কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা কী? EMI কীভাবে পাবো?

নিয়মিত ব্যাংকিং যারা করে থাকেন তাদের কাছে ইএমআই বেশ পরিচিত একটি শব্দ হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন তাদের নিয়মিত কেনাকাটার ক্ষেত্রে। ইএমআই এমন একটি সুবিধা যার মাধ্যমে বড় ও দামী কিছু কেনাকাটা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় যে কারো জন্য। আমাদের দেশে ইএমআই ব্যবহার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। সেই সঙ্গে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় বেশ কিছু ইএমআই সেবা নিয়ে আসায় ধীরে ধীরে ইএমআই সম্পর্কে কৌতুহলও বাড়ছে ক্রেতাদের মাঝে।

আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা নিয়ে। ইএমআই কী বা কীভাবে এই সেবা উপভোগ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন এই পোস্ট থেকে। সেই সঙ্গে ইএমআই বিষয়ক বিভিন্ন টার্ম নিয়েও আলোচনা থাকবে।

ইএমআই কী?

ইএমআই এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে ‘ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট’। অর্থাৎ সোজা কথায় বিভিন্ন পণ্য আপনি এই সেবার মাধ্যমে মাসিক কিস্তিতে কেনার সুবিধা পাবেন। মূলত এটি ব্যাংক ও যে প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি কিছু কিনছেন তাদের মাঝে একটি চুক্তির মতো। আপনি পণ্যটির পুরো মূল্য একবারে পরিশোধ না করে আপনার ব্যাংকের মাধ্যমে কিস্তিতে এই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন EMI সেবার মাধ্যমে। আপনি কত মাসে সমান কিস্তিতে এই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবেন সেটি নিজে থেকেই EMI পলিসির মাধ্যমে ঠিক করে দিতে পারেন।

মূলত EMI সেবার মাধ্যমে দামী কোন পণ্য সহজেই কেনা যায়। দামী পণ্যের মূল্য একবারে শোধ না করে প্রতি মাসে সমান কিস্তিতে শোধ করার মাধ্যমে আপনার মাসিক খরচের উপর বড় ধরনের চাপ থেকে যেমন বাঁচতে পারবেন তেমনি পণ্যটি সাথে সাথেই ব্যবহারের সুবিধাও পেয়ে যাবেন। ইএমআই সেবাটি পণ্য কিনতে ব্যাংক থেকে লোন বা ধার নেয়ার মতোই। তবে এতে বিশেষ কিছু সুবিধা থাকে যার কারণে এটি ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

ইএমআই কীভাবে পাবেন?

ইএমআই সেবাটি পেতে হলে প্রথমত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড থাকতেই হবে। ক্রেডিট কার্ড কী বা কীভাবে করবেন এই সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন পোস্ট দেখে নিতে পারেন লিঙ্ক অনুসরণ করে। এছাড়াও ক্রেডিট কার্ড থেকে কীভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করতে হয় সে সংক্রান্ত পোস্টটিও কাজে আসবে আপনাদের।

কেন আপনার ক্রেডিট কার্ড দরকার এই সেবা নিতে হলে? মূলত ইএমআই এর মাধ্যমে আপনি একটি মাসিক সমান কিস্তিতে কোন পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। পণ্যের মূল্য যে আপনি পরিশোধ করতে পারবেন এবং এই কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হবেন না এ সংক্রান্ত নিশ্চয়তা প্রদান করে ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডে আপনার পেশা, বেতন ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাপার বিবেচনা করে একটি সীমা নির্ধারণ করা হয় যে সীমার মধ্যে থেকে আপনি যে কোন পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পারেন।

আপনার ব্যাংকের ব্যালেন্সে এই পরিমাণ অর্থ না থাকলেও ব্যাংক আপনাকে এই অর্থ ধার হিসেবে দিয়ে থাকে। ইএমআই সেবায় আপনাকে এই সীমার মধ্যে থেকেই তবে পণ্য ক্রয় করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যখন কোন পণ্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ইএমআই সেবায় ক্রয় করবেন তখন ওই পণ্যের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ মূল্য আপনাকে মোট শোধ করতে হবে সেটি ক্রেডিট কার্ডে ব্লক হয়ে যায়।

অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডের সীমা থেকে ওই পরিমাণ অর্থ আপনি কম খরচ করতে পারবেন। এবার এই ব্লক হয়ে যাওয়া অর্থ থেকেই প্রতি মাসে সমান কিস্তিতে ইএমআই এর অর্থ একাই শোধ হয়ে যেতে থাকে এবং আপনার সীমা ধীরে ধীরে আবারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূলত এভাবেই EMI কাজ করে থাকে। তবে কোনো কোনো শপ কার্ড ছাড়াও EMI সুবিধা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বা পেশা সংক্রান্ত ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।

এছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে তাদের ইএমআই সেবা দিয়ে থাকতে পারে। ফলে একটি ভালো ও জনপ্রিয় ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিলে আপনি বেশি প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন শপ থেকে ইএমআই সুবিধা পেতে পারেন।

অনেক প্রতিষ্ঠান ইএমআই সুবিধার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে বা পণ্যে এই সেবা দিয়ে থাকে। তাই আপনি ইএমআই এর মাধ্যমে যে পণ্য ক্রয় করতে চান আগে থেকেই সেই পণ্যটি ইএমআই যোগ্য কিনা বা আপনার ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পণ্যটি পাবেন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।

কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা কী? EMI কীভাবে পাবো?

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

সব ঠিকঠাক থাকলে আপনার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই এই পণ্যের ক্ষেত্রে ইএমআই সুবিধা পেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে ইএমআই নেয়ার ক্ষেত্রে পণ্যের আসল মূল্য থেকে আপনার কিছুটা বেশি খরচ হতে পারে। এছাড়া ইএমআই আপনি আপনার পছন্দমতো কিস্তিতে নিতে পারেন। সাধারণত দামী পণ্যের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত ইএমআই নেয়া যায়। এর বেশি বা কম মাসের জন্যও ইএমআই নেয়া যায়। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে এই কিস্তির পরিমাণ আলাদা হতে পারে।

ইএমআই সফল হলে সঙ্গে সঙ্গেই পণ্যটি আপনি ক্রয় করে ফেলতে পারবেন পুরো পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করেই। প্রতি মাসের এই কিস্তি ক্রেডিট কার্ড থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়া হবে। এই কিস্তির পরিমাণ আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল হিসেবে প্রতি মাসে চলে আসবে যা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বাড়তি ইন্টারেস্ট ছাড়াই ইএমআই এর মাধ্যমে পণ্য কিনতে দিয়ে থাকে। তাই আপনার সুবিধা অনুযায়ী স্থান থেকে পণ্য কেনা উচিত।

ইএমআই সংক্রান্ত কিছু টার্ম

ইএমআই সংক্রান্ত কিছু টার্ম বেশ প্রচলিত রয়েছে যা ইএমআই নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার জানা থাকা বেশ জরুরি। কেনাকাটার ক্ষেত্রে এসব টার্ম আপনার বেশ কাজে লাগবে।

  • মান্থলি ইন্সটলমেন্ট বা মাসিক কিস্তিঃ মান্থলি ইন্সটলমেন্ট বা মাসিক কিস্তি সবথেকে সাধারণ একটি টার্ম। এটি খুবই সহজ ভাবে বুঝে নেয়া যেতে পারে। আপনার পণ্যের মোট মূল্য যদি এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা হয়ে থাকে এবং এটি যদি আপনি ১২ মাসের কিস্তিতে কিনতে চান তবে আপনাকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাকে সমান ১২ টি কিস্তিতে ভাগ করতে হবে। ফলে আপনাকে মাসে ১০ হাজার টাকা পেমেন্ট করতে হবে এই পণ্যের ক্ষেত্রে। তবে হ্যাঁ, মাসে ১০ হাজার টাকার কিছুটা বেশি খরচ করতে হতে পারে কেননা ইএমআই সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু চার্জ ও ইন্টারেস্ট যুক্ত হতে পারে। একেই মূলত মাসিক কিস্তি বলা হয়ে থাকে।
  • ইএমআই টেনুরঃ ইএমআই টেনুর বলতে বোঝানো হয় আপনি পণ্যটি মোট যত কিস্তিতে ক্রয় করতে চান সেটি। অর্থাৎ ১২ মাস বা ১২ টি কিস্তিতে আপনি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলে আপনার ইএমআই টেনুর হবে ১২ টি। কিস্তি সবসময় মাসিকভাবে হিসাব করা হয়ে থাকে।
  • ইএমআই মূল্যঃ ইএমআই মূল্য পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্য যা বিভিন্ন অফার ও ছাড়ের মাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে। এই মূল্য ইএমআই ছাড়া পণ্যের আসল মূল্য হতে আলাদা হয়ে থাকে এবং কিছুটা বেশি হয়ে থাকতে পারে। কেননা ইএমআই এর ক্ষেত্রে আলাদা কিছু চার্জ ও মুনাফা যুক্ত হতে পারে।

আপনি কি EMI ব্যবহার করেন? আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানান!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *