জানার ও কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। আচ্ছা, কী হবে যদি এই মুহূর্তে হঠাৎ সূর্যটা গায়েব হয়ে যায়? অনেকে হয়ত ভাববেন এইসব চিন্তা করে সময় নষ্ট করে লাভ কী? কিন্তু কিছু কিছু কৌতূহলী মানুষ সারাক্ষণ এসব নিয়েই চিন্তা করে যাচ্ছেন। আপনারও যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে চলুন দেখা যাক আসলেই এখন সূর্যটা বিলীন হয়ে গেলে কেমন হবে!
সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,৩৩,০০০ গুন ভারী আর এটা প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমার সমান শক্তি তৈরি করে। আর এর প্রবল আকর্ষণ বল দিয়েই এটা পৃথিবী সহ আটটি গ্রহকে তাদের কক্ষপথে ধরে রেখেছে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন সূর্য না থাকলে আমাদের কী হবার কথা!
বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য হঠাৎ গায়েব হয় গেলে সৌরজগতের গ্রহগুলো সব ছিটকে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি এদের মাঝে সংঘর্ষ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।
সূর্য কিন্তু আমাদের আলোরও প্রধান উৎস। কিন্তু আলোর ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। কারণ এত বেশি গতিতে চলার পরেও বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ৮ মিনিট লেগে যায়। তাই মজার ব্যাপার হল ঠিক এই মুহূর্তে সূর্য বিলীন হয়ে গেলে তা আমাদের চোখে দেখে বুঝতে ৮ মিনিট সময় লেগে যাবে। মানে ৮ মিনিট পর বুঝবো যে সূর্য নেই। অবশ্য তার আগেই গ্রহগুলো ছিটকে গিয়ে একটা হুলস্থূল কান্ড ঘটে যাবে।
তবে অন্য কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে শুধুমাত্র আলোর অভাবে আমাদের তৎক্ষণাৎ কোন সমস্যা হবে না। কারণ ইলেকট্রিসিটি থাকবে এবং পাশাপাশি তারাগুলো তখনও কিছুটা আলো দিবে। এমনকি বৃহস্পতি গ্রহকেও প্রায় ১ ঘণ্টার মত দেখা যাবে (কারণ বৃহস্পতি থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে আসতে আসতে কিছুটা সময় নেবে। এই সময়ের পার্থক্যের কারণে সূর্য হারিয়ে গেলেও ঠিক আগের মুহূর্তের আলোটুকু এই পথ ঘুরে আসতে যে সময় দরকার সেই সময়টা বৃহস্পতিকে দেখা যাবে )।
কিন্তু পৃথিবীতে বিপত্তি ঘটবে ৮ মিনিট পর। কারণ, সূর্যের আলো ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ হবে না।
তাই ছোট উদ্ভিদগুলো খাবার তৈরি করতে না পেরে কয়েকদিনের মধ্যেই মারা পড়বে। আর বড়গুলো হয়তো আরো কিছুদিন টিকে থাকবে। এর চেয়েও বড় সমস্যা আছে। আমরা জানি যে সূর্য আমাদের তাপেরও উৎস। আর তাপ যে কতটা দরকারি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সূর্য বিলীন হয়ে যাওয়ার ১ সপ্তাহের মাঝে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাবে। আর সূর্যহীন এক বছর শেষে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দাঁড়াবে মাইনাস ৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
চিন্তা করে দেখুন তো, এই বরফশীতল অবস্থায় কোন জীবটির অস্তিত্ব থাকবে? তবে হাইড্রথার্মাল ভেন্টে যেসব প্রাণি আছে সেগুলো সূর্য ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
ওই অবস্থায় পৃথিবীর সমুদ্রের উপরিভাগের পানিগুলো বরফ হয়ে পুরো পৃথিবীকে একটি বরফ খণ্ডের মত লাগবে। তবে মাটির নিচে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে পৃথিবীর “কোর” তখনও তাপ উৎপাদন করবে। কেউ যদি এইদিকটায় সুবিধাজনক কোনো আশ্রয় পায়, তাহলে তার ভাগ্য কিছুটা প্রসন্ন বলা যায়, কিন্তু খাবে কী!
সূর্য না থাকলে মহাকর্ষ বল এর অভাবে পৃথিবী শূন্যের দিকে সোজা ছুটতে থাকবে। এখন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬৭০০০ মাইল বেগে ছুটে চলেছে। সেই হিসেবে অন্য কোন কিছুর সাথে সংঘর্ষ না ঘটলে পৃথিবী প্রথম ১ বিলিয়ন বছরে পুরো আকাশগঙ্গা ছায়াপথের দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলবে আর অনন্তকাল এইভাবেই চলবে (?) কিন্তু আসলেই কি তাই? আমাদের ছায়াপথেই প্রায় ১০০ বিলিয়ন সূর্যের মত তারা রয়েছে, আরও আছে ১ বিলিয়নের মত ব্ল্যাক হোল। তাদের মাঝে কোন একটা যে পৃথিবীকে আবার ঐটার কক্ষপথে বসিয়ে দিবে না (কিংবা গ্রাস করবেনা) তাই বা কে বলতে পারে!
যাইহোক, এতকিছু চিন্তা করে আমরা কুল-কিনারা করতে পারবনা। যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এর দেখভাল করতে যথেষ্ট।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।