এসি কেনার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিন

অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে গ্রীষ্মকালে অস্বস্তি অনুভুতি হয়। ভাল বিষয় হলো, প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এসি বা এয়ার কন্ডিশনার এর মত ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট এই ভোগান্তি অনেকাংশে কমাতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এসি কেনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত এমন সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে।

AC / এসি কি?

এসি বা এয়ার কন্ডিশনার হলো একটি ইলেকট্রিক মেশিন যা পছন্দমত রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা প্রদান করে। বর্তমান রুম তাপমাত্রার চেয়ে কম বা বেশি তাপমাত্রা সিলেক্ট করার পর ঐ অনুসারে রুমের তাপমাত্রা পরিবর্তন করে এসি।

এসি কিভাবে কাজ করে?

এসি অনেকটা সবার ঘরে থাকা ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর এর মত কাজ করে, কিন্তু বড় পরিসরে। ফ্রিজে রাখা কোনো বস্তুর তাপমাত্রা ফ্রিজ শোষণ করে নেয়, আর অন্যদিকে পুরো রুমের উত্তাপ শোষণ করে এসি। এসির কম্প্রেসারে থাকা থাকা রাসায়নিক উপাদান চাপ দিয়ে তরল ও চাপ অপসারণ করে বাষ্পে পরিণত করা হয়। এসময় এসির যান্ত্রিক কৌশল রুমের তাপ শোষণ করে। এটা অনেকটা ফ্রিজের কম্প্রেসারের মতই কাজ করে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে ওয়াস্ট ওয়াটার তৈরি হয়। এসি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা বুঝার উপায় হলো এয়ার কন্ডিশন থেকে নির্গত এই পানি। 

এয়ার কন্ডিশনার এর প্রকারভেদ / Types of AC

কমপ্রেসার ও ব্লোয়ার কোথায় মাউন্টেড, তার উপর ভিত্তি করে এসিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরণের এসি সম্পর্কে।

উইন্ডো এসি

নাম শুনেই হয়তো বুঝে গিয়েছেন উইন্ডো এসি কেমন হতে পারে। এই ধরণের এসি ছোট রুম এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অধিক ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব এসি তে কমপ্রেসার, কনডেন্সার, কয়েল ও ইভাপোরটের, সব একটি ইউনিটে যুক্ত থাকে। তবে এটা একটু বড় রুমের ক্ষেত্রে ভাল হবেনা। উইন্ডো এসির ব্যবহার আমাদের দেশে বাসাবাড়িতে খুব একটা দেখা যায়না।

পোর্টেবল এসি

পোর্টেবল এসি নড়াচড়া করানো অপেক্ষাকৃত সহজ। তবে নাম শুনে ভাববেন না খুব সহজে এই এসি’র স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন। মূলত দৈনন্দিন কুলিং এর প্রয়োজন মেটাতে এই এসি এইরুম থেকে ঐ রুমে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে পোর্টেবল এসি ইন্সটল করতে উইন্ডো কিট এর প্রয়োজন হয়। রুমের বাইরের দিকে একটি পাইপের দ্বারা বাতাস আনা নেওয়া করতে হয়।

স্প্লিট এসি

ঘরে ব্যবহারের জন্য এই ধরণের এসি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ইনডোর ইউনিট ও আউটডোর ইউনিট – এই দুইটি কম্পোনেন্টে এই এসি কে ভাগ করা হয়। আউটডোর ইউনিটে কনডেনসার ইউনিট থাকে যাতে কমপ্রেসর ও হিট এক্সচেঞ্জিং কয়ে থাকে।

এসি কেনার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিন
ছবিঃ স্প্লিট এসি

আউটডোর ইউনিট ওপেন এয়ার এর নিচে রাখতে হয়। অন্যদিকে ইনডোর ইউনিটে একটি কয়েল রয়েছে আ মূলত রুম থেকে উত্তাপ গ্রহণ কিংবা প্রদান করে। স্প্লিট এসি বর্তমানে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য অত্যাধিক জনপ্রিয়।

ওয়াল এসি

এই ধরণের এসিও বাসাবাড়িতে বেশ কমন। ওয়াল এসিও অনেকটা উইন্ডো এসির মত, একটি সিঙ্গেল ইউনিটে সবকিছু থাকে। এগুলো সরাসরি ওয়ালের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয়। দামে কিছুটা বেশি হলেও উইন্ডো বা পোর্টেবল এসির চেয়ে এই ধরণের এসি অধিক এফিসিয়েন্ট।

ওয়াল এসি ইন্সটল করতে হলে ঘরে বেশ কিছুটা কাস্টমাইজেশন করতে হয়। সাধারণত নিজের বাসাবাড়িতে এগুলো মানুষজন ব্যবহার করে, কারণ এটার জন্য ওয়ালে অনেকখানি জায়গা কেটে তার মধ্যে এসি স্থাপন করতে হয়। ভাড়া বাসায় আগে থেকে এর জন্য ওয়াল কাটা না থাকলে আপনাকে হয়ত এটা স্থাপন করতে দেওয়া হবেনা।

ডাকটেড এসি

ডাকটেড এসি বা সেন্ট্রাল এসি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কার্যকরী। এই ধরণের এসিতে বিশাল কমপ্রেসার ব্যবহার করা হয় যা বিল্ডিং এর বাইরে থাকে। ইন্টারনাল ইভেপোরেট ইউনিট ডাকটস একসাথে মিলে পাইপ বা ভেন্টের মাধ্যমে একাধিক রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পুরো ঘর বা অফিস এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এই ধরণের এসি কাজে লাগে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ফিচারসমূহ

এয়ার কন্ডিশনার কেনার সময় এর ফিচারসমূহ দেখে কেনা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ফিচার এর ভিত্তিতে একটি এয়ার কন্ডিশনার পরীক্ষা করবেন।

ইনভার্টার নাকি নন-ইনভার্টার?

ইনভার্টার এসির দাম কিছুটা বেশি, তবে এগুলো বিদ্যুৎ তুলনামূলক কম খরচ করে। নন-ইনভার্টার এসির দাম একটু কম, আবার বিদ্যুৎ বেশি খরচ করে। ইনভার্টার এসি বর্তমানে বেশি জনপ্রিয় এবং উত্তম বলে বিবেচিত। ইনভার্টার এসিতে শব্দও কম। 👉 ইনভার্টার এসির সুবিধা কি? বিস্তারিত জানুন

মোড সেটিংস

এয়ার কন্ডিশনারে বিভিন্ন ধরণের মোড সেটিংস থাকে। ঠান্ডা করা, আদ্রতা কমানো, ফ্যান বা হিট বাড়ানো কমানো এসব মোড সেটিংস থাকে একটি এসিতে। স্বত্বি অনুভব করতে এসব এসি সেটিংস এর প্রয়োজন হয়।

এডজাস্টেবল থার্মোস্ট্যান্ট

রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা রয়েছে এয়ার কন্ডিশনারে। প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো তাপমাত্রা সেট করা যাবে এসি ব্যবহার করে। তাপমাত্রা সেট করার পর এসি নিজ থেকে রুমের তাপমাত্রা এডজাস্ট করে নিবে।

👉 আইফোনে এই লুকানো সুবিধাটি চালু করে ডাটা সাশ্রয় করুন!

টাইমার

এনার্জি কস্ট কমাতে অটোমেটিক এসি চালু ও বন্ধ করা যাবে টাইমার ব্যবহার করে। ধরুন আপনি ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় এসি বন্ধ হয়ে যাবে ও কাজ থেকে ঘরে ফিরলে এসি চালু হয়ে যাবে, এমন সেটিংস করতে পারবেন টাইমার এর মাধ্যমে।

স্লিপ

এয়ার কন্ডিশনার এর শব্দ বা অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে রাতে ঘুমাতে না পারা বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্লিপ মোড আছে এমন এয়ার কন্ডিশনার দেখে কিনুন।

এয়ার কন্ডিশনার এর ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • আপনার রুমের সাইজ হিসাব করে এসি বাছাই করুন। বড় এসি দ্বারা রুম দ্রুত ঠান্ডা হয়ে গেলেও এতে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।
  • ১০০ বর্গফুট রুমের জন্য ১ টনের এসি দরকার। একটি ১.৫ টন এসিতে আপনি ১৮০ স্কয়ার ফিট কাভার করতে পারবেন। যদি ২টন এসি হয় তাহলে ২৪০ বর্গফুট রুমের জন্য মানানসই হবে।
  • লোকাল শপগুলোতে গিয়ে দাম নিয়ে কিছুটা যাচাই-বাছাই করতে পারেন, এতে অনেক খরচ বাঁচে।
  • এসি কিনে নেওয়ার আগে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • আপনি যদি উইন্ডো এসি কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তবে উক্ত এসি ইন্সটলের জন্য আপনার রুমে জানালাতে জায়গা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • স্প্লিট এয়ার এসি কেনার ক্ষেত্রে রুমের মোট জানালার সংখ্যা বিবেচনা করুন। বেশি এয়ার ভেন্টিলেশন এর কারণে কুলিং এর মাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে।
  • অন্য যেকোনো ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্টের মত এসি কে ডাস্ট ও অতিরিক্ত হিট থেকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
  • লম্বা সময় ব্যবহারের জন্য এসি কিনতে চাইলে ইনভার্টার এসি কিনুন। এতে টাকা কিছুটা বেশি খরচ হলেও বিদ্যুৎ বিল কম আসবে এবং অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে।

এই তো গেলো এসি কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় জানা দরকার সে সম্পর্কে আলোচনা। এবার আপনার নিকটস্থ শো-রুম, শপিং সেন্টার কিংবা শপিং ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী এসি খুঁজে নিন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *