একজন মানু্ষের জন্মের পর রাষ্ট্র কতৃক প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বীকৃতি হলো জন্ম সনদ বা বার্থ সার্টিফিকেট। মূলত সরকারি খাতায় অফিসিয়ালি একজন মানু্ষের নাম এন্ট্রি হয় জন্ম সনদের মাধ্যমে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক বা নির্ধারিত ব্যক্তি উক্ত শিশুর জন্মের ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য বাধ্য থাকিবেন৷। জন্ম নিবন্ধন যেহেতু জরুরি একটি ডকুমেন্ট, তাই সঠিকভাবে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কেন জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়?
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড হাতে না পাওয়া পর্যন্ত জন্ম সনদ পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করে।
বয়স যদি ১৮ এর কম হয় ও এনআইডি কার্ড না থাকে, তাহলে পাসপোর্ট এর আবেদন করা যাবে জন্ম সনদ দ্বারা। আবার যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে তো জন্ম নিবন্ধন সনদ লাগবেই।
এমনকি বিয়ের নিবন্ধনেও ক্ষেত্রে জন্ম সনদ ব্যবহার করা হয়। ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদনের সময় জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে এখন।
হ্যাঁ, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্ম নিবন্ধন দেশে করা যাবে। সেক্ষেত্রে আবেদনের সময় বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকত্বের প্রমাণ প্রদর্শন করে স্থানীয় ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন তৈরী করা যাবে।
নিবন্ধনকারীর জন্মতারিখ ২০০১ সালের পর হলে আবেদনের ক্ষেত্রে পিতামাতার জন্ম সনদ লাগবে। অন্যদিকে ২০০১ সালের আগে যদি হয় জন্ম, তবে পিতামাতার জন্ম সনদ ছাড়া শুধু নাম প্রদান করে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন করা যাবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে করা যাবে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন। অনলাইনে আবেদন বেশ সহজ।
চলুন জেনে নেওয়া যাকে সঠিক নিয়মে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। বুঝার সুবিধার্থে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদনের প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে।
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে এই লিংকে প্রবেশ করুনঃ https://bdris.gov.bd/
- ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর জন্ম সনদ সংগ্রহের স্থান হিসেবে তিনটি অপশন পাবেন – জন্ম স্থান, স্থায়ী ঠিকানা, ও বর্তমান ঠিকানা। দেশের বাইরে যদি আবেদনকারীর জন্ম হয় সেক্ষেত্রে “আপনি যদি বাংলাদেশ দূতাবাসে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান তবে এটি নির্বাচন করুন” এর পাশে থাকা বক্সে টিক মার্ক দিন। এছাড়া সুবিধামত জন্ম স্থান, স্থায়ী ঠিকানা, ও বর্তমান ঠিকানা নির্বাচন করা যাবে
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন এর এই পর্যায়ে আবেদনকারীকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে মূলত আবেদনকারীর জন্ম সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে হবে। এই ফর্মে যার জন্ম সনদ এর আবেদন করা হচ্ছে তার সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রদান করতে হবে সেগুলো হলোঃ
- ফার্স্ট ও লাস্ট নেম – বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায়
- জন্ম তারিখ, যা জন্ম সনদে উল্লেখ থাকবে
- পিতামাতার কত নাম্বার সন্তান সে তথ্য ও লিঙ্গ
- জন্ম স্থানের সঠিক ঠিকানা
জন্ম স্থানের ঠিকানা প্রদানের সময় ঠিকানাটি ধাপে ধাপে সিলেক্ট করতে হয়। অর্থাৎ আপনার জন্ম যদি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে হয়, সেক্ষেত্রে প্রথমে চট্টগ্রাম বিভাগ সিলেক্ট করতে হবে। এরপর চট্টগ্রাম জেলা, তারপর বোয়ালখালী উপজেলা, তারপরেই চরণদ্বীপ ইউনিয়ন সিলেক্ট করা যাবে। গ্রাম ও বাড়ীর নাম এন্টার করতে হবে। এই ফর্ম পূরণ শেষ হলে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে এগিয়ে যান।
এরপর আরেকটি নতুন ফর্ম দেখতে পাবেন। এই ফর্মে ব্যবহারকারীর পিতামাতার তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে নিবন্ধনকারীর জন্ম সাল, পিতা / মাতার জন্ম সনদ নাম্বার প্রদান করতে হবে কিংবা শুধুমাত্র পিতা ও মাতার নাম প্রদান করলে হবে। যদি পিতা ও মাতার নাম লেখার অপশন খোলা থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট টেক্সট বক্সগুলোতে মাতা ও পিতার নাম ইংরেজি ও বাংলা, উভয় ভাষাতে লিখুন।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
মা ও বাবার নাম লেখার অপশন না থাকলে প্রথমে পিতা ও মাতার জন্ম সনদ বের করতে হবে। তবেই সন্তানের জন্ম সনদের আবেদন করা যাবে। নাম বা জন্ম সনদের নাম্বার সঠিকভাবে প্রদানের পর মা ও বাবার জাতীয়তা সিলেক্ট করুন।
এবার আসবে নিবন্ধনকারীর ঠিকানা প্রদানের পালা। “আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?” এর সাথে থাকা “কোনোটিই নয়” অপশন সিলেক্ট করুন। এরপর জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা লেখার অপশন দেখতে পাবেন।
সঠিকভাবে জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করুন। জন্ম স্থান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে সেক্ষেত্রে জন্ম স্থানের ঠিকানা লিখার পর “জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই” অপশন সিলেক্ট করুন। সেক্ষেত্রে দুইটি ঠিকানা একইসাথে একই হয়ে যাবে। ঠিকানা লিখার পর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
এরপর আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে নিবন্ধনকারীর বয়স যদি ১৮ এর বেশি হয় তবে “নিজ” অপশন সিলেক্ট করে নিজের জন্ম সনদের আবেদন নিজে করা যাবে। নিবন্ধনকারীর বয়স ১৮ এর কম হলে সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর সাথে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক এবং উক্ত ব্যক্তির ইমেইল ও ফোন নাম্বার প্রদান করতে হবে।
এরপর নিবন্ধনকারীর পরিচয় প্রমাণস্বরুপ যেকোনো কাগজ এটাচমেন্ট হিসেবে এড করতে হবে। ফাইল আপলোড শেষে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে গেলে সকল তথ্য একইসাথে দেখতে পাবেন। এখান থেকে প্রদত্ত তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক কিনা তা আরেকবার চেক করে নিন। এরপর “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
নোটঃ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত সেবাটি আরও উন্নত করছেন। তাই এই পোস্টে দেয়া সব স্টেপ ও স্ক্রিনশট আপনার স্ক্রিনে দেখানো বাস্তব সাইটের সাথে না ও মিলতে পারে। যেকোন প্রশ্নের জন্য কল করুন ১৬১৫২ নম্বরে।
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন সাবমিট করার পর একটি আবেদন নাম্বার দেওয়া হবে। এই নাম্বার দ্বারা জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখা যাবে https://bdris.gov.bd/br/application/status এই লিংকে প্রবেশ করে।
👉 জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করার উপায়
উল্লেখিত প্রক্রিয়া শেষে আবেদপত্রের কাগজটি প্রিন্ট করে নিন। এরপর আবেদনপত্রটি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে জমা করুণ। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে জন্ম সনদ পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধন তৈরীর খরচ
৪৫দিন বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধন (দেশে ও বিদেশ থেকে) করা যাবে বিনামূল্যে। দেরি হলে এই খরচ বাড়বে, তবে এর পরিমাণ ২৫ থেকে ৫০ টাকা অথবা ১ ডলারের আশেপাশে হতে পারে, যেটা নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। অনলাইন আবেদনের সময় স্ক্রিনে আপনি এই খরচ দেখতে পারবেন।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।