সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন ও রিফারবিশড ফোনের পার্থক্য কি?

বর্তমানে স্মার্টফোন এর চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফোনগুলোর দাম। এই দামি নতুন ফোনগুলো কেনার সামর্থ্য সবার থাকেনা। যার ফলে অনেকে তাদের পছন্দের ব্র্যান্ডের ফোন কিনতে রিফারবিশড বা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনের দিকে ঝুঁকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অফিসিয়ালি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় রিফারবিশড ফোন। আমাদের দেশে অফিসিয়ালি রিফারবিশড ফোন দেখা না গেলেও আনঅফিসিয়ালি প্রচুর রিফারবিশড ফোনের দেখা মিলবে স্মার্টফোন মার্কেটে। যদিও কোনো কোনো অসাধু বিক্রেতা সেগুলোকেই ব্র্যান্ড নিউ বলে চালিয়ে দিয়ে থাকেন।

অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যে সেকেন্ড হ্যান্ড ও রিফারবিশড ফোন, দুইটি একই বিষয়। তবে রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশে উভয় ধরণের ফোন সরাসরি স্মার্টফোন মার্কেটগুলোতে পাওয়া যায়। 

রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন, এই দুই ধরনের ফোন কিন্ত একই নয়। এই পোস্টে রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন এর পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন এর পার্থক্য

এই পোস্টে আমরা পয়েন্ট আকারে সেকেন্ড-হ্যান্ড ও রিফারবিশড ফোন এর পার্থক্য জানবো। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে দুই ধরণের ফোনকে বিচার করে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো উভয়ের মধ্যে কোনটি অধিক ভালো।

সংজ্ঞা

অন্য কারো পূর্বে ব্যবহৃত ফোনকে বলা হচ্ছে ইউসড ফোন বা সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন। এসব ফোন ব্যবহারের পর যে অবস্থাতে থাকে, সে অবস্থাতেই বিক্রি করা যায়। ধরুনঃ আমি একটা নতুন ফোন কিনলাম ও সেটি ৫মাস ব্যবহার করে আপনার কাছে বিক্রি করলাম, তাহলে ফোনটি হবে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন।

রিফারবিশড ফোন দেখতে সম্পূর্ণ নতুন ফোনের মত লাগে। এসব ফোন সম্পূর্ণভাবে নতুন না হলেও, এদের কোয়ালিটি নতুন ফোনের কাছাকাছি প্রায়। ধরুনঃ কেউ একজন একটি ফোন কিনলো ও কিছু সময় ব্যবহারের পর সেটি অফিসিয়াল শপে ফেরত দিয়ে অন্য একটি ফোন এক্সচেঞ্জ হিসেবে নিলো।

এরপর উক্ত ব্র্যান্ড ঐ ফোনে কোনো সমস্যা থাকলে তা ঠিক করবে ও নতুন ফোনের সকল পরীক্ষা করার পর রিফারবিশড লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করবে। ব্যবহৃত ফোন এভাবে পুনরায় পরীক্ষা ও ঠিক করে বিক্রি করে থাকে স্যামসাং, অ্যাপল এর মত কোম্পানিগুলো।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ফিজিক্যাল কন্ডিশন

সেকেন্ড-হ্যান্ড বা ইউসড ফোনে স্ক্র্যাচ ও ড্যামেজের চিন্‌হ দেখা যায়। যেহেতু এসব ফোন পূর্বে আরেকজন ব্যবহার করেছে, তাই এই বিষয়টি বেশ সাধারণ বলা চলে।

অন্যদিকে রিফারবিশড ফোনের কন্ডিশনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের গ্রেড রয়েছে। গ্রেড A এর ফোনগুলো দেখতে ও কাজের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ফোনের মত লাগে। এসব ফোনে কোনো ধরণের স্ক্র্যাচ বা মার্ক থাকেনা। আবার গ্রেড B ও C এর ফোনগুলোতে স্ক্র্যাচ বা মার্ক থাকে।

ওয়ারেন্টি

সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনে বিক্রেতা কর্তৃক কোনো ধরণের ওয়ারেন্টি থাকেনা। তবে যার কাছ থেকে কিনছেন, সে যদি সম্প্রতি ফোনটি কিনে থাকে ও এখনো ওয়ারেন্টির মেয়াদ থাকে, তবে উক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ওয়ারেন্টি সম্পর্কিত কাগজপত্র বুঝে নেওয়া উত্তম।

👉 মটোরোলা স্মার্টফোনের দাম জানুন

অন্যদিকে অফিসিয়ালি সেল করা রিফারবিশড ফোনের ওয়ারেন্টি থাকলেও আনঅফিসিয়ালি সেল করা রিফারবিশড ফোনে কোনো ধরনের ওয়ারেন্টি নেই।

কোয়ালিটি

ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কোনো ধরণের কোয়ালিটি চেক করা হয়না। অর্থাৎ এসব যেভাবে ব্যবহার হয়, ওভাবেই বিক্রি করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, রিফারবিশড ফোনগুলোর ক্ষেত্রে নতুন ফোনের মত কোয়ালিটি চেক করা হয়। ভালোভাবে সব বিষয় চেক করে যদি কোয়ালিটি ঠিক আছে বলে জানা যায়, তবেই তা বিক্রির জন্য নির্বাচিত হয়।

একসেসরিজ

ব্যবহৃত ফোনে কোনো কোনো সময় বিভিন্ন একসেসরিজ, যেমনঃ চার্জার, হেডফোন, ইত্যাদি পাওয়া যায়না। তবে রিফারবিশড ফোনের ক্ষেত্রে নতুন একসেসরিজ সহ ফোনের সাথে পাওয়া যায়।

ফোনের বয়স

নির্দিষ্ট সময় পর একটি ফোনের মডেল তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মানে হলো উক্ত মডেলের নতুন কোনো ফোন এরপর আর বাজারে পাওয়া যায়না। তাই উক্ত মডেলের চাহিদা মেটায় ব্যবহৃত ফোনগুলো। যেমনঃ আইফোন ৫সি ডিভাইসটি অ্যাপল আর বিক্রি করেনা। এখন আপনি যদি উক্ত ফোন বাজার থেকে কিনেন, তবে তা ব্যবহৃত ডিভাইস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

👉 পুরাতন ফোন বিক্রয় ও ক্রয়ের আগে করণীয়

👉 ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে

দাম

সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন এর দাম ব্র্যান্ড নিউ ফোন ও রিফারবিশড ফোনের দামের চেয়ে কম হয়ে থাকে। অন্যদিকে রিফারবিশড ফোন যদিওবা ব্র্যান্ড নিউ হ্যান্ডসেট এর চেয়ে কম দামে পাওয়া যাবে, তবে এসব ফোনের দাম সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনের দামের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন – কোনটি সেরা?

এবার আসি মূল প্রশ্নেঃ রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন – কোনটি সেরা?

বেশিরভাগ প্রযুক্তি অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন কেনার পরিবর্তে রিফারবিশড ফোন কেনার পক্ষে ভোট প্রদান করবেন। একই মডেলের রিফারবিশড ফোন এর দাম কম হলেও এই ফোনের দাম নতুন ফোনের চেয়ে কম হয়ে থাকে এবং ফোনটিও নতুনের মত লাগে। আবার কোম্পানির নতুন ফোনগুলোর মত বাড়তি সুবিধা, যেমনঃ সফটওয়্যার আপডেট, কাস্টমার কেয়ার, ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়।

যেহেতু রিফারবিশড ফোনগুলো বিক্রির আগে এর প্রতিটি বিষয় এক্সপার্ট দ্বারা চেক করা হয়, তাই এসব ফোনকে কোয়ালিটির দিক দিয়ে নতুন ফোনের সাথে তুলনা করলে ভুল হবেনা। সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোনগুলোর ক্ষেত্রে এসব অসাধারণ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়না।

👉 এন্ড্রয়েড ফোন সুরক্ষায় এই পূর্ব সতর্কতাগুলো মেনে চলুন

অর্থাৎ রিফারবিশড ফোন নিশ্চিন্তে কেনা গেলেও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন কেনা কিছুটা ঝুঁকির ব্যাপার। সেকেন্ড-হ্যান্ড বা ব্যবহৃত ফোনের অবস্থা নির্ভর করে এর ব্যবহারকারীর উপর। অন্যদিকে রিফারবিশড ফোনের ক্ষেত্রে এসব ঝুটঝামেলা থাকছেনা।

বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে প্রচুর পরিমাণে সেকেন্ড হ্যান্ড ও রিফারবিশড ফোন চোখে পড়ে। দামে কম হওয়ায় অনেকে এসব ফোনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন হোক, কিংবা রিফারবিশড, যেকোনো সময় ফোন কেনার ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে তবেই কেনা উচিত। 

সুবিধারিফারবিশড ফোন সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন
ওয়ারেন্টি
একসেসরিজমাঝেমধ্যে থাকে
পকীক্ষিত
কাস্টমার সার্ভিস

রিফারবিশড ফোন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন এর মধ্যে কোনটি আপনার কাছে অধিক ভালো বলে মনে হয়? আপনার মতামত আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 7,976 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.