয়া থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনার নিজের মত করে একটি রিংটোন সেট করতে ভুলবেন না। ভীড়ে আপনার ফোনকে অন্যদের ফোন থেকে আলাদা করবে এই রিংটোন। খুব সহজে ফোনের সেটিংসে প্রবেশ করে Sound সেকশন থেকে রিংটোন পরিবর্তন করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে যেকোনো অডিও সেট করা যায় রিংটোন হিসেবে। আপনার ফোনে যদি দুইটি সিম থাকে, সেক্ষেত্রে দুইটি সিমের জন্য আলাদা রিংটোন সেট করতে পারেন। এতে কোন সিমে কল আসছে, তা আলাদা করে বুঝতে সুবিধা হবে। এছাড়াও ফোনের নোটিফিকেশন টোন নিজের সুবিধামত পরিবর্তন করে নিতেও ভুলবেন না।
নোটিফিকেশন সেটিংস ঠিক করুন
নতুন ফোন কেনার পর যেকোনো অ্যাপ ইন্সটল করার পর ফোনের নোটিফিকেশন সেন্টার উক্ত অ্যাপের নোটিফিকেশনে ভরে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই নতুন ফোন কেনার পর ফোনের নোটিফিকেশন সেটিংস ঠিকমত এডজাস্ট করে নেওয়া খুবই জরুরি একটি বিষয়।
যেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন দরকার নেই, প্রয়োজন সেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করে দিন। আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ব্যাপক হারে নির্ভর করে ফোনের নোটিফিকেশন সেটিংসের উপর, তাই এই ধাপকে ছোট করে দেখবেন না।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।