আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে কী করবেন?

ইন্টারনেট সুবিধা আছে অথচ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমূলক সাইটসমূহে একাউন্ট নেই এই যুগে এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিংকডইন সহ আরও কয়েকটি ওয়েবসাইটে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলছে সদস্য সংখ্যা। এগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলতে খুব বেশি সময়ও লাগেনা, আবার ব্যবহারবিধিও সহজ। ফ্রি’তে আইডি ওপেন করা যায় বলে অনেকের একাধিক অ্যাকাউন্টও থাকে।

যার যতগুলো সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থাকুক না কেন, প্রত্যেকটির পেছনেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় ব্যয় হয়েছে। এগুলো তৈরি করা, ইমেইল/মোবাইল ভেরিফিকেশন, প্রোফাইল এডিট প্রভৃতি কাজ করতে করতে অজান্তেই এসব আইডির প্রতি একটা মায়া চলে আসে। কিছুদিন ব্যবহারের পর এগুলোর সাথে নিজের মান-সম্মানও জড়িয়ে যায়।

কিন্তু সাধের এই একাউন্ট যদি হ্যাকড বা হাইজ্যাকড হয়ে যায় তখন কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ হবে? সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের নিজেদের ভুলের কারণেই এমনটি বেশি ঘটে থাকে।

একাউন্ট হ্যাকড হয়ে যাওয়া বলতে এমন না যে আপনার পাসওয়ার্ড অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে বদলে ফেলল আর আপনি একাউন্টের মালিকানা হারালেন। আপনার নিজের এক্সেস থাকাকালীনও চলমান হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন। অন্যভাবে বললে একে “কম্প্রোমাইজড অ্যাকাউন্ট”ও বলা চলে।

আপনি দিব্যি ফেসবুক/টুইটার ব্যবহার করে চলছেন, আর ওদিকে আপনার একাউন্ট কম্প্রোমাইজড হয়ে আপনার নামে স্প্যাম লিংক ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব স্প্যাম/স্ক্যাম লিংকে অশ্লীল ছবি বা ভিডিওর ফাঁদ পাতা থাকে। আজকাল পরিবারের সদস্য সহ শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সম্পর্কিত- এরকম বহু লোকজন আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে (উদাহরণস্বরূপ ফেসবুকে) যুক্ত থাকতে পারেন। এখন আপনি যদি এরকম একটি অশ্লীল স্প্যামের শিকার হন আর আপনার ফেসবুক একাউন্ট থেকে এসব লিংক ছড়াতে থাকে তাহলে সবার কাছে আপনার ব্যক্তিত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ভাবা যায়? কেউ কেউ হয়ত এটাকে স্ক্যাম হিসেবেই বুঝে নেবে, কিন্তু বাকীদের কাছে ব্যাপারটা বিব্রতকর মনে হবে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার একাউন্টের মালিকানা বেহাত হয়ে গেছে?

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিছু কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে আপনার প্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টটি হ্যাকিং/হাইজ্যাকিং/স্প্যামিং/স্ক্যামের শিকার হচ্ছে। যেমন,

> আপনার একাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে লাইক, আনলাইক, কমেন্ট, লিংক পোস্ট, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, ফলো/আনফলো, ফেভারিটস তালিকা হালনাগাদ- প্রভৃতি কমর্মকান্ড (এমনি এমনিই) হতে থাকলে বুঝে নিন যে আপনার আইডিটি কম্প্রোমাইজড হয়েছে।

> ফ্রেন্ডলিস্টের বিভিন্নজনের কাছে অটোমেটেড মেসেজ সেন্ড হলে বুঝতে হবে কোথাও সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য, কেউ সতর্ক না করলে এটা টের পাওয়া বেশ কঠিন।

> সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটটি থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন সতর্কবার্তা (যেমন পাসওয়ার্ড চেঞ্জ, ইমেইল এড্রেস চেঞ্জ প্রভৃতি) এলে বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারও হাতে চলে যাচ্ছে/গেছে।

> একাউন্টে আপনার অনুমতি ব্যতীত কোন অ্যাপ্লিকশন, গেমস প্রভৃতি যুক্ত হলে।

> আপনার আইডি থেকে আপনার অগোচরেই স্ট্যাটাস বা টুইট আপডেট হলে ধরে নিন একাউন্টের মালিকানা চরম হুমকির মধ্যে আছে।

> অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো বা অন্যান্য তথ্য আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিবর্তিত থাকলে বুঝে নিন আইডিটি হ্যাক হতে চলেছে।

কীভাবে ঠেকাবেন এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা?

আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন… আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য যেকোন অনলাইন ( কোন কোন ক্ষেত্রে অফলাইন) একাউন্টের নিরাপত্তার জন্য কিছু সাধারণ বিষয় লক্ষ্য রাখলেই এসব বিব্রতকর পরিস্থিতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব।

> টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখুন। এই ফিচারটি চালু করলে একাউন্টে সাইন-ইন করার সময় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়ার পরেও আলাদা একটি অথেনটিকেশন কোড ইনপুট দিতে হবে। এই সিক্যুরিটি কোডটি এসএমএসের মাধ্যমে মোবাইলে আসবে অথবা আপনার স্মার্টফোন অ্যাপেও নতুন কোড জেনারেট করা যাবে। ফেসবুক টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি দেখুন।

গুগল প্লাসে এই ফিচার চালু করার জন্য এই অফিসিয়াল লিংক এবং টুইটারের জন্য এই অফিসিয়াল পেজ দেখতে পারেন।

> মূল সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যতীত অন্য কোন সাইট কিংবা অ্যাপে ভুলেও কখনো আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড দিবেন না। আজকাল ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস প্রভৃতি সেবায় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহারের জন্য “ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড” বা সিক্যুরিটি কোড সিস্টেম চালু আছে। মনে করুন, আপনি নিমবাজ সফটওয়্যারের সাহায্যে ফেসবুকে চ্যাট করতে চাচ্ছেন। এখানে সাইন-ইন করার সময় ফেসবুক ক্রেডিনশিয়াল চাইবে। এক্ষেত্রে আপনার ইউজারনেম/ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দেয়ার ফরম আসবে। সেখানে ইউজারনেম দেয়ার পর পাসওয়ার্ডের ঘরে ওয়ান টাইম অ্যাপ পাসওয়ার্ড দিতে হবে। মূল একাউন্টের পাসওয়ার্ড দিলে তা কাজ করবে না। সাধারণত টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু থাকলে এই সুবিধাটির নিরাপত্তা উপভোগ করা সহজ হয়।

> মূল সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যতীত অন্য কোন সাইটে ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড দিবেন না। আপনি যখনই ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্রভৃতি সেবায় লগইন করতে যাবেন তখন এর ইউআরএল বা ওয়েব এড্রেস ভালভাবে লক্ষ্য করুন। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকের ক্ষেত্রে www.facebook.com, টুইটারের ক্ষেত্রে https://twitter.com, গুগলের ক্ষেত্রে google.com এসব ডোমেইন থেকে লগইন এড্রেস শুরু হয় কিনা তা খেয়াল রাখবেন। যদি অন্য কোন সাইট আপনাকে বোকা বানিয়ে আইডি-পাসওয়ার্ড নিতে চায় তাহলে এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপটি কাজে দেবে।

> ফেসবুক, টুইটারে থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যবহার কমিয়ে দিন। এসব অ্যাপ আপনার হয়ে মেসেজ দেয়া, ওয়াল পোস্ট করা, ফটো ট্যাগিং প্রভৃতি কাজের দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার সুনাম নষ্ট করতে যথেষ্ট। আর, একবার যদি ওসব অ্যাপ হ্যাকড হয়ে তাহলে আপনার একাউন্টের ওপরও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাকড কিংবা কম্প্রোমাইজড হলে কী করবেন?

শখের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ (আংশিক কিংবা পুরোপুরি) অন্যের হাতে চলে গেলে নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

> সুযোগ থাকলে সাথে সাথে আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিন।

> সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট ইমেইলের পাসওয়ার্ডও পরিবর্তন করুন।

> স্প্যাম পোস্টিংয়ের শিকার হলে একাউন্টে লগইন করে এর ওয়েবঅ্যাপ লিস্ট চেক করুন। অপ্রয়োজনীয় ও সন্দেহযুক্ত অ্যাপ রিমুভ করে দিন।

> আপনার ব্রাউজারের অ্যাড-অন/এক্সটেনশন লিস্ট চেক করুন। সেখানেও কোন অপ্রয়োজনীয় বা সন্দেহ হয় এমন অ্যাড-অন/এক্সটেনশন ডিস্যাবল/রিমুভ করুন।

> এবার কম্পিউটারে এন্টিভারাস স্ক্যান করুন।

> স্প্যাম মেসেজ কিংবা ওয়াল পোস্ট পেয়েছেন এমন লোকজনের সাথে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করে আপনার একাউন্ট কম্প্রোমাইজড হওয়ার কথা জানিয়ে দিন, যাতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়।

> দ্রুত অ্যাপ চেক করার জন্য সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার এপ্লিকেশন পেইজ ভিজিট করুন।

>>> ফেসবুক এপ্লিকেশন পেজ

>>> টুইটার অ্যাপ পেজ

>>> গুগল প্লাস অ্যাপ

>>> লিংকডইন এপ্লিকেশন পেজ

… কিন্তু আপনি যদি একাউন্টের নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলেন, অর্থাৎ হ্যাকাররা যদি আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে তাহলে ইমেইলের মাধ্যমে রিসেট পাসওয়ার্ড অপশনে গিয়ে একাউন্টটি ফিরে পেতে পারেন। আর ইমেইল এড্রেসও পরিবর্তন হয়ে গেলে নিচের সাপোর্ট লিংকসমূহে যোগাযোগ করুন।

*** ফেসবুক সাপোর্ট

*** টুইটার সাপোর্ট

*** গুগল প্লাস হেল্প

*** লিংকডইন হেল্প

আশা করি উপরোক্ত বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পোস্টটি আপনার কাজে লাগবে। আরও প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *