বর্তমানে ক্যাশলেস ডিজিটাল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সব ব্যাংকই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে বর্তমানে ডেবিট কার্ড দিয়ে থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ড তুলনামূলক কম মানুষই ব্যবহার করে আমাদের দেশে। ফলে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণাও প্রচলিত আছে। ক্রেডিট কার্ড কীভাবে কাজ করে সে ব্যাপারটি নিয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। তবে ডিজিটাল যুগের ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ধারণা থাকা জরুরি। ক্রেডিট কার্ড সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করবার পাশাপাশি বড় ও দামী কিছু কেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড কীভাবে কাজ করে। ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তবেই আপনি বুঝতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য ভালো সুবিধা নিয়ে আসবে কিনা। কেননা ক্রেডিট কার্ড অনেক সময় বোঝা হয়ে উঠতে পারে ভুল ব্যবহারের ফলে। কাজেই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এই পোস্ট হতে।
ক্রেডিট কার্ড কী?
ক্রেডিট কার্ড একটি প্লাস্টিকের তৈরি কার্ড যা সাধারণত ব্যাংক আপনাকে প্রদান করে থাকে বিভিন্ন কেনাকাটা, বিল ইত্যাদি প্রদানের জন্য। ক্রেডিট কার্ডের সহজ অর্থ হচ্ছে ব্যাংক আপনাকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সাময়িক লোন বা ধার দিচ্ছে। আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকের দেয়া টাকা থেকেই কেনাকাটা করতে পারেন এবং পরবর্তীতে নিজের সুবিধা অনুযায়ী এই টাকা ব্যাংক- কে শোধ করে দিতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয় সাধারণত কারো পেশা এবং মাসিক আয়ের উপর ভিত্তি করে। ব্যাংকগুলো সরাসরি আপনার আয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই এই লোন দিয়ে থাকে। দেশে সাধারণত ৩০ হাজার টাকা বেতন হলেই ক্রেডিট কার্ড নেয়া যায়। এছাড়া এফডিআর বা ফিক্সড ডিপোজিট করার মাধ্যমেও অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড থেকে আপনি কত টাকা খরচ করতে পারবেন সেটিও নির্ধারিত হয় আপনার আয়ের উপর ভিত্তি করে। দেশে সাধারণত মাসিক বেতনের ৪ গুন পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। ক্রেডিট লিমিট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনার খরচের সীমা। এটি নিয়ে পোস্টের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড কীভাবে কাজ করে?
ক্রেডিট কার্ড দেখতে সাধারণ ডেবিট কার্ডের মতো হলেও ক্রেডিট কার্ডে থাকা ক্রেডিট আপনার নিজস্ব টাকা বা অর্থ নয়। এটি ব্যাংক থেকে দেয়া লোন। এটিই ক্রেডিট হিসেবে পরিচিত। ব্যাংক আপনাকে লোন দিয়ে থাকে আপনার মাসিক আয়ের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ আপনার একটি নিয়মিত আয় অথবা স্থায়ী চাকরির দরকার হবে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলো বেতনের চার গুন পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে।
ক্রেডিট লিমিট বলতে বোঝায় আপনি প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে পরিমাণ খরচ করতে পারবেন সেটি। আপনার বেতন যদি ২০ হাজার টাকা হয়ে থাকে তাহলে আপনি এর ৪ গুন অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকা ক্রেডিট লিমিটের ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন আপনার ব্যাংক থেকে। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে নিয়মিত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা নিতে হবে। তবেই ব্যাংক আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিতে আগ্রহী হবে।
ক্রেডিট কার্ড আপনি অনলাইনে বা বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া বড় বা দামী কিছু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি ইএমআই বা কিস্তি সুবিধাও নিতে পারেন। আপনি যখন কিছু কিনবার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন তখন আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য যেখান থেকে পণ্য কিনছেন তাদের কাছে চলে যায়। বিক্রেতার ব্যাংক তখন ক্রেডিট কার্ডের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার ব্যাংকের কাছে এই পরিমাণ অর্থ ব্যবহার করার অনুমতি চায়। সবকিছু ঠিক থাকলে এবং আপনার ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে থাকলে আপনার ব্যাংক তখন এই পরিমাণ অর্থ বিক্রেতার ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়।
ক্রেডিট কার্ডের সবথেকে বড় সুবিধা আপনি নিজের অর্থ ব্যবহার করছেন না। কেনাকাটার ক্ষেত্রে আপনি পুরোপুরি আপনার ব্যাংকের অর্থই ব্যবহার করছেন। ব্যাংক এরপর আপনাকে প্রতি মাসের শেষে ক্রেডিট কার্ডের বিল আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে। এই বিলে আপনাকে কতো বিল পে করতে হবে সেটি এবং এই বিল পে করার শেষ সময় জানিয়ে দেয়া হয়।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
👉 ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড নিরাপদ রাখার উপায়
এই সময়ের মধ্যে আপনি পেমেন্ট না করলে ব্যাংক আপনার কাছ থেকে বাড়তি মুনাফা বা চার্জ গ্রহণ করে। সুতরাং ক্রেডিট কার্ডের ডিউ বা পাওনা সঠিক সময়ে পরিশোধ করে ফেলা জরুরি। এই পদ্ধতিতে আপনার কাছে অর্থ না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড আপনাকে ক্রয় করার সুবিধা দেয়। পরবর্তীতে আপনি যখন অর্থ হাতে পাবেন তখন নির্দিষ্ট সময়ে তা পরিশোধ করে দিতে হয়। আর এভাবেই ক্রেডিট কার্ড কাজ করে থাকে।
তবে ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কখনই এমন কিছু কেনা উচিত নয় যা আপনি মাস শেষে সঠিকভাবে শোধ করতে পারবেন না। এতে করে ক্রেডিট কার্ডে পাওনার পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং আপনার চার্জের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে। ক্রেডিট লিমিটের পুরোটাই ব্যবহার করে ফেললে তা পরিশোধ করা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে।
পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট ফ্রি ইএমআই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এতে ক্রেডিট লিমিটের মধ্যে থেকেই দামী জিনিস কিস্তিতে ক্রয় করার সুবিধা পাবেন বাড়তি কোন চার্জ ছাড়া। এর ফলে আপনি প্রতি মাসে অল্প অল্প করে পুরো পেমেন্ট করে দিতে পারবেন। এই কিস্তির টাকা আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিলের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আমাদের এই পোস্ট থেকেঃ 👉 কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা কী? EMI কীভাবে পাবো?
সুতরাং আপনার আয় যথেষ্ট পরিমাণ হলে এবং স্থায়ী হলে তবেই ক্রেডিট কার্ড নেয়া উচিত। কেননা ক্রেডিট কার্ডের বিল অবশ্যই সঠিক সময়ে দিয়ে দেয়া উচিত। নাহলে ক্রেডিট কার্ড আপনার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করে তবেই ক্রেডিট কার্ডের পুরো সুবিধা নেয়া সম্ভব।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।