আজকাল ফেসবুক নিউজফিড কিংবা ইনস্টাগ্রামের স্টোরি ভর্তি শুধুই স্টুলিশ রিলেটেড পোস্ট। ঠিক যেমনটি হয়েছিল কিছুদিন আগে সারাহাহ অ্যাপ এর ক্ষেত্রে। সারাহাহ অ্যাপটি একজন সৌদি ডেভেলপার অফিসের কলিগ ও বন্ধুদের কাছ থেকে নাম অপ্রকাশিত রেখে মতামত নেয়ার জন্য বানালেও সেটা রাতারাতি ইন্টারনেট সেন্সেশন বনে যায় এবং প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী অর্জন করে।
কিন্তু ব্যাপক জনপ্রিয়তার সাথে সারাহাহ প্রচুর সমালোচিতও হয় বিভিন্ন কারণে। শেষ পর্যন্ত সারাহাহ’কে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে স্টোর থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়।
সারাহাহ নিয়ে মাতামাতি শেষ হতে না হতেই সোশ্যাল মিডিয়া স্টুলিশ নামক আরেক অ্যাপের ট্রেন্ড নিয়ে পড়েছে। এটাকে সারাহাহ অ্যাপের ক্লোন বলা যায়। সারাহাহ এর মতো স্টুলিস অ্যাপেও নাম-পরিচয় গোপন রেখে কাউকে মেসেজ পাঠানো যায়। এটাকে মূলত অনেস্ট ফিডব্যাক দেওয়ার মতো মহৎ কাজে ব্যবহার করা গেলেও অনেকেই উল্টোটা করছে। আর এজন্য এসব অ্যাপ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। পাশাপাশি আরো কিছু ব্যাপার রয়েছে যেসব কারণে সারাহাহ কিংবা স্টুলিস এর মতো অ্যাপগুলো আপনার ইন্সটল করাই উচিত না।
ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি
একটা জিনিস চিন্তা করে দেখুন। একজন মাত্র ডেভেলপারের তৈরী অ্যাপ অথবা খুব নতুন কোন স্টার্টআপ এর তৈরী অ্যাপ যাদের ইউজার সিকিউরিটির এক্সপেরিয়েন্স নেই বললেই চলে তারা আপনাকে ঠিক কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে? আপনি হয়ত পরিচয় গোপন থাকার ভরসায় স্টুলিস ব্যবহার করে অনেককেই স্পর্শকাতর মেসেজ দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো কারণে যদি স্টুলিস একবার আপনার পরিচয় ফাঁস করে দেয় তখন কী হবে? সারাহাহ অ্যাপ থেকেও ইউজার আইডি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। স্টুলিশ ও একই ধরনের অ্যাপ।
আপনি হয়তো বলতে পারেন সারাহাহ কিংবা স্টুলিশ এর মতো অ্যাপগুলো নিরাপদ। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি এসব অখ্যাত অ্যাপের সিকিউরিটিতে কতটুকু ভরসা করেন সেটা আপনার কাছে প্রশ্ন থেকেই যায়। এইচবিও এর মতো কোম্পানি যেখানে গেইম অব থ্রোন্স সিজন ৭ এর ৪ নম্বর এপিসোড এর বিখ্যাত সেই লিক থামাতে পারেনি, সেখানে আপনার তথ্যগুলো সারাহাহ কিংবা স্টুলিশ এর কাছে কতটুকু নিরাপদ?
অনলাইনে হয়রানি ও হতাশার কারণ
সবচেয়ে বড় কথা, স্টুলিস ও সারাহাহ এর মত অ্যাপগুলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা অনলাইনে হয়রানির আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সদ্য টিনএইজে পা দেয়া কিশোর-কিশোরীরা এইসব অ্যাপ ব্যবহার শুরু করার পর বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বাজে মেসেজ পেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। এমনকি আমেরিকার এক আইনজীবী এসব কারণে সারাহাহ অ্যাপ এর বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন তুলেছিলেন। তাছাড়া এইসব অ্যাপ এর মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অনেস্ট ফিডব্যাকের কথা বলা হলেও অনেস্ট ফিডব্যাক কাউকেই তেমন একটা দিতে দেখা যায় না। বরং কারো চেহারা, আচার-আচরণ নিয়ে খারাপভাবে মন্তব্য করা হচ্ছে যার ফলে ব্যবহারকারী ডিপ্রেশনে ভুগলে স্বাভাবিক কাজকর্মে মনোযোগ দিতে পারবেনা। তাছাড়া অনেস্ট ফিডব্যাক ও পজিটিভলি গ্রহণ করার ক্ষমতাও সবার এক থাকেনা।
সন্দেহজনক এক্সেস
সারাহাহ এর সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করতে পেরে অ্যাপল ও গুগল তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি অনেক আগেই মুছে ফেলেছে। যদিও স্টুলিস এখন পর্যন্ত আছে। স্টুলিস আপনার এন্ড্রয়েড ফোনে সন্দেহজনকভাবে অনেকগুলো এক্সেস পারমিশন নিয়ে নেয়, যা আসলে এরকম ‘পরিচয় গোপনকারী’ কোনো এপের জন্য দরকারি হওয়ার কথা না।
স্টুলিস সার্ভারে আপনার অবস্থান, ফোন স্ট্যাটাস, ডিভাইস পরিচিতি প্রভৃতি ব্যক্তিগত তথ্য জমা হতে পারে, কারণ এগুলোর এক্সেস পারমিশন স্টুলিস অ্যাপের রয়েছে। এছাড়া স্টুলিস আপনার ফোনের ফটো গ্যালারি, এমনকি ক্যামেরাও এক্সেস করতে পারে।
সুতরাং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিস্তারিত পরিচিতি ফাঁস হয়ে গেলে তখন আর কিছুই করার থাকবে না।
এটা কিন্তু নতুন কিছুও নয়
আপনি ইন্টারনেট জগতে নতুন হলে হয়তো আপনার কাছে স্টুলিস কিংবা সারাহাহ অ্যাপ এর ফিচারগুলো খুব মজাদার মনে হবে। কিন্তু স্টুলিশ ও সারাহাহ কিন্তু একদম ইউনিক কোন কনসেপ্ট নিয়ে আসেনি। আস্ক ডট এফএম, হুইস্পার কিংবা সিক্রেট এর মতো অ্যাপগুলো অনেক আগেই এই এনোনিমাস মেসেজিং এর প্রচলন শুরু করেছে।
অনেকেই এই ধরনের অ্যাপ এর বিপক্ষে
এই ধরনের অ্যাপগুলোর ভবিষ্যৎ কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ এর মতো সুপ্রসন্ন নয়। কারণ টিনএইজ এর অনেকে এইসব অ্যাপ দিয়ে মজা করলেও এগুলো কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সমাধান না। প্রকৃত বন্ধুদের কোনকিছু বলতে নাম পরিচয় গোপন করতে হয় না। আর অনেকেই এইসব অ্যাপে প্রাপ্ত মেসেজগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে শেয়ার দিচ্ছেন যা অন্যের জন্যও বিরক্তির কারণ হতে পারে।
তাই এসব ধূর্ত অ্যাপ ব্যবহার না করে কাউকে সরাসরি গঠনমূলক সমালোচনা করা এবং সেই সমালোচনাকে পজিটিভলি নেয়ার প্র্যাকটিস ধরে রাখাটাই সমাজে বেশি প্রয়োজন।
আপনি কি স্টুলিশ বা সারাহাহ অ্যাপ ব্যবহার করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।