বর্তমানে দেশের বাজারে কেনার জন্য মোবাইলের অভাব নেই। কম দামে অসংখ্য ফোন রয়েছে মোবাইলের দোকানগুলোতে, যা অধিকাংশ মানুষ তাদের বাজেট বিবেচনা করে কিনে থাকেন। এসব ফোন দামে কম হওয়ার কারণে বেশ অসাধারণ ডিল বলে মনে হয়। কিন্তু কম দামে নতুন বা পুরোনো এসব ফোন কিনে ঠকছেন না তো? এই পোস্টে জানবেন কম দামের ফোন কেনার আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
কোথা থেকে কিনছেন
নতুন ফোন হোক বা পুরাতন, ফোন হোক বা অন্য যেকোনো পণ্য, কোনো জিনিস কোথা থেকে কিনছেন তার উপর ঐ জিনিসের অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমনঃ আপনি একটি অফিসিয়াল শপ বা অথোরাইজড শপ থেকে যেকোনো কিছু কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত থাকতে পারেন। কেননা অফিসিয়াল বা অথোরাইজড শপ কোম্পানির ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কিছু করবেনা। এটা একজন গ্রাহক হিসেবে আপনাকে লাভবান করবে।
মোবাইল তো যেকোনো দোকান থেকে কেনা যায়। কিন্তু যে দোকান থেকে ফোন কিনছেন, ঐ দোকানের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু তা আগে যাচাইবাছাই করতে ভুলবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের পরিচিত কোনো বিশ্বাসযোগ্য দোকান থেকে ডিভাইস কিনুন।
ব্যবহৃত ফোন নয় তো?
কম দামে নতুন ফোন পাওয়া যায় বর্তমানে অনেক। বিশেষ করে আগের মডেলের ফোনগুলো বেশ কম দামে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন শপও এসব ফোনের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে৷ মূলত সেকেন্ড হ্যান্ড/রিফার্বিশড বা সেল না হওয়া ইউনিটগুলো বিক্রি হয়ে থাকে কম দামে।
একটি ফোন পুরোনো হওয়া বা রিফার্বিশড হওয়া কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু কোনো বিক্রেতা উক্ত ফোনকে নতুন বলে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টি হলো সন্দেহজনক। তাই কম দামে নতুন ফোন কেনার আগে উক্ত বিষয়টি যাচাই করে দেখুন।
রিটার্ন পলিসি
কোনো ট্রাস্টেড শপ থেকে কম দামে নতুন ফোন কিনলে অবশ্যই ওয়ারেন্টি পাবেন। ফোনের দাম কম হলেও যেনো অন্তত ৭দিনের রিটার্ন ওয়ারেন্টি থাকে, সে বিষয়টি দেখুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফোনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রিটার্ন পলিসি থাকেনা। তবে আপনি যদি রিফার্বিশড বা কম দামে নতুন ফোন কিনে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুদিনের ওয়ারেন্টি পাবেন। ফোনের দাম কম হোক বা বেশি, কখনো ফোনের ওয়ারেন্টি চেক না করে ফোন কিনবেন না।
হার্ডওয়্যার
উল্লেখিত কয়েকটি বিষয় ফোন কেনার সম্পর্কে হলেও সরাসরি ফোনের সাথে সংযুক্ত নয়। কম দামে কোনো ফোন কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফোনের হার্ডওয়্যার চেক করা। এছাড়া যে ফোনটি নিতে যাচ্ছেন, সে ফোনে আপনার ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার অর্থাৎ র্যাম, স্টোরেজ, চিপসেট, ইত্যাদি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
কম দামের ফোনগুলোতে দুর্বল হার্ডওয়্যার এর কারণে আপনার প্রত্যাশিত কাজের সাথে মানানসই না ও হতে পারে। তাই যেকোনো ফোন কেনার আগে হার্ডওয়্যার আপনার ব্যবহারের উপযোগী কিনা যাচাই করে নিন। মনে রাখবেন, যেসব ফোনের দাম কম সেগুলো তৈরি করা হয়েছে এমন গ্রাহকদের জন্য যাদের চাহিদা কম। হয়ত তারা ফোনে একটু ফেসবুক চালাবে, মেসেঞ্জারে কথা বলবে আর ইউটিউব দেখবে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
কিন্তু আপনি যদি এন্ট্রি লেভেলের ফোন কিনে সেগুলোতে পাবজি গেম খেলার চিন্তা করেন তাহলে হতাশ হতে হবে। এজন্য ফোন কেনার আগে অবশ্যই আপনার প্রত্যাশিত কাজের ক্ষেত্রে সেই ফোনের হার্ডওয়্যার মানানসই হবে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
মুক্তির তারিখ
বর্তমান স্মার্টফোন বাজার বেশ জমজমাট, যার ফলে প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমরা নতুন স্মার্টফোন লঞ্চ দেখতে পাই। নতুন ফোন বাজারে আনার পর সাপ্লাই চেইন বজায় রাখতে আগের কোনো প্রোডাক্ট নতুন করে বানানো বন্ধ করে দেয় স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো। যেহেতু অফিসিয়ালি ফোনগুলো ডিসকন্টিনিউ করা হয়, তাই ফোনগুলো অফিসিয়ালি সেল না করে বাল্ক (Bulk) আকারে কোনো থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করা হতে পারে। মূলত এসব ফোনই কম দামে পরবর্তী নতুন ফোন হিসেবে বাজারে আসে। এই ধরনের ফোন কেনার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি থাকেনা। এগুলো অনেক সময় কম দামে ভাল ফোন হিসেবে বিবেচিত হয়।
👉 স্মার্টফোন কেনার সময় খেয়াল করবেন যে বিষয়গুলো
তবে কোনো ফোনের মুক্তির তারিখ যদি বেশি পুরোনো হয়, তবে ফোনের প্রোডাকশন ও বেশ আগে হয়ে থাকে। তার মানে সময়ের সাথে সাথে এই ফোনের হার্ডওয়্যার পুরোনো হয়েছে ও পার্টসমূহে কিছুটা কম্প্যাটিবিলিটি ইস্যু দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো কম দামের ফোনের মুক্তির তারিখ হিসাব করে ফোনের কন্ডিশন যাচাই করতে পারেন।
আসল একসেসরিজ
বাজেট ফোনের সাথে অরিজিনাল একসেসরিজ, যেমনঃ চার্জার, কেস, ইত্যাদি থাকলে অনেকাংশে ফোনটি যে নতুন তা কিছুটা নিশ্চিত করা যায়। নতুন বাজেট ফোনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ফোনের সাথে উল্লেখিত একসেসরিজ দেওয়া হবে। তবে সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফার্বিশড ফোনের সাথে এসব একসেসরিজ না ও পেতে পারেন বা পেলেও আসল পাবেন না। সেক্ষেত্রে ফোনের কন্ডিশন যাচাই বাছাই করে নেওয়া শ্রেয়।
👉 ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে
দাম
কম দামে ফোন নিয়ে কথা হচ্ছে আর দাম নিয়ে কথা হবেনা, তা কি হতে পারে? সাধারণের চেয়ে কোনো ফোনের দাম মাত্রাতিরিক্ত কম হওয়া একটি সন্দেহজনক বিষয় হতে পারে। তবে ফোন যে সবসময় দাম বেশি হলেই আসল হবে, তা না। অনেক আগে রিলিজ করা ফোনগুলো স্টকে থেকে যাওয়ার কারণেও এখন কম দামে বিক্রি হতে পারে, যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
একটি উদাহরণ দেখা যাক। গুগল এর পিক্সেল ৩ এক্সএল বাজারে এসেছে বেশ অনেক বছর হলো। তখন ফোনটির দাম অনেক হলেও বর্তমানে দেশের বাজারে মাত্র ১৫ হাজার টাকার মধ্যেও এই ফোনটি পাওয়া যায়। এর মানে কিন্তু এই নয় যে এই ফোনটি আসল নয়। এগুলা আসলে অবিক্রিত ইউনিট যা এখন বিক্রি হচ্ছে।
👉 পুরাতন ফোন বিক্রয় ও ক্রয়ের আগে করণীয়
তবে অবিক্রিত ইউনিটের নাম দিয়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবহৃত পুরাতন ফোন ধরিয়ে দেয়। বিশেষ করে সম্প্রতি আইফোন নিয়ে এই প্রতারণা বেশি ঘটছে। তাই ফোন কেনার সময় দাম কম হলেই তার দিকে ঝুঁকে পড়বেন না।
সুতরাং এই পোস্ট থেকে জানলেন কম দামে ফোন কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখা দরকার সেসব সম্পর্কে। ফোন দাম কম হলেই খারাপ হবে বা দাম বেশি হলে ভালো হবে, এমন কোনো বিষয় নেই। তাই মোবাইল বা যেকোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইস কেনার আগে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চ জ্ঞান কাজে লাগান।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।