ইমেইল সিগনেচার কী ও কীভাবে তৈরি করে? কেন দরকার? জানুন

ইমেইল নিয়মিত ব্যবহার করে থাকলে নিশ্চয়ই ইমেইল সিগনেচার আপনার আগেও চোখে পড়েছে। এটা সাধারণত একটি ইমেইলের শেষের দিকে কয়েকটি লাইন জুড়ে থাকে যেখানে ইমেইল প্রেরকের নাম, ফোন নাম্বার এবং অন্যান্য কিছু তথ্য থাকে। তবে ইমেইল সিগনেচার শুধু আপনার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য দেয়ার জন্যই নয়, আরও অনেক কাজে এটা ব্যবহার করা যায়।

একটি ভালো ইমেইল সিগনেচার আপনার ব্যবসা বা কাজের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সবাইকে জানাতে বা কোন বিশেষ অফারের বিজ্ঞাপন দিতে কিংবা আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে ইমেইল সিগনেচার। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আপনি ইমেইল সিগনেচার ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন এবং এটি মূলত কী কাজে লাগে সেটি নিয়ে।

ইমেইল সিগনেচার কী?

ইমেইল সিগনেচার একটা ইমেইলের একটি অংশ যা আপনি যখনই ইমেইল পাঠাবেন সেখানে যুক্ত হয়ে যাবে একা একাই। ইমেইল সিগনেচারে থাকতে পারে টেক্সট, ইমেজ বা লিঙ্ক।

ইমেইল সিগনেচার সাধারণত ব্যবহার করা হয় ইমেইলে আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে। এখানে আপনার নাম, ফোন নাম্বার, আপনার পদের নাম থাকতে পারে। তবে আরও অনেক কাজেই এটি ব্যবহার করা যায়। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ইমেইল সিগনেচারকে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যেও ব্যবহার করছেন। 

ইমেইল সিগনেচার আসলে আপনার ভিজিটিং কার্ডের মতো করেই কাজ করে যা আপনার পরিচয়কে ভালোভাবে প্রতিটি ইমেইলে তুলে ধরতে পারে। ফলে সহজেই প্রাপক আকৃষ্ট হতে পারে এবং আপনার পূর্ণ পরিচয় জেনে নিতে পারে। এখানে আপনার ওয়েবসাইট বা প্রোফাইলের লিঙ্ক যুক্ত করে দিলে আপনার ওয়েবসাইটে অনেকে কৌতূহল নিয়ে ভিজিট করতে পারে। তাই ভালো ও আকর্ষণীয় সিগনেচার বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কী কী থাকে ইমেইল সিগনেচারে?

ইমেইল সিগনেচার আপনি নিজের ইচ্ছামতো সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারেন। এখানে আমরা এমন কিছু জিনিসের কথা বলবো যা আপনি আপনার ইমেইল সিগনেচারে রাখতে পারেন।

সাইনঅফ

সাইনঅফ হচ্ছে একদম শেষের ছোট একটি বাক্য বা শব্দ যা আপনি আপনার নাম লেখার আগে লিখে থাকেন। যেমনঃ “Sincerely,” “Best Wishes,” “Regards” ইত্যাদি।

অনেকে ইমেইল লেখবার শেষেই সাইনঅফ দিয়ে থাকেন। তবে আপনি চাইলে আপনার নামের আগেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। সাইনঅফ হিসেবে টেক্সট বা ইমেজ যে কোনটি ব্যবহার করতে পারেন আপনি।

যোগাযোগের তথ্য

যোগাযোগের তথ্য দেয়া সিগনেচারের মূল উদ্দেশ্য। তাই এটি সবার আগে করা উচিত। আপনি যাকে ইমেইল করছেন তার উপর নির্ভর করে আপনার সিগনেচারে যোগাযোগের বিভিন্ন তথ্য যুক্ত করে দিতে পারেন। আপনি আপনার নাম, পদ, ফোন নাম্বার, ব্যবসার ঠিকানা ইত্যাদি জিনিস এখানে দিতে পারেন। অনেকে তাদের ইমেইল ঠিকানাও যুক্ত করে দেয় সিগনেচারে। তবে এটি দেয়ার তেমন দরকার নেই। কেননা আপনি ইমেইল পাঠালেই ইমেইল ঠিকানা প্রাপক পেয়ে যান।

ব্র্যান্ডিং

আপনার ব্যবসায়িক লোগো, সেই সাথে মিলিয়ে কালার ডিজাইন ও ফন্ট রাখতে পারেন ইমেইল সিগনেচারে। এটি আপনার ব্যবসার আলাদা পরিচয় বহন করতে সহায়তা করবে এবং মানুষের কাছে আপনার ব্র্যান্ডকে সহজে তুলে ধরতে পারবে। তাই সিগনেচার ডিজাইনের ক্ষেত্রে এদিকে লক্ষ্য রাখতে পারেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক

আপনি আপনার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক যুক্ত করে দিতে পারেন আইকনের মাধ্যমে। প্রতিটি মিডিয়া প্লাটফর্মের আইকনের সাথে লিঙ্ক যুক্ত করে দিলে সহজেই আইকনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রোফাইলে চলে যাওয়া সম্ভব হবে।

ছবি

অনেকেই নিজের একটি ছবি সিগনেচারে যুক্ত করে দিতে পছন্দ করেন। এতে করে ক্রেতার সাথে সহজে সম্পর্ক তৈরি করা যায়। তাই আপনার কাজের ধরণ অনুযায়ী আপনি চাইলে সুন্দর একটি ছবিও যুক্ত করে দিতে পারেন নিজের।

অন্যান্য ছবি বা ভিডিও

শুধু নিজের ছবিই নয়, বরং আপনি চাইলে আপনার কোন কাজের ছবি বা ভিডিও যুক্ত করে দিতে পারেন যার মাধ্যমে বিভিন্ন অফার, ইভেন্ট ইত্যাদি সম্পর্কে সহজে জানাতে পারেন।

ইমেইল সিগনেচার কেন দরকার?

নিজস্ব যোগাযোগে ইমেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইমেইল সিগনেচার খুব একটা গুরুত্ব বহন না করলেও পেশাদার ক্ষেত্রে ইমেইল পাঠাতে ইমেইল সিগনেচারের গুরুত্ব অনেক। এতে করে আপনি প্রাপককে বাড়তি তথ্য দিতে পারবেন এবং একটি ভালো অভিজ্ঞতাও দিতে পারবেন। ইমেইল সিগনেচার ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পেশাদারিত্ব

ইমেইল সিগনেচার ঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা আপনার ইমেইলকে আরও পেশাদার করে তুলতে পারে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে আপনার পেশা সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মে এবং গুরুত্ব সহকারে আপনার ইমেইল বিবেচনা করতে সাহায্য করে। আপনার প্রতিষ্ঠানের লোগো, ব্র্যান্ডিং ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক থাকলে সহজেই তা মানুষকে ইমেইলের গুরুত্ব বোঝাতে পারে।

👉 ইমেইলে CC এবং BCC কী? কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানুন

কর্মদক্ষতা

ইমেইল সিগনেচার আপনার সময় বাঁচায় এবং প্রতি ইমেইলে বারবার আপনার পরিচয় দেয়ার বাড়তি ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়। তাই আপনি সহজেই আরও বেশি মানুষকে ইমেইল করতে পারবেন।

ব্র্যান্ডিং

আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের লোগো যুক্ত করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে আপনার ব্র্যান্ডকে আরও বেশি পরিচিত করে তুলতে ইমেইল সিগনেচার বেশ ভালো কাজ করে। ফলে মানুষের মধ্যে আপনার ব্র্যান্ড নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা হয় এবং আপনার ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করে।

ট্রাফিক ও লিড জেনারেশন

ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ও লিড বাড়াতে ইমেইল মার্কেটিং সবেথেকে ভালো উপায়। আর এক্ষেত্রে ইমেইল সিগনেচার বেশ ভালো কাজ করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক যুক্ত করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অনেক ট্রাফিক আনতে পারেন সহজেই।

ইমেইল সিগনেচার তৈরি করার নিয়ম

প্রতিটি ইমেইল ক্লায়েন্টেই সিগনেচার তৈরির জন্য আলাদা অপশন পেয়ে যাবেন। এখানে আমরা জিমেইল ব্যবহার করে কীভাবে সহজেই আপনি ইমেইল সিগনেচার তৈরি করে ফেলতে পারবেন সেটি জানাবো। এজন্য আপনাকে নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

  • প্রথমে ব্রাউজার থেকে জিমেইলে চলে যান। লগিন করা না থাকলে জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগিন করে নিন।
  • এবার আপনার ইমেইল ইনবক্স ওপেন হবে। উপরে ডানপাশের কোণায় সেটিংস আইকন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
  • ডানপাশে নতুন একটি পেন ওপেন হবে। এখানে ‘See All Settings’ এর উপর আপনাকে ক্লিক করতে হবে।

👉 ইমেইল আইডি ভুলে গেলে উদ্ধার করার উপায়

Email Settings
  • এবার সেটিংস জেনারেল ট্যাব আপনার সামনে চলে আসবে। এবার নিচের দিকে স্ক্রোল করে আপনাকে ‘Signature’ নামের অপশনটি খুঁজে বের করতে হবে।
  • এখানে ‘Create new’ অপশনে ক্লিক করলে নতুন একটি ডায়ালগ বক্স আপনার সামনে চলে আসবে।
Create New Signature
  • এবার এই সিগনেচার পরে সহজে খুঁজে পেতে আপনার ইচ্ছামতো একটি নাম দিয়ে Create এ ক্লিক করুন।
Name New Signature
  • এবার আপনার নতুন সিগনেচারের নামের পাশেই একটি বক্স দেখতে পাবেন নিজের সিগনেচার তৈরি করার জন্য। এই বক্সে আপনি লিঙ্ক, ইমেজ, টেক্সট ইত্যাদি নিজের মতো করে সাজিয়ে নতুন সিগনেচার তৈরি করে নিতে পারবেন।
Write New Signature
  • এবার পেজের একদম নিচে চলে যান স্ক্রোল করে। ‘Save Changes’ বাটনের উপর ক্লিক করে সিগনেচারটি সেভ করে নিন।
Save Changes

এবার এই সিগনেচার ইমেইল লিখবার সময় ব্যবহার করতে চাইলেঃ

  • কম্পোজ ইমেইল বক্স খুলে নিন।
  • নিচের দিকে সিগনেচারের একটি আইকন দেখতে পাবেন। এটির উপর ক্লিক করুন।
  • পূর্বে সেভ করা সিগনেচারটির নাম এখানে দেখতে পারবেন। সেটি সিলেক্ট করে দিন।
Add Signature
  • ইমেইলে আপনার সিগনেচার যুক্ত হয়ে যাবে।

এভাবে আপনি একসাথে অনেক রকম সিগনেচার আগে থেকেই তৈরি করে রেখে পরবর্তীতে প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারবেন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,548 other subscribers

2 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *