নেটফ্লিক্স নিয়ে অজানা কিছু তথ্য

নেটফ্লিক্স কি

নেটফ্লিক্স এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অন-ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস। প্রায় সব ধরনের মুভি আর টিভি শো পাবেন নেটফ্লিক্স এ। নিজেদের প্রডিউস করা প্রোগ্রামগুলোও নেটফ্লিক্স প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক জনপ্রিয়। এগুলোকে নেটফ্লিক্স অরিজিনালস বলা হয়। মাসিক ৮ থেকে ১২ ডলার সাবস্ক্রিপশন চার্জ থাকলেও বাংলাদেশেও এটি কম জনপ্রিয় নয়।

বাংলাদেশের গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি সরকার নেটফ্লিক্সকে বাংলাদেশে ক্যাশ সার্ভার বসানোর সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে নেটফ্লিক্স বাংলাদেশী গ্রাহকদের আরো দ্রুত ও উন্নত স্ট্রিমিং সুবিধা দিতে পারবে।

নেটফ্লিক্স কী এটা হয়ত অনেকেরই অজানা নয়। তবে নেটফ্লিক্স সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানার পর আপনিও হয়তো চমৎকৃত হয়ে যাবেন। আমাদের পোস্টে নেটফ্লিক্স সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য জেনে নিতে পারেন।

‘স্কুইড গেম’ নেটফ্লিক্সে সবথেকে বেশিবার দেখা টিভি সিরিজ

অনেকেরই হয়তো জানেন না নেটফ্লিক্সে সবথেকে বেশিবার দেখা টিভি সিরিজ কোনটি, আবার অনেকে ভাবতে পারেন নিশ্চয়ই কোন ইংলিশ ছবি বা সিরিজ হতে পারে সবথেকে বেশি দেখা টিভি শো। আসলে কোন ধারনাই সত্যি নয়। কোরিয়ান থ্রিলার ড্রামা সিরিজ ‘স্কুইড গেম’ নেটফ্লিক্সের সবথেকে বেশিবার দেখা টিভি শো রেকর্ডের অধিকারী। ২০২১ সালে প্রকাশিত হওয়া এই সিরিজটি ১.৬৫ বিলিয়ন ঘণ্টা দেখা হয়েছে যা আগের সব রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। নেটফ্লিক্স থেকে এটি এমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া প্রথম বিদেশি সিরিজ। ২০২৩ সালে এসেও এই সিরিজটি রেকর্ড ধরে রেখেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই রেকর্ড ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হবে অন্যান্য টিভি শো গুলোকে। (সূত্র)

নেটফ্লিক্সের জন্ম ১৯৯৭ সালে

অনেকেই ভাবতে পারেন নেটফ্লিক্স খুব পুরনো কোন সার্ভিস নয়। কেননা ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তা সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে এসে নেটফ্লিক্স সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে। তবে নেটফ্লিক্সের জন্ম কিন্তু সেই ১৯৯৭ সালে। তবে তখন এটি নেটফ্লিক্স নামে ছিল না। এটি একটি ভিডিও-রেন্টাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। মূলত ২০০০ সালের আগে ভিডিও-রেন্টাল আমেরিকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে নেটফ্লিক্স এই ভিডিও রেন্টাল প্রযুক্তি ডিজিটাল করে তোলে।

২০১০ সালে নেটফ্লিক্স আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে

এই যুগের অনেকেরই হয়তো অজানা যে নেটফ্লিক্স প্রথম থেকেই সারা বিশ্বে তাদের কার্যক্রম শুরু করে নি। প্রথমে তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ছিল এবং সেখানেই তাদের সেবা দিত। তবে ২০১০ সালে নেটফ্লিক্স সারা বিশ্বেই ওটিটি প্লাটফর্মের জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে। কানাডার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে নেটফ্লিক্স ১৯০ টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

নেটফ্লিক্স এখনও ডিভিডি ভাড়া দেয়

নেটফ্লিক্স প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভিডিও রেন্টাল বা সিডি-ডিভিডি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে। নেটফ্লিক্স কিন্তু এখনও তার মূলকে ভুলে যায় নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও তারা ডিভিডি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটি তারা অনলাইনে আলাদা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে করছে। ওয়েবসাইট থেকে সাবস্ক্রিপশন কিনে নিয়ে মেইলের মাধ্যমে ডিভিডি ভাড়া দিয়ে থাকে নেটফ্লিক্স।

নেটফ্লিক্স গেমসের দিকে নজর দিয়েছে

অনেকেই হয়তো জানেন না যে নেটফ্লিক্স বর্তমানে গেমিংয়ের বাজারে আলাদা করে দৃষ্টি দিয়েছে। বর্তমানে নেটফ্লিক্স অ্যাপের মাধ্যমেই ৪০ টিরও বেশি মোবাইল গেমস খেলা যায়। অর্থাৎ মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন গেমিং বাজারটি নেটফ্লিক্স ধীরে ধীরে বড় করছে। বর্তমানে নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রিপশনের সাথে ফ্রিতেই এই গেম খেলা গেলেও ভবিষ্যতে নেটফ্লিক্স একেও সাবস্ক্রিপশনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা

নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত নেটফ্লিক্সের ২৩২.৫ মিলিয়ন পেইড সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। ফলে নেটফ্লিক্স খুব ভালোভাবেই এখনও ওটিটি প্লাটফর্মের বাজার ধরে রেখেছে। নিয়মিত ভালো ভালো কনটেন্ট দেয়ার মাধ্যমে নেটফ্লিক্স সবসময়েই মানুষের কাছে তার আকর্ষণীয়তা ধরে রেখেছেন।

নেটফ্লিক্স আমাজনের ওয়েব সার্ভার ব্যবহার করে

নেটফ্লিক্সের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আমাজনের প্রাইম ভিডিও। তাই আমাজনের সাথে নেটফ্লিক্সের সম্পর্কটা প্রতিযোগিতার। তবে সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে নেটফ্লিক্স তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করে আমাজনের ওয়েব সার্ভার। অর্থাৎ প্রাইম ভিডিও ও নেটফ্লিক্স আসলে পাশাপাশি একই সার্ভারে তাদের কনটেন্ট জমা রাখে। ২০১৬ সাল থেকে নেটফ্লিক্স তাদের অরিজিনাল সকল কনটেন্ট জমা রাখতে ব্যবহার করছে আমাজনের এই সেবা।

নেটফ্লিক্সের নিজস্ব স্পিড টেস্ট ওয়েবসাইট

ইন্টারনেট স্পিড সবসময়েই স্ট্রিমিং করবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই নেটফ্লিক্স ২০১৬ সালে নিজেরাই একটি স্পিড টেস্ট করার জন্য ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্যবহারকারীদের জন্য। ফাস্ট.কম নামের এই ওয়েবসাইট আপনাকে বলে দেবে আপনার আইএসপি এর মাধ্যমে আপনি নেটফ্লিক্সে কেমন গতি পেতে পারেন। ফলে সহজেই নিজে নিজে আপনার আইএসপিতে নেটফ্লিক্সের পারফর্মেন্স বুঝে নিতে পারবেন আপনি।

নেটফ্লিক্স এর নাম কিন্তু নেটফ্লিক্স ছিল না

নেটফ্লিক্স কো-ফাউন্ডার মার্ক র‍্যান্ডলফ জানান, প্রথমদিকে নেটফ্লিক্স এর নাম নেটফ্লিক্স ছিল না। তাদের কোম্পানির নাম ছিল “কিবল”। শুরুতে তারা ডিভিডি ভাড়া দিত। কোম্পানিটি ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস শুরু করার পর নেটফ্লিক্স নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

“হাউজ অব কার্ডস” নেটফ্লিক্স প্রযোজিত প্রথম প্রোগ্রাম নয়

অনেকে মনে করেন “হাউজ অব কার্ডস” নেটফ্লিক্সের প্রযোজিত প্রথম প্রোগ্রাম। আসলে তা নয়। এটি তাদের প্রথম বাণিজ্যিক প্রোগ্রাম হলেও তাদের প্রথম নেটফ্লিক্স অরিজিনাল ছিল “এক্সাম্পল শো” নামক একটি প্রোগ্রাম। এটি ২০১০ সালে করা তাদের একটি টেস্ট প্রজেক্ট ছিল। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি গ্রাহকদের জন্য রিলিজ করা হয়েছিলো। আপনি চাইলে সেই হাস্যরসাত্মক ১১ মিনিটের প্রোগ্রামটি সম্পর্কে এই লিঙ্ক থেকে জানতে পাবেন।

ব্লকবাস্টার সস্তায় পেয়েও নেটফ্লিক্সকে কিনেনি

২০০০ সালে ডিভিডি ও ভিডিও রেন্টাল সার্ভিস ব্লকবাস্টারকে ৫০ মিলিয়ন ডলারে নেটফ্লিক্স কিনতে অনুরোধ করেন নেটফ্লিক্স কো-ফাউন্ডার রিড হ্যাস্টিংস। কিন্তু ব্লকবাস্টারের কাছে এটা তেমন একটা সম্ভাবনাময় মনে হয়নি। অবশ্য তখন নেটফ্লিক্স এর এত দাপটও ছিল না। তারা তখন শুধুমাত্র ডিভিডি রেন্টাল সার্ভিসের ব্যবসা করতো। এখন ব্লকবাস্টারের অবস্থা খুব একটা ভালনা, আর নেটফ্লিক্স দুনিয়া কাঁপাচ্ছে।

বিশ্বের ১৫ ভাগ ইন্টারনেট ট্রাফিক নেটফ্লিক্স দিয়েই আসে

ফেসবুক কিংবা গুগলের গ্রাহক অনেক বেশি হলেও নেটফ্লিক্স ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস হওয়াতে অনেক বেশি ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে। মূলত বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ব্যবহৃত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ এর ১৫ ভাগই নেটফ্লিক্স এর জন্য ব্যবহৃত হয়

নেটফ্লিক্স একবার নিজেরা একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল

২০১৩ সালে নেটফ্লিক্স একাডেমী কিংবা গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড এর আদলে “দ্য ফ্লিক্সিস” নামক অ্যাওয়ার্ড আয়োজন করেছিলো। অবশ্য এটা পুরোটাই একটি মজার অনুষ্ঠান ছিল। অ্যাওয়ার্ডগুলোও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ন কিছু ছিল না।

নেটফ্লিক্সে ৭৬০০০ সাব-ক্যাটেগরি আছে

সাধারণত ধরন অনুযায়ী মুভি বা টিভি সিরিজকে কিছু জনরা তে ভাগ করা হয়। কিন্তু নেটফ্লিক্স এদিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে। তারা তাদের প্রোগ্রামগুলোকে ৭৬০০০ জনরা তে ভাগ করেছে। এগুলোকে তারা বলছে মাইক্রো-ক্যাটেগরি।

সারাদিন বসে বসে ভিডিও দেখার জন্যও বেতনভুক্ত কর্মী আছে নেটফ্লিক্সে

আমাদের মাঝে অনেকেই সারাদিন শুয়ে বসে মুভি বা সিরিজ দেখতে ওস্তাদ। নেটফ্লিক্স কিন্তু এমন মানুষদেরকে বেতন দিয়ে রাখছে সারাদিন তাদের শো-গুলো দেখার জন্য। অবশ্য তাদের কাজটা এতটা সহজও নয়। দেখার পাশাপাশি তাদেরকে যথাযথ মেটাড্যাটা দিয়ে ট্যাগ করে শোগুলোকে ক্যাটেগরি অনুযায়ী সাজাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ছবির ডিরেক্টর সহ অন্যান্য কলাকুশলীদের নামও খুঁজে বের করে যুক্ত করতে হয়।

আপনি কি নেটফ্লিক্স ব্যবহার করেন?

বোনাসঃ স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধির অজানা কিছু কৌশল

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,573 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *