বর্তমান যুগটা হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং এর যুগ। সবকিছুই এখন ক্লাউড নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এরই রেশ ধরে মানুষ বর্তমানে ফাইল সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রেও ক্লাউড স্টোরেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্ভরযোগ্যতা, কম খরচ ও যে কোন স্থান থেকে এক্সেস করা যায় বলে আমাদের দেশেও ক্লাউড স্টোরেজ সেবাগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এতে ফি দিয়ে যেমন এক্সট্রা সার্ভিস পাবেন তেমনি ফ্রি তে পারসোনাল ইউজের জন্য প্রায় সব কোম্পানিই নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লাউড স্টোরেজ দিচ্ছে। তবে এতো এতো ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসের ভিড়ে আপনি কোনটিই বা বাছাই করবেন? চলুন জেনে নেয়া যাক জনপ্রিয় কিছু ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস সম্পর্কে।
গুগল ড্রাইভ
আপনি যদি গুগলের বিভিন্ন সার্ভিস নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে এটাই হবে আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ। কারণ গুগলের অফিস সুইট তাদের অন্যান্য সার্ভিসের সাথে খুব ভালোভাবে এডাপ্ট করে। এছাড়া স্টক এন্ড্রয়েডে আপনি ডিফল্ট ক্লাউড স্টোরেজ ড্রাইভ হিসেবেই গুগল ড্রাইভ পাচ্ছেন।
সেবাটি উইন্ডোজ, আইওএস, ম্যাক ওএস ও ডেস্কটপ অ্যাপ এর মাধ্যমেও ব্যবহার করা যায়। এটার ওয়েব ভার্সনও যথেষ্ট ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিবে। আপনি এতে লগইন করলেই ফ্রি তে ১৫ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ পাবেন। চাইলে অর্থ খরচ করে বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে আপনি আপনার স্টোরেজ ইচ্ছামতো বাড়াতেও পারবেন।
ওয়ানড্রাইভ
মাইক্রোসফট এর ফ্যান হলে আপনার এটা ট্রাই করা আবশ্যক। মাইক্রোসফটের এই ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস উইন্ডোজ পিসি ও ফোনের ডিফল্ট ক্লাউড ড্রাইভ হিসেবে পাওয়া যায়। তাই আপনার ডেস্কটপ থেকে খুব সহজেই ফাইল সিঙ্ক করে রাখতে পারবেন অনলাইন স্টোরেজে। তাছাড়া মাইক্রোসফটের অফিস সুইট ব্যবহার করলে আপনি আপনার ডকুমেন্টগুলোর প্রোগ্রেসও সেইভ করে রেখে যেকোনো ডিভাইস থেকে এক্সেস করতে পারবেন।
👉 গুগল ড্রাইভ কি ও কিভাবে ব্যবহার করব?
এন্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ফোন সহ প্রায় সব প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করা যায় ওয়ানড্রাইভ। এর ওয়েব ভার্সনটাও যথেষ্ট ভাল কাজ করে। এটা আপনাকে শুরুতেই ফ্রি ৫ জিবি স্টোরেজ দিবে। বন্ধুদের রেফার করে আরও ১০জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ পেতে পারেন। চাইলে অর্থ খরচ করে স্টোরেজ বাড়াতেও পারবেন।
ড্রপবক্স
এটাও অনেক জনপ্রিয় ও খুবই নির্ভরযোগ্য ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। মোবাইল ও কম্পিউটার, সব ধরনের প্লাটফর্মের জন্যই এর অ্যাপ রয়েছে। ড্রপবক্স ক্লাউড স্টোরেজ ওয়েব ভার্সনেও ভালো কাজ করে। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর ক্লিন ইউজার ইন্টারফেস। তবে ড্রপবক্সে আপনি মাত্র ২জিবি স্টোরেজ ফ্রি পাবেন। এর ভালো দিক হলো আপনার পরিচিতজনদের রেফার করে প্রতিজনের জন্য ৫০০ মেগাবাইট করে সর্বোচ্চ ১৬ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ পাবেন। চাইলে এটাকে আপনি বিভিন্ন সাশ্রয়ী প্ল্যানে সাবস্ক্রাইব করে ইচ্ছামত বাড়াতে পারবেন।
মিডিয়াফায়ার
মিডিয়াফায়ার ফাইল শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়। এতে আপনি ৪ জিবির চেয়ে বড় ফাইলও স্টোর করতে পারবেন। এতে সাইনআপ করলেই আপনি ১০ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ ফ্রি পাবেন। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কোন অর্থ খরচ না করেই শুধুমাত্র রেফার করেও তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফলো করেই আপনি আর ৪০ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ এর মালিক হতে পারেন। চাইলে ইচ্চছামত টাকা দিয়ে বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
পিক্লাউড
এই নামটি হয়তো আপনার কাছে নতুন ঠেকছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্পমূল্যে লাইফটাইম ক্লাউড স্টোরেজ দিয়ে এটা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে পিক্লাউড আপনাকে ১০ জিবি স্টোরেজ ফ্রি দিবে। এটাকে চাইলে রেফারেল প্রোগ্রামের সাহায্যে আরও বাড়িয়ে নেয়া সম্ভব। তবে আপনি চাইলে ১৭৫ ডলারে ৫০০ জিবি ও ৩৫০ ডলারে ২ টেরাবাইট স্টোরেজ লাইফ টাইমের জন্য পাবেন।
👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ খালি করার উপায়
এটা অনেকের জন্যই ডিল মেকার। এছাড়া অন্যান্য প্ল্যানও আছে। তাছাড়া ফাইল সাইজের কোন লিমিট না থাকায় ও মাসে ৫০ জিবি ব্যান্ডউইডথ পাচ্ছেন বলে যারা শেয়ারিং বেশি করেন তাদের জন্য ভাল হবে। প্রায় সব ধরনের প্লাটফর্মের জন্যই পিক্লাউড অ্যাপ ও ওয়েব ভার্সন আছে।
অ্যামাজন ক্লাউড
আরেক টেক জায়ান্ট অ্যামাজন অন্যান্য ক্লাউড সার্ভিসে খুব পরিচিত নাম হলেও ক্লাউড স্টোরেজ এর ক্ষেত্রে খুব বেশি এগিয়ে নেই। কিন্তু তার পরেও তারা বেশ ভালো কিছু সুযোগ দিচ্ছে তাদের ড্রাইভ ব্যবহারকারীদের। আপনি এতে সাইন আপ এর সাথে সাথেই ফ্রি ৫ জিবি স্টোরেজ পাচ্ছেন। তাছাড়া বাৎসরিক বিভিন্ন প্ল্যান এর মাধ্যমে স্টোরেজ বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
ইয়ান্ডেক্স ডিস্ক
রাশিয়ান টেক জায়ান্ট ইয়ান্ডেক্স ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে বেশ ভালোই প্রতিযোগিতা করছে। তাদের সাইটে সাইনআপ করলেই ১০ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ ফ্রি পাবেন। এতেও না পোষালে টাকা দিয়ে বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকছে। এদের ড্রাইভে আপনি চাইলে ডাউনলোড না করেই যে কোন আফিস ডকুমেন্ট খুলতে ও এডিট করতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন প্লাগিন ব্যবহার করে ইন্টারনেট থেকে সরাসরি কোন ফাইল ইয়ান্ডেক্স ড্রাইভে সেইভ করতে পারবেন। এটার ও সব প্লাটফর্মের জন্যই অ্যাপ এর সুবিধা আছে।
তো, কোন ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসটি আপনার পছন্দ? এদের মধ্যে কোনটি সেরা বলে আপনি মনে করেন? আমার সবচেয়ে পছন্দের ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস হচ্ছে গুগল ড্রাইভ ও মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভ।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।