৯ লাখ টাকা দামের এই ল্যাপটপে এমন কী আছে? জানুন বিস্তারিত

গেমিং দুনিয়ায় শক্তি আর বিলাসিতা যদি একসাথে দেখতে চান, তাহলে এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই ল্যাপটপ আপনার চোখ এড়াতে পারবে না। এই ল্যাপটপটি শুধুমাত্র পারফরম্যান্স নয়, বরং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের এক অসাধারণ উদাহরণ। বাংলাদেশে এর দাম অনেকের নাগালের বাইরে হলেও, যারা গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা থ্রিডি রেন্ডারিং-এ পেশাদার পর্যায়ে কাজ করেন, তাদের কাছে এটি স্বপ্নের কম্পিউটার। চলুন দেখি এই ল্যাপটপের স্পেসিফিকেশন, ফিচার এবং কেন এটি এত দামী, তার সব দিক একবারে।

ইন্টেলের কোর আল্ট্রা ৯ শক্তিশালী প্রসেসর

এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই এসেছে ইন্টেলের কোর আল্ট্রা ৯ ২৮৫এইচএক্স প্রসেসরসহ, যা বর্তমানে বাজারের অন্যতম দ্রুততম মোবাইল চিপ। এতে রয়েছে ২৪টি কোর। ৮টি পারফরম্যান্স কোর এবং ১৬টি ইফিশিয়েন্ট কোর, যা একসাথে বিশাল মাল্টিটাস্কিং সামর্থ্য দেয়।

এআই নির্ভর প্রসেসিংয়ে এটি আরও এগিয়ে। ইন্টেল তাদের এআই বুস্ট এনপিইউ (নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট) প্রযুক্তি যুক্ত করেছে, যা ভিডিও এনহান্সমেন্ট, লাইভ ট্রান্সলেশন এবং জেনারেটিভ এআই কাজকে ত্বরান্বিত করে। ফলে এই ল্যাপটপ শুধুমাত্র গেমিং নয়, এআই ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কফ্লোতেও সমান শক্তিশালী।

আরটিএক্স ৫০৯০ জিপিইউ: গ্রাফিক্স পাওয়ারহাউস

এনভিডিয়া’র সর্বশেষ আরটিএক্স ৫০৯০ ল্যাপটপ জিপিইউ এই ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ২৪ জিবি জিডিডিআর৭ ভিআরএএম সহ একটি গ্রাফিক্স ইউনিট, যা ৪কে রেজোলিউশনে সব গেমকে সর্বোচ্চ সেটিংসে চালাতে সক্ষম। ডিএলএসএস ৩.৫ এবং রে ট্রেসিং জেনারেশন ৩ প্রযুক্তির সাহায্যে গেমে আলো, ছায়া, এবং বাস্তব প্রতিফলনের ভিজ্যুয়াল এত বাস্তব লাগে যে মনে হয় যেন সিনেমা চলছে। বিশেষ করে সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭ বা অ্যালান ওয়েক ২ এর মতো হেভি গেমেও এটি ১০০ এর বেশি এফপিএস দিতে পারে।

তাছাড়া, কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য আরটিএক্স ৫০৯০-এর কুডা কোর ও টেনসর কোরগুলো ভিডিও রেন্ডারিং বা এআই নির্ভর এডিটিংয়ে অসাধারণ দ্রুততা এনে দেয়।

MSI Titan 18 HX AI

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

১৮ ইঞ্চি ৪কে মিনি এলইডি ডিসপ্লে

টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই-এর ১৮ ইঞ্চি মিনি এলইডি ডিসপ্লেটি এই ল্যাপটপের অন্যতম আকর্ষণ। এর রেজোলিউশন ৩৮৪০×২৪০০ (ইউএইচডি+), রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ এবং ১০০ শতাংশ ডিসিআই-পি৩ কালার কভারেজ নিশ্চিত করে নিখুঁত রঙ।

এইচডিআর ১০০০ সার্টিফাইড স্ক্রিনটি ১,০০০ নিট পর্যন্ত উজ্জ্বলতা দেয়, ফলে সূর্যের আলোতেও গ্রাফিক্স পরিষ্কার দেখা যায়। ভিডিও এডিটর বা ডিজাইনারদের জন্য এটি একেবারে স্বপ্নের ডিসপ্লে।

অপরদিকে, বেশিরভাগ গেমিং ল্যাপটপে ১৬ বা ১৭ ইঞ্চির আইপিএস প্যানেল থাকে, কিন্তু এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই-তে মিনি এলইডি ব্যবহারের ফলে কালার ডেপথ এবং কনট্রাস্ট অনেক ভালো পাওয়া যায়।

র‍্যাম ও স্টোরেজে সীমাহীন গতির সমন্বয়

৬৪ গিগাবাইট ডিডিআর৫-৬৪০০ মেগাহার্টজ র‍্যাম এবং সর্বোচ্চ ৬ টেরাবাইট এনভিএমই এসএসডি স্টোরেজ এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই-কে করে তুলেছে এক সুপারকম্পিউটার-লেভেলের যন্ত্র। এসএসডি-এর গতি এত বেশি যে একটি ১০০ গিগাবাইট গেম ইনস্টল বা ওপেন হতে কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট।

এছাড়া এমএসআই এই মডেলে তিনটি এম.২ স্লট রেখেছে, যাতে ভবিষ্যতে ইচ্ছা করলে ব্যবহারকারী নিজের মতো করে আপগ্রেড করতে পারেন। এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য এক বিশাল সুবিধা।

কুলিং সিস্টেম ও কানেক্টিভিটি

এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই-এর ওভারবুস্ট আল্ট্রা কুলিং টেকনোলজি প্রসেসর ও গ্রাফিক্স ইউনিটকে একসাথে ২৭০ ওয়াট পাওয়ার ডেলিভারি দিয়ে কাজ করায়। এর ভিতরে আছে বিশাল ভেপার চেম্বার এবং একাধিক টর্নেডো ফ্যান, যা গরম বাতাস দ্রুত নিষ্কাশন করে পারফরম্যান্স বজায় রাখে।

কানেক্টিভিটির দিক থেকেও এটি সম্পূর্ণ আধুনিক। থান্ডারবোল্ট ৫, এইচডিএমআই ২.১, ওয়াই-ফাই ৭, ব্লুটুথ ৫.৪ এবং ২.৫ গিগাবিট ল্যান, সবই রয়েছে। ফলে গেমিং, স্ট্রিমিং বা হাই-স্পিড ফাইল ট্রান্সফারে কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে না।

এত দাম কেন?

এই ল্যাপটপটি মূলত “কোনো কম্প্রোমাইজ নেই” নীতিতে তৈরি। প্রতিটি উপাদানই ফ্ল্যাগশিপ লেভেলের। কোর আল্ট্রা ৯ ২৮৫এইচএক্স প্রসেসর ও আরটিএক্স ৫০৯০ জিপিইউ-এর কম্বিনেশন এখনও বিশ্বের সর্বোচ্চ শ্রেণির একটি।

মিনি এলইডি স্ক্রিন, এআই এক্সিলারেশন, ৬৪ গিগাবাইট ডিডিআর৫ র‍্যাম, থান্ডারবোল্ট ৫ এবং এমএসআই-এর কাস্টম মেকানিক্যাল কীবোর্ড — সব মিলিয়ে এর উৎপাদন খরচই অত্যন্ত বেশি।

বিশ্ববাজারে এর মূল্য প্রায় ৫,৮০০ ডলার। বাংলাদেশে আমদানি খরচ ও কর যোগ হলে দাম ছুঁতে পারে ৯ লক্ষ টাকার ওপর। সাধারণ গেমারের জন্য এটি অতিরিক্ত হলেও, পেশাদারদের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি বিনিয়োগ।

কার জন্য উপযুক্ত?

যারা গেম ডেভেলপার, ই-স্পোর্টস প্রফেশনাল বা থ্রিডি আর্টিস্ট, তাদের জন্য এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই একটি স্বপ্নের ল্যাপটপ। এআই ওয়ার্কফ্লো, ভিডিও রেন্ডারিং বা হাই-এন্ড স্ট্রিমিং যেখানে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান, সেখানে এটি অতুলনীয়।

তবে যারা শুধুমাত্র গেম খেলার জন্য ল্যাপটপ চান, তাদের জন্য এমএসআই রেইডার বা আসুস আরওজি স্ট্রিক্স স্কার-এর মতো মডেল কম দামে চমৎকার বিকল্প হতে পারে। টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই মূলত “পারফরম্যান্সের সীমা ভাঙতে” চাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য।

বাংলাদেশের বাজারে এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে এমএসআই-এর টাইটান সিরিজ সর্বদাই বিলাসবহুল ল্যাপটপের প্রতীক। তবে এআই নির্ভর এই নতুন সংস্করণটি স্থানীয় ক্রিয়েটর কমিউনিটির মনোযোগ আকর্ষণ করবে নিশ্চয়ই।

বিশেষ করে যারা আনরিয়েল ইঞ্জিন বা ব্লেন্ডার-এর মতো হাই-রিসোর্স সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে।

প্রতিদ্বন্দ্বী ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো আসুস আরওজি মাদারশিপ, এলিয়েনওয়্যার এক্স১৮ আর২, এবং রেজার ব্লেড ১৮ (২০২৫ সংস্করণ)। তবে এই টাইটান মডেলটি তাদের থেকে আলাদা কারণ এটি কেবল গেমিং নয়, বরং এআই নির্ভর কম্পিউটিংকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

ইন্টেলের কোর আল্ট্রা ৯ চিপ এবং আরটিএক্স ৫০৯০-এর যুগলবন্দিতে এটি একসাথে এআই টাস্ক, গেমিং ও রেন্ডারিং চালাতে পারে, যা অন্যরা এখনও করতে পারছে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই ল্যাপটপ বাজারে এক নতুন ধারা তৈরি করবে — যেখানে ডেস্কটপ-লেভেলের ক্ষমতা মিলবে পোর্টেবল আকারে।

ভবিষ্যতে এমএসআই এই সিরিজে আরও “এআই অপটিমাইজড” সফটওয়্যার ও থার্মাল ডিজাইন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে এটি হয়তো নির্দিষ্ট কিছু প্রফেশনাল ক্রিয়েটর বা গেমারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে দেশের প্রিমিয়াম টেক সেগমেন্টে এমএসআই-এর ব্র্যান্ড মর্যাদা আরও উঁচুতে তুলবে।

শেষ কথা

এমএসআই টাইটান ১৮ এইচএক্স এআই ডিভাইসটি একটি প্রযুক্তির মাস্টারপিস। এর প্রসেসর, গ্রাফিক্স, স্ক্রিন, র‍্যাম, এবং কুলিং সবই এক অভিজাত মানের। এই ল্যাপটপ কেবল একটি গেমিং ডিভাইস নয় — এটি একেবারে “ল্যাপটপ বডিতে সুপারকম্পিউটার।”

তবে এর মূল্যও তেমনই উচ্চ। তাই এটি তাদের জন্য যারা গুণে বিশ্বাস রাখেন এবং টাকা খরচকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন। সাধারণ গেমারের জন্য হয়তো এটি অতিরিক্ত, কিন্তু পেশাদারদের জন্য এটি একটি বড় বিনিয়োগ।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,382 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *