সার্ভারের দিক দিয়ে অনেকটাই নিরাপদ হলেও জিমেইল একাউন্টের আসল নিরাপত্তা ব্যবহারীর হাতেই। চলুন জেনে নেয়া যাক, জিমেইল একাউন্টের অর্থাৎ গুগল একাউন্টের নিরাপত্তার রক্ষার উপায়সমুহ।
জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষার উপায়
জিমেইল একাউন্ট আর গুগল একাউন্ট আসলে একই বলা যায়। জিমেইল হচ্ছে গুগলের একটি সেবা। গুগলের বেশিরভাগ সেবা নিতে জিমেইল একাউন্ট ব্যবহৃত হয়। আপনার জিমেইল আইডি বা জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারবেন নিম্নে বর্ণিত উপায়গুলো অনুসরণ করে। জিমেইল একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষার উল্লেখ্যযোগ্য ৯টি উপায় হলোঃ
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
- সিকিউরিটি চেক-আপ
- রিকভারি ইমেইল ও ফোন নাম্বার যুক্ত করা
- টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা
- আপডেটেড সফটওয়্যার, জিমেইল ও গুগল অ্যাপস ব্যবহার
- সন্দেহজনক মেসেজ ও কনটেন্ট এড়িয়ে চলা
- রিসেন্ট ডিভাইস এক্টিভিটি খেয়াল রাখা
- ডিভাইস রিভিউ
- থার্ড পার্টি অ্যাপ অ্যাকসেস সাবধানে দেয়া
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
আপনার জিমেইল একাউন্ট এর সিকিউরিটি যতো শক্তিশালী হোক না কেনো, আপনার পাসওয়ার্ড যদি অনুমান করা যায় এমন হয়, তবে একাউন্ট খোয়া গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। যেকোনো ধরনের একাউন্টে লগিন এর ক্ষেত্রে চাবি হিসাবে কাজ করে আপনার পাসওয়ার্ড।
সবসময় জিমেইল সহ আপনার যেকোনো একাউন্ট এর জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এ থাকা উচিতঃ
- ৮ বা তার অধিক অক্ষর; যত বেশি, ততো ভালো
- আপারকেস ও লোয়ারকেস অক্ষর এর সংমিশ্রণ
- অক্ষর ও নাম্বার এর সমন্বয়
- ! @ # ? ] – এর মতো অত্যন্ত একটি স্পেশাল ক্যারেক্টার
আপনার নাম, জন্মতারিখ, প্রিয়জনের নাম, ফোন নম্বর ইত্যাদি পাসওয়ার্ড এ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অধিকাংশ সময়ই হ্যাকাররা ভিক্টিমের ব্যক্তিগত তথ্যের সাথে মিল থাকা পাসওয়ার্ড অনুমান করেই বের করে ফেলে। আপনার পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় পাসওয়ার্ড বক্সের পাশেই পাসওয়ার্ড কতোটা শক্তিশালী তা দেখানো হয়।
এছাড়াও কোনো ডাটা লিক এ আপনার জিমেইল একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য তথ্য লিক হয়েছে কিনা, সেটি জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। লিংকে প্রবেশের পর আপনার ইমেইল বা ফোন নাম্বার প্রদান করলেই জানতে পারবেন প্রদত্ত ফোন নাম্বার বা ইমেইল ও এর সাথে সংযুক্ত একাউন্ট কোনো ডাটা ব্রিচ এ লিক হয়েছে কিনা।
সিকিউরিটি চেক-আপ
আপনার জিমেইল একাউন্ট এর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা (Privacy & Security) বিষয়ক সকল তথ্য পেয়ে যাবেন গুগল একাউন্ট এর সিকিউরিটি চেক-আপ পেজে। আপনার জিমেইল একাউন্ট এর সিকিউরিটি চেক-আপ পেজ এ প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক (https://myaccount.google.com/security-checkup) করুন।
সিকিউরিটি চেক-আপ পেজে আপনার গুগল একাউন্ট সম্পর্কে সিকিউরিটি সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। সিকিউরিটি চেক-আপ পেজে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পাওয়া যাবেঃ
- উক্ত গুগল একাউন্ট দিয়ে লগিন থাকা বর্তমান ডিভাইসসমুহ
- রিসেন্ট সিকিউরিটি এক্টিভিটি
- থার্ড-পার্টি অ্যাকসেস
- সেভ করে রাখা পাসওয়ার্ডসমুহ
রিকভারি ইমেইল ও ফোন নাম্বার
জিমেইল আইডি অর্থাৎ গুগল একাউন্টের সাথে রিকভারি ইমেইল বা ফোন নাম্বার যোগ করা খুবই জরুরি। রিকভারি ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস অনেক কাজে আসতে পারে। আপনার জিমেইল একাউন্টে রিকভারি ইমেইল বা ফোন নাম্বার যুক্ত করা থাকলেঃ
- আপনার অজান্তে কেউ আপনার জিমেইল একাউন্টে লগিন করতে গেলে ব্লক করতে পারবেন
- আপনার একাউন্টে কোনো সন্দেহজনক একটিভিটি সম্পর্কিত এলার্ট পাবেন
- আপনার জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে খুব সহজেই রিকভার করতে পারবেন
আরো জানুনঃ জিমেইল এর পাসওয়ার্ড উদ্ধার করার উপায়
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন
কেউ যদি আপনার জিমেইল একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড চুরি করে, জেনে ফেলে কিংবা হ্যাক করে, এক্ষেত্রে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচারটি আপনার একাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবে। এই পদ্ধতিতে মূলত জিমেইল একাউন্টে লগিন করার সময় ফোন নাম্বারে একটি ওটিপি (একবার ব্যবহারযোগ্য পিন কোড) পাঠানো হয়, যা দিয়ে লগিন করতে হয়।
আরো জানুনঃ জিমেইল একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন এর পাশাপাশি গুগল একাউন্টে আরো কিছু শক্তিশালী সেকেন্ড লেয়ার ভেরিফিকেশন মেথড রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সিকিউরিটি কি এর মাধ্যমে ভেরিফাই করা। আরেকটি হচ্ছে গুগল প্রমট, যা গুগল একাউন্টে লগিন এর সময় ইতিমধ্যে লগিন থাকা একটি ফোনে এলার্ট পাঠায়। এই এলার্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারী যদি লগিন এর বিষয়ে নিশ্চিত করে, তবেই লগিন করা যায়।
উক্তে বর্ণিত কোনো সিকিউরিটি প্রটোকলই যদি আপনার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম না হয়, সেক্ষেত্রে গুগল এর এডভান্স প্রটেকশন প্রোগ্রাম আপনার কাজে আসতে পারে। এটি উচ্চতর লেভেল এর সিকিউরিটি প্রদান করার পাশাপাশি ফিশিং বা ক্ষতিকর অ্যাপ থেকে আপনার একাউন্টকে রক্ষা করে।
আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার
গুগল একাউন্ট এর সিকিউরিটি নিশ্চিতে গুগল নিজেই সবসময় আপডেটেড অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার ও অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে। কেননা নতুন ভার্সন এর সফটওয়্যার, অ্যাপ বা অপারেটিং সিস্টেমে লেটেস্ট সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত থাকে, যা জিমেইল একাউন্ট সহ আপনার ডিভাইসে থাকা সকল ধরনের অ্যাপ এর নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা পালন রক্ষা করে।
সন্দেহজনক মেসেজ ও কনটেন্ট এড়িয়ে চলা
আপনার জিমেইল একাউন্টে সিকিউরিটি জোরদার করে কোনো লাভ হবেনা, যদি না যে ডিভাইসে জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করছেন সেটির নিরাপত্তাই হুমকির মুখে থাকে। হাজারো রকম ম্যালওয়্যার এর ভিড়ে কম্প্রোমাইজ হতে পারে আপনার ডিভাইস ও একাউন্ট এর সিকিউরিটিও।
এছাড়াও জিমেইল এর ইনবক্সে সবাই কমবেশি কাজের অকাজের মিলিয়ে অনেক ইমেইল প্রতিদিন পায়। এতোসব মেইল এর ভিড়ে রয়েছে স্পাম বা ফিশিং মেইল যেগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারলে রিপোর্ট করতে ভুলবেন না। এছাড়াও ইমেইল সেন্ডার এর নাম আর ইমেইল এড্রেস এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা যাচাই করে ফেক বা স্পাম ইমেইল খুঁজে বের করা যায়।
ডিভাইস ও ম্যালওয়্যার থেকে ডিভাইসকে বাঁচাতে সন্দেহনক কোনো লিংক দেখলে তা এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও যেকোনো সাইট থেকে অ্যাপ বা সফটওয়্যার বা অন্য যেকোনো ধরনের কনটেন্ট ডাউনলোড এর সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। শুধুমাত্র ট্রাস্টেড সোর্স থেকে ফাইল ডাউনলোড করুন।
যেকোনো ধরনের কম্পিউটারেই অনলাইন সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে এন্টিভাইরাস সফটওয়ার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাস্ট এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিনামূল্যেই ঝুঁকিপূর্ণ সাইটে প্রবেশ ব্লক করে অনলাইন সিকিউরিটি প্রদান করে।
আরো জানুনঃ সেরা ৫ ফ্রি এন্টিভাইরাস
রিসেন্ট সিকিউরিটি এক্টিভিটি
আপনার জিমেইল একাউন্ট এর প্রত্যেকটি এক্টিভিটিই কিন্তু রেকর্ড হয়। ওই হিসাবে সম্প্রতি ঘটা সকল সিকিউরিটি এক্টিভিটি ও সেভ করা থাকে। রিসেন্ট সিকিউরিটি এক্টিভিটি মূলত একটি টাইমলাইন যেখানে সিকিউরিটি সংক্রান্ত কোনো ফিচার কখন ও কোন ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়েছে, যে সম্পর্কিত তথ্য সাজানো থাকে।
রিসেন্ট সিকিউরিটি এক্টিভিটি দেখতে এই লিংকে ক্লিক (https://myaccount.google.com/notifications) করুন। আপনার গুগল একাউন্টে হওয়া রিসেন্ট সিকিউরিটি এক্টিভিটি এর তথ্যগুলো যাচাই বাচাই করুন। কোনো সন্দেহজনক সিকিউরিটি এক্টিভিটি দেখলে See unfamiliar activity? লেখায় ক্লিক করে সেই মুহূর্তেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলুন।
👉 স্পাম ইমেইল কি? ক্ষতিকর স্প্যাম থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
ডিভাইস রিভিউ
আপনার গুগল একাউন্টটি বর্তমানে কোন কোন ডিভাইসে লগিন করা আছে, সেটা জানা ও তা মনিটর করা কিন্ত একাউন্ট এর নিরাপত্তা নিশ্চিত এর অন্যতম প্রধান একটি মাধ্যম। আপনার গুগল একাউন্ট যেসব ডিভাইসে লগিন আছে, তার তথ্য দেখতে এই লিংকে ক্লিক (https://myaccount.google.com/device-activity) করুন।
উক্ত লিংকে প্রবেশের পর যে ডিভাইস দিয়ে লিংকে ভিজিট করেছেন, সেটি সহ লগিন থাকা অন্য ডিভাইসগুলোও প্রদর্শিত হবে। কোনো ডিভাইস থেকে একাউন্ট রিমুভ অর্থাৎ লগ-আউট করতে চাইলে, ওই ডিভাসের পাশে থাকা থ্রি-ডট মেন্যু থেকে Sign Out সিলেক্ট করুন।
থার্ড পার্টি অ্যাপ অ্যাকসেস
রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য বিভিন্ন থার্ড পার্টি সাইট ও অ্যাপে আমরা Sign in with Google ফিচার ব্যবহার করে লগিন করে ফেলি। তবে এই থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো আমাদের জিমেইল একাউন্টে অনেকগুলো পারমিশন নিয়ে রাখে। থার্ড পার্টি অ্যাপসমুহের তালিকা দেখতে এই পেজ ভিজিট (https://myaccount.google.com/security) করুন।
কিছুটা নিচে স্ক্রল করে Third-party apps with account access শিরোনামের নিচে থাকা Manage Third-Party Access এ ক্লিক করুন। এরপর যেসব অ্যাপ আপনি ব্যবহার করেন না বা অযথাই অ্যাকসেস নিয়ে বসে আছে, সেটি বা সেগুলো সিলেক্ট করলেই Revoke Access নামে একটি অপশন পাবেন। এই অপশনটির মাধ্যমে থার্ড পার্টি অ্যাপ এর অ্যাকসেস রিমুভ করা যাবে।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে। ইমেইলে আমাদের ফলো করে নতুন পোস্টের নোটিফিকেশন পেতে পারেন। আপনার মতামত কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Thank you for your ideas.How to CPAGRIP account creat ?
Welcome! Please stay with us.