যে কারণে মাইক্রোসফট সার্ফেস আরটি ব্যর্থ হয়েছে . . .

Microsoft-Surface-RTমাইক্রোসফটের বহুল আকাঙ্ক্ষিত আইপ্যাড প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্যের নাম হচ্ছে সার্ফেস। গত বছর বাজারে আসা এই ট্যাবলেট কম্পিউটারের মূলত দুটি সংস্করণ তৈরি হয়েছিল। একটি হচ্ছে উইন্ডোজ এইটের হালকা ভার্সন চালিত “সার্ফেস আরটি” এবং অন্যটি মূল উইন্ডোজ ৮ নির্ভর “সার্ফেস প্রো”;

সার্ফেস আরটি কেবলমাত্র নতুন প্রজন্মের “মেট্রো স্টাইল” উইন্ডোজ এপ্লিকেশন চালাতে পারে। এতে সচরাচর উইন্ডোজ সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়না। অপরদিকে, সার্ফেস প্রো’তে আপনি সাধারণ ডেস্কটপ/ল্যাপটপের মত উভয় প্রকার এপ রান করতে পারবেন।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাইক্রোসফট ঠিক কত সংখ্যক সার্ফেস ডিভাইস বিক্রি করেছে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, মোট ১ মিলিয়নের মত সার্ফেস ট্যাবলেট সেল করতে সমর্থ হয়েছে রেডমন্ড। এর মধ্যে মাত্র ২৬০,০০০ হচ্ছে সার্ফেস আরটি এবং বাকী ৭৫০,০০০ প্রো। উপরন্তু, সার্ফেস আরটি’র জন্য ৯০০ মিলিয়ন ডলার ইনভেনটরি রাইট ডাউন করেছে (মূল্য কমিয়ে দেখিয়েছে) উইন্ডোজ নির্মাতা।

সহজ কথায়, সার্ফেস আরটি মাইক্রোসফটের একটি ব্যর্থ পণ্য হিসেবে অভিহিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন? চলুন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

ব্র্যান্ডিং

সার্ফেস আরটি ডিভাইসগুলো উইন্ডোজ আরটি অপারেটিং সিস্টেমে চলে। আচ্ছা, কখনো প্রশ্ন করেছেন উইন্ডোজ আরটি মানে কী?

আরটি বলতে বুঝায় “রানটাইম”; উইন্ডোজ এইট ডেভলপার প্ল্যাটফর্মের নাম হচ্ছে উইন্ডোজ রানটাইম বা সংক্ষেপে উইনআরটি। ট্যাবলেটের জন্য ওএস নির্মানের সময় এর চেয়ে অর্থবহুল নাম কি মাইক্রোসফটের নজরে আসেনি? এক উইন্ডোজ নাম নিয়েই সবখানে যেতে চাইলে তা স্বয়ং উইন্ডোজের ব্র্যান্ডনেমের জন্যও ক্ষতিকর। অ্যাপল কিন্তু কম্পিউটারের ম্যাক ওএস নাম মোবাইলে ব্যবহার করেনি। তারা আইওএস দিয়েই স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে সফল হয়েছে। গুগল এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

এবার চিন্তা করুন “মেট্রো স্টাইল” নামটি নিয়ে। মাইক্রোসফট হঠাত করেই আইনি ঝামেলার ভয়ে “মেট্রো” নামটি ব্যান করে দিল। কারণ, জার্মানিতে মেট্রো নামের একটি কোম্পানি আছে যারা ট্রেডমার্ক নিয়ে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। মেট্রো’র সাথে সমঝোতায় না এসে নামটি ব্যবহার বাদ দেয়াটা খুব বেশি ভাল সিদ্ধান্ত হয়নি।

এরপর মেট্রো স্টাইল ইন্টারফেসের আর কোন নামই দিতে পারেনি রেডমন্ড! শুধু “উইন্ডোজ ৮ স্টাইল” বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, ব্র্যান্ডিং ব্যাপারটা এত সোজা না…

এছাড়া, উইন্ডোজ আরটির যে ভার্সনটি সার্ফেসে ব্যবহৃত হয়েছে সেটিও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মেট্রো স্টাইল ইউজার ইন্টারফেসে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা উইন্ডোজ ৮.১ এ ঠিক করেছে মাইক্রোসফট। কিন্তু এতদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।

এপ্লিকেশনের অভাব

উইন্ডোজের সাধারণ ডেস্কটপ (উদাহরণস্বরূপ x86 ভার্সন) অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকই হচ্ছে উইন্ডোজ আরটি’র সবচেয়ে বড় দুর্বল জায়গা। হ্যাঁ, আমি উইন্ডোজ আরটির জন্য বিশেষ “মেট্রো স্টাইল” এপের দুষ্প্রাপ্যতার কথাই বলছি। সোজা কথায়, উইন্ডোজ স্টোরে সার্ফেস আরটির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ এপ ছিলনা, এখনও নেই। অ্যাপল এপ স্টোরে যেখানে শুধুমাত্র আইপ্যাডের জন্যই ৪০০,০০০ এর মত এপ্লিকেশন আছে, সেখানে মাত্র ৬০,০০০ (বড়জোর ১ লাখ) এপ দিয়ে কীভাবে প্রতিযোগিতা সম্ভব? একটি সার্ফেস প্রো ব্যবহার করার সময় আপনি সফটওয়্যারের অপ্রতুলতা অনুভব করবেন না, কারণ যেকোন উইন্ডোজ এপ্লিকেশন এতে চলবে। কিন্তু আরটি’র বেলায় কী করবেন?

সার্ফেস আরটির চেয়ে ভাল বিকল্প বাজারে বিদ্যমান

সার্ফেস আরটির আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, একে সার্ফেস প্রো’র সাথেই প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। লোকজন যখন দেখল এটি পুরোপুরি একটি ট্যাবলেটও না- আবার ল্যাপটপও না, উপরন্তু এতে সফটওয়্যারজনিত সীমাবদ্ধতাও আছে—তখনই সবাই সার্ফেস প্রো বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যে অন্যান্য কোম্পানিও উইন্ডোজ ৮ ট্যাবলেট বিক্রি শুরু করেছে। স্যামসাং ও আসুস তো একই ডিভাইসে এন্ড্রয়েড-উইন্ডোজ ৮ দুই ওএসই অফার করছে। সুতরাং, এখানেও মাইক্রোসফট আটকে গেল।

ডেস্কটপ উইন্ডোজ পিসির যুগ ক্রান্তিলগ্নে এসেছে বলে ভাবছেন অনেক বাজার বিশেষজ্ঞ। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ডিপার্টমেন্টও সর্বশেষ প্রান্তিকে আশানুরূপ মুনাফা দেয়নি। আমরা এখন একটি “পিসি পরবর্তী” যুগে অবস্থান করছি। কিন্তু এখানে মাইক্রোসফট সার্ফেসের জন্য কতটা সুযোগ আছে বলে আপনি মনে করেন? সার্ফেস নিয়ে বাজারের অন্যান্য ট্যাবলেটের সাথে কি আদৌ পেরে উঠবে মাইক্রোসফট? মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার মতামত জানানোর আমন্ত্রণ রইল। কষ্ট করে এতবড় পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *