রয়েল এনফিল্ড বাইক কেন এত জনপ্রিয়, জেনে নিন

বিশ্বখ্যাত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ডের নাম শোনেননি এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছেন। এটি এমন এক ব্র্যান্ড যা মোটরসাইকেল প্রেমীদের কাছে তো বটেই, ছড়িয়ে গেছে পুরো পৃথিবীতেই। এই অভিজ্ঞ মোটরসাইকেল প্রতিষ্ঠান এখনও তৈরি করে যাচ্ছে নতুন নতুন মোটরবাইক। কাল্ট ক্ল্যাসিক ঘরাণার মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি বিক্রি হয় রয়েল এনফিল্ডের মোটরবাইক। ক্ল্যাসিক মোটরসাইকেল ছাড়াও তারা অফ-রোড, ও অ্যাডভেঞ্চার ধরনের মোটরসাইকেল তৈরি করে থাকে। পৃথিবীর সবথেকে পুরনো মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের একটি রয়েল এনফিল্ড।

যে কোনো মোটরসাইকেল প্রেমীর কাছেই একটি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল ব্যবহার করা স্বপ্নের মতো। তাই কীভাবে রয়েল এনফিল্ড এত জনপ্রিয়তা পেলো এই চিন্তা আসাটা খুব স্বাভাবিক। রয়্যাল এনফিল্ডের এই জনপ্রিয়তা একদিনে তৈরি হয়নি। এর পিছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাস যুক্ত অনেকটা পৃথিবীর ইতিহাসের সঙ্গেও। এই পোস্টে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য জেনে যাবেন। সেই সঙ্গে কেন মোটরসাইকেল প্রেমীদের কাছে এই ব্র্যান্ডটি এতটা জনপ্রিয়তা পেল সে সম্পর্কেও থাকছে আলোচনা। তো চলুন জেনে নেয়া যাক রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

রয়েল এনফিল্ডের ইতিহাস

ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড হিসেবে রয়্যাল এনফিল্ড পরিচিত হলেও এর শুরুটা ভারতে নয়। রয়েল এনফিল্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ‘টাউনসেন্ড অ্যান্ড ইকোসাইস’ নাম নিয়ে সর্বপ্রথম বাইসাইকেল তৈরির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের শুরু। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইংল্যান্ডের রেডিচ শহরের বাসিন্দা জর্জ টাউনসেন্ড। পরবর্তীতে তার ছেলের হাত ধরেই এই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যেতে শুরু করে। এসবই উনিশ শতকের শেষ দিকের কথা। ১৮৯৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই যাত্রা শুরু ‘দ্য এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি লিমিটেড’ – এর। বিশ শতকের শুরুতে তারা মোটরস্পোর্টসের দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০১ সালে নিয়ে আসে তাদের প্রথম মোটরসাইকেল। ধীরে ধীরে স্পোর্টসকার, অস্ত্র ইত্যাদি আরো নানা কিছু তৈরি করতে শুরু করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান আর্মির কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত নতুন ৮ ধরনের মোটরবাইক তারা বাজারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে মোটরবাইক তৈরির ব্যাপারে তারা সুনাম অর্জন করতে শুরু করে। রয়েল এনফিল্ডের সবথেকে জনপ্রিয় মডেল বুলেটের আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৩২ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা ‘রয়্যাল এনফিল্ড এয়ারবর্ন’ নামের মোটরবাইক তৈরি করে নজরে আসে যা প্যারাস্যুটে করে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এভাবেই রয়্যাল এনফিল্ড তাদের সুনাম অর্জন করে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই।

ভারতে রয়েল এনফিল্ডের প্রবেশ ঘটে ১৯৪৯ সালে। ভারতের সরকার আর্মি এবং অন্যান্য বাহিনীর জন্য বেছে নেয় রয়েল এনফিল্ড মোটরবাইক। এছাড়া সাধারণের জন্যও রয়েল এনফিল্ডের বিভিন্ন মডেল বাজারে বিক্রি হতে শুরু করে। ভারতে ক্রমাগত জনপ্রিয়তার কারণে কোম্পানিটি ১৯৫৫ সালে ভারতে কারখানা স্থাপন করে। ফলে এনফিল্ড ইন্ডিয়ার যাত্রা শুরু হয় এবং ভারতেই তাদের মোটরসাইকেল তৈরি হতে থাকে। এনফিল্ড ইন্ডিয়ার মালিকানা এরপর অনেকবার হাতবদল হয়ে বর্তমান মালিক এইচার মটরসের কাছে চলে আসে ১৯৯৪ সালে। তারাই এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘রয়্যাল এনফিল্ড মোটরস লিমিটেড’।

বর্তমানে রয়েল এনফিল্ড অনেকগুলো মডেলের মোটরবাইক তৈরি করছে। সারা বিশ্বে ৫০ টিরও বেশি দেশে তাদের মোটরবাইক বিক্রি হচ্ছে এখন। আমেরিকার বাজারে হার্লে ডেভিডসনের সঙ্গে রয়েল এনফিল্ডের তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। তথ্যসূত্রঃ বিজনেস ইন্সপেকশন

রয়েল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তার কারণ

রয়্যাল এনফিল্ড দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি পৃথিবীর সবথেকে পুরনো মোটরবাইক ব্র্যান্ডের মধ্যে অন্যতম। কাজেই রয়েল এনফিল্ডের আলাদা একটি ভক্তগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। রয়্যাল এনফিল্ড হয়ে উঠেছে মোটরবাইক ও এডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে স্বপ্নের বাহন। রয়েল এনফিল্ডের এই জনপ্রিয়তার বেশ কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা যাক:

ব্র্যান্ড ভ্যালু

স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে যেমন আইফোনের রয়েছে আলাদা একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু তেমনি মোটরবাইকের ক্ষেত্রে রয়েল এনফিল্ডের আলাদা মূল্য রয়েছে। এটি পৃথিবীর অন্যতম পুরনো মোটরবাইক ব্র্যান্ড, যা এমনকি বিশ্বখ্যাত হার্লে ডেভিডসন থেকেও পুরনো। ক্ল্যাসিক ধরনের পুরনো ডিজাইন, আলাদা স্টাইল, নজরকাড়া লুক সব মিলিয়েই Royal Enfield হয়ে উঠেছে কাল্ট ক্ল্যাসিক এক মোটরবাইক ব্র্যান্ড। এছাড়া মোটরবাইক সংগঠন যারা একসঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে যাত্রা করতে পছন্দ করেন তাদের কাছেও রয়েল এনফিল্ড অত্যন্ত জনপ্রিয়।

গর্বের বস্তু

রয়েল এনফিল্ড মোটরবাইক অনেকের কাছেই গর্বের একটি ব্যাপার হয়ে থাকে। বাইকের ডিজাইন অন্য বাইক হতে আলাদা হওয়ায় সহজেই চোখে লাগে এবং অন্যের কাছে এই ব্যাপারে প্রশংসা পাওয়া যায়। ফলে রয়েল এনফিল্ড অনেকটাই ব্যক্তিগত স্টাইলের সঙ্গী। এর ফলে বাইক চালকদের কাছে রয়্যাল এনফিল্ড সবসময়ই আলাদা স্থান পায়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

Royal Enfield bike
Credit: Royal Enfield

আগের থেকেও আরও বেশি টেকসই

রয়েল এনফিল্ড মোটরবাইকের মান নিয়ে এর ব্যবহারকারীদের নানারকম অভিযোগ ছিল পুরনো সময় থেকেই। তবে ধীরে ধীরে সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। এখন আধুনিক সকল রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক বিশ্বমানের করে তৈরি করা হয়ে থাকে। ফলে ব্র্যান্ড ভ্যালুর সাথে ভালো মান মিলে এই মোটরবাইক এখন সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই এর জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলেছে। আপনার জন্যঃ উড়োজাহাজ নিয়ে ১০টি অবিশ্বাস্য তথ্য

সহজে চালানোর সুবিধা

প্রথম দিকের Royal Enfield মোটরবাইকগুলোর ডিজাইনের ভিন্নতা থাকায় তা চালাতে বেশ দক্ষ বাইক চালক হবার দরকার হতো। তবে আধুনিক ইলেকট্রিক স্টার্টার এবং ডিস্ক ব্রেক ব্যবহারের ফলে আধুনিক রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক চালানো সহজ হয়ে গেছে। এছাড়া গিয়ার লিভার ডান পাশ থেকে সরিয়ে বাম পাশে নিয়ে আসায় মোটরসাইকেল ব্যবহার আরও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই যে কেউ এখন এই মোটরবাইক চালাতে পারছেন। আর এর ফলে সাধারণ চালকেরাও এই মোটরবাইক কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।

উদ্ভাবন

রয়্যাল এনফিল্ড নতুন নতুন উদ্ভাবন থেকে কখনোই পিছিয়ে থাকে না। বাইকের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সবথেকে কম দামে বাজারে নিয়ে আসবার ক্ষেত্রে রয়েল এনফিল্ড বেশ দক্ষ। প্রতিনিয়ত তারা নতুন নতুন মডেলের মোটরবাইক বাজারে নিয়ে আসে। সামনে তারা সমান্তরাল দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে যাচ্ছে ভারতের বাজারে। সবথেকে কম দামে এই নতুন প্রযুক্তির মোটরবাইক ইন্ডিয়ার বাজারে নিয়ে আসবে রয়্যাল এনফিল্ড। এভাবেই তারা চালকদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। আরও জানুনঃ গুগল পিক্সেল স্মার্টফোন কী? এর সুবিধা কী?

কাস্টমাইজেশন

রয়্যাল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ তাদের প্রতিটি বাইকেই নানা ধরনের কাস্টমাইজেশন বা মড করা সম্ভব। অর্থাৎ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে বাইকের পুরো চেহারাই নিজের মতো করে পাল্টে ফেলা সম্ভব। রয়্যাল এনফিল্ড কাস্টমাইজেশনের ব্যাপারে চালকদের উৎসাহিত করে। নিয়মিত তারা বিভিন্ন মডারদের সঙ্গে মিলে এই বিষয়ে আলাদা ক্যাম্পেইনের আয়োজনও করে থাকে। এই সুবিধা সাধারণত অন্যান্য ব্র্যান্ডের বাইকে আপনি পাবেন না। রয়েল এনফিল্ড এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে সহজেই সকল কিছু পাল্টে ফেলা সম্ভব হয়। আর তাই নিজেদের মত করে যারা বাইক ডিজাইন করতে চান তাদের পছন্দের ব্র্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ড।

অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে রয়্যাল এনফিল্ড নিজদের স্বতন্ত্র ডিজাইন ও স্টাইল বজায় রেখেই মোটরবাইক চালকদের কাছে আলাদা স্থান করে নিয়েছে। বাজারে রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরবাইকের দাম তাই অনেক সময় বেশি হলেও সংগ্রহে রাখতে কিংবা নজরকাড়া ডিজাইনের জন্যই এটি জনপ্রিয়। সেই সাথে মোটরবাইকের প্রযুক্তিতে অনেক রকম উন্নতি হওয়ায় রয়্যাল এনফিল্ড আরও ভালো মানের মোটরবাইক তৈরি করতে পারছে। সব মিলিয়েই তারা পুরনো মোটরবাইক ব্র্যান্ড হিসেবে  বাজারে তাদের জায়গা ধরে রাখতে পেরেছে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *