উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেটে যেসব নতুন ফিচার আসছে

সাম্প্রতিককালে অ্যাপল তাদের মোবাইল ডিভাইসের প্রতি যতটা আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে তার সিকিভাগও তাদের কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ম্যাকওএস এর প্রতি দেখায়নি। মাইক্রোসফট তাই এই সুযোগে ক্রিয়েটিভ ধরনের পণ্যের নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। মাইক্রোসফট সার্ফেস স্টুডিও, যা ক্রিয়েটিভ থেকে প্রফেশনাল সকলের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত এবং অ্যাপলের যেকোনো পণ্যের থেকে বেশি প্রোডাক্টিভ হিসেবে বিবেচিত।

কিন্তু শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার যথেষ্ট নয়। এজন্যই উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেট ডেভলপ করেছে মাইক্রোসফট, যা ব্যবহাকারীদের হাতে আসতে শুরু করবে ১১ই এপ্রিল। মাইক্রোসফট এই আপডেটে উইন্ডোজ ১০এ বেশ নতুন কিছু সুবিধা যোগ করছে। আর এটা আসছে উইন্ডোজ ১০ এনিভার্সারি আপডেটের মত বিশাল আপডেটের মাত্র আট মাস পরেই!

চলুন জেনে নিই উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেটে নতুন কী থাকছে।

মাইক্রোসফট এজ লেজিট ট্যাব ম্যানেজমেন্ট অপশন

ভালো ব্যাটারি ব্যাকাপ পাওয়ার জন্য মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার অসাধারণ। যদিও অনেকেই ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে গুগল ক্রোম বা ফায়ারফক্স ব্যবহার করেন। ক্রিয়েটরস আপডেট বেশ কিছু ফিচার যোগ করছে এজ ব্রাউজারে। এতে আপনি সবগুলো ওপেন ট্যাবের ভিজ্যুয়াল প্রিভিউ দেখতে পারেন। এজন্য নতুন ট্যাব খোলার জন্য প্লাস (নিউ ট্যাব) বাটনের পরে প্রদর্শিত নিম্নমুখী তীরচিহ্নে ক্লিক করতে হবে।

আরেকটি ফিচার ‘সেট ট্যাবস অ্যাসাইড’ এর মাধ্যমে আপনি ওপেন ট্যাবগুলো লুকিয়ে রেখে পরে সুবিধাজনক সময়ে পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন। এটা কিছুটা ক্ষণস্থায়ী বুকমার্ক করে রাখার মত। এই ধরনের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য কিছু ব্রাউজারে এক্সটেনশনের সাহায্যে পাওয়া যায়।

মাইক্রোসফট এজে ই-রিডার

মাইক্রোসফট তাদের এজ ব্রাউজারকে সাধারণ ব্রাউজারের মত দেখছেনা, বরং ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ার সমস্ত প্রকারের সুবিধা দিতে চাচ্ছে। এটা এখন ওয়েবসাইট ছাড়াও পিডিএফ ফাইলও লোড করতে পারে। এতে আপনি ই-রিডার অভিজ্ঞতা পাবেন। আপনি বইয়ের ফন্ট সাইজ বা লেখার আকার ব্যক্তিগতকরণ করতে পারবেন, বুকমার্ক সেট ও  অনুসন্ধান করতে পারবেন। অর্থাৎ একটি ই-রিডারের অধিকাংশ মৌলিক কাজ করতে সক্ষম হবে মাইক্রোসফট এজ।

থ্রিডি পেইন্ট

আঁকাআঁকির জন্য উইন্ডোজের ডিফল্ট অ্যাপ মাইক্রোসফট পেইন্ট উইন্ডোজ ৭ এর পর এবারই বড় কোন আপডেট পেলো। পেইন্টের সবথেকে বৃহৎ আপডেট এখন পর্যন্ত এটাই। আপনি এখন পেইন্টের সাহায্যে  থ্রিডি চিত্র আঁকতে পারেন, বা চাইলে রিমিক্স থ্রিডি অনলাইন কমিউনিটি থেকে থ্রিডি মডেল ইমপোর্ট করতে পারেন।

এতে আপনি থ্রিডি প্রিন্টও করতে পারেন। এজন্য আপনার প্রয়োজনীয় যন্ত্র (3D প্রিন্টার) থাকতে হবে।

পিকচার ইন পিকচার মুড

ভিডিও দেখতে দেখতে কাজ করার সময় সবাই ভিডিও উইন্ডোটা রিসাইজ করে স্ক্রিনের এক কোণে রেখে দেন। এজন্য অনেক হিসাবনিকাশ দরকার হয়। এখন উইন্ডোজ আপনাকে এটি আরো সহজ করে দিচ্ছে পিকচার ইন পিকচার ফিচারের মাধ্যমে, যেটাকে মিনি ভিউ বলা যেতে পারে।

এর মাধ্যমে উইন্ডোজ আপনার পছন্দের অ্যাপ্লিকেশনের একটি ‘অলওয়েজ অন টপ’ উইন্ডো তৈরি করে দেবে, যাতে একাধিক অ্যাপ সুইচ করলেও আপনার ভিডিও/পছন্দের অ্যাপ চোখের সামনেই থাকবে। যদিও এই ফিচারটি এখন পর্যন্ত ডিফল্ট মুভিস অ্যান্ড টিভি অ্যাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমি নিশ্চিত, ডেভলপরারা অতি দ্রুতই বৈশিষ্ট্যটি তাদের অ্যাপে ব্যবহার করবে।

হালকা আলো এবং ব্লু লাইট ফিল্টার

আপনি হয়ত জানেন, আলোর নীল তরঙ্গ আপনার ঘুম কমিয়ে দেয়। যে কারণে আইওএস, ম্যাকওএস এবং এন্ড্রয়েডে ব্লু লাইট ফিল্টার আছে। এখন উইন্ডোজেও এমন একটি অপশন আছে যার নাম নাইট লাইট। অপশনটি ব্যবহার করতে সেটিংস > সিস্টেম > ডিসপ্লেতে গিয়ে নাইট কালার সেটিংসের সাথে কালার টেম্পারেচার এবং এক্টিভ আওয়ার ব্যক্তিগতকরণ করতে পারেন।

ডাইনামিক লক

আপনার অনুপস্থিতিতে কম্পিউটারের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আপনি যদি Win + L চেপে কম্পিউটার লক করে কম্পিউটার ডেস্ক ত্যাগ করে থাকেন, তাহলে উইন্ডোজের নতুন ডাইনামিক লক ফিচারটি আপনার বেশ কাজে দেবে।

প্রথমে আপনার ফোন কিংবা ট্যাবের সাথে পিসির ব্লুটুথ কানেক্ট করতে হবে। এরপর যখনই আপনি মোবাইল/ট্যাব নিয়ে ব্লুটুথ রেঞ্জের বাইরে চলে যাবেন তখন নিজ থেকেই পিসি লক হয়ে যাবে।

সকলের জন্য সারাউন্ড সাউন্ড

উইন্ডোজ ১০ এর অন্যতম সেরা ফিচার এটি। তার মানে এই অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে যেকোনো হেডফোনকে ভার্চুয়াল ৭. ১ সারাউন্ড সিস্টেমে পরিণত করা যাবে। অথবা ডলবি অ্যাটমস এর মত উন্নত সাউন্ড কৌশলও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

ম্যাপ, ফটো এবং ভিডিওতে চিহ্ন দেয়া

মাইক্রোসফট ক্রিয়েটরস আপডেটে তাদের নিজস্ব ম্যাপ অ্যাপে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। আপনি এখন শুধুমাত্র রুট অঙ্কন করেই ভ্রমণ দূরত্ব নির্নয় করতে পারেন। এমনকি টার্ন বাই টার্ন দিকনির্দেশকও তৈরি করতে পারবেন। একইভাবে আপনি ছবি, ভিডিওতেও অঙ্কন করতে পারবেন এবং এ্যানিমেশন এক্সপোর্ট ও শেয়ার করতে পারবেন।

গেইম মুড

পিসি গেইমের সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা প্রদানের লক্ষ্যে উইন্ডোজ ১০ এর গেইম মুড আপনাকে সাহায্য করবে। তার মানে এই না যে, এটি আপনার পিসির বিল্ট-ইন জিপিইউকে এনভিডিয়া ১০৮০’তে পরিনত করবে; বরং ফ্রেম রেট্স এ অনেক উন্নতি দেখতে পাবেন। এটি পিসির ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও প্রসেস কিছুটা সীমিত করে গেমসের জন্য র‍্যাম ও সিপিইউ ফ্রি করে দেবে।

আপনি এই অপশনটি সেটিংস মেনু থেকে অন/অফ করতে পারেন। মাইক্রোসফট কিছু গেইমের একটি তালিকা করছে যেগুলো খেলার সময় এই অপশনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। আপনি চাইলে গেইম চলাকালীন Win + G  প্রেস করে এই অপশনটি বন্ধ করতে পারেন। একই শর্টকাট ব্যবহার করে এবং ব্রডকাস্ট বাটনে ক্লিক করে আপনি গেম ভিডিও বিম’এ লাইভস্ট্রিম করতে পারেন।

উইন্ডোজ মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট সমর্থন

ক্রিয়েটরস আপডেটে উইন্ডোজ মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট সাপোর্ট আসবে। যদিও উইন্ডোজ হলো লেন্সের মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট বেশ ব্যয়বহুল, তবে মাইক্রোসফট একটি সস্তা বিকল্প সরবরাহ করবে যার দাম ৩০০ ডলার থেকে শুরু হবে।

এত এত সুবিধা দেখে উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেট পেতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই? শীঘ্রই উইন্ডোজ ১০ ক্রিয়েটরস আপডেটযুক্ত আইএসও ডাউনলোডের লিংক চলে আসবে বলে আশা করছি। সেই লিংক পেতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়া উইন্ডোজ ১০ এর এই বিশাল আপডেটে নতুন কী কী ফিচার আসছে, তা জানতেও আমাদের সাইটে চোখ রাখুন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,548 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *