নকিয়ার নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে নকিয়া বাটন ফোনের যুগে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে নকিয়া একটি বড় নস্টালজিয়ার নাম। নকিয়া ফোন এখনও তৈরি হচ্ছে, তবে আগের মতো নেই তাদের জনপ্রিয়তা।
নকিয়া কর্পোরেশনকে বলা যায় অন্যতম প্রাচীন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এটি একটি ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান যা সেই ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। নকিয়া এরপর নানা উত্থান ও পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। নকিয়াকে আমরা চিনি তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। তবে নকিয়া শুধু একটি মোবাইল ফোন ব্রান্ডই নয়, তাদের মূল ব্যবসা টেলিকমিউনিকেশন্সের। অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করে থাকে তারা। এছাড়া প্রযুক্তির আরও নানা রকম দিকে রয়েছে তাদের অবদান।
স্মার্টফোনের যুগে এসে নকিয়া মোবাইল অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। এরপর মাইক্রোসফট এবং বর্তমানে এইচএমডি গ্লোবাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান নকিয়াকে এখনও মোবাইল ফোনের বাজারে বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে নকিয়া তার সোনালি দিনগুলোকে হারিয়ে ফেলেছে অনেকটাই।
তবে প্রযুক্তি খাতে নকিয়া এখনও বেশ কিছু অবাক করা রেকর্ডের অধিকারী। এসব রেকর্ড আর কোন প্রতিষ্ঠান ভাঙতে পারবে কিনা তা সময়েই বলে দেবে, তবে নকিয়ার এসব রেকর্ড অবাক করবে যে কাউকেই। নকিয়ার এসব অবাক করা রেকর্ড নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। এসব রেকর্ডের কিছু রেকর্ড হয়তো কখনই কারো পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব হবে না, আবার কিছু রেকর্ড ইতোমধ্যেই অন্য কারো হয়ে গিয়েছে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক নকিয়ার কিছু বিশ্ব রেকর্ড সম্পর্কে।
পৃথিবীর সবথেকে বেশি শোনা টিউন
মনে আছে নকিয়ার বাটন ফোন চালু করলেই যে টোনটি শোনা যেত সেটির কথা? যারা বাটন ফোনের যুগে ফোন ব্যবহার করেছেন তারা অন্তত একবার হলেও এই টিউনটি শুনেছেন। স্প্যানিশ সুরকার ফ্রান্সিস্কো ট্যারেগার সুর করা এই টিউনটির নাম ‘গ্রান্ডে ভালস’। এই টিউনটিকেই বলা হয় পৃথিবীর সবথেকে বেশি শ্রুত টিউন। যদিও এর অফিসিয়াল কোন স্বীকৃতি নেই। এই টিউনটিকে নকিয়া তাদের ডিফল্ট রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করছে শুরু থেকেই। পরবর্তীতে এই টিউনের বিভিন্ন নতুন নতুন ভার্সন এনেছে নকিয়া। তবে মূল টিউনটি একই থেকে গেছে। আজও এই টিউন শুনে অনেকেই পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেন।
পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল গেম
স্নেক গেম খেলেন নি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। এই সাধারন ও ছোট গেমটি খুবই জনপ্রিয়। তবে এই গেমের জনপ্রিয়তার শুরু কোথায়? মূলত নকিয়া তাদের ৬১১০ মডেলের বাটন ফোনের জন্য এই গেমটি তৈরি করেছিল। বাটন ফোনের জন্য গেমের প্রচলন শুরু করেছিল নকিয়াই। ২০০০ সালের পর থেকে এই গেমটি হয়ে উঠেছিল সকলের প্রিয়। নকিয়ার সকল মোবাইলেই পাওয়া যেত এই গেমটি। তবে তখন মোবাইল গেমের কোন সঠিক তথ্য না থাকায় অফিসিয়াল কোন স্বীকৃতি নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মোবাইল গেমের জনপ্রিয়তার শুরু যে এই স্নেক গেমটির মাধ্যমেই হয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই অনেকের মতেই এটিই বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল গেম হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন
এই প্রজন্মের অনেকের পক্ষেই ধারনা করা সম্ভব হবে না যে পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন কোনটি। কেননা সেটি কোন স্মার্টফোন নয়। পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়ে ১১০০ কে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী এই ফোনটি ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিট বিক্রি হয়েছিল। ফলে এটিই বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত ফোন। ফোনটি ২০০৩ সালে বাজারে আসে এবং দ্রুতই সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। সারা বিশ্বেই এই ফোনটি জনপ্রিয়তা পায় ছোট, সুন্দর ও ভালো মোবাইল ফোন হিসেবে।
পৃথিবীর সবথেকে বড় সিনেমা পর্দা
এই রেকর্ডটি একসময় নকিয়ার থাকলেও বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় সিনেমা পর্দার রেকর্ড জার্মানির একটি থিয়েটারের। তবে ২০১০ সালে নকিয়া ১৪২০ বর্গ মিটারের একটি সিনেমা পর্দা তৈরি করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এটি ছিল সে সময়ের সবথেকে বড় সিনেমা পর্দা। এই সিনেমা পর্দাতে তারা ‘প্রিন্স অব পার্সিয়া’ ছবিটি দেখিয়েছিল। দুটি বড় ক্রেন ব্যবহার করে এই পর্দাটি বানানো হয়েছিল। আর ব্যবহার করা হয়েছিল এক্সএলএম এইচডি৩০ নামক ৪ টি প্রোজেক্টর। ১৫০০ মানুষ এই প্রোজেক্টরে ছবি উপভোগ করেছিল, ধারনা করা হয় আরও প্রায় ১০০০ মানুষ তাদের বাসা বা অ্যাপার্টমেন্টে বসেই ছবিটি দেখতে পেরেছিল।
পৃথিবীর সবথেকে ছোট স্টপ মোশন অ্যানিমেশন ক্যারেক্টার
পৃথিবীর সবথেকে ছোট স্টপ মোশন অ্যানিমেশন ক্যারেক্টারের নাম ‘ডট’। সেই ২০১০ থেকে এই রেকর্ডটি ডটের। মাত্র ১০ মিলিমিটার লম্বা এই ক্যারেক্টার নকিয়ার একটি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল। এই বিজ্ঞাপনটির নাম ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’। আর্ডম্যান অ্যানিমেশনের তৈরি করা এই বিজ্ঞাপনে নকিয়ার এন৮ মডেলের ফোনের ছবি তোলার ক্ষমতাকে তুলে ধরতে ব্যবহার করা হয়েছিল এই ক্যারক্টারটি। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত এই রেকর্ড ধরে রেখেছে ডট।
৫জি স্পিডে বিশ্ব রেকর্ড
সম্প্রতি নকিয়া ৫জি স্পিড টেস্টে সবথেকে দ্রুতগতির রেকর্ড করেছে বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ লম্বা দূরত্বে তারা সবথেকে বেশি ডাউনলোড স্পিড পেতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তবে এটির এখনও অফিসিয়াল স্বীকৃতি মেলেনি। তারা এই গতির পরীক্ষাটি করেছে ফিনল্যান্ডে যেখানে তারা ১০.৮৬ কিলোমিটার দূর থেকে ২.১ গিগাবাইট পার সেকেন্ড ডাউনলোড স্পিড এবং ৫৭.২ মেগাবাইট পার সেকেন্ড আপলোড স্পিড পেয়েছে। এমএমওয়েভ ৫জি বা মিলিমিটার ওয়েভের ৫জি স্পিডের ক্ষেত্রে এটি বিশ্ব রেকর্ড বলে দাবি করছে তারা। এই গতি পাওয়া সম্ভব হয়েছে নকিয়ার অপটিমাইজেশন ও উন্নত ৫জি প্রযুক্তির কারণে।
অর্থাৎ নকিয়ার সুসময় পিছনে চলে গেলেও নকিয়া এখনও প্রযুক্তি খাতে বড় একটি নাম। তাদের আগের তৈরি করা কিছু রেকর্ড কখনও কারো পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব নয় এমনটাই মনে করেন অনেকে। এছাড়া টেলিকম খাতে তারা নিত্য নতুন রেকর্ড করে চলেছে। ফলে নকিয়ার অগ্রযাত্রা এখনও পুরোপুরি থেমে যায় নি। স্মার্টফোন বাজারেও নকিয়া বিভিন্ন নতুন ফোনের মাধ্যমে ফিরে আসবার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাছাড়া পুরনো বাটন ফোনগুলোকে নতুন ভাবে বাজারে আনছে তারা। নকিয়ার বাটন মোবাইল গুলোও জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে অনেক।
নকিয়ার কোন বিশ্ব রেকর্ড সম্পর্কে আপনি জানেন কি যেটি আমাদের পোস্টে নেই? কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমাদের।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।