ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার

ইন্টারনেট ব্যাংকিং যেহেতু ইন্টারনেট সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়া, তাই এখানে প্রতারণা ও হ্যাকিং এর মত ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। তাই ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। এই পোস্টে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।

নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন

ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হতে পারে নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। প্রতি ৯০দিনে অন্তত একবার হলেও আপনার অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। সহজে আন্দাজ করা যায় এমন কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না ও স্পেশাল ক্যারেক্টার, সংখ্যা৷ ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, ইত্যাদি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

আপনার নিজের নাম বা আপনার পোষা প্রাণীর নাম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। আপনার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়সমূহ পাসওয়ার্ডে যুক্ত করুন। পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, ততো বেশি শক্তিশালী হবে। আপনার পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ১৪ক্যারেক্টার লম্বা করুন। (অবশ্য ব্যাংকের পলিসি ভিন্ন হলে আলাদা কথা)। তবে পাসওয়ার্ড যত কঠিনই হোক না কেনো, আপনি যেনো উক্ত পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেন অথবা নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই বর্জন করুন

পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সমস্যা হলো এসব নেটওয়ার্কের পেছনে থাকা লোকজন আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড অ্যাকসেস করতে পারে। যার ফলে আপনি যদি আপনার ইমেইল পড়তে ইমেইল একাউন্টে বা ব্যাংকিং একাউন্টে লগিন করেন, সেক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। তাই যথাসম্ভব যেকোনো ধরনের পাবলিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যাংকিং সহ অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলুন 

শেয়ার্ড ডিভাইসে লগিন ইনফরমেশন সেভ করবেন না

কিছু কিছু ওয়েবসাইটে লগিনের পর লগিন এর তথ্য সেভ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আপনি ছাড়াও যদি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার অন্য কেউ ব্যবহার করে থাকে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী লগিনের জন্য লগিন ইনফরমেশন সেভ না করাই শ্রেয়। এভাবে লগিন ইনফরমেশন সেভ থাকলে আপনার ডিভাইস যেকেউ হাতে পেলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট সহজে অ্যাকসেস করতে পারবে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বর্তমানে অনেক ব্যাংকিং সাইট নির্দিষ্ট সময়ের পর টাইম আউট হয়ে যায় ও ইনফরমেশন সেভ করেনা।

নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন

অবশ্যই প্রতি মাসে একবার হলেও আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন। যদিওবা যেকোনো ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যাংকগুলো প্রদান করে থাকে, তবুও নির্দিষ্ট ব্যাপারে, যেমনঃ ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে লেনদেনের হিসাব নিয়ে ব্যাংক তেমন একটা যাচাই বাছাই না ও করতে পারে। তাই প্রতি মাসে একবার হলেও আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন।

লাইসেন্স করা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

আপনি ম্যাক ইউজার হোন বা উইন্ডোজ, অবশ্যই আপনার কম্পিউটারে লাইসেন্স করা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলে সেক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কেনার সামান্য অর্থ আপনার কাছে বেশি মনে হবেনা। এছাড়া কম্পিউটারে থাকা ডিফল্ট সিকিউরিটি টুলসমূহ নিয়মিত ম্যানুয়ালি আপডেট করে রাখুন, যাতে লেটেস্ট যেকোনো ধরনের ম্যালওয়্যার ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পাওয়া যায়।

ব্যবহার না করলে ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট করে দিন

কম্পিউটার সবসময় ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকলে তা নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিতে থাকে। বেশিরভাগ কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ সরাসরি কেবল ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, আবার ওয়াই-ফাই ও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। তবে যে ধরনের ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ব্যবহার করুন না কেনো, প্রয়োজন না থাকলে ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট করে রাখা উচিত। এছাড়া আপনার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পাসওয়ার্ড-প্রটেক্টেড কিনা বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

👉 নগদ ইসলামিক একাউন্ট কি ও কিভাবে চালু করতে হয় জানুন

প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন

কোনো ব্যাংক আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, একাউন্টের ডিটেইলস, ইত্যাদি সেনসিটিভ তথ্য কল, ইমেইল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানতে চাইবেনা। যখন আপনি কোনো অভিযোগ জানাবেন কিংবা কাজ করার জন্য ফোন করবেন, বরং তখনই ব্যাংক আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ভেরিফিকেশনের জন্য তথ্য জানতে চাইতে পারে।

অর্থাৎ মূল কথা হলো ব্যাংক নিজ থেকে কখনোই আপনার কাছ থেকে কোনো তথ্য জানতে চাইবেনা। ইমেইল বা টেক্সট মেসেজে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাওয়া হলে তা এড়িয়ে চলুন। এছাড়া ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে আপনার ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে বিষয়টি জেনে নিতে পারেন।

ফিশিং স্ক্যাম এর ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক ডিটেইলস চুরি করে নেওয়া হয় আপনি লটারি জিতেছেন বা কারো সাহায্য লাগবে বলে। এসব ইমেইল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন ও Spam হিসেবে মার্ক করে দিন। মনে রাখবেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্ট সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা, জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন থাকলে তা ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে জেনে নিতে পারবেন।

👉 ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে এই সাবধানতাগুলো মেনে চলুন

ব্যাংক ইউআরএল টাইপ করা

ব্যাংক থেকে আসা ইমেইলে ক্লিক করে অনেকে সরাসরি ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টে লগিন করে ফেলে, তবে এটি ঠিক নয়। কোনো প্রতারণাপূর্ণ মেসেজও দেখে আসল মনে হতে পারে, কিন্তু এতে ক্লিক করলে আপনার ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিবার ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টে লগিন এর সময় ব্যাংক এর ইউআরেল টাইপ করে অথবা ব্রাউজারে আগে থেকে বুকমার্ক করা ব্যাংকিং পোর্টালে প্রবেশ করুন।

সবসময় লগ আউট করুন

সেশন হাইজ্যাকিং বা ক্রস-সাইট স্ক্রিপ্টিং এক্সপ্লয়েট এর মত প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে আপনার কাজ শেষে অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট থেকে লগ আউট করতে ভুলবেন না। আবার আপনার ব্রাউজিংয়ে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করতে চাইলে কোনো ব্রাউজার থেকে ইনকগনিটো মোডে লগিন করতে পারেন, এতে আপনি উক্ত অ্যাপ ক্লোজ করে দিলেই অটো লগ আউট হয়ে যাবে ও কোনো লগিন এর সেশন সেভ হবেনা।

আপনি কি অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করেন? সেবাটি নিয়ে আপনার মতামত কী?

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *