বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কছে ক্যাপচা শব্দটি নতুন কিছু নয়। ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত CAPTCHA  এর সম্পূর্ণ মানে – Completely Automated Public Turing test to tell Computers and Humans Apart। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ এবং কম্পিউটার এর মধ্যে পার্থক্য যাচাইকরণের প্রক্রিয়া হল ক্যাপচা। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বট সফটওয়্যারগুলো অনেক উন্নতি করেছে। বিভিন্ন সাইট থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এসব বট বা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে সাইবার হামলাকারীরা।

এদেরকে রুখতে এবং ইন্টারনেটের নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় প্রত্যেকটি সাইটে যুক্ত রয়েছে ক্যাপচা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইন্টারনেটে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা এবং সেগুলো পূরণ করার নিয়ম সম্পর্কে।

টেক্সট ক্যাপচা

যেকোনো মানুষের পক্ষে এটি মোটামুটি সহজে বুঝে পূরণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন পোর্টাল থেকে নেয়া নিচের উদাহরণটি দেখুন।

উপরের ছবিতে তীর চিহ্নিত বক্সের মধ্যে একটি ক্যাপচা রয়েছে। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, এখানে ইংরেজি অক্ষরে লেখা রয়েছে kwnx4 যার নিচে আরেকটি বক্স রয়েছে। সেই বক্সে kwnx4 লিখতে হবে। এভাবে আপনার সামনে যখন এরকম ছবির মধ্যে ক্যাপচা লেখা থাকবে সেই ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করে তাতে কী লেখা সেটি বুঝে সঠিক স্থানে তা লিখতে হবে।

>> অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করার উপায়

সাধারণ গাণিতিক সমস্যা

এই ধরনের ক্যাপচা ইন্টারনেটের সর্বত্র দেখা যায়। এগুলোর ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ একটি গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয় এবং এর সমাধান বের করে উত্তর প্রদান করতে বলা হয়। সমস্যাগুলো সাধারণত যোগ কিংবা বিয়োগ অংক হয়ে থাকে। যেমনঃ “২ – ৩ = কত?” এমন কিছু। অতি সাধারণ হওয়ার দরুণ যে কেউ এই ধরনের ক্যাপচা পূরণ করতে পারে। অতি সহজেই সমাধান করা যায় বলে এটি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা রক্ষায় তেমন একটা কার্যকর নয় বলে বিবেচ্য করা হয়।

শব্দ সম্পর্কিত সমস্যা

এই ধরনের ক্যাপচার ক্ষেত্রে কিছু অক্ষর বা সংখ্যা, কিংবা দুটোই দেয়া থাকে। এর থেকে দেখে উল্লিখিত শব্দ এবং সংখ্যা পাশে থাকা বক্সে ব্যবহারকারীদের লিখতে হয়। এই শব্দ সম্পর্কিত সমস্যার ব্যবহার ইন্টারনেটে অধিকহারে লক্ষণীয়। এই ধরনের সমস্যা কোনো রোবট সহজেই সমাধান করতে পারেনা। তাই এই পদ্ধতিকে অনেকটাই নিরাপদ বলে ধরা হয়।

সোস্যাল মিডিয়া সাইন-ইন

কোনো ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরীর সময় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করার পরিবর্তে সোস্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও সাইন-ইন করার অপশন দেয়া থাকে। সময় সাশ্রয়ে এই ধরনের সাইন-ইন ব্যবস্থা ব্যবহার করেন অনেকেই। এই লগ-ইন ব্যবস্থায় আপনার সোস্যাল মিডিয়া একাউন্টে প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে উক্ত সাইটে তৈরীকৃত একাউন্ট এর তথ্যগুলো পূরণ করা হয়। তবে অপেক্ষাকৃত নতুন ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরীর ক্ষেত্রে এই ধরনের সোস্যাল মিডিয়া সাইন-ইন থেকে দূরে থাকাই ভালো।

সময়-ভিত্তিক

কখনো কখনো ফর্ম পূরণের সময়কেও ক্যাপচা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ক্ষেত্রে অতি শীঘ্রই কিংবা দেরিতে পূরণকৃত ফর্ম বাতিল ধরা হয়। সাধারণত কোনো রোবট নিমিষেই ফর্ম পূরণ করে ফেলে। রোবট নিয়ন্ত্রিত সাইন-ইন প্রসেসে এই ধরনের ক্যাপচা দারুণ কার্যকর।

হানিপট

হানিপট বেশ উন্নত ক্যাপচা ব্যবস্থা। এতে সাইটে দৃশ্যমানের পাশাপাশি অদৃশ্য কিছু শূণ্যস্থান দেয়া থাকে। কোনো মানুষ যখন সাইটে প্রবেশ করেন, তখন তারা শুধু দৃশ্যমান শূণ্যস্থানগুলো পূরণ করেন। তবে কোনো বট যখন সাইটে প্রবেশ করে, তখন এটি দৃশ্যমানের পাশাপাশি অদৃশ্য শূণ্যস্থানগুলোও পূরণ করে ফেলে। এভাবে সাইটের ক্যাপচা ব্যবস্থা খুব সহজেই রোবট খুজে বের করে।

পিকচার আইডেন্টিফিকেশন

পিকচার আইডেন্টিফিকেশন ক্যাপচার কাজ এর নাম থেকেই বুঝা যায়। এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ছবি প্রদান করা হয় এবং তাদের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছবিগুলোকে আলাদা করতে বলা হয়। যেহেতু বট এর দৃষ্টিক্ষমতা তেমন প্রখর নয়, এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থায় এর সম্পূর্ণ ফায়দা তোলা হয় অনেকটা লো কোয়ালিটি ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে। এই ধরনের ক্যাপচায় কোনো লেখা এন্টার করতে হয়না। বরং কিছু ছবি থেকে নির্দিষ্ট বস্তু কিংবা বৈশিষ্ট্যকে আলাদা করতে বলা হয়। এই ক্যাপচা পূরণে একবার ব্যর্থ হলে একাধিক ক্যাপচা প্রদান করা হয়, যা পূরণ করা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ।

নো ক্যাপচা রিক্যাপচা

২০১৪ সালে এই ক্যাপচা নিয়ে আসে গুগল। আসার পর থেকেই এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীদের ‘I’m not a robot’ লেখাযুক্ত একটি চেকবক্স এ ক্লিক করতে হয়। এই ব্যবস্থায় সাধারণত ব্যবহারকারীর মুভমেন্ট বিবেচনা করা হয়। কোনো বট যদি এই ক্যাপচা পূরণ করে তবে সেটি চেকবক্সের একদম মধ্যখানে ক্লিক করবে, যা একজন মানুষের দ্বারা খালি চোখে কখনই সম্ভব নয়। তবে ব্যবহারকারীগণ এই ধরনের ক্যাপচা পূরণে একবার ব্যর্থ হলে অন্য যেকোনো ধরনের ক্যাপচা প্রদান করা হয়।

ইনভিজিবল রিক্যাপচা

ইনভিসিবল রিক্যাপচা ব্যবস্থাটি অপেক্ষাকৃত উন্নত ক্যাপচা ব্যবস্থা। এটির নামের মতই অদৃশ্য। তবে ইনভিজিবল রিক্যাপচার একটি লোগো সাইটের এক কোণায় দেখা যাবে। ওয়েবসাইটে ক্যাপচার কোনো দৃশ্যমান অস্তিত্ব থাকেনা।  ব্যবহারকারী সাইট কীভাবে ব্যবহার করছেন, কীভাবে নির্দিষ্ট বাটনে ক্লিক করছেন, এসব গতিবিধির উপর নজর রাখে এটি। এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থা ব্যবহারকারী এবং সাইটের মালিক, উভয়ের জন্যই সুবিধার।

কনফিডেন্ট রিক্যাপচা

এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থায় কিছু ছবি থেকে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়যুক্ত ছবিটিকে আলাদা করতে বলা হয়। প্রায় ৯৬% মানুষই এই ধরনের ক্যাপচা খুব সহজেই পার করে যান। তবে যারা ওয়েবসাইট ব্যবহারে দ্রুততা অবলম্বন করেন, তারা এই সহজ ক্যাপচা পূরণেও ব্যার্থ হন।

সুইট রিক্যাপচা

এই ধরনের ক্যাপচাও অনেকটা উল্লিখিত কনফিডেন্ট রিক্যাপচার মতই। এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থায় কিছু আইটেম মিলাতে বলা হয় কিংবা নড়াচড়া করে সঠিক অনুসারে সাজাতে বলা হয়। এই ধরনের ক্যাপচা ব্যবস্থা সর্বাধিক কার্যকরী। বট তো এই ধরনের ক্যাপচা পূরণ করতে পারেইনা। এমনকি মানুষকেও এই ধরনের ক্যাপচা পূরণে হিমশিম খেতে হয়।

উপরোক্ত ক্যাপচা ব্যবস্থাগুলো হতে কোন পদ্ধতিটি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়েছে? কমেন্ট করে জানান আমাদেরকে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *