আমাদের দেশে মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে মেসেঞ্জারের পাশাপাশি অন্যতম জনপ্রিয় দুটি অ্যাপ হল ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপ। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর, দেশের প্রত্যেকটা আনাচে কানাচে অ্যাপ দুইটির নাম শুনেনি, এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। খুব সহজেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে ব্যবহার করা যায় বলে অ্যাপ দুইটির গ্রাহক সকল স্তরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ।
ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ – দুইটি অ্যাপই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক এর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ইমো একটি স্বাধীন অ্যাপ। দুইটি সেবাই কম্পিউটারেও ব্যবহার করা যায়।
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস – উভয় মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যায় অ্যাপদুটি। তবে হোয়াটসঅ্যাপ ট্যাবলেট অপটিমাইজড না হলেও ইমো ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য অপটিমাইজড।
ইমো নাকি হোয়াটসঅ্যাপ? কোনটা বেশি ভাল?
ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপ – দুইটিই মেসেজিং অ্যাপ হলেও দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। প্লে স্টোরে ইমো অ্যাপটির রেটিং ৩.৯, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ এর রেটিং ৪.৩। এই পোস্টে আমরা জানবো ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ এর ফিচারগুলো সম্পর্কে। এছাড়াও অ্যাপ দুইটির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলোও জানতে পারবেন।
ইন্টারফেস
মেসেজিং অ্যাপ হওয়া সত্বেও ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ এর ইন্টারফেস এর মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ইমো’র ইউজার ইন্টারফেস কিছুটা জটিল, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ এর ইউজার ইন্টারফেস অপেক্ষাকৃত সরল।
হোয়াটসঅ্যাপ এর প্রতিটি ফিচার অপেক্ষাকৃত গোছানো এবং সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। ইমোর ইন্টারফেস একটু অগোছালো ধরনের হওয়ায় ফিচারগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয় ব্যবহারকারীদের।
ইমো অ্যাপে এখন পর্যন্ত কোনো ডার্ক মোড নেই, তবে হোয়াটসঅ্যাপ বেশ কয়েক মাস আগেই ডার্ক মোড চালু করেছে।
মেসেজিং ও কলিং
টেক্সট মেসেজিং এর পাশাপাশি অডিও কলিং ও ভিডিও কলিং এর ফিচার আছে উভয় অ্যাপেই। ইমোতে যখন কেউ আপনাকে মেসেজ করতে যাবে, তখন মেসেজ লেখার সময় ওই ব্যাক্তি কি লিখছে সেটিও আপনি রিয়েল টাইমে দেখতে পারবেন। এটি একটি মজার ফিচার বলা যেতে পারে। তবে আপনি চাইলে প্রাইভেসি সেটিংস থেকে এই ফিচারটি বন্ধ রাখতে পারেন।
উভয় অ্যাপের কল কোয়ালিটিই ভাল। তবে স্লো ইন্টারনেটেও ইমো’র কল পারফর্মেন্স অপেক্ষাকৃত ভাল। এজন্যই বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জেও অনেকেই ধীরগতির ইন্টারনেটে অডিও-ভিডিও কল করার জন্য ইমো অ্যাপটি বেছে নেন।
ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট তৈরী
হোয়াটসঅ্যাপে শুধুমাত্র মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে একাউন্ট তৈরী করা যায়। অন্যদিকে ইমো অ্যাপ এ ফোন নাম্বারের পাশাপাশি ফেসবুক দিয়েও লগ-ইন করার সুবিধা রয়েছে।
এক্টিভ স্ট্যাটাস
হোয়াটসঅ্যাপ এ চাইলে আপনি লাস্ট সিন স্ট্যাটাস হাইড করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি লাস্ট কবে হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন ছিলেন, সেটা চাইলেই গোপন করতে পারবেন। তবে আপনি এই ফিচারটি ব্যবহার করেন, অন্যদের লাস্ট সিন স্ট্যাটাস ও আপনি দেখতে পারবেন না। অন্যদিকে ইমো অ্যাপ এ থাকছেনা এই লাস্ট সিন গোপন করার ফিচারটি।
কন্টাক্ট এডিং
ইমোর সবচেয়ে বিরক্তিকর একটি বিষয় হল এটি যেকেউ চাইলে আপনাকে কন্টাক্ট লিস্টে এড করে মেসেজ করতে পারে। এই ফিচার এর কারণে অপরিচিত মানুষের মেসেজ দ্বারা লাঞ্চিত হন অনেকেই। তবে ভালো ব্যাপার হল হোয়াটসঅ্যাপ এ এই ধরনের কোনো ফিচার নেই। হোয়াটসঅ্যাপে কন্টাক্ট লিস্টে না থাকা কোনো ব্যাক্তি মেসেজ করলে তা ফিল্টার হয়ে আসে এবং আলাদাভাবে দেখায়।
বোনাসঃ ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে মেসেজ মুছে ফেলার উপায়
লোকেশন শেয়ারিং
ইমো অ্যাপে ব্যবহারকারী তার লোকেশন অন্যজনের সাথে শেয়ার করতে পারেনা। তবে হোয়াটসঅ্যাপ এ এই সুবিধাটি বিদ্যমান। আপনার হোয়াটসঅ্যাপ কন্টাক্ট এর সাথে শেয়ার করতে পারবেন আপনার বর্তমান লোকেশন।
ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ
ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ – দুইটি অ্যাপেই গ্রুপ তৈরী করার ফিচার রয়েছে। অর্থাৎ চাইলেই আপনার সব বন্ধুদের এক গ্রুপে নিয়ে এসে আড্ডা মারতে পারবেন। এমনকি ভিডিও কিংবা অডিও কলে কথাও বলতে পারবেন সবাই একসাথে।
ফাইল শেয়ারিং
হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ফাইল, যেমন – ডকুমেন্ট, ভিডিও, মিউজিক ইত্যাদি পাঠানো সম্ভব। তবে ইমো অ্যাপ এ এত সুবিধা থাকছেনা। ইমোতে টেক্সট এর পাশাপাশি ছবি ও ভিডিও পাঠানো সম্ভব।
অ্যাড ও নোটিফিকেশন
হোয়াটসঅ্যাপ সম্পূর্ণ অ্যাড মুক্ত একটি মেসেজিং অ্যাপ। অন্যদিকে ইমো অ্যাপ অ্যাড শো করে। অ্যাপ এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিরক্তিকর নোটিফিকেশনও প্রদান করে ইমো। ইমো অ্যাপে দেখানো এসব অশোভন বিজ্ঞাপন ও নোটিফিকেশনের জন্য অনেকেই এই অ্যাপটিকে অপছন্দ করেন। এইজন্য হয়ত অ্যাপ স্টোরগুলোতে অ্যাপটির রেটিং অপেক্ষাকৃত কমের দিকে।
বোনাসঃ ফ্রি কল ও মেসেজ দেয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল অ্যাপ কোনটি?
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন
হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজগুলো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা যেসব মেসেজ পাঠায়, সেগুলো শুধু তাদের মধ্যেও আসা যাওয়া করে। হোয়াটসঅ্যাপ কতৃপক্ষ কোনো মেসেজ দেখতে পায়না। ইমোর এন্ড্রয়েড অ্যাপ লিস্টিংয়ে এনক্রিপশনের কথা বলা নেই। তবে আইফোন ভার্সনের জন্য এনক্রিপশন থাকার কথা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে বলা আছে।
অ্যাপের ভাষা
বর্তমানে ৩৩টি ভাষায় ব্যবহার করা যায় হোয়াটসঅ্যাপ। অন্যদিকে ইমো ও ব্যবহার করা যায় ৩৩টি ভাষায়।
ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ প্রাইভেসি
হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনার প্রাইভেসির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকে। তবে ইমোতে ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রাইভেসির উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখেননা। ইমো কতৃপক্ষও এই ব্যাপারটি দেখাশোনা করে। এছাড়া ইমো ইউজাররা অনেক অযাচিত মেসেজ ইনভাইটেশন পেয়ে থাকেন যা অনেকেই তাদের প্রাইভেসির জন্য হুমকি হিসেবে মনে করেন। অপরদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ এসব অভিযোগ থেকে অনেকটাই মুক্ত।
বোনাসঃ ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ? কোনটি কিনলে ভাল হবে?
পারসোনালাইজেশন
হোয়াটসঅ্যাপ এর অনেকগুলো ফিচারই আপনি নিজের মত করে কাষ্টমাইজ নিতে পারবেন। চ্যাট কালার থেকে শুরু করে চ্যাট ওয়ালপেপার পর্যন্ত সেট করা সম্ভব হোয়াটসঅ্যাপে। তবে এইদিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে ইমো। ইমোতে কাস্টমাইজেশন এর তেমন একটা সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থাৎ মূল ডিজাইনই ইমোর ইউজারদের শেষ ভরসা।
ইমো (www.imo.im) এবং হোয়াটসঅ্যাপ (www.whatsapp.com) এর মধ্যে কোন অ্যাপটি আপনার কাছে অধিক সুবিধার মনে হয়? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে। এছাড়া এই পোস্টে আমরা যদি কোন পয়েন্ট মিস করে থাকি তাও কমেন্টের মাধ্যমে জানান।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।