গুগল ক্রোমে সেফ ব্রাউজিং ব্যবহার করে অনলাইনে নিরাপদ থাকার উপায়

বর্তমানে অধিকাংশ কাজ যেখানে অনলাইনে হয়ে থাকে, সেখানে ডিজিটাল উপস্থিতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফিশিং অ্যাটাক ও ম্যালওয়্যার এর রুপে অসংখ্য থ্রেটে পরিপূর্ণ অনলাইন ওয়ার্ল্ড। পাসকি, অথেনটিকেটর অ্যাপ, ২ ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ও অন্যান্য সিকিউরিটি টুল ব্যবহার করে একাউন্ট সিকিউর করা ও ক্ষতিকর অ্যাটাক থেকে নিজেদের বাঁচানো যেতে পারে।

অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে গুগল ক্রোম হলো ডিফল্ট ব্রাউজার চয়েজ। গুগল প্রতিনিয়িত সিকিউরিটি আপডেট ও ফিচার আনার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অনলাইন থ্রেট থেকে প্রটেক্ট করে থাকে। ক্রোমের সেফ ব্রাউজিং ফিচারের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার, সন্দেহজনক এক্সটেনশন, ফিশিং, বিরক্তিকর এড, এবং অন্যান্য বিষয় থেকে ডিভাইসকে রক্ষা করা যেতে পারে। এন্ড্রয়েড, আইফোন, এবং কম্পিউটারে এই ফিচারটি ব্যবহার করা যায়। এই পোস্টে সেফ ব্রাউজিং ফিচারটি ব্যবহার করা শিখবেন।

গুগল এর সেফ ব্রাউজিং কিভাবে কাজ করে

অনলাইন থ্রেট থেকে ব্যবহারকারীদের রক্ষা করতে ২০০৭ সালে সেফ ব্রাউজিং ফিচার নিয়ে আসে গুগল।

কোনো কোনো সময় ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে গিয়ে হয়তো নিচের ওয়ার্নিং মেসেজগুলো দেখে থাকবেন:

  • Deceptive site ahead.
  • The site ahead contains malware.
  • Suspicious site.
  • The site ahead contains harmful programs.

এইসব মেসেজ দেখতে পেলে বুঝেন নিবেন সেফ ব্রাউজিং কাজ করছে। কোনো সাইটে যদি ক্ষতিকর বা প্রতারণামূলক কনটেন্ট থাকে, ম্যালওয়্যার, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এটাক, বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে গুগল এইসব ওয়ার্নিং দেখায়। এই মোড ব্যবহার করলে গুগল ওয়েব ঘুরে ঘুরে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বের করে। ডাটা এনালাইজ করার মাধ্যমে সন্দেহজনক ইউআরএলগুলোকে লিস্টে রাখে এই ফিচার। যতবার কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন প্রত্যেকবারই নিজের লিস্ট খুঁজে গুগলের এই ফিচার দেখে আপনি কোনো ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন কিনা।

গুগল সেফ ব্রাউজিং মোড এর প্রকারভেদ

সেফ ব্রাউজিং কতটুকু নিরাপত্তা প্রদান করবে তা নির্ভর করছে ক্রোম সেটিংস থেকে সিলেক্ট করা সেটিংস এর উপর। গুগল দুইটি সেফ ব্রাউজিং মোড অফার করছে: স্ট্যান্ডার্ড এবং এনহেন্সড প্রটেকশন। চলুন উভয় মোড সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

স্ট্যান্ডার্ড প্রটেকশন

সাধারণত বাই ডিফল্ট স্ট্যান্ডার্ড প্রটেকশন মোড চালু থাকে। এই মোডে আগে থেকে জানা ক্ষতিকর ওয়েবসাইট, এক্সটেনশন, ও ডাউনলোড সম্পর্কে ওয়ার্নিং প্রদান করে থাকে ক্রোম। সেফ ব্রাউজিং লিস্ট থেকে কোনো সাইটের ইউআরএল চেক করা হয় এই মোডে। এটি যদি কোনো ধরনের সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পায় তবে গুগলকে কিছু কনটেন্ট ও লিংক পাঠিয়ে দেয়। আপনার পাসওয়ার্ড যদি কম্প্রোমাইজড হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রেও ওয়ার্নিং পাবেন।

এনহেন্সড প্রটেকশন

এনহেন্সড সেফ ব্রাউজিং হলো সেফ ব্রাউজিং এর একটি আপগ্রেডেড ভার্সন। স্ট্যান্ডার্ড প্রটেকশন ফিচার এর পাশাপাশি পরিচিত ও সম্ভাব্য বিপদ থেকে এনহেন্সড প্রটেকশন অফার করে এই মোড। গুগল ক্রোম রিয়েল টাইমে ইউআরএল চেক করে ও অপেক্ষাকৃত উন্নত সিকিউরিটি প্রদান করে। এছাড়া ডাউনলোড করা ফাইল আরো ভালোভাবে স্ক্যান করার অপশনও রয়েছে।

google chrome

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

কোন মোডটি ব্যবহার করা উচিত?

Standard Protection এর চেয়ে Enhanced Protection অধিক নিরাপত্তা প্রদান করে। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং সংক্রান্ত অভ্যাসগুলো সার্ভারে নিরাপত্তার জন্য বিশ্লেষণ করা হয় বলে অনেকে এই মোড চালু করতে সংকোচ বোধ করেন।

গুগল ক্রোমে সেফটি চেক রান করার নিয়ম

ক্রোম এর সেফটি চেক ফিচার ব্যবহার করে অনলাইন সিকিউরিটি রিভিউ করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি আপডেট চেক করার মাধ্যমে এটি ব্রাউজিং এক্টিভিটিকে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাজ কিভাবে সেফটি চেক রান করতে হয়:

  • Chrome ওপেন করুন
  • উপরের ডানদিকের কর্নারে থাকা থ্রি-ডট আইকনে ক্লিক করুন
  • প্রথমে Settings ও এরপর Privacy and Security অপশনে ক্লিক করুন
  • Safety check সেকশনে থাকা Check now অপশনে ক্লিক করুন

এরপর ক্রোম up-to-date আছে কিনা সেটা ভেরিফাই করা হবে, পাসওয়ার্ড কম্প্রোমাইজ হয়েছে কিনা সেটা দেখা হবে, সেফ ব্রাউজিং চালু আছে কিনা তা চেক করা হবে, ইন্সটল থাকা এক্সটেনশনগুলো নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করা হবে।

👉 গুগল একাউন্টের স্টোরেজ ফাঁকা করার উপায় (ফটোস, ড্রাইভ, জিমেইল)

গুগল ক্রোমে সেফ ব্রাউজিং ব্যবহারের নিয়ম

ক্রোম এর ডেস্কটপ বা মোবাইল, উভয় ভার্সন থেকেই সেফ ব্রাউজিং চালু করা যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক উভয় প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ফিচারটি অ্যাকসেস করার নিয়ম।

ডেস্কটপে গুগল সেইফ ব্রাউজিং একটিভ করার নিয়ম

ডেস্কটপ থেকে ক্রোম ব্যবহার করে সেফ ব্রাউজিং চালু করার নিয়ম:

  • Chrome ওপেন করুন
  • ডানদিকের উপরের কর্নারে থাকা থ্রি-ডট আইকনে ক্লিক করুন
  • নিচের দিকে স্ক্রল করে Settings সিলেক্ট করুন
  • এবার Privacy & security তে ক্লিক করুন
  • Standard protection বা Enhanced protection সিলেক্ট করুন

Safe Browsing অপশন বন্ধ করতে No protection সিলেক্ট করুন, একটি পপ-আপ দেখতে পাবেন, Turn off সিলেক্ট করে কনফার্ম করুন। গুগল এই প্রটেকশন বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। যদি আপনি কোনো নির্দিস্ট ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে এই ওয়ার্নিং দেখতে না চাইলে ফিচারটি বন্ধ রাখতে পারেন।

👉 গুগল ফটোসের যে ৯টি ফিচার আপনার ব্যবহার করা উচিত

মোবাইলে গুগল সেইফ ব্রাউজিং চালু করার নিয়ম

ক্রোম এন্ড্রয়েড অ্যাপ বা আইওএস অ্যাপ থেকে গুগল সেইফ ব্রাউজিং চালু করতে নিচের নিয়ম অনুসরণ করুন:

  • Chrome ওপেন করুন
  • ডানদিকের উপরের কর্নারে থাকা থ্রি-ডট আইকনে ক্লিক করুন
  • Privacy and security অপশন সিলেক্ট করুন
  • Safe Browsing সিলেক্ট করুন
  • Standard protection বা Enhanced Protection সিলেক্ট করুন

সেফ ব্রাউজিং বন্ধ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে No protection সিলেক্ট করতে পারেন।

সাধারণ ব্রাউজিং এর সময় কোনো ধরনের অনলাইন প্রাইভেসি বা সিকিউরিটি ইস্যুতে পড়া বেশ বিরক্তিকর বটে। কোনো ধরনের স্পেশাল সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার ছাড়াই গুগল ক্রোম ব্যবহার করে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আপনার একাউন্ট যতটাই নিরাপদে রাখুন না কেনো, বা যতই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন না কেনো, বড় ধরনের কোনো ডাটা ব্রিচ থেকে নিজের তথ্য রক্ষা গুগল সেফ ব্রাউজিং ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ- সেটা স্ট্যান্ডার্ড কিংবা এনহান্সড যেটাই হোক।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *