ডলবি অ্যাট্‌মস সাউন্ড সিস্টেম যেভাবে কাজ করে

২০১৫ সালের শেষের দিকে আপনারা হয়তো একটা নতুন শব্দের (ডলবি এ্যাট্‌মস) সাথে পরিচিত হয়েছেন, বিশেষ করে যারা স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে গিয়েছেন। ওখানকার অনেকগুলো হলের মধ্যে দুটো হলে সিনেমা দেখতে গেলে টিকিটের দাম একটু বেশি গুনতে হয়। তার কারণ হচ্ছে ওনারা ওই দুটি হলে “ডলবি এ্যাট্‌মস” সাউন্ড সিস্টেম সেটআপ করেছেন।

এই সাউন্ড সিস্টেম সিনেমাহলের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে আর এজন্যই এই হলগুলোতে সিনেমা দেখলে আপনি আরও ভালভাবে সিনেমাকে উপভোগ করতে পারেন। তো চলুন আপনাদের এই ডলবি এ্যাট্‌মস সিস্টেমের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দেই।

ডলবি সাউন্ড সিস্টেম সম্বন্ধে আপনারা আগে থেকেই জানেন, তবে এই সিস্টেমের মধ্যে যে আরও কিছু ফরম্যাট রয়েছে তা হয়তো নাও জানতে পারেন। “ডলবি এ্যাট্‌মস” হচ্ছে সেইসব ফরম্যাটের মধ্যে সর্বশেষ সংস্করণ। ২০১২ সালে এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করা হয় যা সিনেমা জগতের জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এক কথায় এটা একটা নতুন সারাউন্ড সাউন্ড প্রযুক্তি যা আপনাকে ত্রিমাত্রিক শব্দের অনুভূতি দেবে। এই সাউন্ড সিস্টেমটা শব্দ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায় যোগ করেছে।

সিনেমাহলে বা বাসায় সিনেমা দেখার সময় এতদিন শব্দ আপনার চারপাশ থেকে প্রেরণ করা হত, কিন্তু এই “ডলবি এ্যাট্‌মস” (Dolby Atmos) সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার ওপর দিক থেকেও শব্দ প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন সিনেমাতে যদি কোন হেলিকপ্টার, প্লেন বা অন্য কোন বস্তু সিনেমার স্ক্রিনের দৃশ্যমান হয় (উপর দিয়ে যায় বা আসে) তাহলে আপনার মনে হবে যেন আপনার মাথার উপর দিয়েই চলে গেল।

আবার যদি আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো দেখায় তাহলে মনে হবে যেন আপনার উপর দিয়েই বিদ্যুৎটা চমকাল। কেমন লাগবে তখন বলুন তো !

আমাদের দেশের জন্য কমার্শিয়ালভাবে সিনেমাহলে এই সাউন্ড সিস্টেম সেটআপ করা এখনো একটা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার, তবে হোমে থিয়েটার এর ক্ষেত্রে দাম ধরা ছোঁয়ার মধ্যে। ডলবি এ্যাট্‌মস সমর্থন করে এমন স্পিকার সিস্টেম এবং ডিকোডার হলেই বানিয়ে ফেলা যাবে এই ধরনের হোম থিয়েটার। এই ডলবি এ্যাট্‌মস সাউন্ড সিস্টেম এ গতানুগতিক ৫.১ অথবা ৭.১ স্পিকার সিস্টেমের সাথে আরও বিশেষ দুটি (সর্বনিম্ন) স্পিকার এবং অডিও চ্যানেল যোগ হয়েছে (হোম থিয়েটারের ক্ষেত্রে), কিন্তু সিনেমাহলের ক্ষেত্রে স্পিকারের সংখ্যা অনেক বেশি হয়।

যা বলছিলাম, ডলবি এ্যাট্‌মস স্পিকার সিস্টেমকে তিনটা সংখ্যা দিয়ে (যেমন ৫.১.২ ফরম্যাটে) প্রকাশ করা হয়। এই পয়েন্ট ২ মানেই হচ্ছে সেই ২ টা এক্সট্রা স্পিকার [যা ছাদের সাথে লাগান হয়]। এই স্পিকারের সংখ্যা চারটাও হতে পারে,  তখন লেখা/বলা হবে ৫.১.৪ সিস্টেম। তবে ৫.১ সাউন্ড সিস্টেমের সাথে সাধারণত দুইটাই এক্সট্রা স্পিকার যোগ হয়। আবার ৭.১.২ সিস্টেম, ৭.২.২ সিস্টেম, ৭.২.৪ স্পিকার সিস্টেমও বাজারে আছে। এছাড়াও ৯.২.৪, ১১.২.৪ সাউন্ড সিস্টেমও কিনতে পাওয়া যায় এবং দামও একটু বেশি।

আপনারা যারা ৫.১.২ সাউন্ড সিস্টেম বলতে কি বোঝায় তা জানেননা তাঁদের জন্য সহজ করে বলি, এখানে পাঁচটা আলাদা সমান শক্তি সম্পন্ন স্পিকার/এমপ্লিফায়ার চ্যানেল আছে, ১ টি সাবউফার চ্যানেল/ স্পিকার এবং দুইটা সিলিং স্পিকার/ এমপ্লিফায়ার চ্যানেল আছে। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন।

আর একটি কথা, যাদের সিলিং এর সাথে স্পিকার লাগানোর কোন ব্যবস্থা নাই তাদের জন্য বিশেষ এক ধরনের স্পিকার বাজারে ছাড়া হয়েছে, সেগুলাকে “ডলবি এ্যাট্‌মস এনাবল্ড” স্পিকার বলে। ওই স্পিকার গুলা নিচের থেকে সিলিংয়ে শব্দ পাঠায় এবং সেখান থেকে শব্দ রিফ্লেক্ট করে নিচে স্প্রেড করে, যার ফলে শ্রোতারা শব্দ শুনতে পায় যেন শব্দ উপর থেকে আসছে।

মানুষের কান প্রতিটা শব্দ উৎপন্নের সঠিক জায়গা শনাক্ত করতে পারে তাই সিনেমাকে আরও উপভোগ্য করে তোলার জন্য এই সাউন্ড সিস্টেমের আবির্ভাব। ভবিষ্যতে আরও কত রোমাঞ্চকর, আরও উপভোগ্য কি আসছে কে জানে, তবে আপাতত যা আছে তাই নিয়েই খুশি। এগুলোর সাহায্যে আপনারাও বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার শখের প্রেক্ষাগৃহ।

লেখকঃ আশরাফুল ফেরদৌস
মিরপুর, ঢাকা।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *