গুগল গ্লাসঃ স্মার্ট টেকনোলজির কিছু আলোকিত ও অন্ধকার দিক . . .

Google Glass Sample Imageওয়েব জায়ান্ট গুগলের ডিজিটাল চশমা “গুগল গ্লাস” সম্পর্কে আগেও হয়ত শুনে থাকবেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই ডিভাইসটিতে মূলত একটি মাত্র গ্লাস থাকবে যা যেকোন এক চোখের উপর দিকের কোণে অবস্থান করবে। এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চালিত গুগল গ্লাসের স্বচ্ছ হেড মাউন্টেড ডিসপ্লের দিকে তাকালে চোখের সামনেই ভেসে উঠবে এর সবকিছু। আপনার স্মার্টফোনের “হ্যান্ডস ফ্রি” বিকল্প হতে পারে গুগলের নতুন এই উদ্ভাবন।

গুগল গ্লাস ব্যবহার করার জন্য কোন হার্ডওয়্যার স্পর্শ করে নির্দেশনা দিতে হবে না। ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমেই সবকিছু সেরে নিতে পারবেন। ধরুন, আপনি পবিপ্রবি যাওয়ার রাস্তা দেখতে চাচ্ছেন। শুধু বলুন, “ওকে গ্লাস, গিভ ডিরেকশন টু পবিপ্রবি”। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, গুগল ম্যাপে উপলভ্য ডেটা অনুযায়ী আপনার দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবেন।

ডিভাইসটিতে বেশ কিছু ফিচার নিজে থেকেই চালু হয়ে যাবে। গুগল গ্লাস চোখে দিয়ে আকাশের দিকে তাকালে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য স্ক্রিনে হাজির হবে। ঘরির দিকে তাকালে নোট, শিডিউল ইত্যাদি দেখা যাবে। আর রাস্তায় গাড়িঘোড়ার দিকে চোখ রাখলে ট্র্যাফিক আপডেট ও অন্যান্য দরকারী অপশন পাবেন। এছাড়া ওয়েব ব্রাউজিং, ইমেইল চেকিং প্রভৃতি সেবা তো থাকছেই। এর অডিও প্রযুক্তি প্রচলিত হেডফোন ছাড়াই বিশেষ পদ্ধতিতে কানে শব্দ পৌঁছাতে সক্ষম।

গুগল গ্লাসে আপনি খুব সহজেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্যের এইচডি কোয়ালিটি ভিডিও রেকর্ড ও ছবি তুলে রাখতে পারবেন। শুধু বলুন, “ওকে গ্লাস, রেকর্ড এ ভিডিও”; ছবি তুলতে ইচ্ছে হলে কমান্ড করুন “ওকে গ্লাস, টেইক এ পিকচার”; ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেয়ারও করা যাবে এতে।

একই কমান্ড ব্যবহার করে যেকোন প্রশ্ন করলে গুগলের “ডিজিটাল বুদ্ধিমান ব্যক্তিগত সহযোগী” “গুগল নাও (Google Now)” সেগুলোর যথাসম্ভব উত্তর দিয়ে দেবে।

গুগল গ্লাসে ভিডিও কল করলে অপর প্রান্তের লোকটির ছবি দেখা গেলেও তিনি আপনাকে দেখতে পারবেন না। তবে আপনার চোখের সামনের দৃশ্য তার কাছে চলে যাবে। (অবশ্য নিজেকে দেখাতে চাইলে একটু বুদ্ধি করে আয়নার সামনে দাঁড়ালে সেটাও সম্ভব!)

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই চশমা প্রাত্যাহিক জীবনযাপন সত্যিই আরেকটু সহজ করে দিবে। কিন্তু যন্ত্রটির ক্ষমতা অনেক সময় বিব্রতকর এমনকি ভয়ঙ্করও হতে পারে। যেমন ধরুন, গুগল গ্লাস পরিহিত এক ভদ্রলোক খুব নিবিষ্ট মনে কোন পাবলিক প্লেসে (হতে পারে কোন রেস্টুরেন্টে) বসে আছেন। তিনি যে আপনার ছবি তুলে/ভিডিও রেকর্ড করে নিচ্ছেন না তার নিশ্চয়তা কী? এর মধ্যে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসতে পারে বা অন্য যেকোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন। কোন প্রকার অনুমতি ব্যতিরেকেই আপনি অচেনা কোন লোকের অযাচিত ক্যামেরায় অগোচরে বন্দি হয়ে গেলেন! এমনটি ঘটা কিন্তু মোটেও অসম্ভব নয়।

এছাড়া, গ্লাস ব্যবহারকারীর চলাফেরা, পছন্দ-অপছন্দসমূহ যে গুগল ট্র্যাক করবে না তারই বা নিশ্চয়তা কী? এসব বিষয় বিবেচনা করলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি মারাত্নক এক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে গুগল গ্লাস।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ১৫০০ ডলার মূল্যের এই ডিভাইস বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেভলপারদের জন্য অবশ্য আগেই চেখে দেখার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তি ছড়িয়ে পরবেই। আর গুগল গ্লাস যদি সফলভাবে বাজার ধরতে পারে, তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে “শুভ বিদায়” বলার দিন আসতেও হয়ত খুব বেশি বাকী থাকবে না।

দেখা যাক, সময় কী বলে।

গুগলের ব্যয়বহুল এই পণ্য নিয়ে আপনার কী ভাবনা? আপনার গোপনীয়তা নিয়ে আপনি কতটা উদ্বিগ্ন?

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,546 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

https://www.google.com/recaptcha/api.js?ver=1.23