আইফোন ও আইপ্যাডের মেমোরি ফুল? সমাধান এখানে

আইফোন এবং আইপ্যাড ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগের জিনিস হলো স্টোরেজের জায়গা। আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহার যারা করে থাকেন তারা তাদের স্টোরেজ এর জায়গা নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকেন। আইফোন বা আইপ্যাড তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম আইওএস/আইপ্যাডওএস দ্বারা পরিচালিত হয়। অপারেটিং সিস্টেমের জগতে অ্যাপলের ওএস অন্যান্য সবার সাথে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। 

অ্যাপল সাধারণত তাদের নিজেদের তৈরি করা অ্যাপ ব্যবহার করে থাকে। আইফোনের এসকল অ্যাপ এন্ড্রয়েডের অ্যাপ গুলোর তুলনায় সাইজে অনেক বেশি বড় হয়ে থাকে। এ কারনেই আইফোনে বেশি স্টোরেজ প্রয়োজন। এছাড়া আইফোনের মিডিয়ার জন্য ও ইদানীং পূর্বের তুলনায় বেশি স্টোরেজের জায়গার প্রয়োজন হয়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আইফোন বা আইপ্যাডে স্টোরেজের জায়গার সমস্যা এবং তার সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

আইফোন বা আইপ্যাডে স্টোরেজ কিভাবে চেক করবো?

আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাড কতটুকু স্টোরেজের জায়গা ব্যবহার করছে আপনি খুব সহজেই সেটি জানতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার আইফোন বা আইপ্যাড থেকে সেটিংস অ্যাপে যেতে হবে। সেটিংস এ থাকা জেনারেল সেকশনে ঢুকে আইফোন স্টোরেজ বা আইপ্যাড স্টোরেজ সিলেক্ট করুন। তখন আপনি আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাড ডিভাইসের কতটুকু স্টোরেজের জায়গা ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে সকল ধরনের তথ্য পেয়ে যাবেন।

আপনি সেই পেজে যাওয়ার পরে স্ক্রিনের একদম উপরের দিকে একটি কালার কোডেড বার দেখতে পাবেন। সেই কালার কোডেড বারের মাধ্যমেই আপনার আইফোন বা আইপ্যাডে কোন জিনিস কত টুকু জায়গা ব্যবহার করছে সে ব্যাপারে জানতে পারবেন। আপনি যদি নিচের দিকে স্ক্রল করেন তাহলে সেখানে অ্যাপ গুলো কতটুকু স্টোরেজ এর জায়গা ব্যবহার করছে সে বিষয়ে একটি লিস্ট পেয়ে যাবেন। এই লিস্ট থেকে একটি অ্যাপ সিলেক্ট করে আপনি প্রতিটি অ্যাপের আলাদা আলাদা ব্যবহার করা স্টোরেজ এর জায়গার হিসাব পেয়ে যাবেন। এখানে অ্যাপের সাইজ থেকে শুরু করে এর সাথে যে সকল ডকুমেন্ট কিংবা ডাটা সংযুক্ত আছে তার হিসাব পেয়ে যাবেন। আপনি এভাবে খুব সহজ উপায়ে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডে কত টুকু স্টোরেজের জায়গা ব্যবহার হচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আইফোন বা আইপ্যাডের স্টোরেজের সিস্টেম ডাটা কি?

আপনাদের আইফোন বা আইপ্যাডের স্টোরেজ দেখার সময় হয়তো সিস্টেম ডাটা লেবেল যুক্ত একটি কালার বার দেখতে পারবেন। সিস্টেম ডাটা মূলত এক গুচ্ছ এলোমেলো জিনিসকে এক জায়গায় রাখার একটি ব্যবস্থা। সিস্টেম ও অ্যাপ ক্যাশ, সিরি ভয়েস, ভয়েস মেমো, পছন্দনীয় সেটিংস এবং এরকম আরো নানা জিনিস সিস্টেম ডেটা বিভাগের মধ্যে রাখা হয়ে থাকে। সংক্ষেপে বলতে গেলে সিস্টেম ডাটা আপনার বাসা বাড়ির জাংক ড্রয়ারের মতো কেননা এগুলো ভিন্ন কোনো বিভাগের সাথে সুন্দর ভাবে ফিট করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে সিস্টেম ডেটা ক্যাটাগরিকে সম্পূর্ণ রূপে সাফ করা বা মুছে ফেলার সরাসরি কোনো উপায় বা পন্থা নেই।

আইফোন বা আইপ্যাডে ক্যাশ ক্লিয়ার করার উপায়

এন্ড্রয়েডের মতো আইফোন কিংবা আইপ্যাডে সিস্টেম ক্যাশ অথবা অ্যাপ ক্যাশে মুছে ফেলার জন্য কোনো সহজ উপায় বা পন্থা সংযুক্ত করা নেই। আপনি চাইলে আপনার ব্যবহার করা ব্রাউজার যেমন সাফারি, ক্রোম, এজ ইত্যাদির ক্যাশ সহজেই মুছে ফেলতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডের সাফারি ব্রাউজারের ক্যাশে সিস্টেম সেটিংস থেকে ক্লিয়ার করতে পারবেন। কিন্তু ক্রোম এবং এজ এর মতো ব্রাউজারের ক্যাশ ক্লিয়ার করার জন্য আপনাকে অ্যাপের মধ্যে থেকেই ক্লিয়ার করতে হবে। 

স্পেস ক্লিয়ার করার জন্য অ্যাপস অফলোড করুন

স্টোরেজ এর জায়গা ক্লিয়ার করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো অ্যাপস ডিলিট করা। কিন্তু যেসকল অ্যাপ আপনারা সব সময় ব্যবহার করেন না কিন্তু কিছু দিন পর পর ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে সেগুলোকে চাইলেই ডিলিট করতে পারবেন না। আবার এগুলো আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাডের স্টোরেজ জায়গা নষ্ট করতে পারে। এজন্য আপনি চাইলে এসব কারণে আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাডে অ্যাপ অফলোড করতে পারেন।

আপনি যখন কোনো একটি অ্যাপ অফলোড করবেন তখন এর প্রোগ্রাম ডাটা ডিলিট হয়ে যাবে। কিন্তু অ্যাপের সাথে থাকা ফাইল এবং সেটিংস ডিভাইসের মধ্যে থেকে যাবে। এই উপায়ে আপনি সাময়িক ভাবে অ্যাপ ডিলিট করে স্টোরেজের জায়গা বাঁচাতে পারেন এবং যখন আপনার আবার অ্যাপ ব্যবহার করার দরকার পড়বে তা আগের মতো অবস্থায় ফিরে পাবেন। এ জন্য আপনার নিচের উপায় গুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • প্রথমে আইফোন অথবা আইপ্যাডে সেটিংস অ্যাপ চালু করুন।
  • এর পরে সেখানে থাকা জেনারেল সেকশন থেকে আইফোন/আইপ্যাড স্টোরেজ অপশনে প্রবেশ করুন।
  • এই লিস্ট থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাপ নির্বাচন করুন।
  • এখন এখানে থাকা অফলোড অ্যাপ বাটনে ক্লিক করুন।
  • পুনরায় অফলোড অ্যাপে ক্লিক করে কনফার্ম করুন।

আপনার যখন পুনরায় এই একই অ্যাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে তখন একই জায়গায় গিয়ে রি-ইন্সটল অ্যাপ এ ট্যাপ করুন। যেখানে অফলোড অ্যাপ থাকে সেখানেই আপনি এই রি ইন্সটল অ্যাপ বাটনটি পেয়ে যাবেন।

আইফোন কিংবা আইপ্যাডে অ্যাপ ডিলিট করার উপায়

আইপ্যাড কিংবা আইফোনের স্টোরেজ এর জায়গা বেশি খরচ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে অ্যাপ। তাই আপনার যে সকল অ্যাপ বা গেমস এর দরকার পড়ে না সেগুলো ডিলিট করে দেওয়া উচিত। আপনি যদি অনেক গুলো অ্যাপস এক সাথে ডিলিট করতে চান তাহলে আইফোন বা আইপ্যাডে একটি ভালো উপায় র‍য়েছে। এজন্য আপনাকে সেটিংস অ্যাপস এর জেনারেল সেকশনের আইফোন/ আইপ্যাড স্টোরেজ অপশনে যেতে হবে। এখানে থাকা অ্যাপ গুলোর লিস্ট থেকে আপনি চাইলে দ্রুত ডিলিট করার জন্য এখানে থাকা ডিলিট বাটনে ট্যাপ করতে পারেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

iPhone

আপনি একটি অথবা দুইটি অ্যাপ ডিলিট করতে চান তাহলে সেটি হোম স্ক্রিন কিংবা অ্যাপ গ্যালারি থেকে করত্র পারেন। এর জন্য অ্যাপ এর আইকনে শুধুমাত্র ট্যাপ এবং হোল্ড করে মেনু অপশন নয়ে আসতে হবে। এর পর এখান থেকে ডিলিট অ্যাপ নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখবেন যে হোম স্ক্রিন থেকে রিমুভ করলে ডিভাইস থেকে কিন্তু ডিলিট হবে না। কিছু দিন পর পর আপনার আইফোন বা আইপ্যাডে অ্যাপ গুলো চেক করে যেগুলো প্রয়োজন নেই সেগুলো ডিলিট করে ফেলুন।

👉 আইফোন এর স্টোরেজ খালি করার উপায়

স্বয়ংক্রিয় ভাবে মেসেজ ডিলেট করা

আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাডের স্টোরেজ জায়গা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডিফল্ট হিসেবে আপনার আইফোন এবং আইপ্যাড সকল প্রাপ্ত মেসেজই সংরক্ষণ করে রাখে। আপনি চাইলে আপনার আইফোন কিংবা আইপ্যাডের স্টোরেজ খালি করার জন্য ম্যানুয়ালি পুরানো টেক্সট বার্তা মুছে ফেলতে পারেন। কিন্তু এটি করা খুবই কষ্ট সাধ্য একটি ব্যাপার। এর পরিবর্তে আপনি স্বয়ংক্রিয় ভাবে টেক্সট মেসেজ ডিলিট করার উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এজন্য আপনি নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন- 

  • প্রথমে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডের সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করুন।
  • সেখানে থাকা মেসেজ সেকশনে ঢুকুন।
  • নিচে স্ক্রল করে কিপ মেসেজ অপশনে প্রবেশ করুন।
  • এখানে ডিফল্ট সেটিংস সাধারণত ফরেভার দেওয়া থাকে কিন্তু আপনি এই সেটিংস ৩০ দিন অথবা ১ বছর এ করে নিতে পারবেন।
  • আপনি আপনার পছন্দ মতো সেটিংস দেওয়ার পরে একটি পপ আপ মেসেজ আসবে। সেখানে আপনি কি পুরানো মেসেজ গুলো ডিলিট করতে চান কি না সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে। এটি কনফার্ম করার জন্য ডিলিট বাটনে ট্যাপ করুন।

এই উপায়ে আপনি স্বয়ংক্রিয় ভাবে টেক্সট মেসেজ ডিলিট করতে পারবেন। আপনি যেই সেটিংস নির্বাচন করেছেন সেটির উপর ভিত্তি করে আপনার কাছে আসা টেক্সট মেসেজ গুলো ৩০ দিন অথবা ১ বছর পরে ডিলিট হয়ে যাবে।

👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ খালি করার উপায়

ফাইল, ফটো, ও ভিডিও ডিলিট

এছাড়া আপনার ডিভাইসে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল, ফটো ও ভিডিও ডিলিট করেও আইফোন ও আইপ্যাডের স্টোরেজ ফাঁকা করতে পারবেন।

আইফোন বা আইপ্যাড এর স্টোরেজ এর জায়গা সব সময় ব্যবহারকারীদের জন্য দুশ্চিন্তার কারন থাকায় এর দিকে একটু বেশি নজর রাখা উচিত। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ভাবে বুঝতে পেরেছেন।আমাদের এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রকার মতামত থাকলে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়া নিত্য নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক নানা ধরনের তথ্য এবং টিপস এন্ড ট্রিকস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *