আইফোনের জন্য কাপড়ের ব্যাগ আনলো অ্যাপল, দাম অবিশ্বাস্য

অ্যাপল মানেই নতুনত্ব। প্রতিটি পণ্যে তারা এমন কিছু করে, যা অন্যদের চেয়ে আলাদা। প্রযুক্তি, ডিজাইন আর বিলাসিতা, এই তিনের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে অ্যাপলের জগৎ। এবার তারা নিয়ে এলো একদম নতুন কিছু। এমন এক এক্সেসরি, যা ফোনকেও পরিধানের অংশে পরিণত করেছে।

নতুন এই পণ্যের নাম আইফোন পকেট। এটি দেখতে অনেকটা কাপড়ের মতো, কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে 3D-নিটেড প্রযুক্তি যা ফোনকে নিরাপদ রাখবে, আবার ফ্যাশনের ছোঁয়াও দেবে। এটি হলো অ্যাপলের সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইফোন পকেট হচ্ছে মূলত একটি ছোট কাপড়ের ব্যাগ বা ঝুলি যার মধ্যে আপনার আইফোন, এয়ারপড এসব রাখতে পারবেন এবং বহন করতে পারবেন।

অ্যাপল ও ইসে মিয়াকে: ফ্যাশন আর প্রযুক্তি একসঙ্গে

এই প্রকল্পে অ্যাপল হাত মিলিয়েছে জাপানের বিখ্যাত ডিজাইন হাউস ইসে মিয়াকে (ISSEY MIYAKE)-এর সঙ্গে। ফ্যাশন জগতে তাদের প্লিটেড বা ভাঁজকরা কাপড়ের ডিজাইন একেবারেই কিংবদন্তি। এবার সেই আইডিয়াকেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে অ্যাপল। iPhone Pocket-এর কাঠামো তৈরি হয়েছে একটিমাত্র কাপড়ের টুকরো থেকে। কোনো সেলাই বা অতিরিক্ত জোড়া নেই। বরং নিটেড টেক্সচারের মাধ্যমে তৈরি এই 3-D ফ্যাব্রিক ফোনকে ধরে রাখে এবং শরীরের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যায়।

অ্যাপল বলছে, “এটি কেবল একটি ব্যাগ নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। যেভাবে আপনি ফোন বহন করেন, সেটাকেই করে তুলবে নতুন মাত্রায়।” আইফোন পকেটকে সাধারণভাবে “পাউচ” বলা অন্যায় হবে। এটি এমনভাবে তৈরি যে ফোনটি রাখলে কাপড়টি সামান্য প্রসারিত হয়, আর বের করলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

এর শর্ট স্ট্র্যাপ সংস্করণ আসছে আটটি রঙেঃ লেমন, ম্যান্ডারিন, পার্পল, পিংক, পিকক, স্যাফায়ার, সিনামন ও ব্ল্যাক। আর লং স্ট্র্যাপ সংস্করণে রয়েছে তিনটি রঙঃ স্যাফায়ার, সিনামন ও ব্ল্যাক। এই ডিজাইনটি একদিকে ফ্যাশনেবল, অন্যদিকে ব্যবহারিক। গলায় ঝুলিয়ে, কাঁধে নিয়ে বা হাতে ধরে যেভাবেই ব্যবহার করুন না কেন, এটি আপনার ব্যক্তিত্বে যোগ করবে নতুন মাত্রা।

iphone pocket

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

বাস্তবে কতটা প্রয়োজনীয়?

অনেকেরই প্রশ্ন, “ফোন তো পকেটেই রাখা যায়, আবার আলাদা পকেট কেন?”
আসলে অ্যাপলের লক্ষ্য সবসময়ই কিছু ‘নতুনভাবে ভাবা’। তারা এমন এক ব্যবহার-অভিজ্ঞতা দিতে চায়, যা প্রযুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে জীবনযাপনের অংশ হয়ে যায়।

ছোটখাটো যাত্রায়, হাঁটতে বের হলে বা বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাফেতে অনেকেই শুধু ফোন, কার্ড আর ইয়ারফোন নিয়েই বের হন। তাদের জন্য এই এক্সেসরিটি একদম উপযুক্ত। এটি ফোনকে সুরক্ষিত রাখে, আবার আপনাকে দেয় ফ্যাশনের এক আলাদা আত্মবিশ্বাস।

তবে দাম শুনলে পকেটও কেঁপে উঠবে!

এবার আসা যাক সবচেয়ে আলোচিত অংশে, এর দাম!

অ্যাপল ঘোষণা করেছে, শর্ট স্ট্র্যাপ অর্থাৎ ছোট ফিতাযুক্ত সংস্করণের দাম ১৪৯.৯৫ ডলার। আর লং স্ট্র্যাপ (লম্বা ফিতাযুক্ত) সংস্করণের দাম ২২৯.৯৫ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে (প্রতি ডলার ≈ ১২০ টাকা) দেখা যায় শর্ট স্ট্র্যাপের দাম প্রায় ১৮ হাজার টাকা। আর লং স্ট্র্যাপের দাম প্রায় ২৭ হাজার টাকার কাছাকাছি!

হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। এক কাপড়ের পকেটের দামেই আপনি চাইলে একটা ভালো মানের অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে পারেন! 😄

সোশ্যাল মিডিয়ায় মজার মন্তব্য ঘুরছেঃ “অ্যাপল এবার এমন পকেট বানালো, যেটা কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাবে!” 

আবার কেউ লিখেছেন, “আইফোন পকেট মানে এমন পকেট, যেটা আপনার ব্যালেন্সকে শূন্যে নামিয়ে আনবে!”

তবে সত্যি বলতে কি, অ্যাপল-প্রেমীদের কাছে এটি কেবল দাম নয়, বরং ডিজাইনের প্রতি উৎসাহ।

👉 আইফোন ১৭ সিরিজ উন্মোচন করলো অ্যাপল, সাথে চমকপ্রদ সব ফিচার

ফ্যাশন নাকি বিলাসিতার গিমিক?

প্রযুক্তি দুনিয়ায় অ্যাপলকে বলা হয় “ট্রেন্ড সেটার”। অন্যরা যেখানে ভাবতে শুরু করে, তারা সেখানে কাজ শেষ করে ফেলে। অনেকে বলছেন, আইফোন পকেট আসলে অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা; আবার অনেকে মনে করছেন, এটি “দ্য মোস্ট অ্যাপল থিং এভার”!

অ্যাপলের ডিজাইন টিমের দর্শনই হলো সাধারণ জিনিসকেও অসাধারণভাবে উপস্থাপন করা। ফোন কভার, ব্যাগ বা পাউচ, এগুলোর সবগুলোকেই তারা এক নতুন অভিজ্ঞতায় রূপ দিয়েছে। বিশেষ করে অ্যাপল ওয়াচ, এয়ারপড আর আইফোন একসাথে ব্যবহার করলে এই আইফোন পকেট যেন পুরো ‘অ্যাপল লাইফস্টাইল’-এর প্রতীক হয়ে ওঠে।

ভবিষ্যতের ইঙ্গিত: ওয়্যারেবল টেকের পরবর্তী অধ্যায়

বিশ্লেষকদের মতে, এই পণ্যটি কেবল ফ্যাশন নয়। এটি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। অ্যাপল ক্রমেই “ওয়্যারেবল টেকনোলজি”র দিকে এগোচ্ছে। অ্যাপল ওয়াচ, এয়ারপড, ভিশন প্রো-এর পর এবার এসেছে এই আইফোন পকেট।

সম্ভবত তারা একে আরও বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেখছে। এমন এক যুগ, যেখানে পোশাকই হবে স্মার্ট, সংযুক্ত এবং এক্টিভ। তখন এই আইফোন পকেট-ই হয়ে উঠতে পারে সেই স্মার্ট ফ্যাশন বিপ্লবের প্রথম ধাপ।

👉 আইফোনে আইওএস আপডেট দেয়ার আগে করণীয়

শেষ কথা

সব মিলিয়ে বলা যায়, আইফোন পকেট হলো সাধারণ জিনিসের অসাধারণ উপস্থাপনা। অ্যাপল আবারও প্রমাণ করলো, তারা শুধু পণ্য বিক্রি করে না, বরং অভিজ্ঞতা বিক্রি করে।

হ্যাঁ, এর দাম শুনে কারও কারও পকেট কাঁপবে, কিন্তু ফ্যাশন ও ডিজাইনের প্রেমীদের কাছে এটি হতে পারে এক সংগ্রহযোগ্য উপকরণ। যারা অ্যাপল-এর প্রতিটি উদ্ভাবনকে শিল্প মনে করেন, তাদের জন্য এই পকেটও হবে গর্বের অংশ। তবে যারা ব্যবহারিক দিক থেকে ভাবছেন, তারা হয়তো বলবেন “একটা কাপড়ের পকেটের জন্য ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা? আমি বরং ফোনটা প্যান্টের পকেটে/হাতে রাখব!” 😄

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,374 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *