চলুন দেখি নতুন কী কী নিয়ে এলো উইন্ডোজ ৮.১ এর চূড়ান্ত সংস্করণ!

আজ ১৮ অক্টোবর ২০১৩ থেকে বিক্রি শুরু হল মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮.১ অপারেটিং সিস্টেমের চূড়ান্ত সংস্করণ। এক বছর আগে মুক্তি পাওয়া উইন্ডোজ ৮ এর বাজার বিশ্লেষণ ও ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে নতুন এই ভার্সন উন্নয়ন করা হয়েছে। উইন্ডোজ ৮ সিরিজে টাচ কম্পিউটিংয়ের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হলেও ওএসটির লেটেস্ট রিলিজে প্রথাগত ডেস্কটক-ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখেই এর উল্লেখযোগ্য ডেভলপমেন্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। এই পোস্টে আমরা উইন্ডোজ ৮.১ এর প্রধান প্রধান ফিচার টুইক নিয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক!

# ইউজার ইন্টারফেসে পরিবর্তন

উইন্ডোজ ৮ থেকে সরাসরি উইন্ডোজ ৮.১ এ আপগ্রেড করলে একদম শুরুতে খুব একটা পরিবর্তন চোখে পড়বেনা। আগের মতই দ্রুত বুট নেয়া, সাইন-ইনের পরে লাইভ টাইলসযুক্ত স্টার্ট স্ক্রিন চলে আসা প্রভৃতি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। কিন্তু যখনই আপনি ওএসটি ব্যবহার শুরু করবেন তখন এর মূল উন্নয়নগুলো পরিষ্কার হবে।

প্রথমবার চালু করার পর এতে অ্যাপস ন্যাভিগেশন ও স্টার্টআপ ডেমো দেখতে পাবেন। উইন্ডোজ ৮.১ এর নতুন ইউজার ইন্টারফেসে পথ দেখানোর জন্য মাইক্রোসফট দিচ্ছে বিল্ট-ইন ডেডিকেটেড “হেল্প+টিপস” অ্যাপ্লিকেশন।

লেটেস্ট এই উইন্ডোজ সংস্করণে লাইভ টাইলসের ক্ষেত্রে আরও বেশি রিসাইজ অপশন পাওয়া যাবে। ওয়েদার অ্যাপ টাইলে এখন একই সময়ে তিনটি  ভিন্ন ভিন্ন শহর ও তিন দিনের পুর্বাভাস দৃশ্যমান থাকবে। উইন্ডোজ স্টোর টাইলে একের পর এক নতুন নতুন অ্যাপ রিকমেন্ডেশন ভেসে উঠবে।

যদিও অ্যাপস বিভাগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিল্ট-ইন উইন্ডোজ ৮ স্টাইল এপ্লিকেশনগুলোতে উন্নয়ন এসেছে, তবে সাধারণ ডেস্কটপ সফটওয়্যারের জন্যও বেশ কিছু সুবিধা যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে, স্টার্ট স্ক্রিনে পিন করার জন্য শুধুমাত্র অ্যাপ আইকনের স্থলে নতুন সব রঙিন টাইলস অপশন জুড়ে দেয়া হয়েছে যা আপনার স্টার্ট মেন্যুর চেহারা আরও সুন্দর করে তুলবে।

ইন্টারফেস ও অভিজ্ঞতা উন্নয়নের এই ধারার সাথে থাকছে আরও শক্তিশালী ফটো এডিটিং অ্যাপ ফ্রেশ পেইন্ট।

Fresh Paintআগেই হয়ত জানেন, উইন্ডোজ ৮.১এ স্টার্ট বাটন যুক্ত করা হয়েছে, যা উইন্ডোজ ৮এ ছিলনা। নতুন এই উইন্ডোজ ভার্সনে ডেস্কটপ ওয়ালপেপারকে স্টার্ট স্ক্রিনের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়া উইন্ডোজ লকস্ক্রিনেও উন্নতি এসেছে। এখন থেকে আপনি পিসি লক থাকা অবস্থায়ও স্কাইপ কল রিসিভ করতে পারবেন। এছাড়া ডিভাইস আনলক না করেই দ্রুত ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা চালু করা এবং লক স্ক্রিনে ফটো স্লাইড শো সেট করার সুবিধাও যুক্ত হয়েছে।

# ফিচার ও অ্যাপ্লিকেশনে উন্নয়ন

উইন্ডোজ ৮.১ এর বিল্ট ইন ও থার্ড পার্টি- সকল প্রকার সফটওয়্যারের জন্যই কিছু না কিছু সুবিধা নিয়ে এসেছে। বর্তমানে উইন্ডোজ এইটের “অ্যাপস মেন্যু”তে কেবলমাত্র বর্ণানুক্রমিকভাবে এপ্লিকেশন লিস্ট সাজানো থাকে। কিন্তু ৮.১ এ আপনি বিভিন্ন ক্যাটেগরি, ইনস্টলেশন ডেট, ইউসেজ ফ্রিকোয়েন্সি- এসব অনুযায়ী সফটওয়্যারের তালিকা পেতে পারেন।

অ্যাপ স্ন্যাপিং ফিচার ব্যবহার করে একই স্ক্রিনে দুইয়ের অধিক উইন্ডোজ ৮ স্টাইল অ্যাপ রেখে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২৭ ইঞ্চি মনিটরে সাধারণত চারটি এপ্লিকেশন স্ন্যাপ করা যাবে। স্ক্রিন সাইজের ওপর এই পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে আলাদা আরেকটি ( উদাহরণস্বরূপ, মিরাক্যাস্ট কম্প্যাটিবল স্ক্রিন) ডিসপ্লে সংযুক্ত করে আরও বেশি অ্যাপ স্ন্যাপ ও কনটেন্ট ড্র্যাগিং করতে পারবেন।

উইন্ডোজ ৮.১ এ আছে “বুট টু ডেস্কটপ” সুবিধা। অর্থাৎ, কম্পিউটার চালুর সাথে সাথে সরাসরি স্টার্ট স্ক্রিনে না গিয়ে সাধারণ ডেস্কটপেও চলে যেতে পারবেন। উইন্ডোজ এইটে এই ফিচারটি না থাকায় মাইক্রোসফটকে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

উইন্ডোজ ৮.১ এ পূর্বের এপ্লিকেশনে উন্নয়ন আনার পাশাপাশি নতুন কিছু এপও যুক্ত হয়েছে। থাকছে বিল্ট-ইন স্কাইপ, রিফ্রেশড উইন্ডোজ স্টোর, নতুন মেইল, ফটোগ্রাফি, ফ্রেশ পেইন্ট, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১, মেইল, অফিস সাপোর্ট, স্কাইপ, বিং (হেলথ, ফুড, ড্রিঙ্ক, ট্র্যাভেল), এক্সবক্স মিউজিক, নিউজ ইত্যাদি।

# সার্চ ইন্টিগ্রেশন

Bing_Smart_Searchউইন্ডোজ ৮.১ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসমূহের মধ্যে এর বিং সার্চ ইন্টিগ্রেশন অন্যতম। এতে একবার সার্চ করেই পিসি, অ্যাপস ও ওয়েব থেকে ফলাফল পাওয়া যাবে। ধরুন, আপনি “বাংলাদেশ” লিখে পিসির সার্চ বারে এন্টার দিলেন। এতে উইন্ডোজ স্টোর, লোকাল ড্রাইভ, স্কাইড্রাইভ ও অন্যান্য অনলাইন সোর্স থেকে এ সম্পর্কিত তথ্য (আর্টিকেল, নিউজ, উইকিপিডিয়া নিবন্ধ, অডিও, ভিডিও প্রভৃতি) একই স্ক্রিনে তুলে আনবে। সার্চের রেঞ্জ কী পরিমাণ বিস্তৃত হবে সেটিও আপনারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

# উন্নত স্কাইড্রাইভ ও ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১

উইন্ডোজ ৮.১এ মাইক্রোসফটের ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস স্কাইড্রাইভকে আরও গভীরভাবে একীভূত করে দেয়া হয়েছে। পিসি ও স্কাইড্রাইভের সিঙ্ক্রোনাইজ ফিচারের আওতায় লোকাল ড্রাইভে পুরো ফাইল ডাউনলোড করে না রেখে কেবলমাত্র থাম্বনাইল ইমেজ ও ক্লাউড এড্রেস রেখে দেয়া হবে যাতে ক্লিক করার সাথে সাথে সেটি ডাউনলোড হয়ে আসে। অবশ্য, ইন্টারনেটের গতি ভাল না হলে এই ফিচারটি খুব একটা সুবিধাজনক হবেনা।

স্কাইড্রাইভ সিঙ্ক্রোনাইজের মাধ্যমে পিসির সেটিংস, ফাইলস এবং অ্যাপস এর ক্লাউড ব্যাকআপ রাখা যাবে। ফলে নতুন কোন কম্পিউটার/সেটআপ সহজেই নিজের পছন্দমত কনফিগার করে নিতে পারবেন।

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১’তে ক্লাউড সিঙ্ক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে আপনি আনলিমিটেড ট্যাব ওপেন করার স্বাধীনতা পাবেন।

অনেকটা গুগল ক্রোমের মত, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের লেটেস্ট ভার্সনে ব্রাউজিং হিস্ট্রি, বুকমার্ক প্রভৃতি সিঙ্ক্রোনাইজ হয়ে একই মাইক্রোসফট একাউন্টের অধীনে সকল ডিভাইসে উপলভ্য হবে। এতে আরও থাকছে রিডিং ভিউ, ওয়েবজিএল সাপোর্ট, ফোন নাম্বার ডিটেকশন, টাচ সাপোর্ট ইত্যাদি।

তবে এগুলোর বেশিরভাগ সুবিধা পাওয়া যাবে “মেট্রো” মুডে। সাধারণ ডেস্কটপ ভার্সনের দিকে এতটা নজর দেয়নি রেডমন্ড।

উইন্ডোজের এই নতুন সংস্করণে এরকম আরও অনেক সুবিধা পাবেন যা একটি পোস্টে লিখে শেষ করা যাবেনা। আপনি চাইলে মাইক্রোসফট স্টোরের ওয়েবসাইট থেকে ১১৯.৯৯ ডলার মূল্যের উইন্ডোজ ৮.১ এবং ১৯৯.৯৯ ডলারের উইন্ডোজ ৮.১ প্রো কিনে নিতে পারেন। আর উইন্ডোজ ৮ ব্যবহারকারীরা মাইক্রোসফট স্টোর থেকে বিনামূল্যেই ৮.১ আপগ্রেড ডাউনলোড করতে পারবেন।

তো, কেমন লাগল উইন্ডোজ ৮.১ এর নতুন ফিচার ও আপগ্রেডগুলো? আশা করি মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *