প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখার জন্য ফন্ট একটি অপরিহার্য অংশ। ডিজাইনার, ডেভেলপার থেকে শুরু করে একদম এন্ড-ইউজারদের সবাই-ই বিভিন্ন রকম ফন্টের সাহায্য নিয়ে নিজের মনের ভাবকে স্ক্রিনে ও প্রিন্ট মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন এবং পড়ছেন। বিভিন্ন প্রকার ডিজাইন করার সময় ডিজাইনারদের সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্ট দরকার হয়। যারা বাংলা বর্ণমালা নিয়ে কাজ করেন তাদের অনেকেই একটা সমস্যায় ভোগেন, তা হল ফন্টের অপ্রতুলতা। এই অভাব মেটানোর জন্য এসেছে ফন্টবাজ (https://fontbaaz.com/)। এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে বাংলা ফন্ট নির্মাতারা তাদের ফন্ট আপলোড করে ডাউনলোডের জন্য উন্মুক্ত রাখতে পারেন, এবং যে কেউ সেখান থেকে ফন্ট নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
বোনাসঃ ফ্রি বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার কিছু ওয়েবসাইট (এখানে ক্লিক করুন)
ফন্টবাজের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে কথা বলেছিলাম এর প্রতিষ্ঠাতা দলের অন্যতম প্রধান সদস্য রিসাত রাজিনের সঙ্গে, যিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওয়েব অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জুমশেপার এ ডিজাইন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। চলুন কথা বলি রিসাত রাজিনের সাথে।
ফন্টবাজ কী?
“গল্পের শুরুটা চায়ের দোকানে। আমি আর ওয়াসিফ, দুই জন চায়ের কাপের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে দেখলাম রাস্তার পাশে এতিম দেয়াল গুলোতে চিকা মারা। কত সুন্দর করে অক্ষরগুলোর উপস্থাপন। তখনি আমাদের মাথায় আসলো ফন্টবাজ, অবশ্য খুবই কমন আইডিয়া। যাত্রা শুরুর দিন-তারিখ এক্সাক্টলি মনে নেই, তবে বেশি দিন নয়, ১.৫ বছর হবে হয়তো। কাজ হাতে কলমে শুরু করেছি ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। আর অফিশিয়াল রিলিজ ২৬ মার্চ, ২০১৮। ফন্টবাজ এমন একটা ওয়েবসাইট যেখানে নিজের বানানো ফন্ট শেয়ার করা যায় এবং সেই ফন্টগুলো বিনামূল্যে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। তবে ওয়েবসাইট করার আগে অন্য প্ল্যান ছিল যেটা অন্য একদিন বলব।”
ফন্টবাজ ওয়েবসাইট
এত নাম থাকতে কেন ফন্টবাজ?
“আসলে আমরা সোজা-সাপ্টা চিন্তা করি। অনেকটা বাচ্চাদের মত। সিনেমায় দেখেছি, যারা মাস্তানি করে তাদেরকে বলা হয় রংবাজ, যারা কারো নামে খারাপ কথা রটায় তাদের বলা হয় গুটিবাজ কিংবা ক্লিকবাজ, যারা চাঁদা তোলো তাদের বলে চাঁদাবাজ- সেই থেকে, যারা ফন্ট বানায় তারা হবে ফন্টবাজ। আর কোনো ইতিহাস নেই এই নামের পিছনে।”
ফন্টবাজ দিয়ে কী করে?
“লাখ টাকার প্রশ্ন :P । ফন্টবাজ দিয়ে খুব সহজে নিজের বানানো ফন্ট শেয়ার করা যায় এবং ফন্ট ডাউনলোড করে তা ব্যবহার করা যায়। ব্যাস আপাতত এটাই কাজ। আর একটা বিষয়, যারা ফন্ট বানায় তাদের নিজেস্ব পোর্টফলিও সাইট হিসেবে ব্যবহার করা যায় ফন্টবাজকে।”
ফন্টবাজ সিঙ্গেল ফন্ট ভিউ
ফন্টবাজ কাদের জন্য?
“আমি মনে করি এটা সবার জন্য। কারণ, সবাই তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়। যদি এটাকে দুটো মেজর পয়েন্টে ভাগ করি তাহলে বলব, মুখে বলে আর হাতে লিখে। লিখতে যদি কম্পিউটার ব্যবহার হয় তাহলে ফন্ট এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এখন যারাই বাংলা টাইপ করতে পারবে তাদেরই ফন্টের দরকার হবে। তবে আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি যে, এ্যাড এজেন্সি, নিউজ মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ডিজাইনার এদেরই ফন্ট বেশি দরকার হয়। ;)”
বোনাসঃ ফ্রি বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার কিছু ওয়েবসাইট (এখানে ক্লিক করুন)
ফন্টবাজ এর ফিচার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই
“ফন্টবাজের সুবিধা অনেক :P, তবে এটা দেখতে সিম্পল। সাইটের পিছনে এজন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিছু জিনিস না বললেই নয়, যেমন
- একসাথে ফন্ট কালেকশন তৈরি করে সহজে ডাউনলোড করা যায়।
- একটা ফন্টকে ৪টি ভিউতে দেখা যায়। যেমন, থাম্ব, টেক্সট, অক্ষর এবং কাস্টম। কাস্টম ভিউতে আপনি নিজের মনের মত লিখে দেখতে পারবেন ফন্টটি কেমন।
ফন্টবাজ ফন্ট ক্যারেক্টার ভিউ
- ফন্টের সাইজ ছোট/বড় করে এবং ফন্ট কালার চেঞ্জ করেও দেখতে পারবেন।
- আমরা কপিরাইট ইস্যুতে খুব সিরিয়াস। সেজন্য ফন্ট রিভিউ করি এবং ফন্টে রিপোর্ট করার অপশন রয়েছে।
- ফন্ট আপলোডের সময় ফন্টকে আমরা মোস্তাকিমের বট দ্বারা টেস্ট করি, যাতে কোন প্রকার ভাইরাস কিংবা অহেতুক কিছু না আপলোড হয়।
- একটা ফন্টের অনেক ইনফরমেশন থাকে, যা একজন ফন্ট আপলোডারকে বিরক্ত করতে পারে। সেজন্য আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা ফন্টের সব ইনফরমেশন অটোমেটিক নিয়ে আসি, যাতে তাদের ইনফরমেশন ফিল্ডগুলো পুরণ করতে না হয়। তবে সব ফিল্ড এডিট্যাবল, যিনি ফন্ট আপলোড করবেন তিনি ইচ্ছে করলে এডিট করতে পারবেন।
ফন্টবাজ ফন্ট আপলোড স্ক্রিন
- আমাদের রয়েছে নিজস্ব থাম্ব জেনারেটর। যিনি ফন্ট আপ করবেন তিনি ইচ্ছে করলে নিজের বানানো থাম্ব আপ করতে পারবেন এবং যদি সেই সুযোগ না থাকে তাহলে থাম্ব জেনারেটর দিয়ে থাম্ব বানাতে পারবেন। আমাদের ৩০টির মত ডিফল্ট ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে।
- আমরা ফন্টের সাথে সাথে ফন্টবাজদের খুব গুরুত্ব দেই। আমাদের বিশ্বাস একটি ফন্ট মানে একটি ইতিহাস। তাই যারা বানাচ্ছেন তাদেরকে ফোকাস না করলে হয়তো চাকরি থাকবে না। ;) এজন্য রয়েছে পপুলার ফন্টবাজ। যাদের ফন্ট সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হবে তারাই হবেন পপুলার ফন্টবাজ।
- এখানে যারা ফন্ট আপলোড করবেন তারা এটা পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আর থাকবে নিজস্ব ইউআরএল যেমন fontbaaz.com/username এরকম।
ফন্টবাজ প্রোফাইল
এইতো! এগুলো করতেই আমাদের বয়স অনেক কমে গেছে। চোখ মাঝে মাঝে টিভি স্ক্রিনের মত ঝির ঝির করে।”
ফন্টবাজের ইউনিক সুবিধা কী যা কোনো কম্পিটিটরের নেই?
“আমাদের কোনো কম্পিটিটর নেই। সবাই আমরা ভাই বেরাদার। আমরা চাই আরো সবাই আসুক, যুদ্ধটা একে অন্যের সাথে না, যুদ্ধটা বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির জন্য। বাংলা ফন্টে এখন রাজত্ব করছে ওপার বাংলার বানানো ফন্টগুলো। এটা খারাপ না, কিন্তু আমরা তাহলে কী করেছি? বিজয়, অভ্র, রিদ্মিক আমাদের শিখিয়েছে বাংলা কীভাবে লিখতে হয়। কিন্তু ডিজাইনিং ফন্ট অথবা টাইটেল ফন্টগুলোর বড্ড অভাব। এই অভাবটা আমাদেরই দূর করতে হবে। আর এটা আমরা করবোই।”
ফন্টবাজের সুবিধা নিতে হলে কী করতে হবে?
“সারা জীবন মানুষদের আমরা প্যারা দিয়েছি, তাই ভাবলাম এখানে নাইবা দেই। ফন্টবাজ থেকে ফন্ট ডাউনলোড করতে কোনো একাউন্ট খোলার দরকার নেই। কিন্তু আপলোড করতে গেলে অবশ্যই একাউন্ট করতে হবে। কারণ এটা যিনি আপলোড করবেন আইডিটা তার পোর্টফলিও হিসেবে ধরা হবে।”
ফন্টবাজ এর বিজনেস মডেল কী? নাকি এটি ননপ্রফিট?
“যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনই সবাই গঠনমূলক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে এটি ননপ্রফিট অর্গানাইজেশন হবে। তবে আমরা কিছু এ্যাড প্লেস খালি রেখেছি কারণ একটা সাইট চালাতে কিছু খরচ রয়েছে। সেই খরচটা উঠানোর জন্য বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা। তবে সোজা-সাপ্টা কথা, এভাবে এটা কত দিন চলবে সেটা জানি না। যদি না হয় তাহলে হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।”
বোনাসঃ ফ্রি বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার কিছু ওয়েবসাইট (এখানে ক্লিক করুন)
ফন্টবাজের পেছনে কাদের অবদান রয়েছে?
“যদি বলতে হয় তাহলে কয়েকজন মানুষকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই। জনপ্রিয় ফন্ট, ‘রাজন শৈলী’র জনক মহিবুবুর রহমান রাজন ভাই, তার হাতেই ফন্টবাজের লোগো করা, আর তার সাপোর্ট ছাড়া হয়ত সাহস করা যেত না। বেঙ্গলফন্টস এর হিল্লোল আর হিমেল ভাই, সিয়াম রুপালী ফন্ট এর জনক তানবিন ইসলাম সিয়াম ভাই, হোস্টিং পানির দামে দেবার জন্য এ এম ইস্তিয়াক সারোয়ার ভাই। আর সব চাইতে বেশি যে মানুষগুলোকে ধন্যবাদ দেব সেটা হলো ফন্টবাজের স্কোয়াড।
ফন্টবাজ টিম
যে ছেলেটার জন্য এটা সম্পূর্ণরূপে সম্ভব হয়েছে সে হল ওয়াসিফ ওরফে রাবাব, ফন্টবাজ প্ল্যাটফর্মের একমাত্র ডেভেলপার। আরও দুইজন শুভ্র এবং মিসবাহ যথাক্রমে প্রোমোশন এবং সাপোর্ট। আর আমার একমাত্র স্ত্রী (আজকে নাকি ভালো রান্না করেছে, তাই তাকে ধন্যবাদ না দিলে হয়তো খেতে দিবে না, ব্যপারটা বুঝেন নাই?)”
বোনাসঃ ফ্রি বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করার কিছু ওয়েবসাইট (এখানে ক্লিক করুন)
ফন্টবাজ ভিজিট করুন এখানেঃ https://fontbaaz.com/
ফেসবুকে ফন্টবাজ পেইজ লাইক করুনঃ https://www.facebook.com/fontbaaz
তো, এই ছিল ফন্টবাজের গল্প। আশা করি অন্য কোনো গল্প এবং তার পেছনের মানুষদের নিয়ে হাজির হব আরেকদিন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।